Kazi Nazrul Islam Poems ~ কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা

বিখ্যাত দুখের কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী। কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার বিশাল তালিকা নীচে দেওয়া হল। A short biography of the famous dukher poet kazi nazrul islam. A huge list of kazi nazrul islam poems are given below.

কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)
উৎস: উইকিপিডিয়া

কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) ২৫ই মে, ১৮৯৯ সালে, বর্ধমান জেলার, আসানসোল মহাকুমার, চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

২৯ই আগস্ট, ১৯৭৬ সালে, ঢাকা, বাংলাদেশে তাঁর মৃত্যু হয় ।

কাজী নজরুল ইসলাম-এর ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত সুরারোপিত সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় গান “চল্ চল্ চল্“।

তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

কবির সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে বিদ্রোহী নামক কবিতাটি। এই কবিতাটি ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। বিদ্রোহী কবিতাটি রচনায় তিনি সারা ভারতের সাহিত্য সমাজের খ্যাতি লাভ করেন।

সাহিত্য জগতে তাঁর রচিত বিখ্যাত প্রথম কাব্যগ্রন্থটির নাম-অগ্নিবীণা। এটি ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা রয়েছে। কবিতা গুলির নাম ‘প্রলয়োল্লাস(কবিতা)’, ‘বিদ্রোহী’, ‘আগমনী’, ‘ধূমকেতু’, ‘রক্তাম্বর- ধরণী মা’, ‘কামাল পাশা’ ইত্যাদি।

কবির লেখা একটি উল্লেখযোগ্য প্রথম পত্রোপন্যাসের নাম বাঁধন হারা

তিনি ধূমকেতু নামক একটি পত্রিকা লেখেন।এটি ১৯২২ সালে, ১২ই আগস্ট প্রকাশিত হয়।

তাঁর বিন্যস্ত আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ রয়েছে বিষের বাঁশি। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কবির-এর অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার ১৯৭৭ সালে, একুশে পদক ১৯৭৬ সালে এবং পদ্মভূষণ উপাধিতে তাঁকে সম্মানিত করা হয়।

তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক এবং দার্শনিক।

কবিতা

Title

কাজী নজরুল ইসলাম -এর কবিতা সমূহ (Kazi Nazrul Islam Poems)

Bedona Moni (বেদনা-মণি) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বেদনা-মণি (Bedona Moni)

একটি শুধু বেদনা মানিক আমার মনের মণিকোঠায়  
     সেই তো আমার বিজন ঘরে দুঃখ রাতের আঁধার টুটায়।

          সেই মানিকের রক্ত-আলো
          ভুলাল মোর মন ভুলাল গো।
     সেই মানিকের করুণ কিরণ আমার বুকে মুখে লুটায়।

আজ   রিক্ত আমি কান্না হাসির দাবি দাওয়ার বাঁধন ছিঁড়ে
ওই   বেদনা-মণির শিখার মায়াই রইল একা জীবন ঘিরে।
          এ কালফণী অনেক খুঁজি
          পেয়েছে ওই একটি পুঁজি গো!
আমার  চোখের জলে ওই মণিদীপ আগুন হাসির ফিনিক ফোটায়।

  (ছায়ানট কাব্যগ্রন্থ)

বেদনা-মণি (Bedona Moni) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Obsor (অবসর) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অবসর (Obsor)

লক্ষ্মী আমার! তোমার পথে আজকে অভিসার,
অনেক দিনের পর পেয়েছি মুক্তি-রবিবার।
দিনের পর দিন গিয়েছে হয়নি আমার ছুটি,
বুকের ভিতর ব্যর্থ কাঁদন পড়ত বৃথাই লুটি
                       বসে   ঢুলত আঁখি দুটি!
আহা আজ পেয়েছি মুক্ত হাওয়া
                       লাগল চোখে তোমার চাওয়া
তাইতো প্রাণে বাঁধ টুটেছে রুদ্ধ কবিতার।
  
তোমার তরে বুকের তলায় অনেক দিনের অনেক কথা জমা,
কানের কাছে মুখটি থুয়ে গোপন সে-সব কইব প্রিয়তমা!
এবার শুধু কথায় গানে রাত্রি হবে ভোর
শুকতারাতে কাঁপবে তোমার নয়ন-পাতার লোর
                      অভি-মানিনীরে মোর!
  
যখন     তোমায় সেধে ডাকবে বাঁশি  
        মলিন মুখে ফুটবে হাসি,
        হিম-মুকুরে উঠবে ভাসি
                      অরুণ ছবি তার।

  (পুবের হাওয়া কাব্যগ্রন্থ)

অবসর (Obsor) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Nishith Pritom (নিশীথ-প্রীতম) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) নিশীথ-প্রীতম (Nishith Pritom)

হে মোর প্রিয়,
হে মোর   নিশীথ-রাতের গোপন সাথি!
মোদের   দুইজনারেই জনম ভরে কাঁদতে হবে গো –
   শুধু   এমনি করে সুদূর থেকে, একলা জেগে রাতি।
  যখন   ভুবন-ছাওয়া আঁচল পেতে নিশীথ যাবে ঘুম,
        আকাশ বাতাস থমথমাবে সব হবে নিঝঝুম,
  তখন   দেব দুঁহু দোঁহার চিঠির নাম-সহিতে চুম!
   আর   কাঁপবে শুধু গো,
মোদের   তরুণ বুকের করুণ কথা আর শিয়রে বাতি।
  
  মোরা   কে যে কত ভালোবাসি কোনোদিনই হবে না তা বলা,
   কভু   সাহস করে চিঠির বুকেও আঁকব না সে কথা;
   শুধু   কইতে-নারার প্রাণপোড়ানি রইবে দোঁহার ভরে বুকের তলা।
            শুধু    চোখে চোখে চেয়ে থাকার –
                   বুকের তলায় জড়িয়ে রাখার
         ব্যাকুল কাঁপন নীরব কেঁদে কইবে কি তার ব্যথা!

    কভু   কী কথা সে কইতে গিয়ে হঠাৎ যাব থেমে,
          অভিমানে চারটি চোখেই আসবে বাদল নেমে।
    কত   চুমুর তৃষায় কাঁপবে অধর, উঠবে কপোল ঘেমে।
    হেথা   পুরবে নাকো ভালোবাসার আশা অভাগিনি,
    তাই   দলবে বলে কলজেখানা রইনু পথে পাতি।

  (ছায়ানট কাব্যগ্রন্থ)

নিশীথ-প্রীতম (Nishith Pritom) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Uthiache Jhor (উঠিয়াছে ঝড়) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) উঠিয়াছে ঝড় (Uthiache Jhor)

উঠিয়াছে ঝড়, কড় কড় কড় ঈশানে নাকাড়া বাজিছে তার,
ওরে ভীরু, ওঠ, এখনই টুটিবে ধমকে তাহার রুদ্ধ দ্বার!
কৃষ্ণ মেঘের নিশান তাহার দোলে পশ্চিম-তোরণে ওই,
ভ্রুকুটি- ভঙ্গে কোটি তরঙ্গে নাচে নদনদী তাথই থই।
তরবারি তার হানিছে ঝিলিক সর্পিল বিদ্যুল্লেখায়,
হানিবে আঘাত তোর স্বপ্নের শিশমহলের দরোয়াজায় ;
কাঁদিবে পূর্ব পুবালি হাওয়ায়, ফোটাবে কদম জুঁই কুসুম ;
বৃষ্টিধারায় ঝরিবে অশ্রু, ঘনালে প্রলয় রবে নিঝুম?

যে দেশে সূর্য ডোবে – সেই দেশে হইল নবীন সূর্যোদয়,
উদয়-অচলে টলমল করে অস্ত-রবির আঁধার ভয়!
যুগ যুগ ধরি, তপস্যা দিয়ে করেছি মহিরে মহামহান,
ফুটায়েছি ফুল কর্ষিয়া মরু, ধূলির ঊর্ধ্বে গেয়েছি গান।
আজি সেই ফুলে-ফসল-মেলায় অধিকার নাই আমাদেরই,
আমাদের ধ্যান-সুন্দর ধরা আমাদের নয় আজি হেরি!
গীত-শেষে নীড়ে ফিরিবার বেলা হেরি নীড়ে বাসা বাঁধে শকুন,
মাংস-লোলুপ ফিরিতেছে ব্যাধ স্কন্ধে রক্ত-ধনুর্গুণ!
নীড়ে ফিরিবার পথ নাই তোর, নিম্নে নিষাদ, ঊর্ধ্বে বাজ,
তোর সে অতীত মহিমা আজিকে তোরে সব চেয়ে হানিছে লাজ!

উঠিয়াছে ঝড় – ঝড় উঠিয়াছে প্রলয়-রণের আমন্ত্রণ,
‘আদাওতি’র এ দাওতে কে যাবি মৃত্যুতে প্রাণ করিয়া পণ?
ঝড়ে যা উড়িবে, পুড়িবে আগুনে, উড়ুক পুড়ুক সে সম্বল,
মৃত্যু যেখানে ধ্রুব তোর সেথা মৃত্যুরে হেসে বরিবি চল!
অপরিমাণ এ জীবনে করিবি জীবিতের মতো ব্যয় যদি,
ঊর্ধ্বে থাকুক ঝড়ের আশিস, চরণে মরণ-অম্বুধি!

বিধাতার দান এই পবিত্র দেহের করিবি অসম্মান?
শকুন-শিবার খাদ্য হইবি, ফিরায়ে দিবি না খোদার দান?
এ-জীবন ফুল-অঞ্জলি সম নজরানা দিবি মৃত্যুরে, –
জীবিতের মতো ভুঞ্জি জীবন ব্যয় করে যা তা প্রাণ পুরে!
চরণে দলেছি বিপুলা পৃথ্বী কোটি গ্রহ তারা ধরি শিরে,
মোদের তীর্থ লাগি রবি শশী নিশিদিন আসে ফিরে ফিরে।
নিঃসীম নভ ছত্র ধরিয়া, বন্দনা-গান গাহে বিহগ,
বর্ষায় ঝরে রহমত-পানি-প্রতীক্ষমাণ সাত স্বরগ।
অপরিমাণ এ দানেরে কেমনে করিবি, রে ভীরু অস্বীকার?
মৃত্যুর মারফতে শোধ দিব বিধির এ মহাদানের ধার।
রোগ-পাণ্ডুর দেহ নয় – দিব সুন্দর তনু কোরবানি,
রোগ ও জরারে দিব না এ দেহ, জীবন-ফুলের ফুলদানি।
তাজা এ স্বাস্থ্য সুন্দর দেহ মৃত্যুরে দিবি অর্ঘ্যদান,
অতিথিরে দিবি কীটে-খাওয়া ফুল? লতা ছিঁড়ে তাজা কুসুম আন!

আসিয়াছে ঝড়, ঘরের ভিতর তাজিম করিয়া অতিথে ডাক,
বন্ধুর পথে এসেছে বন্ধু, হাসিয়া দস্তে দস্ত রাখ।
যৌবন-মদ পূর্ণ করিয়া জীবনের মৃৎপাত্র ভর,
তাই নিয়ে সব বেহুঁশ হইয়া ঝঞ্ঝার সাথে পাঞ্জা ধর।

ঝঞ্ঝার বেগ রুধিতে নারিবে পড়-পড় ওই গৃহ রে তোর,
খুঁটি ধরে তার কেন বৃথা আর থাকিস বসিয়া, ভাঙ এ দোর!
রবির চুল্লি নিভিয়া গিয়াছে, ধূম্রায়মান নীল গগন,
ঝঞ্ঝা এসেছে ঝাপটিয়া পাখা, ধেয়ে আয় তুই ক্ষীণ পবন!

   (ঝড় কাব্যগ্রন্থ)

উঠিয়াছে ঝড় (Uthiache Jhor) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Haramoni (হারামণি) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) হারামণি (Haramoni)

এমন করে অঙ্গনে মোর ডাক দিলি কে স্নেহের কাঙালি!
          কে রে ও তুই কে রে?
          আহা  ব্যথার সুরে রে,
          এমন  চেনা স্বরে রে,
     আমার ভাঙা ঘরের শূন্যতারই বুকের পরে রে।
এ কোন     পাগল স্নেহ-সুরধুনীর আগল ভাঙালি?
  
     কোন্ জননির দুলাল রে তুই, কোন্ অভাগির হারামণি,
          চোখ-ভরা তোর কাজল চোখে রে
আহা    ছলছল কাঁদন চাওয়ার সজল ছায়া কালো মায়া
          সারাখনই উছলে যেন পিছল ননি রে!
          মুখভরা তোর ঝরনাহাসি
          শিউলি সম রাশি রাশি
আমার     মলিন ঘরের বুকে মুখে লুটায় আসি রে!
বুক-জোড়া তোর ক্ষুদ্ধ স্নেহ দ্বারে দ্বারে কর হেনে যে যায়
কেউ কি তারে ডাক দিল না? ডাকল যারা তাদের কেন
                              দলে এলি পায়?
  
কেন আমার ঘরের দ্বারে এসেই আমার পানে চেয়ে এমন
                    থমকে দাঁড়ালি?
     এমন চমকে আমায় চমক লাগালি?
এই কি রে তোর চেনা গৃহ, এই কিরে তোর চাওয়া স্নেহ হায়!
তাই কি আমার দুখের কুটির হাসির গানের রঙে রাঙালি?
     হে মোর    স্নেহের কাঙালি।
এ সুর যেন বড়োই চেনা, এ স্বর যেন আমার বাছার,
কখন সে যে ঘুমের ঘোরে হারিয়েছিনু হয় না মনে রে!
না চিনেই আজ তোকে চিনি, আমারই সেই বুকের মানিক,
পথ ভুলে তুই পালিয়ে ছিলি সে কোন ক্ষণে সে কোন বনে রে!
  
     দুষ্টু ওরে, চপল ওরে, অভিমানী শিশু!  
     মনে কি তোর পড়ে না তার কিছু?  
     সেই অবধি জাদুমণি কত শত জনম ধরে
     দেশ বিদেশে ঘুরে ঘুরে রে,
আমি  মা-হারা সে কতই ছেলের কতই মেয়ের
      মা হয়ে বাপ খুঁজেছি তোরে!
          দেখা দিলি আজকে ভোরে রে!
     উঠছে বুকে হাহা ধ্বনি  
     আয় বুকে মোর হারামণি,
আমি  কত জনম দেখিনি যে ওই মু-খানি রে!
  
পেটে-ধরা নাই বা হলি, চোখে ধরার মায়াও নহে এ,
তোকে পেতেই জন্ম জন্ম এমন করে বিশ্ব-মায়ের
          ফাঁদ পেতেছি যে!
আচমকা আজ ধরা দিয়ে মরা-মায়ের ভরা-স্নেহে হঠাৎ জাগালি।
          গৃহহারা বাছা আমার রে!
     চিনলি কি তুই হারা-মায়ে চিনলি কি তুই আজ?  
     আজকে আমার অঙ্গনে তোর পরাজয়ের বিজয়-নিশান
          তাই কি টাঙালি?
          মোর    স্নেহের কাঙালি।

(ছায়ানট কাব্যগ্রন্থ)

হারামণি (Haramoni) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Borshai (বরষায়) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বরষায় (Borshai)

আদর গর-গর
            বাদর দর-দর
            এ-তনু ডর-ডর
            কাঁপিছে থর-থর॥
            নয়ন ঢল-ঢল
            [সজল ছল-ছল]            কাজল-কালো-জল
            ঝরে লো ঝর ঝর॥
  
ব্যাকুল বনরাজি            শ্বসিছে ক্ষণে ক্ষণে
সজনী! মন আজি          গুমরে মনে মনে।
            বিদরে হিয়া মম
            বিদেশে প্রিয়তম
            এ-জনু পাখিসম
            বরিষা জর-জর॥
  
[বিজুরি হানে ছুরি           চমকি রহি রহি
বিধুরা একা ঝুরি            বেদনা কারে কহি।]            সুরভি কেয়া-ফুলে
            এ হৃদি বেয়াকুলে
            কাঁদিছে দুলে দুলে
            বনানী মর মর॥
  
নদীর কলকল            ঝাউ-এর ঝলমল
দামিনী জ্বল জ্বল          কামিনী টলমল।
            আজি লো বনে বনে
            শুধানু জনে জনে
            কাঁদিল বায়ুসনে
            তটিনী তরতর॥
  
আদুরি দাদুরি লো           কহো লো কহো দেখি
এমন বাদরি লো            ডুবিয়া মরিব কি?
            একাকী এলোকেশে
            কাঁদিব ভালোবেসে?
            মরিব লেখা-শেষে
            সজনি সরো সরো।

  (পুবের হাওয়া কাব্যগ্রন্থ)

বরষায় (Borshai) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Orghyo (অর্ঘ্য) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অর্ঘ্য (Orghyo)

হায় চির-ভোলা! হিমালয় হতে
            অমৃত আনিতে গিয়া
ফিরিয়া এলে যে নীলকণ্ঠের
            মৃত্যু-গরল পিয়া!
কেন এত ভালো বেসেছিলে তুমি
            এই ধরণির ধূলি?
দেবতারা তাই দামামা বাজায়ে
            স্বর্গে লইল তুলি!
হুগলি
৩রা আষাঢ়, ১৩৩২
(চিত্তনামা কাব্যগ্রন্থ)

অর্ঘ্য (Orghyo) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Har Mana Har (হার-মানা-হার) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) হার-মানা-হার (Har Mana Har)

