বাতিটা ( মায়ের জন্মদিন স্মরণে) Batita (Mayer Janmodin Sarone)-নবনীতা দেবসেন ( Nabaneeta Dev Sen )
-

শেয়ার করুন

আজকের কবিতাটি কবি নবনীতা দেবসেন (Nabaneeta Dev Sen)-এর লেখা একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বাতিটা  ( মায়ের জন্মদিন স্মরণে) Batita (Mayer Janmodin Sarone)

— ” এইবারে শুয়ে পড়ো মাগো, 

এগারোটা বেজে গেছে।”

—“এগারোটা আবার রাত নাকি? 

তুই শুয়ে পড়, তোর কাল কলেজ রয়েছে।”

মা বসে আছেন তাঁর ইজিচেয়ারে

সরু নাকে মোটা চশমা

ফর্সা আঙুলে আতসকাচটা ধরা

কোলের ওপরে বিছানো স্টেটসম্যান। 

পাশের টেবিলে ফ্লাস্কে চা, ঔষধবিসুধ, 

রুপোর ডিবিতে পান আর জর্দা, 

পেতলের পিকদান, পেতলের ক্যাশবাক্সো। 

পিছনের টিপয়ে মাটির ঘটে

মা’র প্রিয় রজনিগন্ধার গুচ্ছ, 

আর বেতের টেবিল ল্যাম্প, আগরতলায় তৈরি—

সামনে টিকটিক করছে অ্যালার্ম ঘড়িটা। 

ট্রাভেলিং ক্লক। 

মা কাগজের পাতা ওলটালেন। 

প্রচন্ড ঘড় ঘড় শব্দে শব্দহীন রাত্রি টুকরো হলো। 

বই বন্ধ করে আমি উঠে আসি। 

ঘরে পা দিতেই একগলা রজনীগন্ধার

গন্ধের গভীরে ডুবে নাই। 

চেয়ারে বসেই ঢুলছে নার্স মেয়েটি। 

-” মাগো, শুয়ে পড়ো এইবারে, 

রাত দেড়টা বাজে”—

—“রাত দেড়টা?” ধমকে ওঠেন, 

” এখনও শুসনি তুই ? সকালে কলেজ ? “

বকুনি খেয়ে ও বলি, নির্লজ্জ বেহায়া—

—“শরীর যে খারাপ হবে, এভাবে জেগো না”—

—“শরীর ?” এক গা গয়নার মতো ঝলমলিয়ে হেসে ফেলেন মা। 

—“আর কত খারাপ হবে রে, শরীর ? 

আর—হবেই বা কী, শরীর দিয়ে ?”—

আরেকবার যেতেই হয়, নিজে শোওয়ার আগে। 

” আড়াইটে বাজেলো, মাগো, ক্ষান্ত দাও ;

খাটে শোবে চলো।”

—“শোবো, শোবো, এইটুকুনি বাকি—

পড়া তো সহজ নেই, ছানির দৌলতে ?”

সামান্য অপ্রস্তুত হেসে, ডুবে যান ছাপার হরফে। 

টেবিলল্যাম্পের আলো, আতসকাচের

উদ্ভাসিত মনোযোগে

অ্যালার্ম ঘড়ির টিকটিক মুছে যায়। 

ফিরে আসতে আসতে শুনি

নার্স মেয়েকে বলেছেন— ‘না’, না,বাছা, 

নিবিয়ে দিয়ো না আলো, 

বাতিটা জ্বলুক অমনি

আরো এক পৃষ্ঠা বাকি আছে”—

আরো এক পৃষ্ঠা বাকি, আরো এক

প্যারাগ্রাফ, আরো একটা বাক্য বাকি—

আরো একটি শব্দ দাও, নার্সমেয়ে, 

আরো একটি দিন।


শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন