Kazi Nazrul Islam Poems ~ কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা

বিখ্যাত দুখের কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী। কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার বিশাল তালিকা নীচে দেওয়া হল। A short biography of the famous dukher poet kazi nazrul islam. A huge list of kazi nazrul islam poems are given below.

কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)
উৎস: উইকিপিডিয়া

কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) ২৫ই মে, ১৮৯৯ সালে, বর্ধমান জেলার, আসানসোল মহাকুমার, চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

২৯ই আগস্ট, ১৯৭৬ সালে, ঢাকা, বাংলাদেশে তাঁর মৃত্যু হয় ।

কাজী নজরুল ইসলাম-এর ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত সুরারোপিত সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় গান “চল্ চল্ চল্“।

তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

কবির সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে বিদ্রোহী নামক কবিতাটি। এই কবিতাটি ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। বিদ্রোহী কবিতাটি রচনায় তিনি সারা ভারতের সাহিত্য সমাজের খ্যাতি লাভ করেন।

সাহিত্য জগতে তাঁর রচিত বিখ্যাত প্রথম কাব্যগ্রন্থটির নাম-অগ্নিবীণা। এটি ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা রয়েছে। কবিতা গুলির নাম ‘প্রলয়োল্লাস(কবিতা)’, ‘বিদ্রোহী’, ‘আগমনী’, ‘ধূমকেতু’, ‘রক্তাম্বর- ধরণী মা’, ‘কামাল পাশা’ ইত্যাদি।

কবির লেখা একটি উল্লেখযোগ্য প্রথম পত্রোপন্যাসের নাম বাঁধন হারা

তিনি ধূমকেতু নামক একটি পত্রিকা লেখেন।এটি ১৯২২ সালে, ১২ই আগস্ট প্রকাশিত হয়।

তাঁর বিন্যস্ত আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ রয়েছে বিষের বাঁশি। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কবির-এর অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার ১৯৭৭ সালে, একুশে পদক ১৯৭৬ সালে এবং পদ্মভূষণ উপাধিতে তাঁকে সম্মানিত করা হয়।

তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক এবং দার্শনিক।

কবিতা

Title

কাজী নজরুল ইসলাম -এর কবিতা সমূহ (Kazi Nazrul Islam Poems)

Akul Tuphaney Naiya Koro Par (অকূল তুফানে নাইয়া কর পার) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অকূল তুফানে নাইয়া কর পার (Akul Tuphaney Naiya Koro Par)

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার
পাপ দরিয়াতে ডুবে মরি কান্ডারি
নাই কড়ি নাই তরী প্রভু পারে তরিবার।।
থির নহে চিত পাপ-ভীত সদা টলমল
পুণ্যহীন শূন্য মরু সম হৃদি-তল নাহি ফুল নাহি ফল
পার কর হে পার কর ডাকি কাঁদি অবিরল
নাহি সঙ্গী নাহি বন্ধু নাহি পথেরি সম্বল।
সাহারায় নাহি জল
শাওন বরিষা সম তব করুণার ধারা
ঝরিয়া পড়ুক পরানে আমার।।

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার (Akul Tuphaney Naiya Koro Par) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Tumi More Vuliacho (তুমি মোরে ভুলিয়াছ) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) তুমি মোরে ভুলিয়াছ (Tumi More Vuliacho)

তুমি মোরে ভুলিয়াছ তাই সত্য হোক! –
সেদিন যে জ্বলেছিল দীপালি-আলোক
তোমার দেউল জুড়ি – ভুল তাহা ভুল!
সেদিন ফুটিয়াছিল ভুল করে ফুল
তোমার অঙ্গনে প্রিয়! সেদিন সন্ধ্যায়
ভুলে পেরেছিলে ফুল নোটন-খোঁপায়!

ভুল করে তুলি ফুল গাঁথি বর-মালা
বেলাশেষে বারে বারে হয়েছ উতলা
হয়তো বা আর কারও লাগি!…আমি ভুলে
নিরুদ্দেশ তরি মোর তব উপকূলে
না চাহিতে বেঁধেছিনু, গেয়েছিনু গান,
নীলাভ তোমার আঁখি হয়েছিল ম্লান
হয়তো বা অকারণে! গোধূলি বেলায়
তোমার ও-আঁখিতলে! হয়তো তোমার
পড়ে মনে, কবে যেন কোন লোকে কার
বধূ ছিলে ; তারই কথা শুধু মনে পড়ে!
–ফিরে যাও অতীতের লোক-লোকান্তরে
এমনই সন্ধ্যায় বসি একাকিনী গেহে!
দুখানি আঁখির দীপ সুগভীর স্নেহে
জ্বালাইয়া থাক জাগি তারই পথ চাহি!
সে যেন আসিছে দূর তারা-লোক বাহি
পারাইয়া অসীমের অনন্ত জিজ্ঞাসা,
সে দেখেছে তব দীপ, ধরণির বাসা!

শাশ্বত প্রতীক্ষমানা অনন্ত সুন্দরী!
হায়, সেথা আমি কেন বাঁধিলাম তরি,
কেন গাহিলাম গান আপনা পাসারি?
হয়তো সে গান মম তোমার ব্যথায়
বেজেছিল। হয় তো বা লেগেছিল তার পায়
আমার তরির ঢেউ। দিয়াছিল ধুয়ে
চরণ-অলক্ত তব। হয়তো বা ছুঁয়ে
গিয়েছিল কপোলের আকুল কুন্তল
আমার বুকের শ্বাস। ও-মুখ-কমল
উঠেছিল রাঙা হয়ে। পদ্মের কেশর
ছুঁইলে দখিনা বায়, কাঁপে থরথর
যেমন কমল-দল ভঙ্গুর মৃণালে
সলাজ সংকোচে সুখে পল্লব-আড়ালে,
তেমনই ছোঁয়ায় মোর শিহরি শিহরি
উঠেছিল বারে বারে সারা দেহ ভরি!

চেয়েছিলে আঁখি তুলি, ডেকেছিল যেন
প্রিয় নাম ধরে মোর – তুমি জান, কেন!
তরি মম ভেসেছিল যে নয়ন-জলে
কূল ছাড়ি নেমে এলে সেই সে অতলে।
বলিলে,– “অজানা বন্ধু, তুমি কী গো সেই,
জ্বালি দীপ গাঁথি মালা যার আশাতেই
কূলে বসে একাকিনী যুগ যুগ ধরি
নেমে এসো বন্ধু মোর ঘাটে বাঁধ তরি!”

বিস্ময়ে রহিনু চাহি ও-মুখের পানে
কী যেন রহস্য তুমি – কী যেন কে জানে –
কিছুই বুঝিতে নারি! আহ্বানে তোমার
কেন জাগে অভিমান, জোয়ার দুর্বার
আমার আঁখির এই গঙ্গা যমুনায়!–
নিরুদ্দেশ যাত্রী, হায়, আসিলি কোথায়?
একি তোর ধেয়ানের সেই জাদুলোক,
কল্পনার ইন্দ্রপুরী? একি সেই চোখ
ধ্রুবতারাসম যাহা জ্বলে নিরন্তর
ঊর্ধ্বে তোর? সপ্তর্ষির অনন্ত বাসর?
কাব্যের অমরাবতী? একি সে ইন্দিরা,

তোরই সে কবিতা-লক্ষ্মী? –বিরহ-অধীরা
একি সেই মহাশ্বেতা, চন্দ্রপীড়-প্রিয়া?
উন্মাদ ফরহাদ যারে পাহাড় কাটিয়া
সৃজিতে চাহিয়াছিল – একি সেই শিঁরী?
লায়লি এই কি সেই, আসিয়াছে ফিরি
কায়েসের খোঁজে পুনঃ? কিছু নাহি জানি!
অসীম জিজ্ঞাসা শুধু করে কানাকানি
এপারে ওপারে, হায়!…তুমি তুলি আঁখি
কেবলই চাহিতেছিলে! দিনান্তের পাখি
বনান্তে কাঁদিতেছিল – ‘কথা কও বউ!’
ফাগুন ঝুরিতেছিল ফেলি ফুল-মউ!

কাহারে খুঁজিতেছিলে আমার এ চোখে
অবসান-গোধূলির মলিন আলোকে?
জিজ্ঞাসার, সন্দেহের শত আলো-ছায়া
ও-মুখে সৃজিতেছিল কী যেন কি মায়া!
কেবলই রহস্য হায়, রহস্য কেবল,
পার নাই সীমা নাই অগাধ অতল!
এ যেন স্বপনে-দেখা কবেকার মুখ,
এ যেন কেবলই সুখ কেবলই এ দুখ!
ইহারই স্ফুলিঙ্গ যেন হেরি রূপে রূপে,
এ যেন মন্দার-পুষ্প দেব-অলকায়!
যখন সবারে ভুলি। ধরার বন্ধন
যখন ছিঁড়িতে চাহি, স্বর্গের স্বপন
কেবলই ভুলাতে চায়, এই সে আসিয়া
রূপে রসে গন্ধে গানে কাঁদিয়া হাসিয়া
আঁকড়ি ধরিতে চাহে,–মাটির মমতা!
পরান-পোড়েনি শুধু, জানে নাকো কথা !
বুকে এর ভাষা নেই, চোখে নাই জল,
নির্বাক ইঙ্গিত শুদু শান্ত অচপল!
এ বুঝি গো ভাস্করের পাষাণ-মানসী
সুন্দর, কঠিন, শুভ্র। ভোরের ঊষসী,
দিনের আলোর তাপ সহিতে না জানে।
মাঠের উদাসী সুরে বাঁশরির তানে,
বাণী নাই, শুধু সুর, শুধু আকুলতা!
ভাষাহীন আবেদন দেহ-ভরা কথা।
এ যেন চেনার সাথে অচেনার মিশা, –
যত দেখি তত হায় বাড়ে শুধু তৃষা।

আসিয়া বসিলে কাছে দৃপ্ত মুক্তানন,
মনে হল – আমি দিঘি, তুমি পদ্মবন!
পূর্ণ হইলাম আজি, হয় হোক ভুল,
যত কাঁটা তত ফুল, কোথা এর তুল?
তোমারে ঘিরিয়া রব আমি কালো জল,
তরঙ্গের ঊর্ধ্বে রবে তুমি শতদল,
পুজারির পুষ্পাঞ্জলিসম। নিশিদিন
কাঁদিব ললাট হানি তীরে তৃপ্তিহীন!
তোমার মৃণাল-কাঁটা আমার পরানে
লুকায়ে রাখিব, যেন কেহ নাহি জানে।
…কত কী যে কহিলাম অর্থহীন কথা,
শত যুগ-যুগান্তের অন্তহীন ব্যথা।

শুনিলে সেসব জাগি বসিয়া শিয়রে,
বলিলে, “বন্ধু গো হের দীপ পুড়ে মরে
তিলে তিলে আমাদের সাথে! আর নিশি
নাই বুঝি, দিবা এলে দূরে যাব মিশি!
আমি শুধু নিশীথের।” যখন ধরণি
নীলিমা-মঞ্জুষা খুলি হেরে মুক্তামণি
বিচিত্র নক্ষত্রমালা – চন্দ্র-দীপ জ্বালি,
একাকী পাপিয়া কাঁদে ‘চোখ গেল’খালি,
আমি সেই নিশিথের। – আমি কই কথা,
যবে শুধু ফোটে ফুল, বিশ্ব তন্দ্রাহতা।
হয়তো দিবসে এলে নারিব চিনিতে,
তোমারে করিব হেলা, তব ব্যথা-গীতে
কেবলই পাইবে হাসি সবার সুমুখে,
কাঁদিলে হাসিব আমি সরল কৌতুকে,
মুছাব না আঁখি-জল। বলিব সবায়,
“তুমি শাঙনের মেঘ –যথায় তথায়
কেবলই কাঁদিয়া ফের, কাঁদাই স্বভাব!
আমি তো কেতকী নহি, আমার কি লাভ
ওই শাঙনের জলে? কদম্ব যূথীর
সখারে চাহি না আমি। শ্বেত-করবীর
সখী আমি। হেমন্তের সান্ধ্য-কুহেলিতে
দাঁড়াই দিগন্তে আসি, নিরশ্রু-সংগীতে
ভরে ওঠে দশ দিক! আমি উদাসিনী।
মুসাফির! তোমারে তো আমি নাহি চিনি!”

ডাকিয়া উঠিল পিক দূরে আম্রবনে
মুহুমুহু কুহুকুহু আকুল নিঃস্বনে।
কাঁদিয়া কহিনু আমি, “শুন, সখী শুন,
কাতরে ডাকিছে পাখি কেন পুনঃ পুনঃ!
চলে যাব কোন দূরে, স্বরগের পাখি
তাই বুঝি কেঁদে ওঠে হেন থাকি থাকি।
তোমারই কাজল আঁখি বেড়ায় উড়িয়া,
পাখি নয় – তব আঁখি ওই কোয়েলিয়া!”

হাসিয়া আমার বুকে পড়িলে লুটায়ে,
বলিলে, –“পোড়ারমুখি আম্রবনচ্ছায়ে
দিবানিশি ডাকে, শুনে কান ঝালাপালা!
জানি না তো কুহু-স্বরে বুকে ধরে জ্বালা!
উহার স্বভাব এই, তোমারই মতন
অকারণে গাহে গান, করে জ্বালাতন!

নিশি না পোহাতে বসি বাতায়ন-পাশে
হলুদ-চাঁপার ডালে, কেবলই বাতাসে
উহু উহু উহু করি বেদনা জানায়!
বুঝিতে নারিনু আমি পাখি ও তোমায়!”

নয়নের জল মোর গেল তলাইয়া
বুকের পাষাণ-তলে। উৎসারিত হিয়া
সহসা হারাল ধারা তপ্ত মরু-মাঝে।
আপনারে অভিশাপি ক্ষমাহীন লাজে!
কহিনু, “কে তুমি নারী, এ কি তব খেলা?
অকারণে কেন মোর ডুবাইলে ভেলা,
এ অশ্রু-পাথারে একা দিলে ভাসাইয়া?
দুহাতে আন্দোলি জল কূলে দাঁড়াইয়া,
অকরুণা, হাস আর দাও করতালি!

অদূরে নৌবতে বাজে ইমন-ভূপালি
তোমার তোরণ-দ্বারে কাঁদিয়া কাঁদিয়া,
– তোমার বিবাহ বুঝি? ওই বাঁশুরিয়া
ডাকিছে বন্ধুরে তব?” যুঝি ঢেউ সনে
শুধানু পরান-পণে।…তুমি আনমনে
বারেক পশ্চাতে চাহি পড়িলে লুটায়ে
স্রোতজলে, সাঁতরিয়া আসি মম পাশে
‘আমিও ডুবিব সাথে’বলিয়া তরাসে
জড়ায়ে ধরিলে মোরে বাহুর বন্ধনে!…
হইলাম অচেতন!… কিছু নাই মনে
কেমনে উঠিনু কূলে!… কবে সে কখন
জড়াইয়া ধরেছিলে মালার মতন
নিশীথে পাথার-জলে, – শুধু এইটুকু
সুখ-স্মৃতি ব্যথা সম চির-জাগরূক
রহিল বুকের তলে!… আর কিছু নাই!…
তোমারে খুঁজিয়া ফিরি এ কূলে বৃথাই,
হে চীর রহস্যময়ী!ও কূলে দাঁড়ায়ে
তেমনই হাসিছ তুমি সান্ধ্য-বনচ্ছায়ে
চাহিয়া আমার মুখে! তোমার নয়ন
বলিছে সদাই যেন, ‘ডুবিয়া মরণ
এবার হল না, সখা! আজও যায় সাধ
বাঁচিতে ধরার পরে। স্বপনের চাঁদ
হয়তো বা দিবে ধরা জাগ্রত এলোকে,
হয়তো নামিবে তুমি অশ্রু হয়ে চোখে,
আসিবে পথিক-বন্ধু হয়ে প্রিয়তম
বুকের ব্যাথায় মোর – পুষ্পে গন্ধ সম!
অঞ্জলি হইতে নামি তোমার পূজার
জড়াইয়া রব বক্ষে হয়ে কণ্ঠহার!’

নিশীথের বুক-চেরা তব সেই স্বর,
সেই মুখ সেই চোখ করুণা-কাতর
পদ্মা-তীরে-তীরে রাতে আজও খুঁজে ফিরি!
কত নামে ডাকি তোমা, – “মহাশ্বেতা, শিঁরী,
লায়লি, বকৌলি, তাজ, দেবী, নারী, প্রিয়া!”
– সাড়া নাহি মিলে কারও! ফুলিয়া ফুলিয়া
বয়ে যায় মেঘনার তরঙ্গ বিপুল,
কখনও এ-কূল ভাঙে কখনও ও-কূল!

পার হতে নারি এই তরঙ্গের বাধা,
ও যেন ‘এসো না’ বলে পায়ে ধরে-কাঁদা
তোমার নয়ন-স্রোত! ও যেন নিষেধ,
বিধাতার অভিশাপ, অনন্ত বিচ্ছেদ,
স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝে যেন যবনিকা!…
আমাদের ভাগ্যে বুঝি চিররাত্রি লিখা!
নিশীথের চখাচখি, দুইপারে থাকি
দুইজনে দুইজন ফিরি সদা ডাকি!
কোথা তুমি? তুমি কোথা? যেন মনে লাগে,
কত যুগ দেখি নাই! কত জন্ম আগে
তোমারে দেখেছি কোন নদীকূলে গেহে,
জ্বালো দীপ বিষাদিনী ক্লান্ত শ্রান্ত দেহে!
বারে বারে কাঁপে, আকাশ-দীপিকা
কাঁপে তারারাজি – যেন আঁখি-পাতা তব,–
এইটুকু পড়ে মনে! কবে অভিনব
উঠিলে বিকশি তুমি আমার মাঝে,
দেখি নাই! দেখিব না – কত বিনা কাজে
নিজেরে আড়াল করি রাখিছ সতত
অপ্রকাশ সুগোপন বেদনার মতো।
আমি হেথা কূলে কূলে ফিরি আর কাঁদি,
কুড়ায়ে পাব না কিছু? বুকে যাহা বাঁধি
তোমার পরশ পাব – একটু সান্ত্বনা!
চরণ-অলক্ত-রাঙা দুটি বালুকণা,
একটি নূপুর, ম্লান বেণি-খসা ফুল,
করবীর সোঁদা-ঘষা পরিমল-ধুল,
আধখানি ভাঙা চুড়ি রেশমি কাচের,
দলিত বিশুষ্ক মালা নিশি-প্রভাতের,
তব হাতে লেখা মম প্রিয় ডাক-নাম
লিখিয়া ছিঁড়িয়া-ফেলা আধখানি খাম,
অঙ্গের সুরভি-মাখা ত্যক্ত তপ্ত বাস,
মহুয়ার মদ সম মদির নিশ্বাস
পুরবের পরিস্থান হতে ভেসে-আসা, –
কিছুই পাব না খুঁজি? কেবলই দুরাশা।
কাঁদিবে পরান ঘিরি? নিরুদ্দেশ পানে
কেবলই ভাসিয়া যাব শ্রান্ত ভাটি-টানে?
তুমি বসি রবে ঊর্ধ্বে মহিম-শিখরে
নিষ্প্রাণ পাষাণ-দেবী? কভু মোর তরে
নিষ্প্রাণ পাষাণ-দেবী? কভু মোর তরে
নামিবে না প্রিয়া-রূপে ধরার ধুলায়?
লো কৌতুকময়ী! শুধু কৌতুক-লীলায়
খেলিবে আমারে লয়ে? –আর সবই ভুল?
ভুল করে ফুটেছিল আঙিনায় ফুল?
ভুল করে বলেছিলে সুন্দর? অমনি –
ঢেকেছ দুহাতে মুখ ত্বরিতে তখনই!
বুঝি কেহ শুনিয়াছে, দেখিয়াছে কেহ
ভাবিয়া আঁধার কোণে লীলায়িত দেহ
লুকাওনি সুখে লাজে? কোন শাড়িখানি
পরেছিলে বাছি বাছি সে সন্ধ্যায় রানি?

হয়তো ভুলেছ তুমি, আমি ভুলি নাই!
যত ভাবি ভুল তাহা – তত সে জড়াই
সে ভুলে সাপিনিসম বুকে ও গলায়!
বাসি লাগে ফুলমেলা। – ভুলের খেলায়
এবার খোয়াব সব, করিয়াছি পণ।
হোক ভুল, হোক মিথ্যা, হোক এ স্বপন,
–এইবার আপনারে শূন্য রিক্ত করি
দিয়া যাব মরণের আগে! পাত্র ভরি
করে যাব সুন্দরের করে বিষপান!
তোমারে অমর করি করিব প্রয়াণ
মরণের তীর্থযাত্রী!
ওগো, বন্ধু প্রিয়,
এমনই করিয়া ভুল দিয়া ভুলাইয়ো
বারে বারে জন্মে জন্মে গ্রহে গ্রহান্তরে!
ও-আঁখি-আলোক যেন ভুল করে পড়ে
আমার আঁখির পরে। গোধূলি-লগনে
ভুল করে হই বর, তুমি হও কনে
ক্ষণিকের লীলা লাগি! ক্ষণিকের চমকি
অশ্রুর শ্রাবণ-মেঘে হারাইয়া সখী!…

তুমি মোরে ভুলিয়াছ, তাই সত্য হোক!
নিশি-শেষে নিভে গেছে দীপালি-আলোক!
সুন্দর কঠিন তুমি পরশ-পাথর
তোমার পরশ লভি হইনু সুন্দর –
– তুমি তাহা জানিলে না!
…সত্য হোক প্রিয়া
দীপালি জ্বলিয়াছিল – গিয়াছে নিভিয়া!

   (চক্রবাক কাব্যগ্রন্থ)

তুমি মোরে ভুলিয়াছ (Tumi More Vuliacho) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Triboboner Priyo Mohammad (ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায় (Triboboner Priyo Mohammad)

ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়।
আয় রে সাগর আকাশ বাতাস দেখ্‌বি যদি আয়।।
ধূলির ধরা বেহেশ্‌তে আজ, জয় করিল দিল রে লাজ।
আজকে খুশির ঢল নেমেছে ধূসর সাহারায়।।
দেখ্‌ আমিনা মায়ের কোলে, দোলে শিশু ইসলাম দোলে।
কচি মুখে শাহাদাতের বাণী সে শোনায়।।
আজকে যত পাপী ও তাপী, সব গুনাহের পেল মাফী।
দুনিয়া হতে বে-ইনসাফী জুলুম নিল বিদায়।।
নিখিল দরুদ পড়ে লয়ে নাম, সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম।
জীন পরী ফেরেশ্‌তা সালাম জানায় নবীর পায়।।

ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায় (Triboboner Priyo Mohammad) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Chdni Rate (চাঁদনী-রাতে) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) চাঁদনী-রাতে (Chdni Rate)

কোদালে মেঘের মউজ উঠেছে গগনের নীল গাঙে,
হাবুডুবু খায় তারা-বুদবুদ, জোছনা সোনায় রাঙে!
তৃতীয়া চাঁদের "সাম্পানে" চড়ি চলিছে আকাশ প্রিয়া,
আকাশ-দরিয়া উতলা হ’ল গো পুতলায় বুকে নিয়া।
তৃতীয়া চাঁদের বাকি "তের কলা" আবছা কালোতে আঁকা
নীলিম-প্রিয়ার নীলা "গুল রুখ" অব-গুণ্ঠনে ঢাকা।
সপ্তর্ষির তারা-পালঙ্কে ঘুমায় আকাশ-রাণী,
সেহেলি "লায়লী" দিয়ে গেছে চুপে কূহেলী-মশারী টানি!
দিক-চক্রের ছায়া-ঘন ঐ সবুজ তরুর সারি,
নীহার-নেটের কুয়াশা মশারি –ওকি বর্ডার তারি?
সাতাশ তারার ফুল-তোড়া হাতে আকাশ নিশুতি রাতে
গোপনে আসিয়া তারা-পালঙ্কে শুইল প্রিয়ার সাথে!
উহু উহু করি কাঁচা ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে নীলা হুরী,
লুকিয়ে দেখে তা "চোখ গেল" বলে চেঁচায় পাপিয়া ছুঁড়ি!
"মঙ্গল" তারা মঙ্গল-দীপ জ্বালিয়া প্রহর জাগে,
ঝিকিমিকি করে মাঝে মাঝে- বুঝি বধূর নিশাস লাগে!
উল্কা-জ্বালার সন্ধানী-আলো লইয়া আকাশ-দ্বারী
‘কাল-পুরুষ’ সে জাগি বিনিদ্র করিতেছে পায়চারি!

সেহেলিরা রাতে পালায়ে এসেছে উপবনে কোন আশে,
হেথা হোথা ছোটে-পিকের কণ্ঠে ফিক ফিক ক’রে হাসে!
আবেগে সোহাগে আকাশ-প্রিয়ার চিবুক বাহিয়া ও কি
শিশিরের রূপে ঘর্ম-বিন্দু ঝ’রে ঝরে পড়ে সখি,
নবমী চাঁদের ‘সসারে’ ও কে গো চাঁদিনী-শিরাজি ঢালি’
বধূর অধর ধরিয়া কহিছে- ‘তহুরা পিও লো আলি’!
কার কথা ভেবে তারা-মজলিসে দূরে একাকিনী সাকী
চাঁদের ‘সসারে’ কলঙ্ক-ফুল আনমনে যায় আঁকি।
ফরহাদ-শিরী-লায়লী-মজনু মগজে ক’রেছে চিড়,
মস্তানা শ্যামা দধিয়াল টানে বায়ু-বেয়ালার মীড়!
আনমনা সাকী! অমনি আমারো হৃদয় পেয়ালা-কোণে
কলঙ্ক-ফুল আনমনে সখি লিখো মুছো ক্ষণে ক্ষণে ।

কাব্যগ্রন্থঃ-সিন্ধু-হিন্দোল

চাঁদনী-রাতে (Chdni Rate) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bedona Oviman (বেদনা-অভিমান) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বেদনা-অভিমান (Bedona Oviman)

ওরে আমার বুকের বেদনা!
ঝঞ্ঝা-কাতর নিশীথ রাতের কপোত সম রে
     আকুল এমন কাঁদন কেঁদো না।

কখন সে কার ভুবনভরা ভালোবাসা হেলায় হারালি,
তাইতো রে আজ এড়িয়ে চলে সকল স্নেহে পথে দাঁড়ালি!
     ভিজে ওঠে চোখের পাতা তোর,
     একটি কথায় – অভিমানী মোর!
ডুকরে কাঁদিস বাঁধনহারা, ‘ওগো, আমায় বাঁধন বেঁধো না’।

বাঁধন গৃহের সইল না তোর,
তাই বলে কি মায়াও ঘরের ডাক দেবে না তোকে?
               অভিমানী গৃহহারা রে!

চললে একা মরুর পথেও
সাঁঝের আকাশ মায়ের মতন ডাকবে নত চোখে,
               ডাকবে বধূ সন্ধ্যাতারা যে!

জানি ওরে, এড়িয়ে যারে চলিস তারেই পেতে চলিস পথে।
জোর করে কেউ বাঁধে না তাই বুক ফুলিয়ে চলিস বিজয়রথে।
     ওরে কঠিন! শিরীষকোমল তুই!
     মর্মর তোর মর্মে ছাপা বেল কামিনী জুঁই!
বুকপোরা তোর ভালবাসা, মুখে মিছে বলিস ‘সেধো না’।
          আমার    বুকের বেদনা।

(ছায়ানট কাব্যগ্রন্থ)

বেদনা-অভিমান (Bedona Oviman) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Porosh Puja (পরশ পূজা) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পরশ পূজা (Porosh Puja)

আমি     এদেশ হতে বিদায় যেদিন নেব প্রিয়তম,
আর     কাঁদবে এ বুক সঙ্গীহারা কপোতিনী সম,
  
তখন     মুকুর পাশে একলা গেহে
              আমারই এই সকল দেহে
         চুমব আমি চুমব নিজেই অসীম স্নেহে গো,
আহা     পরশ তোমার জাগছে যে গো এই সে দেহে মম।

         তখন তুমি নাইবা প্রিয় নাই বা রলে কাছে।
         জানব আমার এই সে দেহে এই সে দেহে গো
তোমার    বাহুর বুকের শরম-ছোঁয়ার কাঁপন লেগে আছে।
তখন    নাই বা আমার রইল মনে
         কোনখানে মোর দেহের বনে
         জড়িয়ে ছিলে লতার মতন আলিঙ্গনে গো,
  আমি    চুমোয় চুমোয় ডুবাব এই সকল দেহ মম,
         এদেশ হতে বিদায় যেদিন নেব প্রিয়তম।

(ছায়ানট কাব্যগ্রন্থ)

পরশ পূজা (Porosh Puja) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Papri Khela (পাপড়ি-খোলা) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পাপড়ি-খোলা (Papri Khela)

রেশমি চুড়ির শিঞ্জিনীতে রিমঝিমিয়ে মরমকথা
পথের মাঝে চমকে কে গো থমকে যায় ওই শরম-নতা।
  
      কাঁখচুমা তার কলসি-ঠোঁটে
      উল্লাসে জল উলসি ওঠে,
      অঙ্গে নিলাজ পুলক ছোটে
                  বায় যেন হায় নরম লতা।
অ-চকিতে পথের মাঝে পথ-ভুলানো পরদেশী কে
হানলে দিঠি পিয়াস-জাগা পথবালা এই উর্বশীকে!
  
      শূন্য তাহার কন্যা-হিয়া
      ভরল বধূর বেদন নিয়া,
            জাগিয়ে গেল পরদেশিয়া
                  বিধুর বধূর মধুর ব্যথা।

(ছায়ানট কাব্যগ্রন্থ)

পাপড়ি-খোলা (Papri Khela) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Lokkhichara (লক্ষীছাড়া) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) লক্ষীছাড়া (Lokkhichara)

আমি   নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন।
শেষে   সে-ই আমারে কাঁদায়, যারে করি আপনারই জন।

           দূর হতে মোর বাঁশির সুরে
           পথিক-বালার নয়ন ঝুরে
তার   ব্যথায়-ভরাট ভালোবাসায় হৃদয় পুরে গো!
তারে   যেমনি টানি পরান-পুটে
অমনি   সে হায় বিষিয়ে উঠে!
তখন   হারিয়ে তারে কেঁদে ফিরি সঙ্গীহারা পথটি আবার নিজন।

       মুগ্ধা ওদের নেই কোনো দোষ, আমিও ওগো ধরা দিয়ে মরি,
       প্রেম-পিয়াসি প্রণয়ভুখা শাশ্বত যে আমিই তৃপ্তিহারা,
       ঘরবাসীদের প্রাণ যে কাঁদে পরবাসীদের পথের ব্যথা স্মরি
       তাইতো তারা এই উপোসির ওষ্ঠে ধরে ক্ষীরের থালা,
                          শান্তিবারিধারা।

          ঘরকে পথের বহ্নিঘাতে
          দগ্ধ করি আমার সাথে,
       লক্ষ্মী ঘরের পলায় উড়ে এই সে শনির দৃষ্টিপাতে গো!
          জানি আমি লক্ষ্মীছাড়া
          বারণ আমার উঠান মাড়া,
আমি   তবু কেন সজল চোখে ঘরের পানে চাই?
       নিজেই কি তা জানি আমি ভাই?
হায়   পরকে কেন আপন করে বেদন পাওয়া, পথেই যাহার
                  কাটবে জীবন বিজন?
আর   কেউ হবে না আপন যখন, সব হারিয়ে চলতে হবে  
                  পথটি আমার নিজন।
আমি   নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন।

   (ছায়ানট কাব্যগ্রন্থ)

লক্ষীছাড়া (Lokkhichara) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Stobdho Badol (স্তব্ধ বাদল) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) স্তব্ধ বাদল (Stobdho Badol)

ওই   নীল-গগনের নয়ন-পাতায়              
          নামল কাজল-কালো মায়া।
     বনের ফাঁকে চমকে বেড়ায়              
          তারই সজল আলোছায়া।
  
ওই   তমাল তালের বুকের কাছে  
     ব্যথিত কে দাঁড়িয়ে আছে              
          দাঁড়িয়ে আছে।  
     ভেজা পাতায় ওই কাঁপে তার              
          আদুল ঢলঢল কায়া।
যার   শীতল হাতের পুলক-ছোঁয়ায়              
          কদমকলি শিউরে ওঠে,  
     জুইকুঁড়ি সব নেতিয়ে পড়ে              
          কেয়াবধূর ঘোমটা টুটে।
  
আহা!  আজ কেন তার চোখের ভাষা  
     বাদল-ছাওয়া ভাসা-ভাসা –              
          জলে-ভাসা?  
     দিগন্তরে ছড়িয়েছে সেই              
          নিতল আঁখির নীল আবছায়া।
  
