ওই মানুষটিকে দেখো,
পড়ে আছে অন্ধকার নর্দমার ধারে।
ওর গায়ে বুঝি খুব দুর্গন্ধ তাই না?
লোকে যখন যায় রাস্তা দিয়ে
ওর দিকে ভুলেও তাকায় না,
ওকে পেড়িয়ে ওর পাশেই থুতু ফেলে এগিয়ে যায়।
মাথার চুলগুলি যেমন উষ্কখুষ্ক তেমন আঠালো,
গায়ে বোধ করি দুনিয়ার লোকে দলে যাওয়া
এক ধুলোয় ঢাকা নোংরা চাদর।
সারা দিনরাত কেমন ভাবে পড়ে থাকে নর্দমার ধারে।
মাঝেমধ্যে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
কি সব আবোল তাবোল বকে চলে-
হয়তো বলে, ‘মা—মা—মা’ নতুবা ‘এবার নিয়ে নাও আমায়’,
কত অসহায়তা তখন ফুটে উঠে ওর চোখে মুখে।
ওর যখন ক্ষিদেয় পেট ছটফট করে ওঠে
তখনই যায় এদিক ওদিক।
কোথায় বা যাবে? হয় লোকের বাড়ি বাড়ি
নতুবা ডাস্টবিনের ধারে ধারে।
তবে লোকের বাড়ি বাড়ি গেলেও
যে খাবার পায় তা নয়।
এই যেমন সেদিন তোমরা দিলে কি খাবার?
তোমাদেরই কারোর বাড়ির চৌকাঠ ডিঙিয়ে খাবারের আব্দার ধরেছিল,
তাতেই ওর গায়ে এক বালতি গরম জল ঢেলে দিলে।
হায় ঈশ্বর কোথায় আছো তুমি !
একবার, এপাড়ায় ওপাড়ায় “খেতে দাও খেতে দাও” বলে একঘেয়ে আকুতি করার দরুন-
তোমরা নির্দয়ভাবে ওকে মারধর করলে।
এত বানিয়েছ অট্টালিকা প্রাসাদ-
অর্থের বলে তাই না?
ঘর বাড়ি সাজাও ফুল দিয়ে
নতুবা কৃত্রিম আলোর সজ্জায়।
বাড়িতে পোষো চার পেয়ে প্রভুভক্ত জীব।
যদি হয় কোনোদিন ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে-
তোমাদের অবস্থা ওই মানুষটির মতন,
তখন হয়তো বুঝতে পারবে খিদের জ্বালা কি বস্তু,
নয়তো রাস্তার ধারে দিবারাত্র পড়ে থাকার কি সুখ।
এখন সভ্য ভদ্র তোমরা-
ধোপদুরস্ত পোশাক গায়ে তোমাদের।
কিন্তু মানবিকতা বোধের ব্যপক অভাব।
অর্থের জোরেই দূর দূর করে
তাড়াও অসহায় মানুষদের।
ওদের ক্ষমতা নেই
তাই লড়তে পারে না তোমাদের সঙ্গে।
ওরা চায় একটু খেতে।
কি হবে এত দম্ভ নিয়ে আজীবন?
শেষের দিনে সবার স্থান একজনের কাছে।
বড়-ছোট,অর্থবান-দরিদ্র তাঁর কাছে সবাই সমান।
— অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী