বিদেশের চাকরী ছেড়ে অনেক ভুল হয়ে গেছে। চাকুরী শেষ বাইক নিয়ে রেপিডো না করলে কোন ক্রমেই সংসার টা চলতো না। কিন্তু মাঝে মাঝে বৌ অন্যায় আবদার গুলো খুব চাপে ফেলে দেয়।তবে স্ত্রী তিন্নি হিসাবী একটু তার বিশেষ কিছু দাবি নেই। তবে একমাত্র ছেলে অদ্রির জন্য পূজার পোশাক কিনতে গড়িয়াহাট যেতে বাধ্য করেছে আজ বার বার ফোন করে , পূজা ঢের দেরি। ওর কথায় এখন কিনতে হবে তাহলে সস্তায় পাওয়া যাবে। আমি মেয়েদের টপ ও জিন্স এর স্টল কাছে এসে দাঁড়িয়ে পরলাম । বৌ জিন্স টপ পরে না। এবার পূজা দার্জিলিং যাবার ইচ্ছে। ওর জন্য তাই একটা নিয়ে যাবো ভাবছিলাম। গত বছর তো ওকে শাড়ি কিনে দিতে পারি নি।
একটা পছন্দ করেও ফেলেছি এমন সময় কে জেনো আমার নাম ধরে ডাকলো” বুবাই দা না? “
আমি মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে চিনতে না পারে বললাম ” হ্যাঁ, কিন্তু আপনি!!’ —চিনতে পারলে না? —-না তবে মুখটা একটু চেনা চেনা লাগছে।
মেয়েটা খুব চেনা মানুষের মতো বললো “বলতে পারলে না তো? আমি তোমাদের মামপি গো।” আমি এড়িয়ে যেতে চাই আমার অতীত কে তাই না চেনার ভান করে বললাম”কোন মামপি? বুঝলাম না। মনে হয় কোন একটা ভুল হচ্ছে।
কিন্তু মামপি নাছোড়বান্দা” তুমি চিনতে পারছো না, না চেনার অভিনয় করছো।আমি তোমার বাড়ির চারটে বাড়ির পর বিমল মান্নার মেয়ে সৌমিলি। এবার চিনতে পারলন মানব বাবু।
আমি একটু লজ্জা পাবার অভিনয় করে বললাম ” বাবা এ কি চেহারা হয়েছে তোমার, চিনতেই পারিনি।” —–
ও একটা মিষ্টি হাসি হেসে “আমার কথা ছাড়ো। তুমি সেই আগের মতোই আছো। বুঝলাম ভালো আছো। বিয়ে করেছো? “
আমি বললাম ” ও তুমি জানো না? হ্যাঁ আমার বৌ আছে, একটা ছেলে আছে। “
ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো “তুমি? তোমরা সেই যে কলকাতা চলে এলে তারপর থেকে কোনো খবর পাইনি। আচ্ছা জেঠু কেমন আছে? “
আমি বললাম” বাবা? না বাবা মায়ের খবর রাখা হয় না । তোমার সাথে বিয়ে ভাঙার পর দেশ ছাড়ালাম।পাঁচেক হলো আমাদের হলো দেশে ফিরে বিয়ে করছি। বাবা মায়ের অমতে তাই বাড়ি ফেরা হয় নি আর। “
মামপি চলে যেতে চাইছিলো। আমি বললাম “বালিগঞ্জ কাছে একটা রেস্টুরেন্ট আছে চলো কথা বলি ওখানে তোমার প্রিয় কবিরাজি পাওয়া যায়। দাড়াও আমার বৌ কে একটা ফোন করে নিতে হবে”
বৌ কে বললাম “শোন আমাদের গ্রামের একজনের সাথে দেখা হয়েছে। আজ আর কেনাকাটি হয়ে গেছে। ওর সাথে কথা বলেই ফিরছি.. চিন্তা করোনা একটু দেরি হতেও পারে। আচ্ছা রাখি। “
ওকে জিজ্ঞাসা করলাম”চলো আর কেউ আছে তোমার সাথে? বা কেউ অপেক্ষা করছে না তো??”
ও বললো ” আর কেউ… না কেউ নেই,কেউ অপেক্ষা করার নেই.. “
দুজনে রেস্টুরেন্ট গিয়ে বসলাম ।ও আমার জন্য ব্লাক কফি অর্ডার করে দিলো। ওর সব কিছু মনে আছে দেখে অবাক হলাম।
আমি বললাম” বল এখানে কোথায় থাকবো? “
ও বললো ” এখানে থাকি কাছাকাছি। অভিষিক্ততার কাছাকাছি।তোমার কথা বলো।”
আমি বললাম “আমিতো গরফা কাছেই থাকি। তোমার কথা বলো”
ও একটা বাঁকা হাসি হেসে বললো”আমার কথা? সত্যি শুনতে পারবে? “
আমি বললাম — ” বলো আমি সব শুনবো। ”
কেন সেই দিন ও আমাকে প্রত্যাখ্যান করলো সেটা জানতে হবে আমাকে “
আমি বললাম ‘ তোমার মনে আছে,তুমি ম উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হলে। একদিন কলেজে থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। তুমি রাস্তার ওপর গোপালদার সাথে কি যেন কথা বলছিলে, গোপালদা তোমার হাত ধরে টানাটানি করছিলো। তুমি বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করেছিলে। আমি তোমাকে সাহায্য করতে গেলাম তারপর, ছিঃ ছিঃ। !তুমি একটা ইঁট তুলে গোপালদার মাথায় মেরে ছিলে। গোপালদা আহঃ করে পড়ে গেলো । আমি দেখি তার মাথা থেকে রক্তের স্রোতে মাটি ভিজে যাচ্ছে। নাকে হাত দিয়ে দেখি নিঃস্বাস পড়ছে না। আমি তোমাকে বাড়ি চলে যেতে বলি। তুমি আমার কথা শুনতে চাওনি। ওদিকে গ্রামের কয়েকজন গোপালদাকে খুঁজতে বেরিয়েছে। নিরুপায় দেখতে পেয়েছিলো। আমি তোমাকে নিয়ে ছুটতে পালিয়ে গালাম।। “
ও বলল” পালিয়ে কোথায় আর গেলাম তুমি তোমার মাসির বাড়িতে গেছিলে।”
আমি বললাম” হুঁ কিন্তু আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই ভোর বেলায় তুমি বেড়িয়ে গেছিলে,,,”
ও বলল “সব মনে আছে সেই দিন তোমাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। গোপলদা রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী সদস্য। তোমার উজ্জ্বল কেরিয়ারটা নষ্ট করি কিভাবে বললো?? আমি থানাতে চলে যাই। নিজের কাপড় ছিঁড়ে জানিয়ে দিলাম, গোপন দা আমাকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিলো বলে আমি খুন করেছি ওর। আসলে তোমাকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। আর আমার তবু দুই বছরের জেল হলো। তুমি তো শহরে এলে পড়াশোনা করতে। ফিরেছিলে ঠিকই। কিন্তু জেল খাটা আসামীকে তোমার বাবা বৌ হিসাবে মেনে নেবে না?? তাই সেইদিন তোমাকে অপমান করে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। এই কথাটা জানতে চেয়েছিলাম আমি তোমাকে। কিন্তু তুমি তো অনেক দূরে চলে গেলে। “
ও চোখ জল ভরে গেল। আমি বললাম “চলো তোমাকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসি..”
ও বললো” তুমি তো বাইক এনেছো,”
আমি বললাম” কেন আগে বুঝি আমার বাইকে তুমি চড়ো নি,,,”
ও বললো” তখন আলাদা কথা ছিলো। আজ অন্য রকম ব্যাপার, তোমার বৌ তোমাকে বকবে।”
আমি বললাম” ওসব ভাবতে হবে না। চললো ছেড়ে দিয়ে আসি।”
অনেক দিন পর বাইক রাইড করলাম ওকে নিয়ে। খুব অল্প সময়ে পথটা শেষ হয়ে গেলো। ওর বাড়িটা ছোট গলির মধ্যে পরে হয়তো চিনতেও পারবো না। কারণ বাড়িটাতে লাইট ছিলো না।
বাড়িতে ফিরে বোনকে ফোন করালাম। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম “তোর বন্ধু , মামপির কথা মনে আছে তোর?”
ও ওর স্বভাব মতো আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল ” কেন মনে থাকবেনা, মনে আছে। তোর বাড়ির কাছে বিয়ে হয়েছিল। ওর কপাল খারাপ জানিস, দিঘা বাইক করে ঘুরতে যাওয়ার সময় অ্যাকসিডেন্ট করে মারা গেছে ও”
কথাটা শুনে আমি ফোন টা ধরে চুপ করে গেলাম ।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,