Sukumar Ray Poems ~ সুকুমার রায় কবিতা

সুকুমার রায় সংক্ষিপ্ত জীবনী, শিশু ও বয়স্কদের সুকুমার রায় কবিতা নীচে দেওয়া হয়েছে। Sukumar Roy short biography with Sukumar Ray poems for children and adults are given below.

সুকুমার রায় (Sukumar Ray)
উৎস: উইকিপিডিয়া

সুকুমার রায় (Sukumar Ray) ৩০শে অক্টোবর, ১৮৮৭ সালে, কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯২৩ সালে, ১০ই সেপ্টেম্বর কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে সুকুমার রায় ১০০ নং গড়পার রোড, কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সুকুমার রায়ের ছদ্মনাম উহ্যনাম পন্ডিত

তিনি সাহিত্যে একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক।

বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম ননসেন্স ছড়ার প্রবর্তন করেন সুকুমার রায়।

তাঁর লেখা প্রথম ও একমাত্র বিখ্যাত “ননসেন্স ছড়া” সংকলন আবোল তাবোল, ১৯২৩ সালে, ইউ রায় এন্ড সন্স, থেকে প্রকাশিত হয়।

আবোল তাবোল ছড়ার বইটি শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার দাবিদার করে নেয়।

সুকুমার রায়ের রচিত একটি রম্য রচনা- হ য ব র ল। এটি বাংলা সাহিত্যের ননসেন্স ধারার একটি শ্রেষ্ঠ রচনা।

সুকুমার রায়ের শ্রেষ্ঠ একটি কাল্পনিক গল্প সংকলনের নাম- পাগলা দাশু

সুকুমার রায়ইকে বিশ্বসাহিত্যে সর্ব যুগের সেরা “ননসেন্স” ধরনের ব্যঙ্গাত্মক জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিকদের অন্যতম একজন বলে মনে করা হয়।

কবিতা

Title

সুকুমার রায় -এর কবিতা সমূহ (Sukumar Ray Poems)

Hariye Paowa (হারিয়ে পাওয়া) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) হারিয়ে পাওয়া (Hariye Paowa)

ঠাকুরদাদার চশমা কোথা ?
ওরে গণ্‌শা, হাবুল, ভোঁতা,
দেখ্‌না হেথা, দেখ্‌না হোথা- খোঁজ না নিচে গিয়ে ।

কই কই কই? কোথায় গেল ?
টেবিল টানো, ডেস্কও ঠেল,
ঘরদোর সব উলটে ফেল- খোঁচাও লাঠি দিয়ে ।

খুঁজছে মিছে কুঁজোর পিছে,
জুতোর ফাঁকে, খাটের নিচে,
কেউ বা জোরে পর্দা খিঁচে- বিছনা দেখে ঝেড়ে-

লাফিয়ে ঘুরে হাঁফিয়ে ঘেমে
ক্লান্ত সবে পড়্‌ল থেমে,
ঠাকুরদাদা আপনি নেমে আসেন তেড়েমেড়ে ।

বলেন রেগে, "চশমাটা কি
ঠাং গজিয়ে ভাগ্‌ল নাকি ?
খোঁজার নামে কেবল ফাঁকি- দেখছি আমি এসে !"

যেমন বলা দারূণ রোষে,
কপাল থেকে অম্নি খ'সে
চশমা পড়ে তক্তপোশে- সবাই ওঠে হেসে !

হারিয়ে পাওয়া (Hariye Paowa) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Kolikata Kotha Rey (কলিকাতা কোথা রে) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কলিকাতা কোথা রে (Kolikata Kotha Rey)

গিরিধি আরামপুরী, দেহ মন চিৎপাত,
খেয়ে শুয়ে হু হু করে কেটে যায় দিনরাত;
হৈ চৈ হাঙ্গামা হুড়োতাড়া হেথা নাই;
মাস বার তারিখের কোন কিছু ল্যাঠা নেই;
খিদে পেলে তেড়ে খাও, ঘুম পেলে ঘুমিও-
মোট কথা, কি আরাম, বুঝলে না তুমিও !
ভুলেই গেছিনু কোথা এই ধরা মাঝেতে
আছে যে শহর এক কলকাতা নামেতে-
হেন কালে চেয়ে দেখি চিঠি এক সমুখে,
চায়েতে অমুক দিন ভোজ দেয় অমুকে ।
'কোথায়? কোথায়?' বলে মন ওঠে লাফিয়ে
তাড়াতাড়ি চিঠিখানা তেড়ে ধরি চাপিয়ে,
ঠিকানাটা চেয়ে দেখি নীচু পানে ওধারে
লেখা আছে 'কলিকাতা' – সে আবার কোথারে !
স্মৃতি কয় 'কলিকাতা ' রোস দেখি; তাই ত ,
কোথায় শুনেছি যেন , মনে ঠিক নাই ত,
বেগতিক শুধালেম সাধুরাম ধোপারে ;
সে কহিল, হলে হবে উশ্রীর ওপারে।
ওপারের জেলেবুড়ো মাথা নেড়ে কয় সে ,
'হেন নাম শুনি নাই আমার এ বয়সে ।'
তারপরে পুছিলাম সরকারী মজুরে
তামাম মুলুক সে ত বাৎলায় 'হুজুরে'
বেঙাবাদ বরাকর , ইদিকে পচম্বা ,
উদিকে পরেশনাথ ,পাড়ি দাও লম্বা ;
সব তার সড়গড় নেই কোন ভুল তায় –
'কুলিকাতা কাঁহা' বলি সেও মাথা চুলকায় !
অবশেষে নিরুপায় মাথা যায় ঘুলিয়ে '
'টাইম টেবিল' খুলি দেখি চোখ বুলয়ে ।
সেথায় পাটনা পুরী গয়া গোমো মাল্‌দ
বজবজ দমদম হাওড়া ও শ্যালদ –
ইত্যাদি কত নাম চেয়ে দেখি সামনেই
তার মাঝে কোন খানে কলিকাতা নাম নেই !!
-সব ফাঁকি বুজ্‌রুকী রসিকতা -চেষ্টা !
উদ্দেশে 'শালা ' বলি গাল দিনু শেষটা।-
সহসা স্মৃতিতে যেন লাগিল কি ফুৎকার
উদিল কুমড়া হেন চাঁদপানা মুখ কার!
আশে পাশে ঢিপি ঢুপি পাহাড়ে পুঞ্জ,
মুখ চাঁচা ময়দান, মাঝে কিবা কুঞ্জ !
সে শোভা স্মরণে ঝরে নয়নের ঝরনা ;
গৃহিনীরে কহি 'প্রিয়ে !মারা যাই ধর না ।
তার পরে দেখি ঘরে অতি ঘোর অনাচার –
রাখে না কো কেউ কোন তারিখের সমাচার !
তখনি আনিয়া পাঁজি দেখা গেল গণিয়া,
চায়ের সময় এল একেবারে ঘনিয়া !
হায়রে সময় নেই, মন কাদে হতাশে-
কোথায় চায়ের মেলা! মুখশশী কোথা সে !
স্বপন শূকায়ে যায় আধারিয়া নয়নে ,
কবিতায় গলি তাই গাহি শোক শয়নে।

কলিকাতা কোথা রে (Kolikata Kotha Rey) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Tejiyan (তেজিয়ান) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) তেজিয়ান (Tejiyan)

চলে খচ্‌খচ্ রাগে গজ্‌গজ্ জুতো মচ্‌মচ্ তানে,
ভুরু কট্‌মট্ ছড়ি ফট্‌ফট্ লাথি চট্‌পট্ হানে।
দেখে বাঘ-রাগ লোকে 'ভাগ ভাগ' করে আগভাগ থেকে,
বয়ে লাফ ঝাঁপ বলে 'বাপ্ বাপ্' সবে হাবভাব দেখে।
লাথি চার চার খেয়ে মার্জার ছোটে যার যার ঘরে,
মহা উৎপাত ক'রে হুটপাট্ চলে ফুটপাথ্ পরে।
ঝাড়ু–বর্দার হারুসর্দার ফেরে ঘরদ্বার ঝেড়ে,
তারি বালতিএ- দেখে ফাল্ দিয়ে আসে পালটিয়ে তেড়ে।
রেগে লালমুখে হেঁকে গাল রুখে মারে তাল ঠুকে দাপে,
মারে ঠন্‌ঠন্ হাড়ে টন্‌টন্ মাথা ঝন ঝন কাঁপে!
পায়ে কলসিটে! কেন বাল্‌তিতে মেরে চাল দিতে গেলে?
বুঝি ঠ্যাং যায় খোঁড়া ল্যাংচায় দেখে ভ্যাংচায় ছেলে।

তেজিয়ান (Tejiyan) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Tukro Chora (টুকরো ছড়া) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) টুকরো ছড়া (Tukro Chora)

তিন বুড়ো পন্ডিত টাকচুড়ো নগরে
চ’ড়ে এক গামলায় পাড়ি দেয় সাগরে।
গাম‌্‌লাতে ছেঁদা আগে কেউ দেখনি,
গানখানি তাই মোর থেমে গেল এখনি।।

ম্যাও ম্যাও হুলোদাদা, তোমার যে দেখা নাই?
গেছিলাম রাজপুরী রানীমার সাথে ভাই!
“তাই নাকি? বেশ বেশ, কি দেখেছ সেখানে?”
দেখেছি ইদুর এক রানীমার উঠানে।।”

গাধাটার বুদ্ধি দেখ!- চাঁট মেরে সে নিজের গালে,
কে মেরেছে দেখবে বলে চড়তে গেছে ঘরের চালে।

ছোট ছোট ছেলেগুলো কিসে হয় তৈরি,
-কিসে হয় তৈরি,
কাদা আর কয়লা ধুলো মাটি ময়লা,
এই দিয়ে ছেলেগুলো তৈরি।
ছোট ছোট মেয়ে গুলি কিসে হয় তৈরি।
কিসে হয় তৈরি?
ক্ষীর ননী চিনি আর ভাল যাহা দুনিয়ার
মেয়েগুলি তাই দিয়ে তৈরি।।

রং হল চিঁড়েতন সব গেল ঘুলিয়ে,
গাধা যায় মামাবাড়ি টাকে হাত বুলিয়ে।
বেড়াল মরে বিষম খেয়ে, চাঁদের ধরল মাথা
হঠাৎ দেখি ঘর বাড়ি সব ময়দা দিয়ে গাঁথা।।

   (অন্যান্য ছড়াসমূহ)

টুকরো ছড়া (Tukro Chora) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Adurey Putul (আদুরে পুতুল) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) আদুরে পুতুল (Adurey Putul)

যাদুরে আমার আদুরে গোপাল, নাকটি নাদুস থোপ্‌না গাল,
ঝিকিমিকি চোখ মিট্‌মিটি চায়, ঠোঁট দুটি তায় টাট্‌কা লাল ।
মোমের পুতুল ঘুমিয়ে থাকুক্‌ দাঁত মেলে আর চুল খুলে-
টিনের পুতুল চীনের পুতুল কেউ কি এমন তুলতুলে ?
গোব্‌দা গড়ন এমনি ধরন আব্‌দারে কেউ ঠোঁট ফুলোয় ?
মখমলি রং মিষ্টি নরম- দেখ্‌ছ কেমন হাত বুলোয় !
বল্‌বি কি বল্‌ হাব্‌লা পাগল আবোল তাবোল কান ঘেঁষে,
ফোক্‌লা গদাই যা বলবি তাই ছাপিয়ে পাঠাই "সন্দেশে" ।

আদুরে পুতুল (Adurey Putul) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ramgorurer Chhana (রামগরুড়ের ছানা) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) রামগরুড়ের ছানা (Ramgorurer Chhana)

রামগরুড়ের ছানা          হাসতে তাদের মানা,
           হাসির কথা শুনলে বলে,
          "হাসব্ না-না, না-না"।
সদাই মরে ত্রাসে-          ঐ বুঝি কেউ হাসে!
           এক চোখে তাই মিট্‌মিটিয়ে
           তাকায় আশে পাশে।
ঘুম নাহি তার চোখে          আপনি বকে বকে
           আপনারে কয়, "হাসিস্ যদি
           মারব কিন্তু তোকে!"
যায় না বনের কাছে,          কিম্বা গাছে গাছে,
           দখিন হাওয়ার সুড়সুড়িতে
           হাসিয়ে ফেলে পাছে!
সোয়াস্তি নেই মনে-          মেঘের কোণে কোণে
           হাসির বাষ্প উঠ্‌ছে ফেঁপে
           কান পেতে তাই শোনে।
ঝোপের ধারে ধারে          রাতের অন্ধকারে
           জোনাক্ জ্বলে আলোর তালে
           হাসির ঠারে ঠারে ।
হাসতে হাসতে যারা          হচ্ছে কেবল সারা
           রামগরুড়ের লাগছে ব্যথা
           বুঝছে না কি তারা?
রামগরুড়ের বাসা          ধমক দিয়ে ঠাসা,
           হাসির হাওয়া বন্ধ সেথায়
           নিষেধ সেথায় হাসা।

রামগরুড়ের ছানা (Ramgorurer Chhana) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Kichhu Chai (কিছু চাই?) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কিছু চাই? (Kichhu Chai)

কারোর কিছু চাই গো চাই ?
এই যে খোকা, কি নেবে ভাই?
জলছবি আর লাট্টু লাটাই
কেক বিস্কুট লাল দেশলাই
খেলনা বাঁশি কিংবা ঘুড়ি
লেড্‌ পেনসিল রবার ছুরি?
এসব আমার কিছুই নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?

কারোর কিছু চাই গো চাই?
বৌমা কি চাও শুনতে পাই?
ছিটের কাপড় চিকন লেস্‌
ফ্যান্সি জিনিস ছুঁচের কেস্‌
আল্‌তা সিঁদুর কুন্তলীন
কাঁচের চুড়ি বোতাম পিন্‌?
আমার কাছে ওসব নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?

কারোর কিছু চাই গো চাই?
আপনি কি চান কর্তামশাই?
পকেট বই কি খেলার তাস
চুলের কলপ জুতোর ব্রাশ্‌
কলম কালি গঁদের তুলি
নস্যি চুরুট সুর্তি গুলি?
ওসব আমার কিছুই নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই?

কিছু চাই? (Kichhu Chai) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Danpite (ডানপিটে) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ডানপিটে (Danpite)

বাপ্‌রে কি ডানপিটে ছেলে!-
কোন দিন ফাঁসি যাবে নয় যাবে জেলে।
একটা সে ভুত সেজে আঠা মেখে মুখে,
ঠাঁই ঠাই শিশি ভাঙে শ্লেট দিয়ে ঠুকে।
অন্যটা হামা দিয়ে আলমারি চড়ে,
খাট থেকে রাগ ক'রে দুম্‌দাম্ পড়ে।

বাপরে কি ডানপিটে ছেলে!-
শিলনোড়া খেতে চায় দুধভাত ফেলে!
একটার দাঁত নেই, জিভ দিয়ে ঘষে,
একমনে মোমবাতি দেশলাই চোষে!
আরজন ঘরময় নীল কালি গুলে,
কপ্ কপ্ মাছি ধরে মুখে দেয় তুলে!

বাপরে কি ডানপিটে ছেলে!-
খুন হ'ত টম্ চাচা ওই রুটি খেলে!
সন্দেহে শুঁকে বুড়ো মুখে নাহি তোলে,
রেগে তাই দুই ভাই ফোঁস্ ফোঁস্ ফোলে!
নেড়াচুল খাড়া হয়ে রাঙা হয় রাগে,
বাপ্ বাপ্ ব'লে চাচা লাফ দিয়ে ভাগে।

ডানপিটে (Danpite) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Nondogupi (নন্দগুপি) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) নন্দগুপি (Nondogupi)

হঠাৎ কেন দুপুর রোদে চাদর দিয়ে মুড়ি,
চোরের মত নন্দগোপাল চলছে গুড়ি গুড়ি?
লুকিয়ে বুঝি মুখোশখানা রাখছে চুপি চুপি?
আজকে রাতে অন্ধকারে টেরটা পাবেন গুপি!

        আয়না হাতে দাঁড়িয়ে গুপি হাসছে কেন খালি?
        বিকট রকম পোশাক করে মাখছে মুখে কালি!
        এম্মি করে লম্ফ দিয়ে ভেংচি যখন দেবে
        নন্দ কেমন আঁৎকে যাবে -হাস্‌ছে সে তাই ভেবে।

আঁধার রাতে পাতার ফাঁকে ভূতের মতন কে রে?
ফন্দি এঁটে নন্দগোপাল মুখোশ মুখে ফেরে!
কোথায় গুপি, আসুক না সে ইদিক্ পানে ঘুরে-
নন্দদাদার হুঙ্কারে তার প্রাণটি যাবে উড়ে।

        হেথায় কে রে মূর্তি ভীষণ মুখটি ভরা গোঁফে?
        চিমটে হাতে জংলা গুপি বেড়ায় ঝাড়ে ঝোপে!
        নন্দ যখন বাড়ির পথে আসবে গাছের আড়ে,
        "মার্ মার্ মার কাট্‌রে"লে পড়বে তাহার ঘাড়ে।

নন্দ চলেন এক পা দু পা আস্তে ধীরে গতি,
টিপ্‌টিপিয়ে চলেন গুপি সাবধানেতে অতি-
মোড়ের মুখে ঝোপের কাছে মার্‌তে গিয়ে উকি
দুই সেয়ানে এক্কেবারে হঠাৎ মুখোমুখি!

        নন্দ তখন ফন্দি ফাঁদন কোথায় গেল ভুলি
        কোথায় গেল গুপির মুখে মার্ মার্ মার্ বুলি।
        নন্দ পড়েন দাঁতকপাটি মুখোশ টুখোশ ছেড়ে
        গুপির গায়ে জ্বরটি এল কম্প দিয়ে তেড়ে
        গ্রামের লোকে দৌড়ে তখন বদ্যি আনে ডেকে,
        কেউ বা নাচে কেউ বা কাঁদে রকম সকম দেখে।
        নন্দগুপির মন্দ কপাল এম্‌নি হল শেষে,
        দেখ্‌লে তাদের লুটোপুটি সবাই মেরে হেসে।

নন্দগুপি (Nondogupi) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Hinsuti (হিংসুটি) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) হিংসুটি (Hinsuti)

এক ছিল দুষ্টু মেয়ে— বেজায় হিংসুটে , আর বেজায় ঝগড়াটি। তার নাম বলতে গেলেই তো মুশকিল, কারণ ঐ নামে শান্ত লক্ষ্মী পাঠিকা যদি কেউ থাকেন, তাঁরা তো আমার উপর চটে যাবেন।

হিংসুটির দিদি বড় লক্ষ্মী মেয়ে— যেমন কাজে কর্মে, তেমনি লেখাপড়ায়। হিংসুটির বয়েস সাত বছর হ'য়ে গেল, এখনও তার প্রথম ভাগই শেষ হল না— আর তার দিদি তার চাইতে মোটে এক বছরের বড়, সে এখনই "বোধোদয়" আর "ছেলেদের রামায়ণ" পড়ে ফেলেছে, ইংরিজি ফার্স্টবুক তার কবে শেষ হয়ে গেছে। হিংসুটি কিনা সবাইকে হিংসে করে, সে তো দিদিকেও হিংসে করত। দিদি স্কুলে যায়, প্রাইজ পায়— হিংসুটি খালি বকুনি খায় আর শাস্তি পায়।

দিদি যেবার ছবির বই প্রাইজ পেলে আর হিংসুটি কিচ্ছু পেলে না, তখন যদি তার অভিমান দেখতে! সে সারাটি দিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে গাল ফুলিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে ব'সে রইল— কারও সঙ্গে কথাই বলল না। তারপর রাত্রিবেলায় দিদির অমন সুন্দর বইখানাকে কালি ঢেলে, মলাট ছিঁড়ে, কাদায় ফেলে নষ্ট করে দিল। এমন দুষ্টু হিংসুটে মেয়ে।

