‘এইযে মশাই,
এতদিনেও ভুলে যাননি যে?’
‘কে বলেছে ভুলিনি?
তোমাকে আমি সবচেয়ে বেশিবার ভুলি
হয়তো ধরো,
আটটা বাজতে আর এক মিনিট বাকি,
এখনো মাধবী রাতের ঘুমটা কাটেনি।
ইচ্ছে করে-তোমার হাতের এক কাপ চায়ে কম্বল ছেড়ে অফিসের জন্যে বের হতে।
কিন্তু কই পাই চিনি বেশি দেওয়া এক কাপ চা?
আর কই পারি তোমার আমোদ বাণে প্রলয় তুলে বেহায়া ঘুমটাকে তাড়াতে?
তাই ভুলে যেতে হয়।
হয়তো ধরো,
বিরক্তিকর ফাইল গুলোর উপর নিজের যথেষ্ট বিদ্যে খাটানো হয়ে গেছে
কয়েক মিনিটের ফুরসত
ভাবি এই বুঝি ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠবে তোমার ছবি
উপরে লেখা ‘বুড়ি’; আমি তাকিয়ে থাকব,
মুখে স্বস্তির হাসি,
আগন্তুক কলার টিউনটা না হয় প্রলাপ করলো কিছুক্ষণ
কিন্তু কই আসে তোমার চিত্তবৃত্তে আবদ্ধ যান্ত্রিক ফোন কল?
আর কারে বলি মনের বজ্রসংঘাতগাথা?
হতচ্ছাড়া ফোনটা ব্ল্যাকআউটের ভং ধরে থাকে,
তাই ভুলে যেতে হয়।
হয়তো ধরো,
খালি পেটে ছুটতে ছুটতে বেজায় ক্লান্ত,
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
তোমার নিজের হাতে নকশা করা সাদা রুমালটার খোঁজে-
পকেট হাতড়াতেই টের পাই,
রুমাল কেন, এক টুকরো কাগজ ও নেই ওতে।
কিন্তু কই?
ফেলেও তো আসিনি নিজের ছোট্ট ঘরটাতে।
আসলে ওমন একখানা রুমাল আমার কাছে নেই,
তাই ভুলে যেতে হয়।
হয়তো ধরো,
আজ নয়া ফাল্গুনের দিবালোকে স্বাগত বইমেলা
অন্তরের পাণ্ডুলিপির প্রথম প্রত্যয়ন
আমার পাশে তুমি,সাদা অফসেট এ পাতা ওল্টাচ্ছো
এদিকে আকুল আমি হারিয়ে নিজেকে
তোমার কেশাঞ্জলির সুরভীতে।
কিন্তু কই পাই সময়রেখার মাঝে দু-দন্ড বিশ্রাম?
আর কই পারি তোমার অস্তিত্বের পুরোটা জুড়ে নিজেকে খুঁজে পেতে?
তাই ভুলে যেতে হয়।
হয়তো ধরো,
কিছু এলোমেলো শব্দ আর হাজার কাটাকুটির পর,
একটা কবিতা লিখে তোমাকে দিয়েছি
সবার উপরে থাকল তোমার নাম।
তুমি নিলে,
কিন্তু কই পাই তোমার শ্যামস্নিগ্ধ মুখের শুভ্র হাসি?
আর কই পারি কবিতার লাইনগুলো বেঁধে রাখতে?
এক এক করে সব ভেঙে পড়ে,আমার মন ভাঙে
তুমি ভেঙে দিলে
তাই ভুলে যেতে হয়।
তোমাকে ভুলে ফিরি আমি প্রতিক্ষণ।
তার চেয়েও বেশিবার মনে করি তোমাকে
বেঁচে যাওয়া পার্থক্য টুকু শুধু ভুলতে পারি না কখনোই
অমৃত যে,
যেমন করে হৃদাম্বরের সত্য আখ্যানে তুমি।’