Jibanananda Das Poems ~ জীবনানন্দ দাশের কবিতা

জীবনানন্দ দাশের জীবনী, এবং জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত জনপ্রিয় কবিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। Jibanananda Das short biography with Jibanananda Das poems are given below.

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)
উৎস: উইকিপিডিয়া

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) ১৭ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৯৯খ্রিস্টাব্দে, বাংলাদেশের অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ২২শে অক্টোবর ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে, ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় তিনি পরলোক গমন করেন।

বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি ছিলেন একাধারে আধুনিক কবি, লেখক, ঔপন্যাসিক,প্রাবন্ধিক, গল্পকার, দার্শনিক ও গীতিকার, সম্পাদক এবং অধ্যাপক।

বিশেষত জীবনানন্দের কাব্যে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ হয়ে উঠেছে বিচিত্র চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি‘ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ‘কল্লোল‘ পত্রিকায় প্রথম জীবনানন্দ দাশ-এর আত্মপ্রকাশ ‘নীলিমা‘ কবিতার মধ্য দিয়ে।

জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম – সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা,শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।

তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন‘ র জন্য নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সন্মেলনে রবীন্দ্র-স্মৃতি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পুরস্কার পেয়েছেন।

তার রচিত অন্যতম ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা‘ কাব্যগ্রন্থটির জন্য, ভারত সরকারের অনুমোদিত সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন।

কবিতা

Title

জীবনানন্দ দাশ -এর কবিতা সমূহ (Jibanananda Das Poems)

Mrittu Shurjo Shongkolpo (মৃত্যু সূর্য সংকল্প) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) মৃত্যু সূর্য সংকল্প (Mrittu Shurjo Shongkolpo)

সর্বদাই অন্ধকারে মৃত্যু এক চিন্তার মতন;
আমাদের এই শতাব্দীর সাধ, স্বপ্ন, কাজ, প্রাণ
আচ্ছাদন ক'রে দিতে আসে।
ভোরের নিশ্চিন্ত মন কেমন সাহসে অনায়াসে
আলো হয়- সূর্য হয়- দেখ;
নদী- মেঘ- দিগন্তের পাহাড়ের নীল
বিচ্ছুরিত হয়ে ওঠে কেমন নিঃশব্দ অনাবিল।
আমরা প্রেমের কথা- জ্ঞান মুক্তি প্রগতির দিন
ঢের আগে শুরু ক'রে এখনো ব্রহ্মাণ্ড-অন্তর্লীন
সুরের ভিতরে সুর-অগ্নি হতে গিয়ে
বার বার অঙ্গারের অন্ধকারে সমাজ নিভিয়ে
মানুষের ইতিহাস-ঊর্ণা হয়ে আছি।

হে আকাশ, হে প্রতিভা, হে বিচিত্র উচ্ছ্রিত সূর্যের উজ্জ্বলন,
আমাদের রোগ, পাপ, বয়সের রূঢ় মরুভূমি
শেষ ক'রে মৃজনের অনাদির দীপ্তিকে আদিম
চুম্বনে বিজ্ঞান, প্রেম, প্রেমাগ্নি উড্ডীন কর তুমি।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

মৃত্যু সূর্য সংকল্প (Mrittu Shurjo Shongkolpo) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Tomra Shwopner Hatey Dhora Dao (তোমরা স্বপ্নের হাতে ধরা দাও) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) তোমরা স্বপ্নের হাতে ধরা দাও (Tomra Shwopner Hatey Dhora Dao)

