Jibanananda Das Poems ~ জীবনানন্দ দাশের কবিতা

জীবনানন্দ দাশের জীবনী, এবং জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত জনপ্রিয় কবিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। Jibanananda Das short biography with Jibanananda Das poems are given below.

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)
উৎস: উইকিপিডিয়া

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) ১৭ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৯৯খ্রিস্টাব্দে, বাংলাদেশের অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ২২শে অক্টোবর ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে, ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় তিনি পরলোক গমন করেন।

বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি ছিলেন একাধারে আধুনিক কবি, লেখক, ঔপন্যাসিক,প্রাবন্ধিক, গল্পকার, দার্শনিক ও গীতিকার, সম্পাদক এবং অধ্যাপক।

বিশেষত জীবনানন্দের কাব্যে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ হয়ে উঠেছে বিচিত্র চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি‘ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ‘কল্লোল‘ পত্রিকায় প্রথম জীবনানন্দ দাশ-এর আত্মপ্রকাশ ‘নীলিমা‘ কবিতার মধ্য দিয়ে।

জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম – সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা,শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।

তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন‘ র জন্য নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সন্মেলনে রবীন্দ্র-স্মৃতি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পুরস্কার পেয়েছেন।

তার রচিত অন্যতম ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা‘ কাব্যগ্রন্থটির জন্য, ভারত সরকারের অনুমোদিত সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন।

কবিতা

Title

জীবনানন্দ দাশ -এর কবিতা সমূহ (Jibanananda Das Poems)

Alokpotro (আলোক পত্র) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) আলোক পত্র (Alokpotro)

হে নদী আকাশ মেঘ পাহাড় বনানী,
সৃজনের অন্ধকার অনির্দেশ উৎসের মতন
আজ এই পৃথিবীতে মানুষের মন
মনে হয়; অধঃপতিত এক প্রাণী।

প্রেম তার সব চেয়ে ছায়া, নিরাধার
নিঃস্বতায়- অকৃত্রিম আগুনের মত
নিজেকে না চিনে আজ রক্তে পরিণত
হে আগুন, কবে পাব জ্যোতিঃদীপাধার।

মানুষের জ্ঞানালোক সীমাহীন শক্তি পরিধির
ভিতরে নিঃসীম;
ক্ষমতার লালসায় অহেতুক বস্তুপুঞ্জে হুম;
সূর্য নয়- তারা নয়- ধোঁইয়ার শরীর।

এ অঙ্গার অগ্নি হোক, এই অগ্নি ধ্যানালোক হোক;
জ্ঞান হোক প্রেম,- প্রেম শোকাবহ জ্ঞান
হৃদয়ে ধারণ ক’রে সমাজের প্রাণ
অধিক উজ্জ্বল অর্থে করে নিক অশোক আলোক।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

আলোক পত্র (Alokpotro) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Shurjo Nivey Geley (সূর্য নিভে গেলে) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সূর্য নিভে গেলে (Shurjo Nivey Geley)

সূর্য, মাছরাঙা, আমি
উত্তীর্ণ হয়েছে পাখী মদী সূর্যের অন্ধ আবেগের
দু’মুহূর্তে আনন্দের পরীক্ষার বুঝি।
নিভে গেছে;- আমি কেন তবু সূর্য খুঁজি।
            তুমি
জানি না কোথায় তুমি- সূর্য নিভে গেছে;
তোমার মননে আজ স্থির
সন্ধ্যার কুমোর পোকা- বাঁশের ছ্যাঁদায় ঘূণ-
শাদা বেতফলের শিশির।
            আছে
‘নেই- নেই-’ মনে হয়েছিল কবে- চারিদিকে উঁচু- উঁচু গাছে,
বাতাস? না সময় বলছে; ‘আছে, আছে।’
অনেক অনেক দিনের পর আজ
            অঘ্রাণ রাত
অন্ধকারে সময়পরিক্রমা
করতে গিয়ে আবছা স্মৃতির বইয়ের
পাতার থেকে জমা-
খরচ সবি মুছে ফেলে দিয়ে
দানের আয়োজনে নেমে এল,
চেয়ে দেখি নারী কেমন নিখুঁতভাবে কৃতী;
ডানা নড়ে শিশির শব্দ করে
বাহিরে ঐ অঘ্রাণ রাত থেকে;
এসব ঋতু আমার হৃদয়ে
কি এক নিমেষনিহত সমাহিতি
নিয়ে আসে; ভিতরে আরো প্রবেশ ক’রে প্রাণ
একটি বৃক্ষে সময় মরুভূমি
লীন দেখেছে, গভীর পাখি বৃক্ষ তুমি।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

