Kazi Nazrul Islam Poems ~ কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা

বিখ্যাত দুখের কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী। কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার বিশাল তালিকা নীচে দেওয়া হল। A short biography of the famous dukher poet kazi nazrul islam. A huge list of kazi nazrul islam poems are given below.

কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)
উৎস: উইকিপিডিয়া

কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) ২৫ই মে, ১৮৯৯ সালে, বর্ধমান জেলার, আসানসোল মহাকুমার, চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

২৯ই আগস্ট, ১৯৭৬ সালে, ঢাকা, বাংলাদেশে তাঁর মৃত্যু হয় ।

কাজী নজরুল ইসলাম-এর ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত সুরারোপিত সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় গান “চল্ চল্ চল্“।

তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

কবির সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে বিদ্রোহী নামক কবিতাটি। এই কবিতাটি ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। বিদ্রোহী কবিতাটি রচনায় তিনি সারা ভারতের সাহিত্য সমাজের খ্যাতি লাভ করেন।

সাহিত্য জগতে তাঁর রচিত বিখ্যাত প্রথম কাব্যগ্রন্থটির নাম-অগ্নিবীণা। এটি ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা রয়েছে। কবিতা গুলির নাম ‘প্রলয়োল্লাস(কবিতা)’, ‘বিদ্রোহী’, ‘আগমনী’, ‘ধূমকেতু’, ‘রক্তাম্বর- ধরণী মা’, ‘কামাল পাশা’ ইত্যাদি।

কবির লেখা একটি উল্লেখযোগ্য প্রথম পত্রোপন্যাসের নাম বাঁধন হারা

তিনি ধূমকেতু নামক একটি পত্রিকা লেখেন।এটি ১৯২২ সালে, ১২ই আগস্ট প্রকাশিত হয়।

তাঁর বিন্যস্ত আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ রয়েছে বিষের বাঁশি। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কবির-এর অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার ১৯৭৭ সালে, একুশে পদক ১৯৭৬ সালে এবং পদ্মভূষণ উপাধিতে তাঁকে সম্মানিত করা হয়।

তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক এবং দার্শনিক।

কবিতা

Title

কাজী নজরুল ইসলাম -এর কবিতা সমূহ (Kazi Nazrul Islam Poems)

Chithi (চিঠি) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) চিঠি (Chithi)

[ছন্দ :- “এই পথটা কা-টবো
পাথর ফেলে মা-রবো”]

ছোট্ট বোনটি লক্ষ্মী
ভো ‘জটায়ু পক্ষী’!
য়্যাব্বড়ো তিন ছত্র
পেয়েছি তোর পত্র।
দিইনি চিঠি আগে,
তাইতে কি বোন রাগে?
হচ্ছে যে তোর কষ্ট
বুঝতেছি খুব পষ্ট।
তাইতে সদ্য সদ্য
লিখতেছি এই পদ্য।
দেখলি কী তোর ভাগ্যি!
থামবে এবার রাগ কি?
এবার হতে দিব্যি
এমনি করে লিখবি!
বুঝলি কী রে দুষ্টু
কী যে হলুম তুষ্টু
পেয়ে তোর ওই পত্র –
যদিও তিন ছত্র!
যদিও তোর অক্ষর
হাত পা যেন যক্ষর,
পেটটা কারুর চিপসে,
পিঠটে কারুর ঢিপসে,
ঠ্যাংটা কারুর লম্বা,
কেউ বা দেখতে রম্ভা!
কেউ যেন ঠিক থাম্বা,
কেউ বা ডাকেন হাম্বা!
থুতনো কারুর উচ্চে,
কেউ বা ঝুলেন পুচ্ছে!
এক একটা যা বানান
হাঁ করে কী জানান!
কারুর গা ঠিক উচ্ছের,
লিখলি এমনি গুচ্ছের!
না বোন, লক্ষ্মী, বুঝছ?
করব না আর কুচ্ছো!
নইলে দিয়ে লম্ফ
আনবি ভূমিকম্প!
কে বলে যে তুচ্ছ!
ওই যে আঙুর গুচ্ছ!
শিখিয়ে দিল কোন্ ঝি
নামটি যে তোর জন্টি?
লিখবে এবার লক্ষ্মী
নাম ‘জটায়ু পক্ষী!’
শিগগির আমি যাচ্চি,
তুই বুলি আর আচ্ছি
রাখবি শিখে সব গান
নয় ঠেঙিয়ে – অজ্ঞান!
এখনও কি আচ্ছু
খাচ্ছে জ্বরে খাপচু?
ভাঙেনি বউদির ঠ্যাংটা।
রাখালু কি ন্যাংটা?
বলিস তাকে, রাখালী!
সুখে রাখুন মা কালী!
বৌদিরে কোস দোত্তি
ধরবে এবার সত্যি।
গপাস করে গিলবে
য়্যাব্বড়ো দাঁত হিলবে!
মা মাসিমায় পেন্নাম
এখান হতেই করলাম!
স্নেহাশিস এক বস্তা,
পাঠাই, তোরা লস তা!
সাঙ্গ পদ্য সবিটা?
ইতি। তোদের কবি-দা।

