Jibanananda Das Poems ~ জীবনানন্দ দাশের কবিতা

জীবনানন্দ দাশের জীবনী, এবং জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত জনপ্রিয় কবিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। Jibanananda Das short biography with Jibanananda Das poems are given below.

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)
উৎস: উইকিপিডিয়া

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) ১৭ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৯৯খ্রিস্টাব্দে, বাংলাদেশের অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ২২শে অক্টোবর ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে, ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় তিনি পরলোক গমন করেন।

বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি ছিলেন একাধারে আধুনিক কবি, লেখক, ঔপন্যাসিক,প্রাবন্ধিক, গল্পকার, দার্শনিক ও গীতিকার, সম্পাদক এবং অধ্যাপক।

বিশেষত জীবনানন্দের কাব্যে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ হয়ে উঠেছে বিচিত্র চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি‘ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ‘কল্লোল‘ পত্রিকায় প্রথম জীবনানন্দ দাশ-এর আত্মপ্রকাশ ‘নীলিমা‘ কবিতার মধ্য দিয়ে।

জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম – সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা,শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।

তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন‘ র জন্য নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সন্মেলনে রবীন্দ্র-স্মৃতি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পুরস্কার পেয়েছেন।

তার রচিত অন্যতম ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা‘ কাব্যগ্রন্থটির জন্য, ভারত সরকারের অনুমোদিত সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন।

কবিতা

Title

জীবনানন্দ দাশ -এর কবিতা সমূহ (Jibanananda Das Poems)

Shomudrochil (সমুদ্রচিল) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সমুদ্রচিল (Shomudrochil)

সমুদ্রচিলের সাথে আজ এই রৌদ্রের প্রভাতে
    কথা ব’লে দেখিয়াছি আমি;
    একবার পাহাড়ের কাছে আসে,
    চকিতে সিন্ধুর দিকে যেতেছে সে নামি;
    হামাগুড়ি দিয়ে ভাসে ফেনার উপরে,
    মুছে যায় তরঙ্গের ঝড়ে।
    দাঁড়ায়েছি শতাব্দীর ধুলো কাঁচ হাতে।।

তরঙ্গের তারা খেয়ে চ'লে যায় আরো দূর তরঙ্গের পানে-
    ফেনার কান্তারে
    বৃষ্টির প্রথম রোদ যেইখানে
    তাহার সোনালি ডানা ঝাড়ে;
    যেখানে আকাশ নীল কোলাহলময়,
    সমুদ্রের করিছে দূর সমুদ্র সঞ্চয়,
    দিগন্ত হারায়ে যায় দিগন্তের প্রাণে।।

চঞ্চল ধবল বুকে নাচিতেছে ফেনার আঙুল;
    ধানের শিষের মত দু'পায়ের শিরা
    নাচিছে স্পানিশ টাঙ্গো নীল ঢেউয়ে;
    হৃদয় করিছে পাম মালাবার হাওয়ার মদিরা;
    ট্রম্‌ ট্রম্‌- ট্রাম্‌ ট্রাম্‌- ড্রামের মতন
    শৈলে শৈলে সমুদ্রের রুক্ষ আন্দোলন;
    রৌদ্রে রৌদ্রে ঝলসায় ঝিনুকের  ফুল।।

বিজ্ঞান কি মস্তিষ্কের বাক্সের মতন একাকী?
    তোমার শরীরে জল- দ্রাক্ষার আঘ্রাণ;
    তোমার হৃদয়ে পেকে ঝরিতেছে রৌদ্রের ক্ষেত
    জাগিতেছে নব নব শস্যের সন্তান;
    আমরা বন্দরে ফিরি- জনতায়- ঘূর্ণিস্রোতে কুকুরের মুণ্ডে
                                        লোল আঁখি
    পাবে নাকি লেজ তার? হো-হো- পাবে নাকি!
    পাবে নাকি লেজ খুঁজে কুকুরের মত লোল আঁখি।।

    ছেড়ে দিয়ে উত্তরের বাতাসের প্রাণে
    জন্মেছে তোমার্ডানা- জেগেছে হৃদয়;
সহস্র শতাব্দী গিঁট কাটায়েছি পথ আর ঘরের আঘ্রাণে-
    আনন্দের পাইনিক' তবু পরিচয়;
    জন্মেনি ধবল ডানা বিজ্ঞানের অগ্রসর চিরি
    ভেঙ্গে গেছে আকাশের- নক্ষত্রের সিঁড়ি,
    উৎসব খুঁজেছি রাতবিরেতের গানে।।

পৃথিবীর দিকে দিকে ছড়ায়েছি মনোবীজ, আহা,
    আকাঙ্ক্ষার নিঃসঙ্গ সন্তান;
আথবা ঘাসের দেহে শুয়ে শুয়ে কুয়াশায়
    শুনেছি ঝরিতে আছে ধান;
    অথবা সন্ধ্যার নীল জনালায়
    অদৃশ্য কোকিল এসে গায়
এইসব বেদনার কর্কশ-রেডিয়ামে সারেনাক' তাহা।।

মাঝে মাঝে একবার ধরা দেই নক্ষত্রের হাতে
    চ'লে আসি সমুদ্রের পাশে;
যে ক্ষেত ফুরাতে আছে- ফুরাইয়ে গেছে
    তার তৃষ্ণা মিটিছে আকাশে;
চেয়ে দেখি সেই নীল আকাশের ছবি;
সমুদ্রের অজান্তব জানালার গল্পের সুরভি;
রৌদ্রের ডানার ভেসে সেইখানে পৃথিবী হারাতে
চাই আমি; সমুদ্রচিলের খেলা তুলে নিয়ে হাতে।।

                    ।।২।।
রঙিন বিস্তৃত রৌদ্রে প্রাণ তার করিছে বিলাস;
কোনদিন ধানক্ষেতে পৃথিবীর কৃষকের প্রাণ
এই রৌদ্র পায় নাই,- জলপাই পল্লবের ফল,
জ্যৈষ্ঠের দুপুরে মাছি যে উল্লাসে গেয়ে গেছে গান,
কুমারী কোমল ঘাড় নুয়ে চুপে যেই পক্ক রৌদ্রে বেণী করিছে বিন্যাস,
নীল হয়ে বিছায়েছে পৃথিবীর মধুকূপী ঘাস,
তরমুজ ক্ষেতে শুয়ে স্বপন দেখেছে চৈত্রমাস,
তার চেয়ে আরো দামী গাঢ় মদে প্রাণ তার করিছে বিলাস।।

পৃথিবীতে যেই রূপ কোনদিন দেখে নাই কেউঃ
সিংহলের হীরা রত্ন নারী লুটে নাবিকের দল
    ভারত সমুদ্রে নেমে নক্ষত্রের রজনীতে
তারপর ভোরবেলা দেখেছিল স্ফটিকের মত যেই জল;
    তরঙ্গের পর ঘন তরঙ্গের মধু আর দুধ,
    মেঘের গোলাপী মুখ- রৌদ্রের বুদ্বুদ;
তবু তারা দেখে নাই পুরুভুজ-বিছানায় নূপুর বাজায়ে নীচে ঢেউ
বারুণির জানালায়ঃ সিন্ধুচিল- মক্ষিকারা ছাড়া তাহা কেউ জানে নাক কেউ।।

ধ্বনিত ঢেউয়ের অগ্নি বয়ঃসন্ধি-দিবসের স্তন হয়ে রক্তে নেমে আসে!
    তরঙ্গের উষ্ণ নীল তরমুজ ক্ষেতে
    আমারে খুঁজিয়া পায় মৃত্যু যেনঃ
        বিস্তৃতির পথে যেতে-যেতে
    সমস্ত পৃথিবী যেন মিশে যায় রৌদ্রের সাগরে;
    সিন্ধুচিল আর তার বনিতা যেখানে খেলা করেঃ
মরণ আমারে যেন পায় সেই দারুচিনি হাওয়ার আশ্বাসে।।

সমুদ্রচিল (Shomudrochil) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Udayosto (উদয়াস্ত) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) উদয়াস্ত (Udayosto)

পৃথিবীতে ঢের দিন বেঁচে থেকে যখন হয়েছে পূর্ণ সময়ের অভিপ্রায়-
আগাগোড়া জীবনের দিক চেয়ে কে আবার আয়ু চায়?
যদিও চোখের ঘুম ভুলে গিয়ে মননের অহঙ্কারে চর্বি জ্বালায়

অপ্রেমিক, কোনো কিছু শেষ সত্য জেনে নেবে বিষয়ের থেকে।
তবু কোনো জাদুকর পুরানো স্ফটিক তার যায় নাই রেখে।
সময় কাটাতে হয় ব্যবহৃত হস্তাক্ষরে চীবরের ছায়াপাত দেখে।

