শোকের মাঝে সুখ
বরুণ হালদার
এখন শীতের অন্তিম লগ্ন,
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ প্রহর।
উষ্ণতার পরশ শীর্ণ শাখায়,
দিকে দিকে কচি পাতা আর মুকুলের আনাগোনা।
আজ একুশে ফেব্রুয়ারি,
ঢাকা শহরে সকলের সাথে,
সারমেয়, বায়স ও শান্তির দূত পায়রা,
অংশ নিয়েছিল একশো চুয়াল্লিশ ধারায়।
আকাশ বাতাস থমথমে,
কল-কারখানা ঘুমিয়ে,
গাড়ি-ঘোড়া বিশ্রামে,
স্কুল কলেজ বাজার ঘাট শুনশান,
চারিদিক একেবারে নিস্তব্ধ আগেই !
কিন্তু , বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা,
মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তানি ঘৃণ্য চক্রান্ত।
মাতৃভাষা হারানোর হাড় হিম করা আতঙ্কে,
তাদের রক্ত টগবগ করে ফুটছে।
শিরায় শিরায় ছুটছে,
মাতৃভাষা বাংলা রক্ষার উন্মাদনার স্রোত।
ভয় কে জয় করে,
তারা বেরিয়ে পড়েছিল রাজধানীর পথে,
অন্যায়ের প্রতিবাদ আর মৌলিক দাবিতে।
রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে, নিমেষে নেমে এলো,
হানাদারের বর্বরোচিত তান্ডব।
একের পর এক গুলির শব্দ,
আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে,
রক্তে রঞ্জিত হলো ঢাকার রাজপথ,
বীর সন্তানেরা লুটিয়ে পড়ল,
মায়ের স্নেহের আঁচলে।
আজও মননে দেখতে পাই,
চেতনে দেখতে পাই,
সেই নারকীয় দৃশ্য !
পাই তাজা রক্তের গন্ধ ।
কান পাতলে আজ ও শুনতে পাই,
তাদের করুন আর্ত চিৎকার,
ছিন্নভিন্ন দেহে,
মরণ যন্ত্রণা উপেক্ষা করে,
শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত বলছে,
বলে চলছে,
বাংলা আমার মায়ের ভাষা,
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,
বাংলা চাই, বাংলা চাই।
মাতৃগর্ভ থেকে উৎসারিত রক্ত কণিকায় বাংলা ভাষা,
সেই রক্তের প্লাবনে স্বীকৃত রাষ্ট্রভাষা,
আমার মাতৃভাষা।
তরুণ রক্তস্রোত দেশের গণ্ডি পেরিয়ে,
বিশ্ব সভায়,
স্বীকৃত বাংলা ভাষা,
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে,
বাঙালির গর্বের ফেব্রুয়ারি।
হে বিজয়ী বীর,
তোমাদের আত্মত্যাগ,
আমরা কোনদিন ভুলবো না ভুলবো না,
ভুলবো না।