   (ঝিঙেফুল কাব্যগ্রন্থ)

চিঠি (Chithi) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Adhare (আঁধারে) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) আঁধারে (Adhare)

অমানিশায় আসে আঁধার তেপান্তরের মাঠে;
স্তব্ধ ভয়ে পথিক ভাবে,– কেমনে রাত কাটে!
ওই যে ডাকে হুতোম-পেঁচা, বাতাস করে শাঁ শাঁ!
মেঘে ঢাকা অচিন মুলুক; কোথায় রে কার বাসা?
গা ছুঁয়ে যায় কালিয়ে শীতে শূন্য পথের জু জু–
আঁধার ঘোরে জীবন-খেলার নূতন পালা রুজু।

   (ঝড় কাব্যগ্রন্থ)

আঁধারে (Adhare) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Okal Sondhya (অকাল-সন্ধ্যা) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অকাল-সন্ধ্যা (Okal Sondhya)

অকাল-সন্ধ্যা
[জয়জয়ন্তী কীর্তন]

খোলো মা                দুয়ার খোলো
প্রভাতেই                 সন্ধ্যা হল
দুপুরেই                  ডুবল দিবাকর গো।
সমরে                   শয়ান ওই
সুত তোর                বিশ্বজয়ী
কাঁদনের                  উঠছে তুফান ঝড় গো॥
সবারে                   বিলিয়ে সুধা,
সে নিল                  মৃত্যু-ক্ষুধা,
কুসুম ফেলে               নিল খঞ্জর গো।
তাহারই                  অস্থি চিরে
দেবতা                   বজ্র গড়ে
নাশে ওই                 অসুর অসুন্দর গো।
ওই মা                   যায় সে হেসে।
দেবতার                  উপরে সে,
ধরা নয়,                স্বর্গ তাহার ঘর গো॥
যাও বীর                 যাও গো চলে
চরণে                    মরণ দলে
করুক প্রণাম               বিশ্ব-চরাচর গো।
তোমার ওই                চিত্ত জ্বেলে
ভাঙ্গালে                   ঘুম ভাঙ্গালে
নিজে হায়                 নিবলে চিতার পর গো।
বেদনার                  শ্মশান-দহে
পুড়ালে                   আপন দেহে,
হেথা কি                  নাচবে না শংকর গো॥

আরিয়াদহ
৬ আষাঢ়, ১৩৩২
(চিত্তনামা কাব্যগ্রন্থ)

অকাল-সন্ধ্যা (Okal Sondhya) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Roudrodogdher Gan (রৌদ্রদগ্ধের গান) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) রৌদ্রদগ্ধের গান (Roudrodogdher Gan)

এবার আমার জ্যোতির্গেহে তিমির প্রদীপ জ্বালো।
আনো    অগ্নিবিহীন দীপ্তিশিখার তৃপ্তি অতল কালো।
                     তিমির প্রদীপ জ্বালো।

              নয়ন আমার তামস-তন্দ্রালসে
              ঢুলে পড়ুক ঘুমের সবুজ রসে,
         রৌদ্র-কুহুর দীপক-পাখা পড়ুক টুটুক খসে,
আমার   নিদাঘদাহে অমামেঘের নীল অমিয়া ঢালো।
                    তিমির প্রদীপ জ্বালো।

         মেঘে ডুবাও সহস্রদল রবি-কমলদীপ,
ফুটাও    আঁধার-কদম-ঘুমশাখে মোর স্বপন মণিনীপ।
                নিখিলগহন-তিমির তমাল গাছে
                কালো কালার উজল নয়ন নাচে,
         আলো-রাধা যে কালোতে নিত্য মরণ-যাচে –
  ওগো   আনো আমার সেই যমুনার জলবিজুলির আলো।
                    তিমির প্রদীপ জ্বালো।

         দিনের আলো কাঁদে আমার রাতের তিমির লাগি
সেথায়    আঁধার-বাসরঘরে তোমার সোহাগ আছে জাগি।
                ম্লান করে দেয় আলোর দহন-জ্বালা
                তোমার হাতের চাঁদ-প্রদীপের থালা,
         শুকিয়ে ওঠে তোমার তারা-ফুলের গগন-ডালা।
  ওগো    অসিত আমার নিশীথ-নিতল শীতল কালোই ভালো।
                   তিমির প্রদীপ জ্বালো।

(ছায়ানট কাব্যগ্রন্থ)

রৌদ্রদগ্ধের গান (Roudrodogdher Gan) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Nazruls Letter (কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে লিখা একটি চিঠি) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে লিখা একটি চিঠি (Nazruls Letter)

(ফজিলাতুন্নেসা কে না পাওয়ার ব্যথায় বেদনা ভেজা বহিঃপ্রকাশ)

১৫, জুলিয়াটোলা স্ট্রীট
কলিকাতা
০৮-০৩-২৮
সন্ধ্যা

প্রিয় মতিহার

পরশু বিকালে এসেছি কলকাতা। ওপরের ঠিকানায় আছি। আরো আগেই আসবার কথা ছিল, অসুখ বেড়ে উঠায় আসতে পারিনি। ২/৪ দিন এখানেই আছি। মনটা কেবলই পালাই পালাই করছে। কোথায় যাই ঠিক করতে পারছিনে। হঠাৎ কোনদিন এক জায়গায় চলে যাবো, অবশ্য দু-দশ দিনের জন্য। যেখানেই যাই, আর কেউ না পাক, তুমি খবর পাবে।

বন্ধু, তুমি আমার চোখের জলের মতিহার, বাদল রাতের বুকের বন্ধু। যেদিন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর আর সবাই আমায় ভুলে যাবে, সেদিন অন্ততঃ তোমার বুক বেঁধে উঠবে। তোমার ঐ ছোট্ট ঘরটিতে শুয়ে , যে ঘরে তুমি আমায় প্রিয়ার মত জড়িয়ে শুয়েছিল, অন্ততঃ এইটুকু সান্ত্বনা নিয়ে যেতে পারবো, এই কি কম সৌভাগ্য আমার!!!

কেন এই কথা বলছি শুনবে? বন্ধু আমি পেয়েছি যার সাক্ষাৎ আমি নিজেই করতে পারবো না । এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু, গানের বন্ধু, ফুলের সওদার খরিদ্দার এরা। এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছে, প্রিয় হয়ে উঠেনি কেউ। আমার জীবনের সবচেয়ে করুণ পাতাটির লেখা তোমার কাছে লিখে গেলাম। আকাশের সবচেয়ে দূরের যে তারাটির দীপ্তি চোখের জলকণার মত ঝিলমিল করবে, মনে কর, সেই তারাটি আমি । আমার নামেই তার নামকরণ কর, কেমন ?

মৃত্যু এত করে মনে করছি কেন ? জানো, ওকে আজ আমার সবচেয়ে সুন্দর মনে হচ্ছে বলে ! মনে হচ্ছে, জীবনে যে আমায় ফিরিয়ে দিলে, মরলে সে আমায় বরণ করে নিবে। সমস্ত বুকটা ব্যথায় দিন রাত টন টন করছে। মনে হচ্ছে সমস্ত বুকটা যেন ঐখানে এসে জমাট বেঁধে যাচ্ছে। ওর যেন মুক্তি হয়, বেঁচে যাবো। কিন্তু কী হবে কে জানে!! তোমার চিঠি পেয়ে অবধি কেবল ভাবছি আর ভাবছি। কত কথা, কত কী!!! তার কি কূল কিনারা আছে!!! ভাবছি আমার ব্যথার রক্তকে রঙীন খেলা বলে উপহাস যিনি করেন, তিনি হয়তো দেবতা, আমার ব্যথার অশ্রুর বহু উর্ধ্বে। কিন্তু আমি মাটির নজরুল হলেও সে দেবতার কাছে অশ্রুর অঞ্জলি আর নিয়ে যাবো না। ফুল ধূলায় ঝরে পড়ে, পায়ে পিষ্ট হয়, তাই বলে কি ফুল এত অনাদরের? ভুল করে সে ফুল যদি কারোর কবরীতে ঝরেই পড়ে এবং তিনি যদি সেটাকে উপদ্রব বলে মনে করেন, তাহলে ফুলের পক্ষে প্রায়শ্চিত হচ্ছে এক্ষুণি কারো পায়ের তলায় পড়ে আত্মহত্যা করা।

সুন্দরের অবহেলা আমি সইতে পারিনে বন্ধু, তাই এত জ্বালা। ভিক্ষা যদি কেউ তোমার কাছে চাইতেই আসে, অদৃষ্টের বিড়ম্বনায় তাহলে তাকে ভিক্ষা নাই ই দাও, কুকুর লেলিয়ে দিও না। আঘাত করার একটা সীমা আছে, সেটাকে অতিক্রম করলে আঘাত অসুন্দর হয়ে আসে আর তক্ষুণি তার নাম হয় অবমাননা। ছেলেবেলা থেকেই পথে পথে মানুষ আমি। যে স্নেহে, যে প্রেমে বুক ভরে উঠে কানায় কানায়, তা কখনো কোথাও পাইনি।

এবার চিঠির উত্তর দিতে বড্ড দেরী হয়ে গেল। না জানি কত উদ্বিগ্ন হয়েছ!!! কি করি বন্ধু, শরীরটা এত বেশি বেয়াড়া আর হয়নি কখনো। ওষুধ খেতে প্রবৃত্তি হয় না।

আমায় সবচেয়ে অবাক করে নিশুতি রাতের তারা। তুমি হয়তো অবাক হবে, আমি আকাশের প্রায় সব তারাগুলোকেই চিনি। তাদের সত্যিকারের নাম জানিনে কিন্তু তাদের প্রত্যেকের নামকরণ করেছি আমার ইচ্ছেমত। সেই কত রকম মিষ্টি মিষ্টি নাম , শুনলে তুমি হাসবে। কোন তারা কোন ঋতুতে কোন দিকে উদয় হয়, সব বলে দিতে পারি। জেলের ভিতর সলিটারি সেলে যখন বন্দি ছিলাম, তখন গরমে ঘুম হত না। সারারাত জেগে কেবল তারার উদয় অস্ত দেখতাম। তাদের গতিপথে আমার চোখের জল বুলিয়ে দিয়ে বলতাম, বন্ধু, ওগো আমার নাম না জানা বন্ধু, আমার এই চোখের জলের পিচ্ছিল পথটি ধরে তুমি চলে যাও অস্ত পাড়ের পানে। আমি শুধু চুপটি করে দেখি। হাতে থাকতো হাতকড়া, দেয়ালের সঙ্গে বাঁধা চোখের জলের রেখা আঁকাই থাকতো মুখে, বুকে। আচ্ছা বন্ধু, ক'ফোঁটা রক্ত দিয়ে এক ফোঁটা চোখের জল হয়, তোমাদের বিজ্ঞানে বলতে পারে? এখন শুধু কেবলই জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে যার উত্তর নেই, মিমাংসা নেই – সেই সব জিজ্ঞাসা।

যেদিন আমি ঐ দূরের তারার দেশে চলে যাবো, সেদিন তাকে বলো, এই চিঠি রেখে সে যেন দু'ফোঁটা অশ্রুর দর্পন দেয়, শুধু আমার নামে। হয়তো আমি সেদিন খুশীতে উল্কা ফুল হয়ে তাঁর নোটন খোঁপায় ঝরে পড়বো। তাঁকে বলো বন্ধু, তাঁর কাছে আমার আর চাওয়ার কিছুই নেই। আমি পেয়েছি, তাঁকে পেয়েছি। আমার বুকের রক্তে, চোখের জলে আমি তাঁর উদ্দেশ্যে আমার শান্ত , স্নিগ্ধ অন্তরের পরিপূর্ণ চিত্তের একটি সশ্রদ্ধ নমষ্কার রেখে গেলাম। আমি যেন শুনতে পাই, সে আমারে সর্বান্তকরণে ক্ষমা করেছে। ফুলের কাঁটা ভুলে গিয়ে তার উর্ধ্বে ফুলের কথাই যেন সে মনে রাখে।

ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে আবার লিখছি। কিন্তু আর লিখতে পারছিনে ভাই। চোখের জল, কলমের কালি দুইই শুকিয়ে গেল। তোমরা কেমন আছো, জানিয়ো। তাঁর কিছু খবর দাও না কেন? না কী সে এটুকুও মানা করেছে? ঠিক সময় মতো সে ওষুধ খায়তো ?

কেবলি কীটস্ কে স্বপ্নে দেখছি। তার পাশে দাঁড়িয়ে ফ্যানিব্রাউন পাথরের মত।

ভালোবাসা নাও

ইতি
তোমার নজরুল।

কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে লিখা একটি চিঠি (Nazruls Letter) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bhodu Boron (বধূ-বরণ) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বধূ-বরণ (Bhodu Boron)

এতদিন ছিলে ভূবনের তুমি
আজ ধরা দিলে ভবনে,
নেমে এলে আজ ধরার ধূলাতে
ছিলে এতদিন স্বপনে!
শুধু শোভাময়ী ছিলে এত দিন
কবির মানসে কলিকা নলিন,
আজ পরশিলে চিত্ত- পুলিন
বিদায় গোধূলি- লগনে।
ঊষার ললাট-সিন্দুর-টিপ
সিথিঁতে উড়াল পবনে।।

প্রভাতে ঊষা কুমারী, সেজেছে
সন্ধ্যায় বধূ ঊষসী,
চন্দন- টোপা- তারা- কলঙ্কে
ভ'রেছে বে-দাগ- মু'শশী।
মুখর মুখ আর বাচাল নয়ন
লাজ সুখে আজ যাচে গুন্ঠন,
নোটন- কপোতি কন্ঠে এখন
কূজন উঠিছে উছসি'।
এতদিন ছিলে শুধু রূপ- কথা,
আজ হ'লে বধূ রূপসী।।

দোলা চঞ্চল ছিল এই গেহ
তব লটপট বেণী ঘা'য়,
তারি সঞ্চিত আনন্দে ঝলে
ঐ ঊর- হার মনিকায়।
এ ঘরের হাসি নিয়ে যাও চোখে,
সে গৃহ- দ্বীপ জ্বেলো এ আলোকে,
চোখের সলিল থাকুক এ-লোকে-
আজি এ মিলন মোহানায়
ও- ঘরের হাসি বাশিঁর বেহাগ
কাঁদুক এ ঘরে সাহানায়।।