সূর্য নিভে গেলে (Shurjo Nivey Geley) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Germanyir Ratripothey 1945 (জার্মানীর রাত্রিপথেঃ ১৯৪৫) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) জার্মানীর রাত্রিপথেঃ ১৯৪৫ (Germanyir Ratripothey 1945)

সে এক দেশ অনেক আগের শিশুলোকের থেকে
সাগরগামী নদীর মত স্বরে
আমার মনের ঘুঘুমরালহংসী ঝাউয়ের বনে
আধো আলোছায়াচ্ছন্ন ভাবে মনে পড়ে
টিউটনের গল্পে ছড়ায় সাগরে সূর্যালোকে
গ্রিমের থেকে…… শিলাত সানুজ দানবীয়
গ্যেটের সে দেশ সূর্য অনিকেত?
মাঝে মাঝে আমার দেশের শিপ্রা, পদ্মা, রেবা, ঝিলম, জলশ্রীকে আমি
সর্পীযোনের মতন কোথাও পাহাড় অবধি
অথবা নীল ভূকল্লোলে সাগর সুভাষিতকরতে গিয়ে শুনেছিলাম রাইনের মত নদী
কি এক গভীর হ্বাইমারী মেঘ সূর্য বাতাস নিয়ে
নর-নারী নগর গ্রামীণতায় ব্যস্ত রীতি
লক্ষ্য ক'রেই সবিতাসাধ জানিয়েছিল;- তিন দশকের পর
এ-সব স্বপ্নমিশেল কি এক শূন্য অনুমিতি।

যদিও আমি আজো বেশি সূর্য ভালোবাসি
তবুও যারা মনের নীহারিকার পথে ঠাণ্ডা অমল দিন
জাগিয়ে সূর্যপ্রতিম আকাশ সমাজ নিয়ে যাত্রা ক'রেছিল
সে সব হৃদয়গ্রাহী টেলর রিলকে হ্যোল্ডার্‌লিন্‌
সবংশে কি হারিয়ে গেছে রাইখ্‌শরিরের থেকে?-
ব্যক্তি স্বাধীনতায় ঘুরে অনাথ মানবতার লেন্‌দেন
শুধতে ভুলে গিয়ে কি ভয় রক্ত গ্লানি রিরাংসা ফুঁপিয়ে
রেখে গেছে অমোঘ বর্বরতার বেল্‌জেন্‌?
    বর্বরতা কোথায় তবুও নেই?- তবু এই প্রশ্ন-আতুর মনে
গভীরতার হৃদয়ব্যাধির ঈষৎ সমাধান
আজকে ভীষণ নিরুদ্দেশের অন্ধকারে রয়েছে টিউটন?
রোন্‌কে চিনি,- ইউরোপের হৃদয়ে রাইন্‌যান্‌
সহোদরার মতন রৌদ্র আকশ মাটি যব গোধূমের পাশে
যুগে যুগে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রবেশ ক'রে
এনেছিল কান্ট কাথিড্রাল দেবতাদের
    ঊষাপ্রদোষ অখল ভাগনেরের
অভিনিবেশ-বলয়িত গ্যেটের সূর্যকরে।

