ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘরে থাকি;
পাশে এক বিরাট প্রাসাদ
প্রতিদিন চোখে পড়ে;
সে প্রাসাদ কী দুঃসহ স্পর্ধায় প্রত্যহ
আকাশকে বন্ধুত্ব জানায়;
আমি তাই চেয়ে চেয়ে দেখি।
চেয়ে চেয়ে দেখি আর মনে মনে ভাবি –
এ অট্টালিকার প্রতি ইঁটের হৃদয়ে
অনেক কাহিনী আছে অত্যন্ত গোপনে,
ঘামের, রক্তের আর চোখের জলের।
তবু এই প্রাসাদকে প্রতিদিন হাজারে হাজারে
সেলাম জানায় লোকে, চেয়ে থাকে বিমূঢ় বিস্ময়ে।
আমি তাই এ প্রাসাদে এতকাল ঐশ্বর্য দেখেছি,
দেখেছি উদ্ধত এক বনিয়াদী কীর্তির মহিমা।
হঠাৎ সেদিন
চকিত বিস্ময়ে দেখি
অত্যন্ত প্রাচীন সেই প্রাসাদের কার্নিশের ধারে
অশ্বত্থ গাছের চারা।
অমনি পৃথিবী
আমার চোখের আর মনের পর্দায়
আসন্ন দিনের ছবি মেলে দিল একটি পলকে।
ছোট ছোট চারাগাছ-
রসহীন খাদ্যহীন কার্নিশের ধারে
বলিষ্ঠ শিশুর মত বেড়ে ওঠে দুরন্ত উচ্ছ্বাসে।
হঠাৎ চকিতে,
এ শিশুর মধ্যে আমি দেখি এক বৃদ্ধ মহিরুহ
শিকড়ে শিকড়ে আনে অবাধ্য ফাটল
উদ্ধত প্রাচীন সেই বুনিয়াদী প্রাসাদের দেহ।
ছোট ছোট চারাগাছ-
নিঃশব্দে হাওয়ায় দোলে, কান পেতে শোনে;
প্রত্যেক ইঁটের নিচে ঢাকা বহু গোপন কাহিনী।
রক্তের,ঘামের আর চোখের জলের।
তাই তো অবাক আমি, দেখি যত
অশ্বত্থ চারায়
গোপনে বিদ্রোহ জমে, জমে দেহে শক্তির বারুদ;
প্রাসাদ-বিদীর্ণ-করা বন্যা আসে শিকড়ে শিকড়ে।
মনে হয়,এইসব অশব শিশুর
রক্তের,ঘামের আর চোখের জলের
ধারায় ধারায় জন্ম,
ওরা তাই বিদ্রোহের দূত।।