অথবা উদ্রিক্ত যারা হয় নাক'- চিরকাল থাকে সমীচীন,-
তাহাদের মুণ্ড যেন কালো হাঁড়ি- মাচার উপরে সমাসীন;
মৃত্যু নাই তাহাদের;- জানে সব দেবী, পরী, জিন।

আর যারা বহুদিন পৃথিবীতে মেধে- মনে- ছিল কর্মক্ষম,
তারপর বুড়ো হয়ে স্মরণ করিতে চায় অবলুপ্ত মলয়াচলমঃ
তাদের হৃদয়ে ঢের মেষ আছে নাই কোনো শুভ্রঘ্রাণ গম।

পৃথিবীতে ঢের দিন বেঁচে থেকে যখন হয়েছে পূর্ণ সময়ের অভিপ্রায়-
আগাগোড়া জীবনের দিক চেয়ে কে আবার আয়ু চায়?
কন্যা তুলা কর্কটের বৃশ্চিকের আবার ঘটুক সমবায়।

উদয়াস্ত (Udayosto) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Gotibidhi (গতিবিধি) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) গতিবিধি (Gotibidhi)

সর্বদাই প্রবেশের পথ র'য়ে গেছে;
এবং প্রবেশ ক'রে পুনরায় বাহির হবার;-
অরণ্যের অন্ধকার থেকে এক প্রান্তরের আলোকের পথে;
প্রান্তরের আলো থেকে পুনরায় রাত্রির আঁধারে;
অথবা গৃহের তৃপ্তি ছেড়ে দিয়ে নারী, ভাঁড়, মক্ষিকার বারে।

এই সব শরীরের বিচরণ।
ঘুমায়ে সে যেতে পারে।
(সচেতন যাত্রার পথ তবু আরো প্রসারিত।
আলো অন্ধকার তার কাছে কিছু নয়।)
উট পাখি সারাদিন দিবারৌদ্রে ফিরে
বালির ভিতরে মাথা রেখে দিয়ে আপনার অন্ধ পরিচয়
হয়তো ভা নিয়ে যায়,- তা' পাখির বিনয়।

কোনো এক রমণীকে ভালোবেসে,
কোনো এক মরকের দেশে গিয়ে জোর পেয়ে,
কোন এক গ্রন্থ প'ড়ে প্রিয় সত্য পেয়ে গেছি ভেবে,
অথবা আরেক সত্য সকলকে দিতে গিয়ে অভিভূত হয়ে,
শরতের পরিষ্কার রাত পেয়ে সব চেয়ে পোষাকী, উজ্জ্বল-
চিন্তা তবু বর্ষারাতে দ্বার থেকে দ্বারে
ভিজে কুকুরের মত গাত্রদাহ ঝাড়ে।
সমাধির ঢের নিচে- নদীর নিকটে সব উঁচু উঁচু গাছের শিকড়
                                        গিয়ে নড়ে।

সেইখানে দার্শনিকের দাঁত ক্কাথ পান করে
পরিত্যাক্ত মিঠে আলিউ, মরামাস, ইঁদুরের শবের ভিতরে;-
জেনে নিয়ে আমরা প্রস্তুত ক'রে নিই নিজেদের;
কেননা ভূমিকা ঢের র'য়ে গেছে-
বোঝা যাবে (কিছুটা বিনয় যদি থেকে থাকে চোখে)-
সূশ্রী ময়ূরও কেন উটপাখি সৃষ্টি ক'রেছিল
টানাপোড়েনের সুরে- সূর্যের সপ্তকে।

গতিবিধি (Gotibidhi) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Shomudrer Joley Aami Deho Dhuey (সমুদ্রের জলে আমি দেহ ধুয়ে) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সমুদ্রের জলে আমি দেহ ধুয়ে (Shomudrer Joley Aami Deho Dhuey)

সমুদ্রের জলে আমি দেহ ধুয়ে, চেয়ে থাকি নক্ষত্রের আকাশের পানে
চারিদিকে অন্ধকার: নারীর মতন হাত, কালো চোখ, ম্লান চুল ঝরে
যতদূর চোখ যায় নীলজল হৃষ্ট মরালের মতো কলরব করে
রাত্রিরে ডাকিতে চায় বুকে তার, প্রেম-মূঢ় পুরুষের মতন আহ্বানে
পৃথিবীর কত প্রেম শেষ হ’লো – তবু এই সমুদ্রের আকাঙ্খার গানে
বাধা নাই, ভয় নাই, ক্লান্তি নাই, অশ্রু নাই – মালাবার ঢেউয়ের ভিতরে
চারিদিকে নীল নারিকেল বন সোনালি ফুলের গন্ধে, বিস্ময়ের ভরে
জানে তাহা – কত দিন থেকে ওই মলয়ালী আর তা’র শিশু তাহা জানে

জানি না মাদ্রাজ নাকি এই দেশ? জানি না মালয় নাকি? কিংবা মালাবার ?
জানি না এ পৃথিবীর কোন্ পথ – কোন্ ভাষা কোন্ মুখে এখানে বাতাসে
জানি না যৌবন কবে শেষ হয়ে গেছে কোন্ পৃথিবীর ধুলোতে আমার
তবুও আমার প্রাণ তামিলের কিশোরের মতো ওই কিশোরীর পাশে
আবার নতুন জন্ম পায় আজ; কেউ নাই অন্ধকারে কবেকার ঘাসে
কত যে মৌরী খই ঝ’রে গেছে – চারিদিকে ফুটে সব উঠিছে আবার।।

কাব্যগ্রন্থ – রুপসী বাংলা

সমুদ্রের জলে আমি দেহ ধুয়ে (Shomudrer Joley Aami Deho Dhuey) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Tobu (তবু) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) তবু (Tobu)

সে অনেক রাজনীতি রুগ্ন নীতি মারী
মন্বন্তর যুদ্ধ ঋণ সময়ের থেকে
উঠে এসে এই পৃথিবীর পথে আড়াই হাজার
বছরে বয়সী আমি;
বুদ্ধকে স্বচক্ষে মহানির্বাণের আশ্চর্য শান্তিতে
চ’লে যেতে দেখে— তবু—অবিরল অশান্তির দীপ্তি ভিক্ষা ক’রে
এখানে তোমার কাছে দাঁড়ায়ে রয়েছি;
আজ ভোরে বাংলার তেরোশো চুয়ান্ন সাল এই
কোথাও নদীর জলে নিজেকে গণনা ক’রে নিতে ভুলে গিয়ে
আগামী লোকের দিকে অগ্রসর হ’য়ে যায়; আমি
তবুও নিজেকে রোধ ক’রে আজ থেমে যেতে চাই
তোমার জ্যোতির কাছে; আড়াই হাজার
বছর তা হ’লে আজ এইখানে শেষ হ’য়ে গেছে।

নদীর জলের পথে মাছরাঙা ডান বাড়াতেই
আলো ঠিকরায়ে গেছে— যারা পথে চ’লে যায় তাদের হৃদয়ে;
সৃষ্টির প্রথম আলোর কাছে; আহা,
অন্তিম আভার কাছে; জীবনের যতিহীন প্রগতিশীলতা
নিখিলের স্মরণীয় সত্য ব’লে প্রমাণিত হ’য়ে গেছে; দ্যাখো
পাখি চলে, তারা চলে, সূর্য মেঘে জ্ব’লে যায়, আমি
তবুও মধ্যম পথে দাঁড়ায়ে রয়েছি— তুমি দাঁড়াতে বলোনি।


আমাকে দ্যাখোনি তুমি; দেখাবার মতো
অপব্যয়ী কল্পনার ইন্দ্রত্বের আসনে আমাকে
বসালে চকিত হ’য়ে দেখে যেতে যদি— তবু, সে-আসনে আমি
যুগে-যুগে সাময়িক শত্রুদের বসিয়েছি, নারি,
ভালোবেসে ধ্বংস হ’য়ে গেছে তা’রা সব।
এ-রকম অন্তহীন পটভূমিকায়— প্রেমে—
নতুন ঈশ্বরদের বার-বার লুপ্ত হ’তে দেখে
আমারো হৃদয় থেকে তরুণতা হারায়ে গিয়েছে;
অথচ নবীন তুমি।

নারি, তুমি সকালের জল উজ্জ্বলতা ছাড়া পৃথিবীর কোনো নদীকেই
বিকেলে অপর ঢেউয়ে খরশান হ’তে
দিতে ভুলে গিয়েছিলে; রাতের প্রখর জলে নিয়তির দিকে
ব’হে যেতে দিতে মনে ছিলো কি তোমার?
এখনও কি মনে নেই?

আজ এই পৃথিবীর অন্ধকারে মানুষের হৃদয়ে বিশ্বাস
কেবলি শিথিল হ’য়ে যায়; তবু তুমি
সেই শিথিলতা নও, জানি, তবু ইতিহাসরীতিপ্রতিভার
মুখোমুখি আবছায়া দেয়ালের মতো নীল আকাশের দিকে
ঊর্ধ্বে উঠে যেতে চেয়ে তুমি
আমাদের দেশে কোনো বিশ্বাসের দীর্ঘ তরু নও।

তবু
কী যে উদয়ের সাগরের প্রতিবিম্ব জ্ব’লে ওঠে রোদে!
উদয় সমাপ্ত হ’য়ে গেছে নাকি সে অনেক আগে?
কোথাও বাতাস নেই, তবু
মৰ্মরিত হ’য়ে ওঠে উদয়ের সমুদ্রের পারে।


কোনো পাখি
কালের ফোকরে আজ নেই, তবু, নব সৃষ্টিমরালের মতো কলস্বরে
কেন কথা বলি; কোনো নারী
নেই, তবু আকাশহংসীর কণ্ঠে ভোরের সাগর উতরোল।

    (সাতটি তারার তিমির কাব্যগ্রন্থ)

তবু (Tobu) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Kartik Oghran 1946 (কার্তিক-অঘ্রাণ ১৯৪৬) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কার্তিক-অঘ্রাণ ১৯৪৬ (Kartik Oghran 1946)

পাহাড়, আকাশ, জল অনন্ত প্রান্তরঃ
সৃজনের কী ভীষণ উৎস থেকে জেগে
কেমন নীরব হয়ে রয়েছে আবেগ;
যেন বজ্রবাতাসের ঝড়
ছবির ভিতরে স্থির- ছবির ভিতরে আরো স্থির।

কোথাও উজ্জ্বল সূর্য আসে;
জ্যোতিষ্কেরা জ্ব'লে ওঠে সপ্রতিভ রাতে
আদি ধাতু অনাদির ধাতুর আঘাতে
নারীশিক্ষা হত যদি পুরুষের পাশেঃ
আকাশ প্রান্তর নীল পাহাড়ের মত
নক্ষত্র সূর্যের মত বিশ্ব-অন্তর্লীন
উজ্জ্বল শান্তির মত আমাদের রাত্রি আর দিন
হবে নাকি ব্রহ্মান্ডের লীন কারুকার্যে পরিণত।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

কার্তিক-অঘ্রাণ ১৯৪৬ (Kartik Oghran 1946) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Nirjana Shakksar (নির্জন সাক্ষর) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) নির্জন সাক্ষর (Nirjana Shakksar)

তুমি তা জানো না কিছু—না জানিলে,
আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে;
যখন ঝরিয়া যাবো হেমন্তের ঝড়ে’—
পথের পাতার মতো তুমিও তখন
আমার বুকের ’পরে শুয়ে রবে?
অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
সেদিন তোমার!
তোমার এ জীবনের ধার
ক্ষ’য়ে যাবে সেদিন সকল?
আমার বুকের ’পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল,
তুমিও কি চেয়েছিলে শুধু তাই;
শুধু তার স্বাদ
তোমারে কি শান্তি দেবে;
আমি ঝ’রে যাবো–তবু জীবন অগাধ
তোমারে রাখিবে ধ’রে সেইদিন পৃথিবীর ’পরে,
—আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে।

রয়েছি সবুজ মাঠে—ঘাসে—
আকাশ ছডায়ে অাছে নীল হ’য়ে আকাশে-আকাশে;
জীবনের রং তবু ফলানো কি হয়
এই সব ছুঁয়ে ছেনে’;—সে এক বিস্ময়
পৃথিবীতে নাই তাহা—আকাশেও নাই তার স্থল,
চেনে নাই তারে ওই সমুদ্রের জল;
রাতে-রাতে হেঁটে-হেঁটে নক্ষত্রের সনে
তারে আমি পাই নাই; কোনো এক মানুষীর মনে
কোনো এক মানুষের তরে
যে-জিনিস বেঁচে থাকে হৃদয়ের গভীর গহ্বরে

নক্ষত্রের চেয়ে আরো নিঃশব্দ আসনে
কোনো এক মানুষের তরে এক মানুষীর মনে।

একবার কথা ক’য়ে দেশ আর দিকের দেবতা
বোবা হয়ে পড়ে থাকে—ভুলে যায় কথা;
যে-আগুন উঠেছিলো তাদের চোখের তলে জ্ব'লে
নিভে যায়—ডুবে যায়—তারা যায় স্খ’লে।
নতুন আকাঙ্ক্ষা আসে—চ’লে আসে নতুন সময়—
পুরানো সে-নক্ষত্রের দিন শেষ হয়
নতুনেরা আসিতেছে ব’লে;
আমার বুকের থেকে তবুও কি পড়িয়াছে স্খ’লে
কোনো এক মানুষীর তরে
যেই প্রেম জ্বালায়েছি পুরোহিত হয়ে তার বুকের উপরে।
আমি সেই পুরোহিত—সেই পুরোহিত।
যে-নক্ষত্র ম’রে যায়, তাহার বুকের শীত
লাগিতেছে আমার শরীরে—
যেই তারা জেগে আছে, তার দিকে ফিরে
তুমি আছো জেগে—
যে-আকাশ জ্বলিতেছে, তার মতো মনের আবেগে
জেগে আছো;
জানিয়াছো তুমি এক নিশ্চয়তা—হয়েছো নিশ্চয়।
হ’য়ে যায় আকাশের তলে কতো আলো—কতো আগুনের ক্ষয়;
কতোবার বর্তমান হ’য়ে গেছে ব্যথিত অতীত—
তবুও তোমার বুকে লাগে নাই শীত
যে-নক্ষত্র ঝ’রে যায় তার।
যে-পৃথিবী জেগে আছে, তার ঘাস—আকাশ তোমার।
জীবনের স্বাদ ল’য়ে জেগে আছো, তবুও মৃত্যুর ব্যথা দিতে
পারো তুমি;
তোমার আকাশে তুমি উষ্ণ হ’য়ে আছো—তবু—
বাহিরের আকাশের শীতে

নক্ষত্রের হইতেছে ক্ষয়,
নক্ষত্রের মতন হৃদয়
পড়িতেছে ঝ’রে—
ক্লান্ত হ’য়ে—শিশিরের মতো শব্দ ক’রে।
জানোনাকো তুমি তার স্বাদ—
তোমারে নিতেছে ডেকে জীবন অবাধ,
জীবন অগাধ।

হেমন্তের ঝড়ে আমি ঝরিব যখন
পথের পাতার মতো তুমিও তখন
আমার বুকের ’পরে শুয়ে রবে? অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
সেদিন তোমার।
তোমার আকাশ—আলো—জীবনের ধার
ক্ষ’য়ে যাবে সেদিন সকল?
আমার বুকের ’পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল
তুমিও কি চেয়েছিলে শুধু তাই, শুধু তার স্বাদ
তোমারে কি শান্তি দেবে।
আমি চ’লে যাবো—তবু জীবন অগাধ
তোমারে রাখিবে ধ’রে সেইদিন পৃথিবীর ’পরে;
আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে।

নির্জন সাক্ষর (Nirjana Shakksar) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Joyjoyontir Surjo (জয়জয়ন্তীর সূর্য) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) জয়জয়ন্তীর সূর্য (Joyjoyontir Surjo)

কোনো দিন নগরীর শীতের প্রথম কুয়াশায়
কোনো দিন হেমন্তের শালিখের রঙে ম্লান মাঠের বিকেলে
হয়তো বা চৈত্রের বাতাসে
চিন্তার সংবেগ এসে মানুষের প্রাণে হাত রাখে;
তাহাকে থামায়ে রাখে।
সে চিন্তার প্রাণ
সাম্রাজ্যের উত্থানের পতনের বিবর্ণ সন্তান
হ'য়েও যা কিছু শুভ্র র'য়ে গেছে আজ,
সেই সোম-সুপর্ণের থেকে এই সূর্যের আকাশে-
সে-রকম জীবনের উত্তরাধিকার নিয়ে আসে।
কোথাও রৌদ্রের নাম-
অন্নের নারীর নাম ভালো ক'রে বুঝে নিতে গেলে
নিয়মের নিগড়ের হাত এসে ফেঁদে
মানুষকে যে আবেগে যতোদিন বেঁধে
রেখে দেয়,
যতোদিন আকাশকে জীবনের নীল মরুভূমি মনে হয়
যতোদিন শূন্যতার ষোলকলা পূর্ণ হ'য়ে- তবে
বন্দরে সৌধের উর্দ্ধে চাঁদের পরিধি মনে হবে;-
ততোদিন পৃথিবীর কবি আমি- অকবির অবলেশ আমি
ভয় পেয়ে দেখি- সূর্য উঠে;
ভয় পেয়ে দেখি- অস্তগামী।
যে-সমাজ নেই তবু র'য়ে গেছে, সেখানে কায়েমী
মরুকে নদীর মতো মনে ভেবে অনুপম সাঁকো
আজীবন গ'ড়ে তবু আমাদের প্রাণে
প্রীতি নেই- প্রেম আসে নাকো।
কোথাও নিয়তিহীন নিত্য নরনারীদের খুঁজে
ইতিহাস হয়তো ক্রান্তির শব্দ শোনে, পিছে টানে
অনন্ত গণনাকাল সৃষ্টি ক'রে চলে;
কেবলি ব্যক্তির মৃত্যু-গণনাবিহীন হ'য়ে প'ড়ে থাকে জেনে নিয়ে -তবে
তাহাদের দলে ভিড়ে কিছু নেই- তবু
সেই মহাবাহিনির মতো হ'তে হবে?