ও কার  ছায়া দোলে অতল কালো              
          শালপিয়ালের শ্যামলিমায়?
     আমলকি-বন থামল ব্যথায়              
          থামল কাঁদন গগন-সীমায়।
  
আজ  তার বেদনাই ভরেছে দিক,  
     ঘরছাড়া হায় এ কোন পথিক,              
          এ কোন পথিক?
     এ কীস্তব্ধতারই আকাশ-জোড়া            
          অসীম রোদন-বেদন-ছায়া।

(ছায়ানট কাব্যগ্রন্থ)

স্তব্ধ বাদল (Stobdho Badol) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Pile Potka (পিলে-পটকা) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পিলে-পটকা (Pile Potka)

উটমুখো সে সুঁটকো হাশিম,
পেট যেন ঠিক ভুঁটকো কাছিম!
চুলগুলো সব বাবুই দড়ি –
ঘুসকো জ্বরের কাবুয় পড়ি!
তিন-কোনা ইয়া মস্ত মাথা,
ফ্যাচকা-চোখো; হস্ত? হাঁ তা
ঠিক গরিলা, লোবনে ঢ্যাঙা!
নিটপিটে ঠ্যাং সজনে ঠ্যাঙা!
গাইতি-দেঁতো, উঁচকে কপাল
আঁতকে ওঠেন পুঁচকে গোপাল!
নাক খাঁদা ঠিক চামচিকেটি!
আর হাসি? দাঁত খামচি সেটি!
পাঁচের মতন থুতনো ব্যাঁকা!
রগঢিলে, হুঁ ভূতনো ন্যাকা!
কান দুটো টান – ঠিক সে কুলো!
তোবড়ানো গাল, টিকটা ছুলো!
বগলা প্রমাণ ঘাড়টি সরু,
চেঁচান যেন ষাঁড় কী গোরু!
চলেন গিজাং উরর কোলা ব্যাং,
তালপাতা তাঁর ক্ষুর-ওলা ঠ্যাং!
বদরাগি তায় এক-খেয়ালি
বাস রে! খেঁকি খ্যাঁক-শেয়ালি!
ফ্যাঁচকা-মাতু, ছিঁচকাঁদুনে,
কয় লোকে তাই মিচকা টুনে!
জগন্নাথী ঠুঁটো নুলো,
লোম গায়ে ঠিক খুঁটোগুলো!
ল্যাবেন্ডিসি নড়বড়ে চাল,
তুবড়ি মুখে চড়বড়ে গাল!
গুজুর-ঘুণে, দেড়-পাঁজুরে,
ল্যাডাগ্যাপচার, ন্যাড়-নেজুড়ে!
বসেন সে হাড়-ভাঙা ‘দ’,
চেহারা দেখেই সব মামা ‘থ’!
গিরগিটে তার ক্যাঁকলেসে ঢং
দেখলে কবে, ‘ধেত, এ যে সং!’
খ্যাঙরা-কাটি আঙলাগুলো,
কুঁদিলে শ্রীমুখ বাংলা চুলো!
পেটফুলো ইয়া মস্ত পিলে,
দৈবাতে তায় হস্ত দিলে
জোর চটিতং, বিটকেলে চাঁই!
ইঁট খাবে নাকো সিঁটকেলে ভাই!
নাক বেয়ে তার ঝরচে সিয়ান,
ময়রা যেমন করছে ভিয়ান!
স্বপন দেখেন হালকা নিঁদে –
কুইনাইন আর কালকাসিঁদে!
বদন সদাই তোলো হাঁড়ি,
গুড়ামুড়ি খান ষোলো আড়ি!
ঠোকরে সবাই ন্যাড়া মাথায় –
শিলাবিষ্টি ছেঁড়া ছাতায়!
রাক্ষুসে ভাত গিলতে পারে
বাপ রে, বিড়াল ডিঙতে নারে!
হন না ভুলেও ঘরের বাহির,
কাঁথার ভিতর জ্বরের জাহির!
পড়বে কি আর, দূর ভূত ছাই,
ওষুধ খেতেই ফুরসত নাই!
বুঝলে? যত মোটকা মিলে
বাগাও দেখি পটকা পিলে!
বাজবে পেটে তাল ভটাভট
নাক ধিনাধিন গাল ফটাফট!
ঢাকডুবাডুব ইড়িং-বিড়িং
নাচবে ফড়িং তিড়িং তিড়িং!
চুপসো গালে গাব গুবাগুব
গুপি-যন্তর বাজবে বাঃ খুব!
দিব্যি বসে মারবে মাছি,
কাশবে এবং হাঁচবে হাঁচি!
কিলবিলিয়ে দুটো ঠ্যাং
নড়বে যেমন ঠুঁটো ব্যাং!!

  (ঝিঙেফুল কাব্যগ্রন্থ)

পিলে-পটকা (Pile Potka) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।