হিংসুটির মামা এসেছেন, তিনি মিঠাই এনে দু'বোনকেই আদর ক'রে খেতে দিয়েছেন। হিংসুটি খানিকক্ষণ তার দিদির খাবারের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভ্যাঁ ক'রে কেঁদে ফেলল। মাম ব্যস্ত হয়ে বললেন, "কি রে, কী হ'ল? জিভে কামড় লাগল নাকি?" হিংসুটির মুখে আর কথা নেই, সে কেবলই কাঁদছে। তখন তার মা এক ধমক দিয়ে বললেন, "কী হয়েছে বল্‌ না!" তখন হিংসুটি কাঁদতে কাঁদতে বলল, "দিদির ঐ রসমুণ্ডিটা তাকে আমারটার চাইতেও বড়।" তাই শুনে দিদি তাড়াতাড়ি নিজের রসমুণ্ডিটা তাকে দিয়ে দিল। অথচ হিংসুটি নিজে যা খাবার পেয়েছিল তার অর্ধেক সে খেতে পারল না— নষ্ট ক'রে ফেলে দিল। দিদির জন্মদিনে দিদির নতুন জামা, নতুন কাপড় আস্‌লে হিংসুটি তাই নিয়ে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তোলে।

একদিন হিংসুটি তার মায়ের আলমারি খুলে দেখে কি— লাল জামা গায়ে, লাল জুতা পায়ে, টুক্‌টুকে রাঙা পুতুল বাক্সের মধ্যে শুয়ে আছে। হিংসুটি বলল, "দেখেছ! দিদি কি দুষ্টু! নিশ্চয়ই মামার কাছ থেকে পুতুল আদায় করেছে— আবার আমায় না দেখিয়ে মায়ের কাছে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।" তখন তার ভয়ানক রাগ হল। সে ভাবল, "আমি তো ছোট বোন, আমারই তো পুতুল পাওয়া উচিত। দিদি কেন মিছিমিছি পুতুল পানে?" এই ভেবে সে পুতুলটাকে উঠিয়ে নিল।

কি সুন্দর পুতুল! কেমন মিট্‌মিটে চোখ, আর ফুট্‌ফুটে মুখ, কেমন কচি কচি হাত পা, আর টুক্‌টুকে জামা কাপড়! যত সব ভালো ভালো জিনিস সব কিনা দিদি পাবে! হিংসুটির চোখ ফেটে জল এল। সে রেগে পুতুলটাকে আছড়িয়ে মাটিতে ফেলে দিল। তাতেও তার রাগ গেল না; সে একটা ডাণ্ডা নিয়ে ধাঁই ধাঁই ক'রে পুতুলটাকে মারতে লাগল। মারতে মারতে তার নাক মুখ হাত পা ভেঙে, তার জামা কাপড় ছিঁড়ে— আবার তাকে বাক্সের মধ্যে ঠেসে সে রাগে গরগর করতে করতে চলে গেল।

বিকেলবেলা মামা এসে তাকে ডাকতে লাগলেন আর বললেন, "তোর জন্য কি এনেছি দেখিস্‌নি?" শুনে হিংসুটি দৌড়ে এল, "কই মামা, কী এনেছ দাও না।"

মামা বললেন, "মার কাছে দেখ্‌ গিয়ে কেমন সুন্দর পুতুল এনেছি।" হিংসুটি উৎসাহে নাচতে লাগল, মাকে বলল, "কোথায় রেখেছ মা?" মা বললেন, "আলমারিতে আছে।" শুনে ভয়ে হিংসুটির বুকের মধ্যে ধড়াস্‌ ধড়াস্‌ করে উঠল। সে কাঁদ কাঁদ গলায় বলল, "সেটার কি লাল জামা আর লাল জুতো পরান— মাথায় কালো কালো কোঁকড়ানো চুল ছিল?" মা বললেন, "হ্যাঁ, তুই দেখেছিস্‌ নাকি?"

হিংসুটির মুখে আর কথা নেই! সে খানিকক্ষণ ফ্যাল্‌ফ্যাল্‌ ক'রে তাকিয়ে তারপর একেবারে ভ্যাঁ ক'রে কেঁদে এক দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেল।

এর পরে যদি তার হিংসে আর দুষ্টুমি না কমে, তবে আর কী ক'রে কমবে?

হিংসুটি (Hinsuti) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।