তোরা   কোথা হতে কেমনে এসে
             মণি-মালার মতো আমার কণ্ঠে জড়ালি।
আমার   পথিক-জীবন এমন করে
             ঘরের মায়ায় মুগ্ধ করে বাঁধন পরালি।

আমায়   বাঁধতে যারা এসেছিল গরব করে হেসে
তারা   হার মেনে হায় বিদায় নিল কেঁদে,
তোরা   কেমন করে ছোট্ট বুকের একটু ভালোবেসে
  ওই    কচি বাহুর রেশমি ডোরে ফেললি আমায় বেঁধে!
তোরা   চলতে গেলে পায়ে জড়াস,
        ‘না’ ‘না’ বলে ঘাড়টি নড়াস,
  কেন   ঘর-ছাড়াকে এমন করে  
        ঘরের ক্ষুধা স্নেহের সুধা মনে পড়ালি।

  ওরে   চোখে তোদের জল আসে না–
        চমকে ওঠে আকাশ তোদের
             চোখের মুখের চপল হাসিতে।
  ওই    হাসিই তো মোর ফাঁসি হল,
  ওকে   ছিঁড়তে গেলে বুকে লাগে,
             কাতর কাঁদন ছাপা যে ও হাসির রাশিতে!
  আমি   চাইলে বিদায় বলিস, ‘উঁহু,
                    ছাড়ব নাকো মোরা’
   ওই   একটু মুখের ছোট্ট মানাই এড়িয়ে যেতে নারি,
  কত    দেশ-বিদেশের কান্নাহাসির  
             বাঁধনছেঁড়ার দাগ যে বুকে পোরা,
তোরা    বসলি রে সেই বুক জুড়ে আজ,
         চিরজয়ীর রথটি নিলি কাড়ি।
  ওরে    দরদিরা! তোদের দরদ
         শীতের বুকে আনলে শরৎ,
তোরা    ঈষৎ-ছোঁয়ায় পাথরকে আজ  
              কাতর করে অশ্রুভরা ব্যথায় ভরালি।

  (ছায়ানট কাব্যগ্রন্থ)

হার-মানা-হার (Har Mana Har) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Thang Fuli (ঠ্যাং-ফুলি) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ঠ্যাং-ফুলি (Thang Fuli)

হো-হো-হো উররো হো-হো!
হো-হো-হো উররো হো-হো
    উররো হো-হো
    বাস কী মজা!
কে শুয়ে চুপ সে ভুঁয়ে,
নারছে হাতে পাশ কী সোজা!
  
হো-বাবা! ঠ্যাং ফুলো যে!
হাসে জোর ব্যাংগুলো সে
    ড্যাং তুলো তার
    ঠ্যাংটি দেখে!
ন্যাং ন্যাং য়্যাগগোদা ঠ্যাং
আঁতকে ওঠায় ডানপিটেকে!
এক ঠ্যাং তালপাতা তার
যেন বাঁট হালকা ছাতার!
    আর পাটা তার
    ভিটরে ডাগর!
যেন বাপ! গোবদা গো-সাপ
পেট-ফুলো হুস এক অজাগর!
  
মোদোটার পিসশাশুড়ি
গোদ-ঠ্যাং চিপসে বুড়ি
    বিশ্ব জুড়ি
    খিসসা যাহার!
ঠে-ঠে ঠ্যাং নাক ডেঙা ডেং
এই মেয়ে কি শিষ্যা তাহার?
হাদে দেখ আসছে তেড়ে
গোদা-ঠ্যাং ছাঁতসে নেড়ে,
    হাসছে বেড়ে
    বউদি দেখে!
অ ফুলি! তুই যে শুলি
দ্যাখ না গিয়ে চৌদিকে কে!
বটু তুই জোর দে ভোঁ দৌড়,
রাখালে! ভাঙবে গোঁ তোর
    নাদনা গুঁতোর
    ভিটিম ভাটিম!
ধুমাধুম তাল ধুমাধুম
পৃষ্ঠে, – মাথায় চাটিম চাটিম!
  
‘ইতু’ মুখ ভ্যাংচে বলে –
গোদা ঠ্যাং ন্যাংচে চলে
    ব্যাং ছা যেন
    ইড়িং বিড়িং!
রাগে ওর ঠ্যাং নড়ে জোর
য়্যাদ্দেখেছিস – তিড়িং তিড়িং!
  