যদিও তা ব্যক্তিকতার মায়ার মৃগতৃষ্ণাতীত,-তবু
চমৎকৃত হয়েছিল ইউরোপের ভাবনাধূসর মন;
সৌরকরভ্রমে ঊনবিংশ শতকীরা
হয়তো তাকে ঘরের বহিরাশ্রয়িত দিব্য বাতায়ন-
বাতায়নের বাইরে মেঘের সূর্য ভেবেছিল;
আমরা আজো অনেক জেনে এর বেশি কি ভাবি?
ইতিহাসের ভূমায় সীমাস্বল্পতাকে যাচাই করার রীতি
গ্যেটের ছিল;- তবুও সীমার কী ভয়ঙ্কর বৈনাশিকী দাবি!
সেই তো পায়ের নিচে রাখে পরমপ্রসাদগভীর তনিমাকে
সময়পুরুষ বলেঃ 'তুমি নিজের কালের ভার
ব'য়েছিলে লীলায়িত সৌরতেজে;- এ যুগ তবু অন্য সকলের;
আরেক রকম ব্যতিক্রমের,- হে কবি, হ্বাইমার।'
সময় এখন জ্যোতির্ময়ী অমেয়তার প্রবাস থেকে ফিরে
নিরিখ পেয়ে গেছে নিজের নিঃশ্রেয়সের পথে;
সেইখানে কাল লোকাতিত হতে গিয়ে
    কোথাও থেমে গিয়ে-
ক্রান্তি-আলোর বয়স বেড়ে গেলে কঠিন রীতির জগতে
নবজাতক অর্থনীতি সমাজনীতি কলের
    কণ্ঠে কি প্রাণকাকলী?
এই পৃথিবীর আদিগন্ত ব্যক্তিশবের শেষে
দেখা দেবে হয়তো নতুন সুপরিসর, নাগর সভ্যতায়
মানবতার নামে নবীন ব্যক্তিহীনতাকে ভালোবেসে;
হয়তো নগর রাষ্ট্র সফল হয়ে গেলে নাগরিকের মন
হৃদয়প্রেমিক হয়ে যাবে সবার তরে- উচিত অনুপাতে,
জড়-রীতির- অর্থনীতির সনির্বচন
    মেশিন ভেনে এসব যদি হয়
তা হ'লে তা অমিয় হোক্‌ আন্তরিকতাতে।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

জার্মানীর রাত্রিপথেঃ ১৯৪৫ (Germanyir Ratripothey 1945) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Robindronath (রবীন্দ্রনাথ) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) রবীন্দ্রনাথ (Robindronath)

অনেক সময় পাড়ি দিয়ে আমি অবশেষে কোন এক বলয়িত পথে
    মানুষের হৃদয়ের প্রীতির মতন এক বিভা
দেখেছি রাত্রির রঙে বিভাসিত হয়ে থেকে আপনার প্রাণের প্রতিভা
    বিচ্ছুরিত ক'রে দেয় সঙ্গীতের মত কণ্ঠস্বরে!
    হৃদয়ে নিমীল হয়ে অনুধ্যান করে
ময়দানবের দ্বীপ ভেঙে ফেলে স্বভাবসূর্যের গরিমাকে।
    চিন্তার তরঙ্গ তুলে যখন তাহাকে
    ডেকে যায় আমাদের রাত্রির উপরে-
পঙ্কিল ইঙ্গিত এক ভেসে ওঠে নেপথ্যের অন্ধকারেঃ আরো ভূত
                                            আধেক মানব
    আধেক শরীর- তবু অধিক গভীরতর ভাবে এক শব।

নিজের কেন্দ্রিক গুণে সঞ্চারিত হয়ে ওঠে আপনার নিরালোকে ঘোরে
আচ্ছন্ন কুহক, ছায়া কুবাতাস;- আধো চিনে আপনার যাদু চিনে নিতে
ফুরাতেছে- দাঁড়াতেছে- তুমি তাকে স্থির প্রেমিকের মত অবয়ব দিতে
সেই ক্লীববিভূতিকে ডেকে গেলে নিরাময় অদিতির ক্রোড়ে।
    অনন্ত আকাশবোধে ভরে গেলে কালের দু'ফুট মরুভূমি।
অবহিত আগুনের থেকে উঠে যখন দেখেছ সিংহ, মেষ, কন্যা, মীন
ববিনে জড়ানো মমি- মমি দিয়ে জড়ানো ববিন,-
প্রকৃতির পরিবেদনার চেয়ে বেশি প্রামাণিক তুমি
    সামান্য পাখি ও পাতা ফুল
মর্মরিত ক'রে তোলে ভয়াবহভাবে সৎ অর্থসঙ্কুল।
যে সব বিস্রস্ত অগ্নি লেলিহান হয়ে ওঠে উনুনের অতলের থেকে
        নরকের আগুনের দেয়ালকে গড়ে,
    তারাও মহৎ হয়ে অবশেষে শতাব্দীর মনে ভেতরে
দেয়ালে অঙ্গার, রক্ত, এক্যুয়ামেরিন আলো এঁকে
নিজেদের সংগঠিত প্রাচীরকে ধূলিসাৎ ক'রে
    আধেক শবের মত স্থির;
    তবুও শবের মত বিশেষ অধীরঃ
    প্রসারিত হতে চায় ব্রহ্মান্ডের ভোরে;
সেইসব মোটা আশা, ফিকে রং, ইতর মানুষ,
ক্লীবকৈবল্যের দিকে যুগে যুগে যাদের পাঠাল দরায়ুস।