তোমরা স্বপ্নের হাতে ধরা দাও—আকাশের রৌদ্র ধুলো ধোঁয়া থেকে স’রে
এইখানে চ’লে এসো; পৃথিবীর পথে আমি বহুদিন তোমাদের কথা
শুনিয়াছি—তোমাদের ম্লান-মুখ দেখিয়াছি—তোমাদের ক্লান্ত রক্তাক্ততা
দেখিয়াছি কত দিন—ব্যথিত ধানের মতো বুক থেকে পড়িতেছে ঝ’রে
তোমাদের আশা শান্তি, ম্লান মেঘে সোনালি চিলের মতো কলরব ক’রে
মিছে কেন ফেরো আহা—পৃথিবীর পথ থেকে হে বিষণ্ন, হে ক্লান্ত জনতা
তোমরা স্বপ্নের ঘরে চ’লে এসো—এখানে মুছিয়া যাবে হৃদয়ের ব্যথা
সন্ধ্যার বকের মতো চ’লে এসো ধূসর স্তনের মতো শান্ত পথ ধরে।

চারিদিকে রাত্রিদিন কলরব ক’রে যায় দাঁড়কাক বাদুরের মতো
পৃথিবীর পথে ওই—সেখানে কি ক’রে তবে শান্তি পা’বে মানুষ বলো তো ?
এখানে গোধূলি নষ্ট হয় নাকো কোনোদিন;—কয়লার মতো রং—ম্লান
পশ্চিমের মেঘে ওই লেগে আছে চিরদিন; কড়ির মতন শাদা করুণ উঠান
প’ড়ে আছে চিরকাল; গোধূলি নদীর জলে রূপসীর মতো মুখখানা দেখে
ধীরে—ধীরে—আরো ধীরে শান্তি ঝরে, স্বপ্ন ঝরে আকাশের থেকে।।

কাব্যগ্রন্থ – রুপসী বাংলা

তোমরা স্বপ্নের হাতে ধরা দাও (Tomra Shwopner Hatey Dhora Dao) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Jiboney Onek Dur (জীবনে অনেক দূর) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) জীবনে অনেক দূর (Jiboney Onek Dur)

জীবনে অনেক দূর সময় কাটিয়ে দিয়ে- তারপর তবু
চলার কিছুটা আরো পথ আছে টের পাই;-
সুমুখে বিস্ময়;-

দেখেছি সূর্যের আলো মাঝে মাঝে জলের কম্পন;
আশ্বিনের ঘন নীল আশ্চর্য আকাশে
দেখেছি আরোহী হাঁস বাষ্পের ভিতর থেকে আসে
হংসীর অনিমেষ দেহ লক্ষ্য ক’রে,
মিশে যায় খুব স্বচ্ছ আলোর ভিতরে।

কোথায় ফুরিয়ে যায় তারা সব- থেকে সফল।
অগ্নির উৎসের মতো সৃষ্টি নির্ঝর থেকে জেগে
আমারও শরীর মন মিশে যেতে চেয়েছে আবেগে।

জীবনে অনেক দূর (Jiboney Onek Dur) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Shotabdii Shesh (শতাব্দী শেষ) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) শতাব্দী শেষ (Shotabdii Shesh)

সূর্যগরিমার নিচে মানুষের উচ্ছ্রিত জীবন
          শুরু হ’ল- যখন সে শিশুর মতন;
নদীর জলের মত আশা দিয়ে উচ্চারিত হয়ে
          তবুও সে মানুষের মন।

রঙীন খেলনা, ঘোড়া, জাপানী লাটিম,
          আরব্যোপন্যাসের সেই পরী জিন উড্ডীন বক
                   নিয়ে খেলে বিবেচনা ক’রে হয়ে যায়
                             ক্রমেই নিঃস্বার্থ বিবেচক।

অপরা বিদ্যার দিন ছাত্রের,
          কলেজিয়ানের পুরস্কার,
          অধ্যায়নবিলাসীর
                   দু চারটে পেপারকাটার
প’ড়ে থেকে তার পর মলিন টেবিল;
          বাজেটের কমিটি মিটিঙে;-

ভুলের ভিতর থেকে ভুলে-
গরিমার থেকে আরো গরিমার পানে,-
যেখানে আসন্ন কাল চিরকাল আগামীপ্রসবাঃ
আজো যা হয়নি সেই চরিত্রের পানে।

শতাব্দী শেষ (Shotabdii Shesh) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Shiit Shesh (শীত শেষ) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) শীত শেষ (Shiit Shesh)

আজ রাতে শেষ হ'য়ে গেল শীত- তারপর কে যে এলো মাঠে-মাঠে খড়ে
হাঁস গাভী শাদা-প্লেট আকাশের নীল পথে যেন মৃদু মেঘের মতন,
ধানের সোনার ছড়া নাই মাঠে- ইঁদুর তবুও আর যাবে নাকো ঘরে

তাহার রূপালি রোম একবার জ্যোৎস্নায় সচকিত ক'রে যায় মন,
হৃদয়ে আস্বাদ এলো ফড়িঙের- কীটেরও যে- ঘাস থেকে ঘাসে-ঘাসে তাই
নির্জন ব্যাঙের মুখে মাকড়ের জালে তারা বরং এ অধীর জীবন

ছেড়ে দেবে- তবু আজ জ্যোৎস্নায় সুখ ছাড়া সাধ ছাড়া আর কিছু নাই;
আছে নাকি আর কিছু? পাতা খড়কুটো দিয়ে যে-আগুন জ্বেলেছে হৃদয়
গভীর শীতের রাতে- ব্যথা কম পাবে ব'লে- সেই সমারোহ আর চাই?

জীবন একাকী আজো- ব্যথা আজো- এখন করি না তবু বিয়োগের ভয়
এখন এসেছে প্রেম;- কার সাথে? কোন্‌ খানে? জানি নাকো;- তবু সে আমারে
মাঠে-মাঠে নিয়ে যায়- তারপর পৃথিবীর ঘাস পাতা ডিম নীড়ঃ সে এক বিস্ময়

এ-শরীর রোগ নখ মুখ চুল- এ-জীবন ইহা যাহা ইহা যাহা নয়;
রঙিন কীটের মতো নিজের প্রাণের সাধে একরাত মাঠে জেগে রয়

শীত শেষ (Shiit Shesh) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Prem Oapremer Kobita (প্রেম অপ্রেমের কবিতা) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) প্রেম অপ্রেমের কবিতা (Prem Oapremer Kobita)

নিরাশার খাতে ততোধিক লোক উৎসাহ বাঁচায়ে রেখেছে;
অগ্নিপরীক্ষার মতো কেবলি সময় এসে দ’হে ফেলে দিতেছে সে-সব।
তোমার মৃত্যুর পরে আগুনের একতিল বেশি অধিকার
সিংহ মেষ কন্যা মীন করেছে প্রত্যক্ষ অনুভব।
পৃথিবী ক্রমশ তার আগেকার ছবি
বদলায়ে ফেলে দিয়ে তবুও পৃথিবী হ’য়ে আছে;
অপরিচিতের মতো সমাজ সংসার শত্রু  সবই
পরিচিত বুনোনির মতো তবু হৃদয়ের কাছে
ক্রমশই মনে হয় নিজ সজীবতা নিয়ে চমৎকার;
আবর্তিত হ’য়ে যায় দানবের মায়াবলে তবুও সে-সব।
তোমার মৃত্যুর পরে মনিবের একতিল বেশি অধিকার
দীর্ঘ কালকেতু তুলে বাধা দিতে চেয়েছে রাসভ।
তোমার প্রতিজ্ঞা ভেঙে ফেলে তুমি চ’লে গেলে কবে।
সেই থেকে অন্য প্রকৃতির অনুভবে
মাঝে-মাঝে উৎকন্ঠিত হ’য়ে জেগে উঠেছে হৃদয়।
না-হ’লে নিরুৎসাহিত হ’তে হয়।
জীবনের, মরণের, হেমন্তের এ-রকম আশ্চর্য নিয়ম;
ছায়া হ’য়ে গেছো ব’লে তোমাকে এমন অসম্ভ্রম।
শত্রুর অভাব নেই, বন্ধুও বিরল নয়- যদি কেঊ চায়;
সেই নারী ঢের দিন আগে এই জীবনের থেকে চ’লে গেছে।
ঢের দিন প্রকৃতি ও বইয়ের নিকট থেকে সদুত্তর চেয়ে
                   হৃদয় ছায়ার সাথে চালাকি করছে।
তারপর অনুভব ক’রে গেছে রমণীর ছায়া বা শরীর
অথবা হৃদয়,-
বেড়ালের বিকশিত হাসির মতন রাঙা গোধূলির মেঘে;
প্রকৃতির প্রমাণের, জীবনের দ্বারস্থ দুঃখীর মতো নয়।
তোমার সংকল্প থেকে খ’সে গিয়ে ঢের দূরে চ’লে গেলে তুমি;
হ’লেও-বা হ’য়ে যেতো এ জীবনঃ দিনরাত্রির মতো মরুভুমি;-
তবুও হেমন্তকাল এসে পড়ে পৃথিবীতে, এমন স্তব্ধতা;
জীবনেও নেই কো অন্যথা
হেমন্তের সহোদর র’য়ে গেছে, সব উত্তেজের প্রতি উদাসীন;
সকলের কাছ থেকে সুস্থির মনের ভাবে নিয়ে আসে ঋণ,
কাউকে দেয় না কিছু, এমনই কঠিন;
সরল সে নয়, তবু ভয়াবহভাবে শাদা, সাধারণ কথা
জনমানুষীর কাছে ব’লে যায়- এমনই নিয়ত সফলতা।

কাব্যগ্রন্থ – মহাপৃথিবী

প্রেম অপ্রেমের কবিতা (Prem Oapremer Kobita) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Nirdesh (নির্দেশ) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) নির্দেশ (Nirdesh)

জীর্ণ শীর্ণ মাকু নিয়ে এখন বাতাসে
তামাসা চালাতে আছে পুনরায় সময় একাকী।
তবুও সে ভোরবেলা হরিয়াল পাখি
ধূসর চিতল মাছে- নির্ঝরের ফাঁসে
খেলা ক'রে কাকে দিয়েছিল তবে ফাঁকি?
বসন্তবউরী দুটো এই ব'লে হা-হা ক'রে হাসে।

সেই হাসি জ্ব'লে ওঠে নির্ঝরের পরে;
গড়ায়ে গড়ায়ে গোল নুড়ি
উজ্জ্বল মাছের সাথে ভোরের নির্ঝরে
সময়ের মাকুটাকে করে দিল উড়্‌খুড়্‌ খুড়ি।
বিরক্ত সময় তাই খুঁজে নিতে গেল কোন বিষয়ান্তরে
নিজের নিয়মাধীন হৃদয়ের জুড়ি।

আলো যদি নিভে যায় সময়ের ফুঁয়ে
তা'হ্লে কাহার ক্ষতি- তাহলে কাহার ক্ষতি হবে।
এই কথা ভেবে যায় কালো পাথরের পরে নুয়ে
মৈত্রেয়ী- নাগার্জুন- কৌটিল্য নীরবে।
তিন হয়, চার হয়, পাঁচ হয় তবুও তো দুয়ে আর দুয়ে।
হেঁয়ালী ও নিরসন নির্ঝরের নিক্কণের মত বেঁচে রবে।

নির্দেশ (Nirdesh) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Vor O Choity Bomar 1942 (ভোর ও ছয়টি বমারঃ ১৯৪২) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ভোর ও ছয়টি বমারঃ ১৯৪২ (Vor O Choity Bomar 1942)

কোথাও বাইরে গিয়ে চেয়ে দেখি দু'চারটে পাখি।
ঘাসের উপরে রোদে শিশিরে শুকায়
নিজেদের ক্ষেতে ধান- চার পাঁচজন লোক
            মানবের মতন একাকী।
মাটিরও তরঙ্গ স্বর্গীয় জ্যামিতির প্রত্যাশায়
মিশে গেছে অতীত ও আজকের সমস্ত আকাশে।

