Jibanananda Das Poems ~ জীবনানন্দ দাশের কবিতা

জীবনানন্দ দাশের জীবনী, এবং জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত জনপ্রিয় কবিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। Jibanananda Das short biography with Jibanananda Das poems are given below.

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)
উৎস: উইকিপিডিয়া

জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) ১৭ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৯৯খ্রিস্টাব্দে, বাংলাদেশের অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ২২শে অক্টোবর ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে, ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় তিনি পরলোক গমন করেন।

বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি ছিলেন একাধারে আধুনিক কবি, লেখক, ঔপন্যাসিক,প্রাবন্ধিক, গল্পকার, দার্শনিক ও গীতিকার, সম্পাদক এবং অধ্যাপক।

বিশেষত জীবনানন্দের কাব্যে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ হয়ে উঠেছে বিচিত্র চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি‘ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ‘কল্লোল‘ পত্রিকায় প্রথম জীবনানন্দ দাশ-এর আত্মপ্রকাশ ‘নীলিমা‘ কবিতার মধ্য দিয়ে।

জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম – সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা,শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।

তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন‘ র জন্য নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সন্মেলনে রবীন্দ্র-স্মৃতি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পুরস্কার পেয়েছেন।

তার রচিত অন্যতম ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা‘ কাব্যগ্রন্থটির জন্য, ভারত সরকারের অনুমোদিত সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন।

কবিতা

Title

জীবনানন্দ দাশ -এর কবিতা সমূহ (Jibanananda Das Poems)

Oe Hridhoy (হে হৃদয় (অগ্রন্থিত)) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) হে হৃদয় (অগ্রন্থিত) (Oe Hridhoy)

হে হৃদয়, একদিন ছিলে তুমি নদী
পারাপারহীন এক মোহনায় তরণীর ভিজে কাঠ
খুঁজিতেছে অন্ধকার স্তব্ধ মহোদধি।
তোমার নির্জন পাল থেকে যদি মরণের জন্ম হয়,
হে তরণী,
কোনো দূর পীত পৃথিবীর বুকে ফাল্গুনিক তবে
ঝরনার জল আজো ঢালুক নীরবে;
বিশীর্ণেরা আঁজলায় ভরে নিক সলিলের মুক্তা আর মণি
অন্ধকার সাগরের মরণকে নিষ্ঠা দিয়ে_ ঊষালোকে মাইক্রোফোনের মতো রবে।

হে হৃদয় (অগ্রন্থিত) (Oe Hridhoy) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Unissho Choutrisher (ঊনিশশো চৌত্রিশের) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ঊনিশশো চৌত্রিশের (Unissho Choutrisher)

একটা মোটরকার
খটকা নিয়ে আসে।

মোটরকার সব-সময়েই একটা অন্ধকার জিনিস,
যদিও দিনের রৌদ্র-আলোর পথে
রাতের সুদীপ্ত গ্যাসের ভিতর
আলোর সন্তানদের মধ্যে
তার নাম সবচেয়ে প্রথম।

একটা অন্ধকার জিনিস :
পরিষ্কার ভোরের বেলা
দেশের মটরশুঁটি-কড়াইয়ের সবুজ ক্ষেতে-মাঠে হাঁটতে হাঁটতে
হঠাৎ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছি
লাল সুরকির রাস্তার ভিতর দিয়ে
হিজলগাছ দুটোর নিচে দিয়ে
উনিশশো চৌত্রিশের মডেল একটা মোটরকার
ঝকমক করছে, ঝড় উড়িয়ে ছুটেছে;
পথ ঘাট ক্ষেত শিশির সরে যেতে থাকে,
ভোরের আলো প্রতিকূল যুক্তির বিরুদ্ধে কোণের বধূর মতো
সহসা অগোচর
মাঠ নদী যেন নিশ্চেষ্ট,
সহসা যেন প্রতীজ্ঞা হারিয়ে ফেলে,
এই মোটর অগ্রদূত,
সে ছুটে চলেছে
যেই পথে সকলের যাওয়া উচিত;
একটা মোটরকারের পথ
সব সময়েই আমার কাছে খটকার মতো মনে হয়েছে,
অন্ধকারের মতো।
স্ট্যান্ডে
শহরের বিরাট ময়দানের পুবে পশ্চিমে-ফুটপাথের পাশে
মোটারকার;
নিঃশব্দ।
মাথায় হুড
ভিতরের বুরুশ-করা গভীর গদিগুলো
পালিশ স্টিয়ারিং-হুইল হেডলাইট;
কী নিয়ে স্থির?
কলকাতার ময়দানের একটা গাছ অন্য কিছু নিয়ে স্থির,
আমি অন্যকিছু নিয়ে স্থির;
মোটরের স্থিরতা একটা অন্ধকার জিনিস

একটা অন্ধকার জিনিস :
রাতের অন্ধকারে হাজার-হাজার কার হু-হু করে ছুটছে
প্যারিসে-নিউইয়র্কে-লন্ডনে-বার্লিনে-ভিয়েনায়-কলকাতায়
সমুদ্রের এপার ওপার ছুঁয়ে
অসংখ্য তারের মতো,
রাতের উল্কার মতো,
মানুষ-মানুষীর অবিরাম সংকল্প আয়োজনের অজস্র আলেয়ার মতো
তারাও চলেছে;
কোথায় চলেছে, তা আমি জানি না।

একটা মোটরকারের পথ- মোটরকার
সবসময়ই আমার কাছে খটকার মতো মনে হয়েছে,
অন্ধকারের মতো।

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করবার অবসর আছে।
জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ঊনিশশো চৌত্রিশের (Unissho Choutrisher) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Sesh Holo Jiboner Sob Lenden (শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন (Sesh Holo Jiboner Sob Lenden)

শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন,
বনলতা সেন।
কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা
মাছরাঙা ভোলেনি তো দুপুরের খেলা
শালিখ করে না তার নীড় অবহেলা
উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন,
তুমি নাই বনলতা সেন।

তোমার মতন কেউ ছিল কি কোথাও?
কেন যে সবের আগে তুমি চলে যাও।
কেন যে সবের আগে তুমি
পৃথিবীকে করে গেলে শূন্য মরুভূমি
(কেন যে সবের আগে তুমি)
ছিঁড়ে গেলে কুহকের ঝিলমিল টানা ও পোড়েন,
কবেকার বনলতা সেন।
কত যে আসবে সন্ধ্যা প্রান্তরে আকাশে,
কত যে ঘুমিয়ে রবো বস্তির পাশে,
কত যে চমকে জেগে উঠব বাতাসে
হিজল জামের
বনে থেমেছে স্টেশনে বুঝি রাত্রির ট্রেন,
নিশুথির বনলতা সেন।

শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন (Sesh Holo Jiboner Sob Lenden) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ratri O Bhore (রাত্রি ও ভোর) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) রাত্রি ও ভোর (Ratri O Bhore)

শীতের রাতের এই সীমাহীন নিষ্পন্দন গহ্বরে
জীবন কি বেঁচে আছে তবে?
ডানা-ভাঙ্গা নক্ষত্রের মতন উৎসবে
আঁধারের ভিতরে কি করে

কেবলি স্ফুলিঙ্গ অন্ধ সংক্রান্তির মতো?
বহুদিন ক্ষমাহীন সময়ের ভিতরে সে অনেক জ্বলেছে
আছে, তবু তুমি নেই, তাই তো দাহন ভেঙ্গে গেছে
মৃত নক্ষত্রের গন্ধ ক্রমেই হতেছে পরিণত

অন্ধকার সনাতনে_ সৃষ্টির প্রথম উৎসারিত পটভূমি
তারি অন্তিমের কথা? অন্তহীন মোজেইকে আলোকের গোলকধাঁধায়
কেউ প্রিয়া_ কেউ তার অনিবার্ণ হতে চায়;
ঝ'রে যায়_ দূর মৃগতৃষ্ণিকার মতো দীপ্ত তুমি।

এখন ভোরের বেলা মনে হয় তুমি শাদা যূথিকার মতো
তেমনি পবিত্র স্বাদ তোমার শরীর শিখা ঘিরে
কোথাও বিষয় খুঁজে তোমাকে দেখেছি রৌদ্রে লুকানো শিশিরে
সৃষ্টির প্রথম ভোর থেকে অবশেষে আজ এই পরিণত

শেষ ভোর, শোষ রোদ, শেষ ফুল, অন্তিম শিশির
মীনকেতনের দিন জন্মান্তরে কেটে গেছে, -আজ প্রতিসারী
আরেক প্রয়াণে উৎস; -একটি মেঘের মতো চ'লে এসে ভারি
নীলিমায় ভেসে যেতে-যেতে_ থেমে_ শুনেছি, বলেছো তুমি, স্থির

মেঘশান্তি প্রকৃতির- মানুষ তা হারিয়ে ফেলেছে
চারিদিকে সময়ের সকল বিশাল মরুভূমি
বলয়িত নগরীর সমাজের সভ্যতার কলঙ্কসুন্দর
মৃগতৃষ্ণায় লয় পেয়ে গেলে স্থির তুমি_ স্থিরতর তুমি

#জীবনান্দদাশের অগ্রন্থিত কবিতাসমগ্র

রাত্রি ও ভোর (Ratri O Bhore) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ekti Kobita (একটি কবিতা) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) একটি কবিতা (Ekti Kobita)

আমার আকাশ কালো হ'তে চায় সময়ের মির্মম আঘাতে
জানি, তবু ভোরে রাত্রে, এই মহাসময়ের কাছে
নদী খেত বনানীর ঝাউয়ের ঝরা সোনার মতন
সূর্য তারাবীথির সমস্ত অগ্নির শক্তি আছে।
হে সুবর্ণ, হে গভীর গতির প্রবাহ,
আমি মন সচেতন;- আমার শরীর ভেঙ্গে ফেলে
নতুন শরীর করো -নারীকে যে উজ্জ্বল প্রাণনে
ভালোবেসে আভা আলো শিশিরের উৎসের মতন
সজ্জন স্বর্ণের মতো শিল্পীর হাতের থাকে নেমে
হে আকাশ, হে সময়গ্রন্থি সনাতন,
আমি জ্ঞান আলো গান মহিলাকে ভালোবেসে আজ;
সকলের নীলকন্ঠ পাখি জল সূর্যের মতন।
  

#বেলা অবেলা কালবেলা

একটি কবিতা (Ekti Kobita) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Chetona Likhon (চেতনা-লিখন) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) চেতনা-লিখন (Chetona Likhon)

শতাব্দীর এই ধূসর পথে এরা ওরা যে যার প্রতিহারী।
আলো অন্ধকারের ক্ষণে যে যার মনে সময়সাগরের
ক্লান্তিবিহীন শব্দ শোনে;
অথবা তা নাড়ীর রক্তস্রোতের মতন ধ্বনি
না শুনে শোনা যায়।

সময় গতির শব্দময়তাকে তবু ধীরে ধীরে যথাস্থানে রেখে
ট্রামের রোলে আরেক ভোরের সাড়া পেয়ে কেউ বা এখন শিশু,
কেউ বা যুবা, নটী, নাগর, দক্ষ-কন্যা, অজের মুণ্ড, অখল
                                        পোলিটিশ্যান্‌
এদের হাতেই দিনের আলো নিজের সার্থকতা
খুঁজে বেড়ায়।

চারিদিকেতে শিশুরা সব অন্ধ এঁদো গলির অপার পরলোকে আজ
জগৎ-শিশুর প্রাণের আকাশ ভেবে
জানে না কবে নীলিমাকে হারিয়ে ফেলেছে।
শিশু-অমঙ্গলের সকল জনিতারা এই পৃথিবীর সকল নগরীর
আবছায়াতে ক্লান্ত-কলকাকলীর প্রেতের পরিভাষা
ছড়িয়ে কবে ফুরিয়ে আবার সহজ মানব-কণ্ঠে কথা ক'বে?
আকাশমর্ত্যে মহাজাতক সূর্য-গ্রহণ ছাড়া
কোথাও কোনো তিলেক বেশি আলো
রয়েছে জানে না কি?
তবুও সবাই তারা
অন্ধকারের ভিতর থেকে ক্রমে ক্রমে যার হয়ে কি আসছে আরো
বিশাল আলোতে?

কোথায় ট্রাম উধাও হয়ে চ'লেছে আলোকে।
কয়লা গ্যাসের নিরেস ঘ্রাণ ছড়িয়ে আলোকে
কোথায় এত বিমূঢ় প্রাণজন্তু নিয়ে অনন্ত বাস্‌, কার্‌,
এমন দ্রুত আবেগে চলেছে!
কোথাও দূরে দেবাত্মা পাহাড় রয়েছে কি?
ইতিহাসের ধারণাতীত সাগর নীলিমা?
চেনা জানা নকল আলোর আকাশ ছেড়ে সহজ সূর্য আছে।
নব নবীন নগর মেশিন প্রাণের বন্দর-
জলের বীথি আকাশী নীল রৌদ্রকণ্ঠী পাখি?
সেখানে প্রেমের বিচারসহ চোখের আলোয় গোলকধাঁধার থেকে
মুখ মানুষ নতুন সূর্য তারার পথের জ্যোতিধূর্লি-ধূসর হাসি দেখে
কি দীন, সহৃদয়?
জ্ঞান সেখানে অফুরন্ত প্যারাগ্রাফে ক্লান্তিহীন শব্দ যোজনায়
কিছুই নেই প্রমাণ করে শূন্যতাকে কুড়ায় নাক' তবে?

পরস্পরের দাবির কাছে
অন্তরঙ্গ আত্মনিবেদনে
নবীন 'রে পরিচিত হওয়ার পরে নতুন পৃথিবী
রয়েছে জেনে আজকে ওরা চলার পথে ইতিহাসের চরম চেতনা;-
মানব নামের কঠিন হিসাব হয়তো মেলাতেছে
কী এক নতুন জ্যোতির্দেশী সমাজ সময় শান্তি গড়ার নীল সাগরের তীরে।

চোখে যাদের চলতে দেখি তারা অনেক দেরী করে অনাথ মরু সাগর ঘুরে চলে;
মনের প্রয়াণ মোড় ঘুরে কি দেখেছে সরণি-
সাহস আলো প্রাণ যেখানে সবার তরে শুভ-
এই পৃথিবী ঘরণী।

চেতনা-লিখন (Chetona Likhon) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ei Prithibiir (এই পৃথিবীর) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) এই পৃথিবীর (Ei Prithibiir)

এই পৃথিবীর বুকের ভিতরে কোথাও শান্তি আছে;
অঘ্রাণ মাস রাত্রি হ’লে অনেক বিষয়াবিষের সমাধান
মাঠে জলে পাখির নীড়ে নক্ষত্রেতে থাকে;
অমেয় গোলকধাঁধাঁয় ঘুরে প্রাণ
চেষ্টা করে সমাজ জাতি সময় সৃষ্টি সঠিক বুঝে নিতে।
সকল প্রয়াণ সফল হবে গ্লাশিয়ারের দীপ্তি আসার আগে;
এখন রৌদ্রে আজন্মকাল অনুষ্ঠানের দিন;
সফল হতে ইতিহাসের অনেক দিন লাগে।

সে সফলতা এই পৃথিবী- হয়তো সৃশঠি চূর্ণ হ’লে হবে;
আমি অনেক দূরের থেকে তাহার কারণধ্বনি
নদীর জলে সমস্ত দিন ক্রন্দসী উজ্জ্বল;
তোমায় আমি ভালোবাসি- এই সত্য স্বভাবপৃথিবীর
দানের মতন নিজেরই ফলাফল।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

এই পৃথিবীর (Ei Prithibiir) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Haymonto Kuashai (হেমন্ত কুয়াশায়) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) হেমন্ত কুয়াশায় (Haymonto Kuashai)

সকাল-সন্ধ্যাবেলা আমি সেই নারীকে দেখেছি
জেনেছি অনেক দিন- তারপর তবুও ভেবেছি।
তারপর ঢের দিন পৃথিবীর সেই শাদা সাধারণ কথা
ছোট বড় জিনিসের বিস্মরণে ক্রমে ভুলে গেছি।
আকাশ আমাকে বলেঃ 'সে না তুমি আত্মসমাহিতি?'
পৃথিবী আমাকে দেখে ভেবে যায়ঃ 'এর প্রাণে, আহা,
লাখেরাজ হয়ে প'ড়ে র'য়েছে সততা;
যে নারীকে নদীর কিনারে জলে ভালোবেসেছিল
সময়ের সুবাতাস মুখ ছঁইয়ে চ'লে গেলে যদি তার কথা
ভুরু কোঁচকায়ে ভেবে নিতে হয়, মানবহৃদয় তবে সে কোন রকম।'
হেমন্তের কুয়াসায় বেড়াতে কারু দাবী
অমল ঋণের মত গ্রহণ ক'রেছি আমি নিতে ভুলে গিয়ে;
তার ভালোবাসা পেয়ে ভয়াবহভাবে সৎ হয়ে আছি- ভাবি।

হেমন্ত কুয়াশায় (Haymonto Kuashai) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Surjo Nari Nokhtro (সূর্য রাত্রি নক্ষত্র) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সূর্য রাত্রি নক্ষত্র (Surjo Nari Nokhtro)

এইখানে মাইল-মাইল ঘাস ও শালিখ রৌদ্র ছাড়া কিছু নেই।
সূর্যালোকিত হ'য়ে শরীর ফসল ভালোবাসি
আমারি ফসল সব- মীনকন্যা এসে ফলালেই
বৃশ্চিক কর্কট তুলা মেষ সিংহ রাশি
বলয়িত হ'য়ে উঠে আমাকে সূর্যের মতো ঘিরে
নিরবধি কাল নীলাকাশ হ'য়ে মিশে গেছে আমার শরীরে।
এই নদী নীড় নারী কেউ নয়; -মানুষের প্রাণের ভিতরে
এ-পৃথিবী তবুও তো সব
অধিক গভীরভাবে মানবজীবন ভালো হ'লে
অধিক নিবিড়তরভাবে প্রকৃতিকে অনুভব
করা যায়। কিছু নয়- অন্তহীন ময়দান অন্ধকার রাত্রি নক্ষত্র-
তারপর কেউ তাকে না চাইতে নবীন করুণ রৌদ্রে ভোর;-
অভাবে সমাজ নষ্ট না-হ'লে মানুষ এইসবে
হ'য়ে যেতো এক তিল অধিক বিভোর।

সূর্য রাত্রি নক্ষত্র (Surjo Nari Nokhtro) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Asha Vorosha (আশা ভরসা) ~ জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das)

কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) আশা ভরসা (Asha Vorosha)

ইতিহাসপথ বেয়ে অবশেষে এই
শতাব্দীতে মানুষের কাজ
আশায় আলোয় শুরু হয়েছিল বুঝি- শুভ্র কথা
বলা হতেছিল;- রৌদ্রে জলে ভালোলেগেছিল
শরীরকে- জীবনকে।

কিন্তু তবু সবি প্রিয় মানুষের হাতে
অপ্রিয় প্রহার হয়ে মূল্যহীন মানুষের গায়ে
আশ্চর্য মৃত্যুর মত মূল্য হয়- হিম হয়।

মানুষের সভ্যতার বয়ঃসন্ধি দোষ
হয়তো কাটেনি আজো, তাই
এরকমই হতে হবে আরো রাত্রি দিন;-
নক্ষত্র সূর্যের সাথে সঞ্চালিত হয়ে তবু আলোকের পথে
মৃত ম্যামথের কাছে কুহেলিত ঋণ
শেষ ক'রে মানুষ সফল হতে পারে
উৎসাহ সংকল্প প্রেমে মূল্যের অক্ষুন্ন সংস্কারে;
আশা করা যাক।

সুধীরাও সেই কথা ভাবে,
আপ্রাণ নির্দেশ দান করে।
ইতিহাসে ঘুরপথ ভুল পথ গ্লানি হিংসা অন্ধকার ভয়
আরো ঢের আছে, তবু মানুষকে সেতু থেকে সেতুলোক পার হতে হয়।

কাব্যগ্রন্থ – আলোপৃথিবী

আশা ভরসা (Asha Vorosha) কবিতাটি ছাড়াও কবি জীবনানন্দ দাশ (Jibanananda Das) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।