সে সবের বুক থেকে নিরুত্তেজ শব্দ নেমে গিয়ে
প্রশ্ন করে যেতেছিল সে সময়ে নাবিকের কাছেঃ
সিন্ধু ভেঙে কত দূর নরকের সিঁড়ি নেমে আছে?-
ততদূর সোপানের মত তুমি পাতালের প্রতিভা সেঁধিয়ে
অবারিতভাবে সাদা পাখির মতন সেই ঘুরুনো আধারে
নিজে প্রমাণিত হয়ে অনুভব করেছিলে শোচনার সীমা
    মানুষের আমিষের ভীষণ ম্লানিমা,
বৃহস্পতি ব্যাসে শুক্র হোমরের হায়রাণ হাড়ে
বিমুক্ত হয় না তবু- কি ক'রে বিমুক্ত তবু হয়ঃ
ভেবে তারা শুক্ল অস্থি হ'ল অফুরন্ত সূর্যময়।

অতএব আমি আর হৃদয়ের জনপরিজন সবে মিলে
শোকাবহ জাহাজের কানকাটা টিকিটের প্রেমে
রক্তাভ সমুদ্র পারি দিয়ে এই অভিজ্ঞের দেশে
প্রবেশ ক'রেছি তার ভূখণ্ডের তিসি ধানে তিলে।
এখানে উজ্জ্বল মাছে ভ'রে আছে নদী ও সাগরঃ
নীরক্ত মানুষের উদ্বোধিত করে সব অপরূপ পাখি;
কেউ কাকে দূরে ফেলে রয় না একাকী।
যে সব কৌটিল্য, কুট, নাগার্জুন কোথাও পায়নি সদুত্তর-
এইখানে সেই সব কৃতদার, ম্লান দার্শনিক
ব্রহ্মাণ্ডের গোল কারুকার্য আজ রূপালি, সোনালি মোজায়িক।
একবার মানুষের শরীরের ফাঁস থেকে বা'র হয়ে তুমিঃ
(যে শরীর ঈশ্বরের চেয়ে কিছু কম গরীয়ান)
যে কোনো বস্তুর থেকে পেতেছে সস্মিত সম্মান;
যে কোনো সোনার বর্ণ সিংহদম্পতির মরুভূমি,
অথবা ভারতী শিল্পী একদিন যেই নিরাময়
গরুড় পাখির মূর্তি গড়েছিল হাতীর ধূসরতর দাঁতে,
অথবা যে মহীয়সী মহিলারা তাকাতে তাকাতে
নীলিমার গরিমার থেকে এক গুরুতর ভয়
ভেঙে ফেলে দীর্ঘছন্দে ছায়া ফেলে পৃথিবীর পরে,-
কবিতার গাঢ় এনামেল আজ সেই সব জ্যোতির ভিতরে।।

রবীন্দ্রনাথ (Robindronath) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Onibar (অনিবার) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অনিবার (Onibar)

