দুর্গা
- কৌস্তুভা গুহ ব্যানার্জি

শেয়ার করুন

এই লেখনীর সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক। সমাজের এক কঠিন বাস্তবকে ছন্দের মাধ্যমে প্রকাশ করার প্রয়াস মাত্র।

——————————————————————–

মেঠো পথের বাঁকে, ছোট্ট একটা গাঁ,

পথের দু-ধারে, শাল, তমালের সারি।

এখনও রয়েছে সেই, ছোট্ট দুর্গার ধুলো মাখা পা।

ঘন কালো মেঘের মতো চুল,

পরনে ছিল তার, টুকটুকে লাল শারি,

কাজল কালো নয়ন যে তার, দেখেছিল স্বপ্ন,

হয় তো কোনো একদিন,

গ্রাম থেকে শহরে দেবে সে পারি।

ভেবে ছিল কি সে –

বাগানের আম, পেয়ারা চুরি করতে করতে,

অবশেষে নিজেই যাবে চুরি?

বাবার হাত ধরে, প্রতি শনিবার হাটে যেতো সে,

এখনও জমজমাট শিমুল গঞ্জের হাট

সেই ধুলো মাখা ছোট্ট দুটো পায়ে,

করত সে পার তেপান তরের মাঠ।

আজও তাকে খেলতে ডাকে,

পুকুর পাড়ে ব্যাঙের দল।

তারা ভাবে,“অনেক দিন দুর্গার সাথে, 

বিদ্ঘুটে সুরে করিনি তো কোলাহল”। 

দুর্গা, হ্যাঁ, সেই ছোট্ট দুর্গা,

গ্রামের শেষ প্রান্তের বাঁশ বাগানে

রয়েছে যে, মাটি চাপা.

তার অপেক্ষা এক পৈশাচিক মানুষ,

যার জঘন্য পাপ আজও রয়েছে ধামা-চাপা।

সেই পৈশাচিক মানুষ,

যে ওই নিষ্পাপ ফুলকে করেছে অপবিত্র।

সেই পৈশাচিক মানুষ,

যে ঝড়ের রাতে একলা দুর্গা কে নিরস্ত্র দেখে,

তার দেহে এঁকেছে হাজারো ক্ষত।

সেই পৈশাচিক মানুষ,

যার হাতে দুর্গা, নির্মমভাবে হয়েছে নিহত।

দুর্গার পায়ের নূপুর আজও বাজে,

মাটির নিকানো উঠোনে।

দুর্গার চাপা কষ্ট আজও,

কাঁপাই পুকুরের জল, ঝড় তোলে আম বাগানে,

দুর্গা গ্রামবাসীর কাছে  জীবিত আজও,

দুর্গার নিষ্পাপ হাসি রয়েছে তাদের মনে-প্রাণে।

দুর্গা আজও আছে অনিদ্রাই,

চোখে তার বড়ই  ক্লান্তি,

তার অপেক্ষা শুধু, সেই পিশাচের  মৃত্যু

তবেই পাবে সে চিরতরে শান্তি।

না যানি, এমন কত দুর্গা –

হয়েছে ওশূরের শিকার।

নিরস্ত্র দুর্গারা তাই আজ সমাজ কে –

জানায় চরম ধিক্কার।

ওহে! নরক সমাজ, পিশাচ মানুষ,

বন্ধ করো শিশু ধর্ষণ ।

শত দুর্গার অভিশাপ এ যে পুড়ে হবে ছাই,

সমাজের বুকে লাগবে আগুন।

উপহাস করে বলবে ওরা তখন,

“ওই দেখো জ্বলছে আগুন, পুড়ছে সমাজ, 

অবশেষে লেগেছে আগুন। 

আহ্! কি অপূর্ব শান্তি, 

অবশেষে লেগেছে আগুন”।


শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন