Jibanananda Das Poems ~ জীবনানন্দ দাশের কবিতা

জীবনানন্দ দাশের জীবনী, এবং জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত জনপ্রিয় কবিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। Jibanananda Das short biography with Jibanananda Das poems are given below.

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)
উৎস: উইকিপিডিয়া

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) ১৭ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৯৯খ্রিস্টাব্দে, বাংলাদেশের অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ২২শে অক্টোবর ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে, ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় তিনি পরলোক গমন করেন।

বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি ছিলেন একাধারে আধুনিক কবি, লেখক, ঔপন্যাসিক,প্রাবন্ধিক, গল্পকার, দার্শনিক ও গীতিকার, সম্পাদক এবং অধ্যাপক।

বিশেষত জীবনানন্দের কাব্যে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ হয়ে উঠেছে বিচিত্র চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি‘ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ‘কল্লোল‘ পত্রিকায় প্রথম জীবনানন্দ দাশ-এর আত্মপ্রকাশ ‘নীলিমা‘ কবিতার মধ্য দিয়ে।

জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম – সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা,শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।

তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন‘ র জন্য নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সন্মেলনে রবীন্দ্র-স্মৃতি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পুরস্কার পেয়েছেন।

তার রচিত অন্যতম ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা‘ কাব্যগ্রন্থটির জন্য, ভারত সরকারের অনুমোদিত সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন।

কবিতা

Title

জীবনানন্দ দাশ -এর কবিতা সমূহ (Jibanananda Das Poems)

Onek Ratrideen (অনেক রাত্রিদিন) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অনেক রাত্রিদিন (Onek Ratrideen)

অনেক রাত্রিদিন ক্ষয় ক'রে ফেলে
এখন এসেছি এক উৎসের ভিতরে;
মাঠের উপরে ক্রমে ছায়া নেমে আসে,
দু-চারটে উঁচু গাছ রোদে খেলা করে।
পৃথিবী রক্তপাত অশান্তি এখন;
অর্থময়তা তবু পেতে পারে মন।

কেউ নেই – শুধু এই মননের সহায়তা আছে;
যা-কিছু বুঝেছি অনেক দিন সে-সবের নীতি
দু-চারটে বই ঠাণ্ডা সলতের আলো
নক্ষত্র ও সূর্যে আধো উজ্জ্বল প্রকৃতি
আছে তবে, পৃথিবীতে হৃদয় যা চেয়েছিলো তার
শূন্যতাকে স্নিগ্ধ ক'রে রয়েছে যুক্তির অন্তঃসার।

শরীর নির্বল হ'য়ে যেতেছে কেবলি;
ক্রমে আরো ক্ষমাহীন কঠিন সময়
মনকে নিস্তার দিলে দিতে পেরে তবু
শরীরকে ক'রে যাবে ক্ষয়;
ক্ষয়িত এ-শরীরের সঙ্গে মিলন
ভুলে মন হতে চায় সনাতন মন।

অনেক রাত্রিদিন (Onek Ratrideen) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Vikhiri (ভিখিরী) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ভিখিরী (Vikhiri)

একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি আহিরীটোলায়,
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি বাদুরবাগানে,
        একটি পয়সা যদি পাওয়া যায় আরো—
        তবে আমি হেঁটে চ ’লে যাবো মানে মানে ।
        —ব’ লে সে বাড়ায়ে দিলো অন্ধকারে হাত ।

আগাগোড়া শরীরটা নিয়ে এক কানা যেন বুনে যেতে চেয়েছিলো তাঁত;
তবুও তা নুলো শাঁখারীর হাতে হয়েছে করাত ।

একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি মাঠকোটা ঘুরে,
একটি পয়সা পেয়ে গেছি পাথুরিয়াঘাটা,
        একটি পয়সা যদি পাওয়া যায় আরো—
        তাহ ’লে ঢেঁকির চাল হবে কলে ছাঁটা ।
        ব ’লে সে বাড়ায়ে দিলো গ্যাসলাইটে মুখ ।
ভিড়ের ভিতরে তবু— হ্যারিসন রোডে আরো গভীর অসুখ,
এক পৃথিবীর ভুল;ভিখিরীর ভুলে : এক পৃথিবীর ভুলচুক ।

ভিখিরী (Vikhiri) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ei Nidra (এই নিদ্রা) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) এই নিদ্রা (Ei Nidra)

আমার জীবনে কোনো ঘুম নাই
মৎস্যনারীদের মাঝে সবচেয়ে রূপসী সে নাকি
এই নিদ্রা?