যেখানে রয়েছে আলো পাহাড় জলের সমবায়-
তবুও সেখানে যদি আবিষ্কার করি প্যারাফিন
অনেক মাটির নীচে,- অথবা সেখানে যদি সংগ্রাম-বিলীন
অজস্র অস্পষ্ট মুণ্ড অনুকম্পা হৃদয়ে জাগায়,
তাহ'লে প্রভাত এলে মনিয়া পাখিরা পিছে কি করে' বালক
ভেসে যাবে উজ্জ্বল জলবিম্বের মত হেসে?
কি ক'রে বা নাগরিক নিজের নারীকে ভালোবেসে
জেনে নেবে হেমন্তের সন্ধ্যার আলোকে
গ্যাস আর নক্ষত্রের লিপ্সা থেকে জেগে
যারা চায় তাহাদের কাছে তবু স্মিত সমন্বয়?
মৃথেদ উপেক্ষিত পীত দেহ- বলো,- ক্ষমাময়।
বৃত্তের মতন- এসো,- ঘুরি মোরা বঙ্কিম আবেগে।

অনিবার (Onibar) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Shurjo Kokhon (সূর্য কখন) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সূর্য কখন (Shurjo Kokhon)

সূর্য কখন পশ্চিমে ঢ’লে মশালের মত ভেঙে
লাল হয়ে উঠে সমুদ্দুরের ভিতরে নিভছে গিয়ে;
সে যে রোজ নেভে সকলেই জানে, তবু
আজো ডুবে যায় সময়মতন সকলের অজানিতে।
নারী সাপ যখ বণিক ভিখিরী পিশাচ সকলে মিলে
ভোরবেলা থেকে মনের সূর্যনগরীর আলো খুঁজে
পথের প্রমাণ সূর্যের ত্বকে রক্তে ঘুরছে কী যে।
শিশুর মতন বানানের ভুলে মহাজীবনের ভাষা
আধো শিখে আধো শেখার প্রয়াসে পরস্পরকে তারা
দেখেছে কঠিন সিঁড়িকাটাপথে;- নরকের সিঁড়ি
এঁকে বেঁকে ঘুরে বীতবর্ষণ কৃষ্ণ মেঘের মত
নীলিমায় দূরে কোথায় মিশেছে। মানবহৃদয় তাকে
পেতে চায় প্রেমে আর অনুমানে; ধূলো হাড় ঊর্ণায়
ডাঙা বন্দরে চোরা নগরের রক্তনদীর ঢেউয়ে
জেনে নিতে চায় কি সে ইতিহাসঠাসা বেদনার থেকে
এ সিঁড়ি জেগেছে,- কোথায় গিয়েছে,- এত কঙ্কাল খুলি
এত আবছায়া ফেনিল সাগর- জ্ঞান প্রেম প্রাণ একে
ঘিরে আছে কেন; নরনারীদের নিরাশাসূচক মুখে
কেন তবু আসে ভালো প্রভাতের মতন বিচ্ছুরণ?
মুখে ভুল ভাষা পুরুষ নারীর; হৃদয়ের কোলাহলে
কি কাম কারণ-কর্দম? তবুও নদীর রক্ত জল।
সময় এখন মরুভূমি; সীমাঃ মৃগতৃষ্ণার মত,
পান্থ বানাল মানুষ তোমাকে;- তোমার সাধনা গতি প্রাণনার ঢের
হাড়গোড় ভেঙে প'ড়ে থাকে, তবু, মানবেতিহাস মানে
আরো আলোকিত চেতনার স্বাদ;- মনের সূর্যনগরী জ্ঞানের কাছে
প্রেমের নিজের নিবেদন;- তাই মহাঅঘটনে কালো
ইতিহাসরাত গ্রহণ মুক্ত সূর্যের মত আলো।

সূর্য কখন (Shurjo Kokhon) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Sheidin Ai Math (সেইদিন এই মাঠ) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সেইদিন এই মাঠ (Sheidin Ai Math)

সেইদিন এই মাঠ স্তব্ধহবে নাকো জানি—এই নদী নক্ষত্রের তলে
সেদিনও দেখিবে স্বপ্ন—সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আ ঝরে !
আমি চলে যাব ব ’লে চালতাফুল কি অর ভিজিবে না শিশিরের জলে
নরম গন্ধের ঢেউয়ে? লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্মীটির তরে?
             সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !

           চারি দিকে শান্ত বাতি—ভিজে গন্ধ—মৃদু কলরব;
           খেয়ানৌকাগুলো এসে লেগেছে চরের খুব কাছে;
                 পৃথিবীর এই গল্প বেঁচে রবে চিরকাল;
           এশিরিয়া ধুলো আজ—বেবিলন ছাই হয়ে আছে ।

সেইদিন এই মাঠ (Sheidin Ai Math) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bipasha (বিপাশা) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বিপাশা (Bipasha)

অনেক বছর হ’ল সে কোথায় পৃথিবীর মনে মিশে আছে।
জেগে থেকে কথা ব’লে অন্য নারীমুখ দেখে কেউ কোনোমতে
কেবলি কঠিন ঋণ দীর্ঘকাল আপামর পৃথিবীর কাছে
চেয়ে নিয়ে তার পর পাশ কেটে, মেয়েটির ঘুমের জগতে
দেনা শোধ ক’রে দিতে ভালোভাসে, আহা।

আকাশে রৌদ্রের রোল, নদী, মাঠ, পথে বাতাস
সেই স্বার্থ বুকে নিয়ে নিরুপম উজ্জ্বলতা হ’ল;
শূন্যের সংঘর্ষ থেকে অনুপম হ’ল নীলাকাশ;

তবু স্বাতির আলো- শিশিরের মত তার অপরীপ চোখ
নিজের শরীর মন প্রাণশিল্পী আর
না জাগায়ে প্রেমিকের ঋতু পরিবর্তনের মত;
নারী আজ সময়ের নিজের আধার।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

বিপাশা (Bipasha) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Kartik Bhure 1340 (কার্তিক ভোরে : ১৩৪০) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কার্তিক ভোরে : ১৩৪০ (Kartik Bhure 1340)

কার্তিকের ভোরবেলা কবে
চোখে মুখে চুলের উপরে
যে- শিশির ঝরলো তা
শালিখ ঝরালো ব'লে ঝরে

আমলকী গাছ ছুঁয়ে তিনটি শালিখ
কার্তিকের রোদে আর জলে
আমারি হৃদয় দিয়ে চেনা তিন নারীর মতন
সূর্য? না কি সূর্যের চপ্পলে

পা গলিয়ে পৃথিবীতে এসে
পৃথিবীর থেকে উড়ে যায়
এ জীবনে ঢের শালিখ দেখেছি
তবু সেই তিনজন শালিখ কোথায়।

কার্তিক ভোরে : ১৩৪০ (Kartik Bhure 1340) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Piramid (পিরামিড) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পিরামিড (Piramid)

বেলা বয়ে যায়
গোধূলির মেঘ-সীমানায়
ধূম্র মৌন সাঁঝে
নিত্য নব দিবসের মৃতু্যঘন্টা বাজে!
শতাব্দীর শবদেহে শ্মশানের ভষ্মবহ্নি জ্বলে!
পান্থ ম্লান চিতার কবলে
একে একে ডুবে যায় দেশ, জাতি,–সংসার, সমাজ,
কার লাগি হে সমাধি, তুমি একা বসে আছ আজ
কী এক বিক্ষুব্ধ প্রেতকায়ার মতন
অতীতের শোভাযাত্রা কোথায় কখন
চকিতে মিলায়ে গেছে-পাও নাই টের!
কোন দিবা অবসানে গৌরবের লক্ষ মুসাফের
দেউটি নিভায়ে গেছে,—চলে গেছে দেউল ত্যজিয়া,
চলে গেছে প্রিয়তম,—চলে গেছে প্রিয়া!
যুগান্ত্মের মণিময় গেহবাস ছাড়ি
চকিতে চলিয়া গেছে বাসনা-পসারী,
কবে কোন্ বেলাশেষে হায়
দূর অস্ত্মশেখরের গায়!
তোমারে যায়নি তারা শেষ অভিনন্দনের অর্ঘ্য সমর্পিয়া;
সাঁজের নীহারনীল সমুদ্য মথিয়া
মরমে পশেনি তব তাহাদের বিদায়ের বাণী!
তোরণে আসেনি তব লক্ষ লক্ষ মরণ-সন্ধানী
অশ্রু-ছলছল চোখে,—পাণ|ডুর বদনে!
—কুষ্ঞ যবনিকা করেব ফেলে তারা গেল দূর দ্বারে বাতায়নে
জানো নাই তুমি!
জানে না তো মিশরেরর মূক মরুভূমি
তাদের সন্ধান!
হে নির্বাক পিরামিড,—অতীতের স্ত্মব্ধ প্রেত-প্রাণ
অবিচল স্মৃতির মন্দির!
আকাশের পানে চেয়ে আজো তুমি বসে আছো স্থির!
নিষ্পলক যুগ্মভুরু তুলে
চেয়ে আছো অনাগত উদধির কূলে
মেঘ-রক্ত ময়ূখের পানে!
জ্বলিয়া যেতেছে নত্যি নিশি-অবসানে
নূতন ভাস্কার!
বেজে ওঠে অনাহত মেম্ননের স্বর
নিবেদিন অরুণের সনে
কোন্ আশা-দূরাশার ক্ষণস্থায়ী অঙ্গুলি-তাড়নে!
–পিরামিড-পাষাণের মর্ম ঘেরি নেচে যায় দুদণ্ডের
রুধির-ফোয়ারা
কি এক প্রগল্ভ উষ্ঞ উল্লাসের সাড়া!
থেমে যায় পান্থবীণা মুহূর্তে কখন!
শতাব্দীর বিরহীর মন
নিটল নিথর
সন্ত্মরি ফিরিয়া মনে গগনের রক্ত-পীত সাগরের পরে!
বালুকার স্ফীত পারাবারে
লোল মৃগতৃষ্ঞিকার দ্বারে
মিশরের অপহৃত অন্ত্মরের লাগি
মৌন ভিক্ষা মাগি!—
–খুলে যাবে কবে রুদ্ধ মায়ার দুয়ার!
মুখরিত প্রাণের সঞ্চার
ধ্বনিত হইবে করেব কলহীন নীলার বেলায়!—
–বিচ্ছেদের নিশি জেগে আজো তাই বসে আছে
পিরামিড হায়!
— কত আগন্তুক-কাল,—অতিথি–সভ্যতা
তোমার দুয়ারে এসে কয়ে যায় অসম্বৃত অন্ত্মরের কথা!
তুলে যায় উচ্ছৃঙ্খল রুদ্র কোলাহল!
–তুমি রহ নিরুত্তর,—নির্বেদী,—নিশ্চল!
মৌন, অন্যমনা!
—প্রিয়ার বক্ষের পরের বসি একা নীরবে করিছ তুমি
শবের সাধনা
হে প্রেমিক—স্বতন্হত্র স্বরাট!
—কবে সুপ্ত উত্‌সবের স্ত্মব্ধ ভাঙা হাট
উঠিবে জাগিয়া!
সস্মিত নয়ন তুলি কবে তব প্রিয়া
আঁকিবে চুম্বন তব স্বেদ-কৃষ্ঞ, পাণ|ডু, চূর্ণ,
ব্যথিত কপোলে!
মিশর-অলিন্দে কবে গরিমার দীপ যাবে জ্বলে!
বসে আছো অশ্রুহীন স্পন্দহীন তাই!
—ওলটিপালটি যুগ-যুগন্ত্মের শ্মশানের ছাই
জাগিয়া রয়েছে তব প্রেত-আঁখি,–,প্রেমের প্রহরা!
—মোদের জীবনে যবে জাগে পাতা-ঝরা
হেমন্ত্মের বিদায়-কুহেলি,
অরুন্তুদ আঁখি দুটি মেলি
গড়ি মোরা স্মৃতির শ্মশান
দুদিনের তরে শুধু,—নবোত্‌ফুল্লা মাধবীর গান
মোদের ভুলায়ে নেয় বিচিত্র আকাশে
নিমেষে চকিতে!
—অতীতের হিমগর্ভ কবরের পাশে
ভুলে যাই দুই ফোঁটা অশ্রু ঢেলে দিতে!

    (ঝরা পালক কাব্যগ্রন্থ)

পিরামিড (Piramid) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।