সংকল্পের সকল সময়
শূন্য মনে হয়।
তবুও তো ভোর আসে- হঠাৎ উৎসের মতো; আন্তরিকভাবে;
জীবনধারণ ছেপে নয়- তবু
জীবনের মতন প্রভাবে;
মরুর বালির চেয়ে মিল মনে হয়
বালিছুট সূর্যের বিস্ময়।
মহিয়ান কিছু এই শতাব্দীতে আছে, -আরো এসে যেতে পারে;
মহান সাগর গ্রাম নগর নিরুপম নদী-
যদিও কাহারো প্রাণে আজ রাত স্বাভাবিক মানুষের মতো ঘুম নেই,
তবু এই দ্বীপ, দেশ, ভয়, অভিসন্ধানের অন্ধকারে ঘুরে
সসাগরা পৃথিবীর আজ এই মরণের কালিমাকে ক্ষমা করা যাবে;
অনুভব করা যাবে স্মরণের পথ ধ'রে চলে;
কাজ ক'রে ভুল হ'লে, রক্ত হ'লে মানুষের অপরাধ ম্যামথের নয়  
কতো শত রূপান্তর ভেঙে জয়জয়ন্তীর সূর্য পেতে হলে।
—————————————————-
গ্রন্থ: বেলা অবেলা কালবেলা

জয়জয়ন্তীর সূর্য (Joyjoyontir Surjo) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Borsho Abahon (বর্ষ-আবাহন) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বর্ষ-আবাহন (Borsho Abahon)

ওই যে পূর্ব তোরণ-আগে
দীপ্ত নীলে, শুভ্র রাগে
প্রভাত রবি উঠলো জেগে
দিব্য পরশ পেয়ে,
নাই গগণে মেঘের ছায়া
যেন স্বচ্ছ স্বর্গকায়া
ভুবন ভরা মুক্ত মায়া
মুগ্ধ-হৃদয় চেয়ে।

অতীত নিশি গেছে চ'লে
চিরবিদায় বার্তা ব'লে
কোন আঁধারের গভীর তলে
রেখে স্মৃতিলেখা,
এসো-এসো ওগো নবীন
চ'লে গেছে জীর্ণ মলিন-
আজকে তুমি মৃত্যুবিহীন
মুক্ত সীমারেখা।

#অগ্রন্থিত কবিতা

বর্ষ-আবাহন (Borsho Abahon) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Paradim (প্যারাডিম) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) প্যারাডিম (Paradim)

সময়ের সুতো নিয়ে কেটে গেছে ঢের দিন
এক আধবার শুধু নিশিত ক্ষমতা
এনেছিল,- তারপরে নিভে- মিশে গেছে;
হৃদয় কাটাল কান।
বালুঘড়ি ব'লে গেলঃ সময় রয়েছে ঢের
সেই সুর দূর এক আশ্চর্য কক্ষের
চোখের ভিতরে গিয়ে স্বর্ণ দীনারের
অমোঘ বৃত্তের মত রূপ নিয়ে নড়ে।
বালুঘড়ি ব'লে গেলঃ সময় রয়েছে ঢের
সময় রয়েছে ঢের ইহাদের- উহাদের;
সমুদ্রের বালি আর আকাশের তারার ভিতরে
চ'লেছে গাধার পিঠ- সিংহ, মেষ, বিদূষ্ক,
মূর্খ আর রূপসীর বিবাহ ঘটক,
ক্রীতদাস কাফরী তেল ব'য়ে আনে।
সময় রয়েছে ঢের- সময় রয়েছে ঢের
সরবপ্রাহের সব অগণন গণিকারা জানে।

চারিদিকে মৃগয়ার কলরব- সময়ের বীজ।
অনেক শিকারী আজ নেমেছে আলোকে।
আমিও সূর্যের তেজ দেখে গেছি বহুক্ষণ
ভারুই পাখির মত চোখে;
ঘুরুনো আলোয় ঘুরে সংস্করে;- উড়িবার হেতু
যদিও নেইক' কিছু ক্ষিতিজ রেখার পথে আর।
বহু আগে রণ ক'রে গিয়েছিল বুদ্ধ আর মার;
অগ্নির অক্ষরে তবু গঠিত হয়েছে আজো সেতু।
ব্রহ্মার ডিমের সাথে একসাথে জন্মেছিল যারা ভালোবেসে
সেই স্বর্গ নরককে আবার ক্ষালন ক'রে- প্রমাণিত দেশে
তারাই তো রেখে দেবে,- মাঝখানে যদিও র'য়েছে আজ রক্তিম সাগর,
বিশ্বাসীরা চোখ বুজে ব'য়ে নেয় মুণ্ড আর কংকালের কেতু।
সম্রাটের সৈনিকেরা পথে পথে চ'রে
খুঁজে ফেরে কোন এক শুভলাঞ্ছন;

সফেন কাজের ঢেউয়ে মৃত্যু আছে- জানে;
তার আগে র'য়ে গেছে জীবন-মৃত্যুর অমিলন;
যেনো কোনো নরকের কর্নিশের থেকে ধীরে উঠে
কোনো এক নিম্নতর আঁধারের বিজৃম্ভিম কাক
আবার সাজাতে পারে দু'মুহূর্ত ময়ূরের মতন পোষাক,
সৈকতে বালির কণা নক্ষত্রের রোলে যদি এক সাথে জুটে
আবছায়া, অগ্নিভয়, অন্ধকার- সময়ের হাত ঠেলে ফেলে
অনাবিল অন্ত"সার নিতে দেয় খুঁটে।

সৈনিকের সম্রাটেরা স্থিরতর- তবু;
চারিদিকে মাতালের সাবলীল কাজ শেষ হ'লে
প্রতিধ্বনিত আর থাকে নাক' যখন আকাশে
জলের উপরে হেঁটে মায়বীর মত যায় চ'লে।
(গভীর সৌকর্য দেখে মানবীয় আত্মা জাগে জন্তুদের ভিড়ে;)
অবিস্মরণীয় সব ইতিহাস পর্যায়ের দিকে
চেয়ে দেখে সর্বদাই পৃথিবীর প্রবীণ জ্ঞানীকে
ডেকে আনে তারা নিত্য নতুন তিমিরে;
নিপুণ ছেলের হাতে লাটিমের মত ঘোরে' দ্বৈপায়ন বলে
ঘুরায়ে নিবিড় সেই প্যারাডিমটিরে।

'যখন চিনির দাম বেড়ে গেছে ভয়ঙ্কর
রাতা খায় সেচ্ছায় নুনের পরিজ।
সমস্ত ভণ্ডুল হয়ে গেল পৃথিবীর,
মসৃন টেবিলে ব'সে খেলে যায় ব্রিজ।
জীবঙ্কে স্বাভাবিক নিঃশ্বাসের মত মেনে নিয়ে
মঞ্চে বক্তৃতা দেয় কর গুণে- কুকুর ক্ষেপিরে'।
ব'লে গেল অত্যন্ত অদ্ভুত এক টুপিব্যবসায়ী নেমে এসে;
যেখানে সম্ভ্রম করা সমুচিত সেখানে ভাঁড়ের মত হেসে।

'সমস্ত সভার মাঝে তারপর
দম আর থাকে নাক' কোনো কুকুরের;
একটি মাছিও আর বসে নাক' বক্তার নাকে
একটি মশাও তাকে পায় নাক' টের;
এবং পায়ের নিচে পৃথিবীরো মাটি আর নেই
তবু সবি পাওয়া যাবে চালানির মাল ছাড়ালেই।'
ব'লে গেল অত্যন্ত অদ্ভুত এক টুপিব্যবসায়ী নেমে এসে;
যেখানে সম্ভ্রম করা সমুচিত সেখানে ভাঁড়ের মত হেসে।

'আমরা সকলে জানি বানরাজা নক্ষত্রের থেকে
সে জাহাজ এসে গেছে মুগশিরা তারকার দিকে;
হয়তো শরমা তাকে তুলে ধ'রে সারমেয়দের
নিকটে পাঠায়ে দেবে নির্জন তারিখে।
সম্প্রতি রুটিন তবে শেষ ক'রে- ঘুমাবার পরে
আবার সে দেখা দেবে আমাদের স্বাভাবিক সুবিধার তরে।'
ব'লে গেল অত্যন্ত অদ্ভুত এক টুপিব্যবসায়ী নেমে এসে;
যেখানে সম্ভ্রম করা সমুচিত সেখানে ভাঁড়ের মত হেসে।

প্যারাডিম (Paradim) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।