গায় তার ক্ষান্ত সমুদ্রের ঘ্রাণ- অবসাদ সুখ
চিন্তার পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন-বিমুখ
প্রাণ তার

এই দিন এই রাত্রি আসে যায়- বুঝিতে দেয় না তারে; কোনো ধ্বনি ঘ্রাণ
কোনো ক্ষুধা- কোনো ইচ্ছা- পরীরো সোনার চুল হয় যাতে ম্লানঃ
আমাদের পৃথিবীর পরীদের;- জানেনা সে; শোনেনা সে
জীবনের লক্ষ্য মৃত নিঃশ্বাসের স্বর;
তাহলে ঘুমাত কবে; সে শুধু সুন্দর,
প্রশ্নহীন অভিজ্ঞতাহীন দূর নক্ষত্রের মতো
সুন্দর অমর শুধু; দেবতারা করেনি বিক্ষত
ইহাদের।

এদের অপার রূপ শান্তি সচ্ছলতা
তবুও জানিত যদি আমার এ-জীবনের মুহূর্তের কথা
মানুষের জীবনের মুহূর্তের কথা।

দেবতারা করেনি বিক্ষত ইহাদেরঃ
(দেবতারা করেনি বিক্ষত নিজেদের
কোনো অভিজ্ঞতা নাই দেবতার)
ঘুঘুদের শাদা ডানা- নীল রাত্রি- কমলরঙের মেঘ- সমুদ্রের ফেনা রোদ-
হরিণের বুকে বেদনার
নীরব আঘাত;
এরা প্রশ্ন করেনাকোঃ ইহারা সুন্দর শান্ত- জীবনের উদ্‌যাপনে সন্দেহের হাত
ইহারা তোলে না কেউ আঁধারে আকাশে
ইহাদের দ্বিধা নাই- ব্যথা নাই- চোখে ঘুম আসে।
শুনেছে কে ইহাদের মুখে কোনো অন্ধকার কথা?
সকল সংকল্প চিন্তা রক্ত আনে ব্যথা আনে- মানুষের জীবনের এই বীভৎসা
ইহাদের ছোঁয় নাকো;-
ব্যুবনিক প্লেগের মতন
সকল আচ্ছন্ন শান্ত স্নিগ্ধতারে নষ্ট ক'রে ফেলিতেছে মানুষের মন!

গোলাপী ধূসর মেঘে পশ্চিমের বিয়োগ সে দ্যাখে না কি?
প্রজাপতি পাখি-মেয়ে করেনা কি মানুষের জীবনের ব্যথা আহরণ?
তবু এরা ব্যথা নয়ঃ ইহারা আবৃত সব- বিচিত্র- নীরব
অবিরল জাদুঘর এরা এক;- এরা রূপ ঘুম শান্তি স্থির
এই মৃত পাখি কীট- প্রজাপতি রাঙা মেঘ- সাপের আঁধার মুখে
ফরিঙের জোনাকির নীড়
এইসব।
আমি জানি, একদিন আমিও এমন
পতঙ্গের হৃদয়ের ব্যথা হব- সমুদ্রের ফেনা শাদা ফেনায় যেমন
ভেঙে পড়ে- ব্যথা পায়।
মানুষের মন
তবুও রক্তাক্ত হয় কেন এক অন্য বেদনায়
কীট যাহা জানে নাকো- জানে নাকো নদী ফেনা ঘাসরোদ- শিশির কুয়াশা
জ্যোৎস্নাঃ আম্লান হেলিওট্রোপ হায়!
এ-সৃষ্টির জাদুঘরে রূপ তারা- শান্তি- ছবি- তাহারা ঘুমায়
সৃষ্টি তাই চায়।

ভুলে যাব যেই সাধ- যে-সাহস এনেছিলো মানুষ কেবল
যাহা শুধু গ্লানি হলো- কৃপা হলো- নক্ষত্রের ঘৃণা হলো-
অন্য কোনো স্থল
পেল নাকো।

এই নিদ্রা (Ei Nidra) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Mitabhashon (মিতাভাষণ) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) মিতাভাষণ (Mitabhashon)

তোমার সৌন্দর্য নারি, অতীতের দানের মতন।
মধ্যসাগরের কালো তরঙ্গের থেকে
ধর্মাশোকের স্পষ্ট আহ্বানের মতো
আমাদের নিয়ে যায় ডেকে
শান্তির সঙ্ঘের দিকে — ধর্মে — নির্বাণে,
তোমার মুখের স্নিগ্ধ প্রতিভার পানে।
অনেক সমুদ্র ঘুরে ক্ষয়ে অন্ধকারে,
দেখেছি মণিকা-আলো হাতে নিয়ে তুমি
সময়ের শতকের মৃত্যু হলে তবু
দাঁড়িয়ে রয়েছে শ্রেয়তর বেলাভূমি:
যা হয়েছে যা হতেছে এখুনি যা হবে
তার স্নিগ্ধ মানতীসৌরভে।
মানুষের সভ্যতার মর্মে ক্লান্তি আসে;
বড় বড় নগরীর বুকভরা ব্যথা;
ক্রমেই হারিয়ে ফেলে তারা সব সঙ্কল্প-স্বপ্নের
উদ্যমের অমূল্য স্পষ্টতা।
তবুও নদীর মানে স্নিগ্ধ শুশ্রূষার জল,সূর্য মানে আলো;
এখনো নারী মানে তুমি, কত রাধিকা ফুরালো।

মিতাভাষণ (Mitabhashon) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Begger (ভিখিরী) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ভিখিরী (Begger)

একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি আহিরীটোলায়,
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি বাদুড়বাগানে,
একটি পয়সা যদি পাওয়া যায় আরো–
তবে আমি হেঁটে চ’লে যাবো মানে মানে।
–ব’লে সে বাড়ায়ে দিলো অন্ধকারে হাত।
আগাগোড়া শরীরটা নিয়ে এক কানা যেন বুনে যেতে চেয়েছিলো তাঁত;
তবুও তা নুলো শাঁখারীর হাতে হয়েছে করাত।
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি মাঠকোটা ঘুরে,
একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি পাথুরিয়াঘাটা,
একটি পয়সা যদি পাওয়া যায় আরো
তাহলে ঢেঁকির চাল হবে কলে ছাঁটা।
বলে সে বাড়ায়ে দিলো গ্যাসলাইটে মুখ।
ভিড়ের ভিতরে তবু — হ্যারিসন রোডে —আরো গভীর অসুখ,
এক পৃথিবীর ভুল; ভিখিরীর ভুলে : এক পৃথিবীর ভুলচুক।

ভিখিরী (Begger) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bhor Hoy (ভোর হয়) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ভোর হয় (Bhor Hoy)