মলিনা! অ খুকুনি!
মা গো! কী ধুকপুকুনি
    হাড়-শুগুনি
    ভয়-তরাসে!
দেখে ইস ভয়েই মরিস
ন্যাংনুলোটার পাঁইতারাকে।

গোদা-ঠ্যাং পুঁচকে মেয়ে
আসে জোর উঁচকে ধেয়ে
    কুঁচকে কপাল,
    ইস কী রগড়!
লেলিয়ে দে ঢেলিয়ে!
ফোঁস করে ফের! বিষ কী জবর!
ইন্দু! দৌড়ে যা না!
হাসি, তুই বগ দেখা না!
    দগ্‌ধে না!
    তোল তাতিয়ে!
রেণু! বাস, রেগেই ঠ্যাঙাস,
বউদি আসুন বোলতা নিয়ে!
  
আর না খাপচি খেলো!
ওলো এ আচ্ছি যে লো,
    নাচছি তো খুব
    ঠ্যাং নিয়ে ওর!
ব্যাচারির হ্যাঁস-ফ্যাসানির
শেষ নেই, মুখ ভ্যাংচিয়ে জোর!
  
ধ্যাত! পা পিছলে যে সে
পড়ে তার বিষ লেগেছে
    ইস! পেকেছে
    বিষ-ফোঁড়া এক!
সে ব্যথায় ঠ্যাং ফুলে তাই
ঢাক হল পা-র পিঠ জোড়া দেখ!
  
আচ্ছু! সত্যি সে শোন
কারুর এক রত্তি সে বোন,
    দোষ নেই এতে
    দোষ নিয়ো না!
আগে তোর ঠ্যাং ফুলে জোর,
তারপরে না দস্যিপনা!
  
আয় ভাই আর না আড়ি,
ভাব কর কান্না ছাড়ি,
    ঘাড় না নাড়ি,
    কসনে ‘উহুঁ’!
লক্ষ্মী! ধ্যাত, শোক কী?
ছিঁচ-কাঁদুনে হসনে হুঁ হুঁ!
উষাদের ঘর যাবিনে?
লাগে তোর লজ্জা দিনে?
    বজ্জাতি নে
    রাখ তুলে লো!
কেন? ঠ্যাং তেড়েং বেড়েং?
হাসবে লোকে? বয়েই গেল!

  (ঝিঙেফুল কাব্যগ্রন্থ)

ঠ্যাং-ফুলি (Thang Fuli) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Nodiparer Meye (নদীপারের মেয়ে) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) নদীপারের মেয়ে (Nodiparer Meye)

নদীপারের মেয়ে!
ভাসাই আমার গানের কমল তোমার পানে চেয়ে।
আলতা-রাঙা পা দুখানি ছুপিয়ে নদী-জলে
ঘাটে বসে চেয়ে আছ আঁধার অস্তাচলে।
নিরুদ্দেশে ভাসিয়ে-দেওয়া আমার কমলখানি
ছোঁয় কি গিয়ে নিত্য সাঁঝে তোমার চরণ, রানি?
  
                       নদীপারের মেয়ে!
গানের গাঙে খুঁজি তোমায় সুরের তরি বেয়ে।
খোঁপায় গুঁজে কনক-চাঁপা, গলায় টগর-মালা,
হেনার গুছি হাতে বেড়াও নদীকূলে বালা।
শুনতে কি পাও আমার তরির তোমায়-চাওয়া গীতি?
ম্লান হয়ে কি যায় ও-চোখে চতুর্দশীর তিথি?
  
                       নদীপারের মেয়ে!
আমার ব্যথার মালঞ্চে ফুল ফোটে তোমায়-চেয়ে।
শীতল নীরে নেয়ে ভোরে ফুলের সাজি হাতে,
রাঙা উষার রাঙা সতিন দাঁড়ায় আঙিনাতে।
তোমার মদির শ্বাসে কি মোর গুলের সুবাস মেশে?
আমার বনের কুসুম তুলি পর কি আর কেশে?
  
                       নদীপারের মেয়ে!
আমার কমল অভিমানের কাঁটায় আছে ছেয়ে!
তোমার সখায় পূজ কি মোর গানের কমল তুলি?
তুলতে সে-ফুল মৃণাল-কাঁটায় বেঁধে কি অঙ্গুলি?
ফুলের বুকে দোলে কাঁটার অভিমানের মালা,
আমার কাঁটার ঘায়ে বোঝ আমার বুকের জ্বালা?

   (চক্রবাক কাব্যগ্রন্থ)

নদীপারের মেয়ে (Nodiparer Meye) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।