Jibanananda Das Poems ~ জীবনানন্দ দাশের কবিতা

জীবনানন্দ দাশের জীবনী, এবং জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত জনপ্রিয় কবিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। Jibanananda Das short biography with Jibanananda Das poems are given below.

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)
উৎস: উইকিপিডিয়া

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) ১৭ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৯৯খ্রিস্টাব্দে, বাংলাদেশের অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ২২শে অক্টোবর ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে, ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় তিনি পরলোক গমন করেন।

বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি ছিলেন একাধারে আধুনিক কবি, লেখক, ঔপন্যাসিক,প্রাবন্ধিক, গল্পকার, দার্শনিক ও গীতিকার, সম্পাদক এবং অধ্যাপক।

বিশেষত জীবনানন্দের কাব্যে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ হয়ে উঠেছে বিচিত্র চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি‘ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ‘কল্লোল‘ পত্রিকায় প্রথম জীবনানন্দ দাশ-এর আত্মপ্রকাশ ‘নীলিমা‘ কবিতার মধ্য দিয়ে।

জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম – সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা,শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।

তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন‘ র জন্য নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সন্মেলনে রবীন্দ্র-স্মৃতি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পুরস্কার পেয়েছেন।

তার রচিত অন্যতম ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা‘ কাব্যগ্রন্থটির জন্য, ভারত সরকারের অনুমোদিত সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন।

কবিতা

Title

জীবনানন্দ দাশ -এর কবিতা সমূহ (Jibanananda Das Poems)

Hay Cheel (হায় চিল) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) হায় চিল (Hay Cheel)

হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই মেঘের ভিজে দুপুরে
তুমি আর কেঁদো নাকে উড়ে-উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে
তোমার কান্নার সূরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে
পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দুরে
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে
বেদনা জাগাতে ভালোবাসে
হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই মেঘের ভিজে দুপুরে
তুমি আর কেঁদো নাকে উড়ে-উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে

হায় চিল (Hay Cheel) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Onupom Tribedi (অনুপম ত্রিবেদী) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অনুপম ত্রিবেদী (Onupom Tribedi)

এখন শীতের রাতে অনুপম ত্রিবেদীর মুখ জেগে ওঠে।
যদিও সে নেই আজ পৃথিবীর বড়ো গোল পেটের ভিতরে
সশরীরে; টেবিলের অন্ধকারে তবু এই শীতের স্তব্ধতা
এক পৃথিবীর মৃত জীবিতের ভিড়ে সেই স্মরণীয় মানুষের কথা
হৃদয়ে জাগায়ে যায়; টেবিলে বইয়ের স্তুপ দেখে মনে হয়
যদিও প্লেটোর থেকে রবি ফ্রয়েড নিজ নিজ চিন্তার বিষয়
পরিশেষ করে দিয়ে শিশিরের বালাপোশে অপরূপ শীতে
এখন ঘুমায়ে আছে—তাহাদের ঘুম ভেঙে দিতে
নিজের কুলুপ এঁটে পৃথিবীতে—ওই পারে মৃত্যুর তালা
ত্রিবেদী কি খোলে নাই? তান্ত্রিক উপাসনা মিস্টিক ইহুদী কাবালা
ঈশার শবোত্থান—বোধিদ্রুমের জন্ম মরণের থেকে শুরু ক’রে
হেগেল ও মার্কস : তার ডান আর বাম কান ধ’রে
দুই দিকে টেনে নিয়ে যেতেছিল; এমন সময়
দু পকেটে হাত রেখে ভ্রুকুটির চোখে নিরাময়
জ্ঞানের চেয়েও তার ভালো লেগে গেল মাটি মানুষের প্রেম;
প্রেমের চেয়েও ভালো মনে হল একটি টোটেম :
উটের ছবির মতো—একজন নারীর হৃদয়ে;
মুখে-চোখে আকুতিতে মরীচিকা জয়ে
চলেছে সে; জড়ায়েছে ঘিয়ের রঙের মতো শাড়ি;
ভালো ক’রে দেখে নিলে মনে হয় অতীব চতুর দক্ষিণরাঢ়ী
দিব্য মহিলা এক; কোথায় সে আঁচলের খুঁট;
কেবলই উত্তরপাড়া ব্যাণ্ডেল কাশীপুর বেহালা খুরুট
ঘুরে যায় স্টালিন, নেহেরু, ব্লক, অথবা রায়ের বোঝা ব’য়ে,
ত্রিপাদ ভূমির পরে আরো ভূমি আছে এই বলির হৃদয়ে?
তা হলে তা প্রেম নয়; ভেবে গেল ত্রিবেদীর হৃদয়ের জ্ঞান।
জড় ও অজড় ডায়ালেক্‌টিক্‌ মিলে আমাদের দু দিকের কান
টানে ব’লে বেঁচে থাকি—ত্রিবেদীকে বেশি জোরে দিয়েছিল টান।

    (মহাপৃথিবী কাব্যগ্রন্থ)

অনুপম ত্রিবেদী (Onupom Tribedi) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Shanti (শান্তি) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) শান্তি (Shanti)

জীবন কি নীরক্ত সম্রাট এক সুধাখোর:
কুট ব্যবসায়ী নীল পাশ্বচরগুলো তার মৃত্যুর উৎসব?
মানুষের তরে তবে কোন পথ:
কোন অন্তরীক্ষে তারে নিয়ে যাবে আসন্ন সময়?
সেইখানে বালুঘড়ি, বলো, তবে স্তব্ধতার মতো:
একদিন বাতাসের সাথে ঢের ধ্বনিবিনিময়
করেছিলো;- তারপর হ'য়ে গেছে আঁখিহীন চুুপ।
প্রান্তরের শুষ্ক ঘাসে যে সবুজ বাতাসের আশা
একদিন বলেছিলো আবার করিবো আমি অমৃত সঞ্চয়-
শত-শত মেঘশাবকের আঁখিতারকাও পেলো যেন ভয়
শান্তি, শান্তি-
উত্তেজিত শপথের উৎসারণ প্লীহা ঘিরে থাকে না সতত,
বালুঘড়ি. হ'য়ে থাকে চিরদিন স্তব্ধতার মতো।

শান্তি (Shanti) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Udoyasto (উদয়াস্ত (অগ্রন্থিত)) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) উদয়াস্ত (অগ্রন্থিত) (Udoyasto)

সূর্যের উদয় সহসা সমস্ত নদী
চমকিত ক'রে ফেলে- অকস্মাৎ দ্যাখা দিয়ে-
চ'লে যায়; হাড়ের ভিতরে মেঘেদের
অন্ধকার; স্তম্ভিত বন্ধুর মতো ভোর
এইখানে সাধু রাত্রির হাত ধ'রে
তাকে শ্রেয়তর চালানির মূল জেনে
নিখিলের- মৃত মাংসের স্তুপ
চারিদিকে; তার মাঝে ধন্বন্তরি, কালনেমি
কিছু চায়;
দুস্তর চাদর গায়ে অন্ধ বাতাসের।
সূর্য তবু- সূর্য যেন জ্যোতি
প্রতিবিম্ব রেখে গেছে তরবারে- ভাঁড়ের হৃদয়ে,
ধর্মোশোকের মনে।

করজোড়ে ভাবে তারা;
ঝলিছে সারস শব ঢের
বৈতরনী তরঙ্গের দিকে ভেসে যেতে- যেতে
লোকোত্তর সূর্যের আমোদে।

উদয়াস্ত (অগ্রন্থিত) (Udoyasto) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Aasha Anumiti (আশা অনুমিতি) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) আশা অনুমিতি (Aasha Anumiti)

সূর্যের আকাশের মত মানুষেরা অনুভাবনায় স্থির
এক আশ্বাস রয়ে গেছে পৃথিবীতে,
রয়ে গেছে আমাদের হৃদয়ে যে এই
ইতিহাস পৃথিবীর রক্তাক্ত নদীর কেবলি আয়ত
উৎসারণ অন্ধকারে নিজেরে প্রচুর ক’রে তবু
স্তিমিত হয়ে পড়ে;
মতুন নির্মল জলকণিকারা আসে
নক্ষত্রের সূর্যের নীলিমার মানব হৃদয়ের
আশ্চর্য রেবার হিল্লীলের মত।
সময় যা আচ্ছন্ন করেছিল তাকে সময় সংক্রান্তির পারে
মৃত্যু বা নিশ্চিহ্ন করেছিল তাকে উজ্জ্বল বস্তুপুঞ্জে
জাগিয়ে তুল্বার জন্যে দেখ
সচেতন হয়ে জেগে উঠে মানবঃ
চারিদিকে উন্মুক্ত সূর্যের
অন্তরালে সূর্যের
আলোর নক্ষত্রেরা রাত্রির নগরীর জ্ঞানের
অন্তহীন পরিচ্ছন্ন পবিত্রের ভিতর।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

আশা অনুমিতি (Aasha Anumiti) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Potobhumi (পটভূমি) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পটভূমি (Potobhumi)

আকাশ ভ'রে যেন নিখিল বৃক্ষ ছেয়ে তারা
জেগে আছে কূলের থেকে কূলে;
মানব্জাতির দু-মুহূর্তের সময়-পরিসর
অধীর অবুঝ শিশুর শব্দ তুলে
চেয়ে দেখে পারাপারের ব্যাপ্ত নক্ষত্রেরা
আগুন নিয়ে বিষম, তবু অক্ষত স্থির জীবনে আলোকিত।
ওদের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীন হ'য়ে তবু
মানুষ যেদিন প্রথম এই পৃথিবী পেয়েছিল
সেই সকালের সাগর সূর্য অনমনীয়তা
আমাদের আজ এনেছে যেই বিষম ইতিহাসে-
যেখানে গ্লানি হিংসা উত্তরাধিকারের ব্যথা
মানুষ ও তার পটভূমির হিসেবে গরমিল
রয়েছে ব'লে কখনো পরিবর্তনীয় নয়?
মানুষ তবু সময় চায় সিদ্ধকাম হ'তেঃ
অনেক দীর্ঘ অসময়- অনেক দুঃসময়।
চারিদিকে সৈন্য বণিক কর্মী সুধী নটীর মিছিল ঘোরে
মুখ ফেরাবার আগে-
তাদের সবের সহগামীর মতো
ইতিহাসের প্রথম উৎস থেকে
দেখেছি মানুষ কেবলি ব্যাহত
হয়েও তবু ভবিষ্যতের চক্রবালের দিকে
কোথাও সত্য আছে ভেবে চলেছে আপ্রাণঃ
পটভূমির থেকে নদীর রক্ত মুছে মুছে
বিলীন হয় যেমন সেসব পটভূমির স্থান।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

পটভূমি (Potobhumi) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Prithibii O Shomoy (পৃথিবী ও সময়) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পৃথিবী ও সময় (Prithibii O Shomoy)

সময়ের উপকণ্ঠে রাত্রি প্রায় হয়ে এল আজ
সূর্যকে পশ্চিমে দেখি সারা শতাব্দীর
অক্লান্ত রক্তের বোঝা গুছায়ে একাকী
তবুও আশার মত মেঘে মেঘে বলয়িত হয়ে
শেষ আলো ঢেলে যায়;- জ্যোতিঃপ্রাণধর্মী সূর্য অই;
একদিন অ্যামিবার উৎসরণ এনেছিল;
জীবনের ফেনশীর্ষ সিন্ধুর কল্লোল এক দিন
মানুষকে পেয়ে;- না-মর্মী মানুষ সেই দিন
ভয় পেত, গুহায় লুকাত,- তবু সূর্যকরোজ্জ্বল
সোনালী মানবী তাকে 'হাঁ' বলাল;- নীল
আকাশ নগরীরেখা দেখা দিল;- শঙ্খ আমলকী
সাগর অলিভবন চেনা গেল রোদ্রের ভিতরে;
শ্বেতাশ্বতর-প্লেটো-আলোকিত পৃথিবীর রূপ
অনাদির দায়ভাগে উৎসারিত রক্তের নদীর
শিয়রে আশার মত জেগে উৎসাহিত সূর্যকরে
সহসা নতুন হিংসা রক্ত গ্লানিমার কাছে প্রতিহত হয়ে
ধীরে ধীরে নিঃশেষে ফুরায়ে গেল তবু।

ভাই-বোন-স্মৃতি-শান্তি হননের ঘোরে উদ্বেলিত
বহতা নদীর মত আজো এই পৃথিবী চলেছে।
তবুও তো সেই উদ্‌ঘাতিনী
নদীরমণীর শব্দ কানে নিয়ে,- প্রাণে
আকাশে জ্যোতিষ্ক জ্বলে হস্তা অভিজিৎ,
অনুরাধা শতভিষা লুব্ধক স্বাতী;
পৃথিবীতে- হৃদয়েরো গতিপথে বর্ণালির আভা
সম্পূর্ণ দীপ্তির মত আলোকিত- ক্রমে আলোকিত হতে চায়।

লণ্ডন রুশিয়া গ্রীস দ্বীপপুঞ্জ কলকাতা চীন
অগণন কন্‌ফারেন্‌সে বিকীর্ণ য়ুরোপা,
আমেরিকা,- যেন বীতবর্ষণের কৃষ্ণমেঘ নক্ষত্রের পথে;
ক্ষণিক উজ্জ্বল হয়ে ক্লান্তি ক্লেদ ভয় অন্ধকার হতে চায়
এখুনি আবার তবু। প্রকৃতিতে সূর্য আসে, অস্তের আকাশে
চ'লে যায়;- অস্তগতিহীন শুভ্র জনহৃদয়ের
সূর্যনগরীর দিকে যেতে হবে চেতনায় মানুষের সময় চলেছে।

পৃথিবী ও সময় (Prithibii O Shomoy) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Aloprithibii (আলোপৃথিবী) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) আলোপৃথিবী (Aloprithibii)

ঢের দিন বেঁচে থেকে দেখেছি পৃথিবীভরা আলো
তবুও গভীর গ্লানি ছিল কুরুবর্ষে রোমে ট্রয়ে;
উত্তরাধিকার ইতিহাসের হৃদয়ে
বেশি পাপ ক্রমেই ঘনালো।

সে গরল মানুষ ও মনীষীরা এসে
হয়তো বা একদিন ক’রে দেবে ক্ষয়;
আজ তবু কন্ঠে বিষ রেখে মানবতার হৃদয়
স্পষ্ট হতে পারে পরস্পরকে ভালবেসে।

কোথাও রয়েছে যেন অবিনশ্বর আলোড়নঃ
কোনো এক অন্য পথে- কোন্‌ পথে নেই পরিচয়;
এ মাটির কোলে ছাড়া অন্য স্থানে নয়;
সেখানে মৃত্যুর আগে হয় না মরণ।

আমাদের পৃথিবীর বনঝিরি জলঝিরি নদী
হিজল বাতাবী নিম বাবলার সেখানেও খেলা
করেছে সমস্ত দিন; হৃদয়কে সেখানে করে না অবহেলা
ফেনিল বুদ্ধির দৌড়;- আজকের মানবের নিঃসঙ্গতা যদি

সেসব শ্যামল নীল বিস্তারিত পথে
হ’তে চায় অন্য কোনো আলো কোনো মর্মের সন্ধানী,
মানুষের মন থেকে কাটবে না তা হ’লে যদিও সব গ্লানি
তবু আলো ঝল্কাবে অন্য এক সূর্যের শপথে।

আমাদের পৃথিবীর পাখালী ও নীলডানা নদী
আমলকী জামরুল বাঁশ ঝাউয়ে সেখানেও খেলা
করেছে সমস্ত দিন;- হৃদয়কে সেখানে করে না অবহেলা
বুদ্ধির বিচ্ছিন্ন শক্তি;- শতকের ম্লান চিহ্ন ছেড়ে দিয়ে যদি

নরনারী নেমে পড়ে প্রকৃত ও হৃদয়ের মর্মরিত হরিতের পথে-
অশ্রু রক্ত নিস্ফলতা মরণের খণ্ড খণ্ড গ্লানি
তাহ’লে রবে;- তবু আদি ব্যথা হবে কল্যাণী
জীবনের নব নব জলধারা- উজ্জ্বল জগতে।

আলোপৃথিবী (Aloprithibii) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Tomake (তোমাকে (অপ্রকাশিত)) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) তোমাকে (অপ্রকাশিত) (Tomake)

একদিন মনে হতো জলের মতন তুমি।
সকালবেলার রোদে তোমার মুখের থেকে বিভা–
অথবা দুপুরবেলা — বিকেলের আসন্ন আলোয়–
চেয়ে আছে — চলে যায় — জলের প্রতিভা।

মনে হতো তীরের উপরে বসে থেকে।
আবিষ্ট পুকুর থেকে সিঙাড়ার ফল
কেউ কেউ তুলে নিয়ে চলে গেলে — নীচে
তোমার মুখের মতন অবিকল।

নির্জন জলের রঙ তাকায়ে রয়েছে;
স্থানান্তরিত হয়ে দিবসের আলোর ভিতরে
নিজের মুখের ঠান্ডা জলরেখা নিয়ে
পুনরায় শ্যাম পরগাছা সৃষ্টি করে;

এক পৃথিবীর রক্ত নিপতিত হয়ে গেছে জেনে
এক পৃথিবীর আলো সব দিকে নিভে যায় বলে
রঙিন সাপকে তার বুকের ভিতরে টেনে নেয়;
অপরাহ্ণে আকাশের রং ফিকে হলে।

তোমার বুকের ‘পরে আমাদের পৃথিবীর অমোঘ সকাল;
তোমার বুকের ‘পরে আমাদের বিকেলের রক্তিল বিন্যাস;
তোমার বুকের ‘পরে আমাদের পৃথিবীর রাত;
নদীর সাপিনী, লতা, বিলীন বিশ্বাস।

জীবনানন্দ দাশ – এর অপ্রকাশিত কবিতা

তোমাকে (অপ্রকাশিত) (Tomake) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Kani Miche Noakkhatrera (কেন মিছে নক্ষত্রেরা) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কেন মিছে নক্ষত্রেরা (Kani Miche Noakkhatrera)

কেন মিছে নক্ষত্রেরা আসে আর? কেন মিছে জেগে ওঠে নীলাভ আকাশ?
কেন চাঁদ ভেসে ওঠেঃ সোনার ময়ূরপঙ্খী অশ্বত্থের শাখার পিছনে?
কেন ধুলো সোঁদা গন্ধে ভরে ওঠে শিশিরের চুমো খেয়ে- গুচ্ছে গুচ্ছে
                                    ফুটে ওঠে কাশ?
খঞ্জনারা কেন নাচে? বুলবুলি দুর্গাটুনটুনি কেন ওড়াওড়ি করে
                                            বনে বনে?
আমরা যে কমিশন নিয়ে ব্যস্ত- ঘাটি বাঁধি- ভালিবাসি নগর ও
                                        বন্দরের শ্বাস
ঘাস যে বুতের নীচে ঘাস শুধু- আর কিছু নয় আহা- মোটের যে
                                সবচেয়ে বড় এই মানব্জীবনে
খঞ্জনারা নাচে কেন তবে আর- ফিঙা বুলবুলি কেন উড়াউড়ি করে
                                                বনে বনে?

কেন মিছে নক্ষত্রেরা (Kani Miche Noakkhatrera) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।