ভোর হয়,
কি যেন আমাকে দিতে চায় শেষরাত—
কোন আভা, পূর্বাভাস?
হয়তোবা শেষরাত আমাকে দিতে চায় তার ভোর হয়ে ওঠা।
নিদ্রা থেকে জেগে ওঠা পাখি,
দু’ একবার ডাক দিয়ে, চুপ ক’রে থেকে
নিজ অনুক্রমিক ডাকের মধ্যকার
নীরবতা মন দিয়ে শোনে;
তারপর পুনরায় ডাকে।
তুমি দেখো শব্দ অনুক্রমিক, অস্থায়ী, কিন্তু
দু’টি শব্দের মধ্যকার নীরবতা স্থায়ী, স্থায়ী।
শেষরাতে কোনো ধ্বনি একটানা নয়
সব ধ্বনি প্রতিধ্বনিহীন— থেমে-থেমে ডাকে
ডাকের মাঝখানের কসমিক স্থির নীরবতা
সব ধ্বনি থেমে-থেমে, কান পেতে, শোনে।
গাছে গাছে পল্লবের মধ্যখানে শূন্য…শূন্যস্থান,
রাত্রিভর জেগে থাকা মানুষের চোখ ভেদ ক’রে,
গভীর আত্মার মধ্যে, বেদনার মধ্যে, ঢুকে যায়।
কোনও বাস্তবতা থেকে ছিটকে এসে জল
স্বপ্ন-মধ্যে ঢোকে শেষরাতে।
সকাল নদীতে আগে হয়।
গড়িয়ে গড়িয়ে নদী থেকে উঠে আসা কুয়াশার
ভেপু— দশদিকে শোনা গেলে,
মাটিতে, ভূমিতে, ভোর হয়…
এ শহর কসমিক শেষরাত পার হয়ে
কসমপলিটন হয়ে ওঠে।
তখন তোমাকে ভোর,
অন্ধকার কেটে যাওয়া গভীর সুস্থতা,
মানুষের জ্ঞানের চেয়ে ভিন্ন জ্ঞান, আলো,
অন্য এক সুস্থিরতা, পরম আনন্দ দিতে চায়।
তোমার ভিতরে শূন্যস্থান—
আরো বহু ভিতরের শূন্যস্থান থেকে এসে
শেষরাতে— ভোরবেলা, যেন, পূর্ণ হয়…
যেন, সত্যি পূর্ণ হয়।

— (অগ্রন্থিত কবিতা)

ভোর হয় (Bhor Hoy) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Oneyk Muhurto Khoy Korey (অনেক মুহূর্ত আমি করেছি ক্ষয় করে) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অনেক মুহূর্ত আমি করেছি ক্ষয় করে (Oneyk Muhurto Khoy Korey)

অনেক মুহূর্ত আমি করেছি ক্ষয়
করে ফেলে বুঝছি সময়
যদিও অনন্ত, তবু প্রেম যেন অনন্ত নিয়ে নয়।

তবু তোমাকে ভালোবেসে
মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে
বুঝেছি অকূলে জেগে রয়
ঘড়ির সময়ে আর মহাকালে যেখানেই রাখি এ হৃদয় ।

অনেক মুহূর্ত আমি করেছি ক্ষয় করে (Oneyk Muhurto Khoy Korey) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Jatrii (যাত্রী) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) যাত্রী (Jatrii)

মানুষের জীবনের ঢের গল্প শেষ
হ’য়ে গেলে র’য়ে যায় চারি দিক ঘিরে এই দেশ;
নদী মাঠ পাখিদের ওড়াওড়ি গাছের শিয়রে
কমলা রঙের ঢেউয়ে এসে কিছুক্ষণ খেলা করে।

মনে হয় কোথাও চিহ্নিত এই রৌদ্র ছিল কবে;
মানুষ সার্থক ময়- তবু সার্থকতর হবে;
মনে হত কাজ ক’রে কথা ব’লে গ্রন্থ মিলিয়ে,
মননের তীর থেকে আরো দূরে তীরতটে গিয়ে।

সময় নিজেই তবু সব চেয়ে গভীর বিপ্লবী;
ফুরিয়ে ফেলেছে সেই দিন রাত্রি সেরা সত্য-উদ্ঘাটন সবি;
সেদিনের হৃদয়ের উষ্ণ উত্তেজিত স্থির
ক’রে ফেলে অন্য নব কলেবরে গড়েছে শরীর।

বাহিরে ভিতরে লীন হয়ে থাকে মন,
শান্ত- আরো শান্ত হয় অন্তঃকরণ;
পুরোনো দিনের স্তম্ভ দু-চারটে পশ্চিমের আঁধারের কাছে;
নব সূর্যে সম্মেলনে- যাত্রা যাত্রা যাত্রা যাত্রা আছে।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

যাত্রী (Jatrii) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Monokonika (মনোকণিকা) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) মনোকণিকা (Monokonika)

ও. কে.

