পাথর ভাঙতে ভাঙতে অনেকটা দূর চলেএসেছি,অনেকটা দূর – তুমি এখানেও নেই,
নেই কেন কে জানে, পাখিটাও এখানে নেই
এখানে যে নেই সে কথা কেউই জানে না কিন্তু অটুট বিশ্বাসে সবাই প্রানপনে পাথর ভাঙছে,
যেন হাতমুখ ফেটে অনেকটা রক্ত ঝরলেই তোমাকে পাবে,
পাথর ভাঙার সাথে সাথে গালাগালি কামড়াকামড়ি রক্তারক্তির বিরাম নেই, যেন সব্বাই সশ্রম কয়েদি –
যেন এটাই সেই শেষ পাথরটা যেটা ভাঙলেই জেলখানা শেষ।
যেন এটা ভাঙলেই নিশ্চিতে বসে পান্তাভাতে পেঁয়াজে চুনো মাছ কড়া করে ভাজা, খেয়ে রোদে শীতঘুম !
আসলে বাঁশের খাঁচা বেচতে বেচতে পাখিটাকে বেচে দিয়েছে বলে শাস্তি – সাতদিন ঝুলে ছিল ফাঁসিকাঠে,
তারপর এখন সশ্রম কারাদণ্ডে শুকনো পাহাড়ে নিজেরাই ভেঙে ভেঙে চৌচির ! কদ্দিন কে জানে !
আসলে তোমাকে সেই পাবে যে তোমাকে সকাল সন্ধ্যে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেয় না,
পড়ন্ত বিকেলে পাত্তা দেয় না, খালি পেটে ময়লা চাদরটায় আপাদমস্তক ঢেকে দিব্যি ঘুমোয়,
দিব্যি ঘুমোতে পারে, থোড়াই কেয়ার, যদিও বাসিমুখ, পেট পিঠ খিদেয় এক হয়ে গেছে,
আসলে তোমাকে সেই পেতে পারে যে কিনা হাতে চাবুকওলা ভয়ঙ্কর পাহারাদারটার মুখে সশব্দে হিসি করে
–পাগলা সূর্য ডুবছে বাড়ি যা নইলে ওই ভূত ধরবে – এই বলে নির্দ্বিধায় পাশ ফিরে শুতে পারে।
সে জানে ক্লিওপেট্রা তোমাকে কোথায় পাথরে ঠেসে চেপে ধরে ভালোবাসা আর সম্ভ্রম আদায় করে নিতে হয়,
আর জানে বোধহয় কখন কোথায় সুড়সুড়ি দিলে তোমার উত্তেজনা, আদর আর পাত্তা পাওয়া যায়।
আর জানে কি করে সে পাখিটাকে ফেরত পেতে হয় তোমার কাছ থেকে !
উন্মত্তের মতো পাথর ভাঙতে ভাঙতে অনেকটা চলে এসেছি আমরা,
আমরা বেচুবাবুরা যারা খাঁচা বেচতে বেচতে পাখিটাকেও বেচে খেয়েছি।
পাখিটা নিশ্চয়ই এই পাথরের খাঁজে খাঁজে কোথাও লুকিয়ে, না পাওয়া অবধি সশ্রম কারাদন্ড থেকে মুক্তি নেই।
পাথর ভাঙতে ভাঙতে অনেকটা দূর চলেএসেছি,অনেকটা দূর – তুমি বা পাখিটা এখানেও নেই,
নেই কেন বা কোথায় যে পালিয়েছে কে জানে !
পাথর ভাঙতে ভাঙতে কেন যে অনেকটা দূর চলেএসেছি কে জানে !