দিগন্তে কি ধর্মঘট?- চিম্‌নি… পাখির মতন অনায়াসে
নীলিমায় ছড়ায়েছে। এখানে নদীর স্থির কাকচক্ষু জলে
ঘুরুনো সিঁড়ির মত আকাশ পর্যন্ত মেঘ সব
উঠে গেছে।- অনুভব করে প্রকৃতির সাথে মিলিত হতেই,
অমিলনের সূর্যরোল জ্যোতির্ময় এলুমিনিয়ম অনুভব
ক'রে আমি দুই তিন চার পাঁচ ছয়টি এরোপ্লেন গুনে
নীলিমা দেখার ছিলে শতাব্দীর প্রেতাত্মাকে দেখছি অরুণে।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

ভোর ও ছয়টি বমারঃ ১৯৪২ (Vor O Choity Bomar 1942) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Nishoron (নিঃসরণ) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) নিঃসরণ (Nishoron)

দুর্গের গৌরবে ব'সে প্রাংশু আত্মা ভাবিতেছে টের পূর্বপুরুষের কথাঃ
যারা তারে জঙ্ঘা দিল,- তবু আজ তরবার পরিত্যাগ করার ক্ষমতা
যারা দিল;- প্রাচীন পাথর তারা এনেছিল পর্বতের থেকে
স্থির কিছু গড়িবার প্রয়োজনে; তারপর ধূসর কাপড়ে মুখ ঢেকে
চ'লে গেছে;- পিছন পেঁচা যা ওড়ে জ্যোৎস্নায়- সেইখানে তাদের মমতা

ঘুরিতেছে- ঘুরিতেছে- শত্রু মঙ্গলের মত;- আমার এ শাদা শাটিনের
শেমিজও পেতেছে সেই মনস্বিনী শৃঙ্খলাকে টের।
এই দুর্গ আজো তাই- ক্রিয়াবান সপ্তমীর চাঁদের শিঙের নিচে হিম
লোল- বক্র- নিরুত্তর;- আজই রাতে আমার মৃত্যুর পর নতুন রক্তিম
সূর্য এসে প্রয়োজন মেগে নেবে এইখানে লোকশ্রুত ভূমিকম্পের।

পূর্যসূরীদের ইচ্ছা অনুশাসনের মত করিতেছে কাজ।
প্রাচীন লেখের থেকে অন্ধকারে বিক্ষুব্ধ সমাজ
করতালি দিয়ে হাসে; দূরবীনে দেখা যায় যাই সব জ্যোতির্ময় কণা
অনন্ত মোমের তেজ নিয়ে নাচে,- সেই সব উচ্চতর রসিক দ্যোতনা
মৃত্যুকে বামনের করতলে হরিতকী অন্তত ক'রে দিক আজ।

নিঃসরণ (Nishoron) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bidal (বিড়াল) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বিড়াল (Bidal)

সারাদিন একটি বিড়ালের সঙ্গে ঘুরে-ফিরে কেবলি আমার দ্যাখা হয়;
গাছের ছায়ায়, রোদের ভিতরে, বাদামি পাতার ভিড়ে
কোথায় কয়েক টুকরো মাছের কাঁটার সফলতার পর
তারপর শাদা মাটির কঙ্কালের ভিতর
নিজের হৃদয়কে নিয়ে মৌমাছির মতো নিমগ্ন হ'য়ে আছে দেখি;
কিন্তু তবুও তারপর কৃষ্ণচুড়ার গায়ে নখ আঁচড়াচ্ছে,
সারাদিন সূর্যের পিছনে-পিছনে চলছে সে।
একবার তাকে দেখা যায়,
একবার হারিয়ে যায় কোথায়।
হেমন্তের সন্ধ্যায় জাফরান-রঙের সূর্যের নরম শরীরে
শাদা থাবা বুলিয়ে বুলিয়ে খেলা করতে দেখলাম তারে
তারপর অন্ধকারকে ছোটো-ছোটো বলের মতো লুফিয়ে আনলো সে,
সমস্ত পৃথিবীর ভিতর ছড়িয়ে দিল।

বিড়াল (Bidal) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।