একটি বিপ্লবী তার সোনা রুপো ভালোবেসেছিলো;
একটি বণিক আত্মহত্যা করেছিলো পরবর্তী জীবনের লোভে;
একটি প্রেমিক তার মহিলাকে ভালোবেসেছিলো;
তবুও মহিলা প্রীত হয়েছিলো দশজন মূর্থের বিক্ষোভে।

বুকের উপরে হাত রেখে দিয়ে তা’রা
নিজেদের কাজ ক’রে গিয়েছিলো সব।

অবশেষে তা’রা আজ মাটির ভিতরে
অপরের নিয়মে নীরব।

মাটির আহ্নিক গতি সে-নিয়ম নয়;
সূর্য তার স্বাভাবিক চোখে
সে-নিয়ম নয়— কেউ নিয়মের ব্যতিক্রম নয়;
সব দিক ও. কে.।

সাবলীল

আকাশে সূৰ্যের আলো থাকুক না— তবু—
দণ্ডাজ্ঞার ছায়া আছে চিরদিন মাথার উপরে।
আমরা দণ্ডিত হ’য়ে জীবনের শোভা দেখে যাই।
মহাপুরুষের উক্তি চারিদিকে কোলাহল করে।

মাঝে-মাঝে পুরুষাৰ্থ উত্তেজিত হ’লে—
(এ রকম উত্তেজিত হয়;)
উপস্থাপয়িতার মতন
অামাদের চায়ের সময়

এসে প’ড়ে আমাদের স্থির হ’তে বলে।
সকলেই স্নিগ্ধ হ’য়ে আত্মকর্মক্ষম;
এক পৃথিবীর দ্বেষ হিংসা কেটে ফেলে
চেয়ে দ্যাখে স্তূপাকারে কেটেছে রেশম।

এক পৃথিবীর মতো বর্ণময় রেশমের স্তূপ কেটে ফেলে
পুনরায় চেয়ে দ্যাখে এসে গেছে অপরাহ্ণকাল:
প্রতিটি রেশম থেকে সীতা তার অগ্নিপরীক্ষায়—
অথবা খ্রীষ্টের রক্ত করবী ফুলের মতো লাল।

মানুষ সর্বদা যদি

মানুষ সর্বদা যদি নরকের পথ বেছে নিতো—
(স্বর্গে পৌঁছুবার লোভ সিদ্ধার্থও গিয়েছিলো ভুলে),
অথবা বিষম মদ স্বতই গেলাসে ঢেলে নিতো,
পরচুলা এঁটে নিতো স্বাভাবিক চুলে,
সর্বদা এ-সব কাজ ক’রে যেত যদি
যেমন সে প্রায়শই করে,
পরচুলা তবে কার সন্দেহের বস্তু হ’তো, আহা,
অথবা মুখোশ খুলে খুশি হ’তো কে নিজের মুখের রগড়ে।

চার্বাক প্রভৃতি—

‘কেউ দূরে নেপথ্যের থেকে, মনে হয়,
মানুষের বৈশিষ্ট্যের উত্থান-পতন
একটি পাখির জন্ম— কীচকের জন্মমৃত্যু সব
বিচারসাপেক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

‘তবু এই অনুভূতি আমাদের মর্ত্য জীবনের
কিংবা মরণের কোনো মূলসূত্র নয়।
তবুও শৃঙ্খলা ভালোবাসি ব’লে হেঁয়ালি ঘনালে
মৃত্তিকার অন্ধ সত্যে অবিশ্বাস হয়।’

ব’লে গেল বায়ুলোকে নাগার্জুন, কৌটিল্য, কপিল,
চার্বাক প্রভৃতি নিরীশ্বর;
অথবা তা এডিথ, মলিনা নাম্নী অগণন নার্সের ভাষা—
অবিরাম যুদ্ধ আর বাণিজ্যের বায়ুর ভিতর।

সমুদ্রতীরে

পৃথিবীতে তামাশার সুর ক্রমে পরিচ্ছন্ন হ’য়ে
জন্ম নেবে একদিন। আমোদ গভীর হ’লে সব
বিভিন্ন মানুষ মিলে মিশে গিয়ে যে-কোনো আকাশে
মনে হবে পরস্পরের প্রিয়প্রতিষ্ঠ মানব।

এই সব বোধ হয় আজ এই ভোরের অালোর পথে এসে
জুহুর সমুদ্রপারে, অগণন ঘোড়া ও ঘেসেড়াদের ভিড়ে।
এদের স্বজন, বোন, বাপ-মা ও ভাই, ট্যাঁক, ধর্ম মরেছে;
তবুও উচ্চস্বরে হেসে ওঠে অফুরন্ত রৌদ্রের তিমিরে।

   (মহাপৃথিবী কাব্যগ্রন্থ)

মনোকণিকা (Monokonika) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ratrii (রাত্রি (আলোপৃথিবী)) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) রাত্রি (আলোপৃথিবী) (Ratrii)

অইখানে কিছু আগে- বিরাট প্রাসাদে- এক কোণে
জ্ব'লে যেতেছিল ধীরে এক্‌সটেন্‌শন্‌ লেকচারের আলো।
এখন দেয়ালে রাত- তেমন ততটা কিছু নয়;
পথে পথে গ্যাসলাইট র'য়েছে ঝাঁঝালো
এখনো সূর্যের তেজ উপসংহারের মত জেগে।
এখনো টঙ্গে চ'ড়ে উপরের শেলফের থেকে
বই কি বিবর্ণ কীট- ধুলো- মাকড়সা বার হবে
দোকানের সেলস্‌ম্যান চুপে ভেবে দেখে।
এখনো নামেনি সেই নির্জন রিকশগুলো- নিয়ন্তার মত,
সমূহ ভীড়ের চাপে র'য়েছে হারায়ে।
অজস্র গলির পথে একটি মানুষ
যুগপৎ র'য়েছে দাঁড়ায়ে;
পৃথিবীর সকলের হৃদয়ের প্রতীকের মত;
এই রাত থেকে আরো অধিক গভীরতর রাতে
কলুটোলা- পাথুরিয়াঘাটা- মির্জাপুরে
এসপ্লানেডের ফুটপাতে
মালাঙ্গা লেনের পথে- ক্রিক রো'তে
ককবার্ন লেনের ভিতরে
এক জোড়া শিঙ যদি দেখা দেয় লোকটার টাকে-
পরচুলা চুরি ক'রে নিয়ে গেছে তবে যাদুকর।
এখানে রাত্রির পারে তোমার নিকট থেকে আমি
চ'লে গেলে
চ'লে যাব;-
পৃথিবীর কাছ থেকে নয়;
রাত্রি এই সারারাত জীবনের সকল বিষয়
হয়ে আছে।
তিত্তিরাজ গাছ থেকে শিশির নীরবে
ঝরে যায়;
ডানার আঘাতে যায় কাকদম্পতীর;
হলুদ খড়ের পরে ঝ'রে পড়ে আবার শিশির
হাওয়ার গুঁড়ির মত।
কোথায় হারায়ে তুমি গিয়েছ কখন।
মাথার উপরে সব নক্ষত্রেরা ছুরির মত বিচক্ষণ
সময়ের সূতো কেটে- অবিরাম সময়ের সূতো কেটে ফেলে
আমার চোখের পরে রাত্রির প্রাঞ্জলতা ঢেলে;
কোথাও বাতাবী উষ্ণ হয়ে ওঠে- ঘুরে যায় মাকরসাপোকার লাটিম,
ভাঁড় হাসে,- সম্রাজ্ঞীর অবয়ব হয়ে থাকে হিম;
নদীরা শিশুর মত- শিশুরা নদীর মত দূর;
স্বর্গের কিনারে গিয়ে ভিড় আর ভিখিরির নীল আলো করে টিমটিম।
শিশুর কপাল থেকে বেজে ওঠে নরকের বিচিত্র ডিন্ডিম।

রাত্রি (আলোপৃথিবী) (Ratrii) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।