বিবাহের রঙ্গে রাঙ্গা আজ সব,
রাঙ্গা মন, রাঙ্গা আভরণ,
বলো নারী- "এই রক্ত- আলোকে
আজ মম নব জাগরণ!"
পাপে নয় পতি পুণ্যে সুমতি
থাকে যেন, হ'য়ো পতির সারথি।
পতি যদি হয় অন্ধ, হে সতী,
বেঁধো না নয়নে আবরণ
অন্ধ পতিরে আঁখি দেয় যেন
তোমার সত্য আচরণ।।

কাব্যগ্রন্থঃ-সিন্ধু-হিন্দোল

বধূ-বরণ (Bhodu Boron) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Opradh Shudhu Mone Thak (অপরাধ শুধু মনে থাক) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অপরাধ শুধু মনে থাক (Opradh Shudhu Mone Thak)

মোর অপরাধ শুধু মনে থাক!
     আমি হাসি, তার আগুনে আমারই
          অন্তর হোক পুড়ে খাক!
          অপরাধ শুধু মনে থাক!

নিশীথের মোর অশ্রুর রেখা
প্রভাতে কপোলে যদি যায় দেখা,
তুমি পড়িয়ো না সে গোপন লেখা
          গোপনে সে লেখা মুছে যাক
          অপরাধ শুধু মনে থাক!

এ উপগ্রহ কলঙ্ক-ভরা
তবু ঘুরে ঘিরি তোমারই এ ধরা,
লইয়া আপন দুখের পসরা
          আপনি সে খাক ঘুরপাক।
          অপরাধ শুধু মনে থাক!

জ্যোৎস্না তাহার তোমার ধরায়
যদি গো এতই বেদনা জাগায়,
তোমার বনের লতায় পাতায়
          কালো মেঘে তার আলো ছাক।
          অপরাধ শুধু মনে থাক!

তোমার পাখির ভুলাইতে গান
আমি তো আসিনি, হানিনি তো বাণ,
আমি তো চাহিনি কোনো প্রতিদান,
          এসে চলে গেছি নির্বাক।
          অপরাধ শুধু মনে থাক।

কত তারা কাঁদে কত গ্রহে চেয়ে
ছুটে দিশাহারা ব্যোমপথ বেয়ে,
তেমনই একাকী চলি গান গেয়ে
          তোমারে দিইনি পিছু-ডাক।
          অপরাধ শুধু মনে থাক!

কত ঝরে ফুল, কত খসে তারা,
কত সে পাষাণে শুকায় ফোয়ারা,
কত নদী হয় আধ-পথে হারা,
          তেমনই এ স্মৃতি লোপ পাক।
          অপরাধ শুধু মনে থাক!

আঙিনায় তুমি ফুটেছিলে ফুল
এ দূর পবন করেছিল ভুল,
শ্বাস ফেলে চলে যাবে সে আকুল –
          তব শাখে পাখি গান গাক।
          অপরাধ শুধু মনে থাক!

প্রিয় মোর প্রিয়, মোরই অপরাধ,
কেন জেগেছিল এত আশা সাধ!
যত ভালোবাসা, তত পরমাদ,
          কেন ছুঁইলাম ফুল-শাখ।
          অপরাধ শুধু মনে থাক!

আলোয়ার মতো নিভি,পুনঃ জ্বলি,
তুমি এসেছিলে শুধু কুতূহলী,
আলেয়াও কাঁদে কারও পিছে চলি –
          এ কাহিনি নব মুছে যাক।
          অপরাধ শুধু মনে থাক!

(চক্রবাক কাব্যগ্রন্থ)

অপরাধ শুধু মনে থাক (Opradh Shudhu Mone Thak) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Pothik Bodhu (পথিক বঁধু) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পথিক বঁধু (Pothik Bodhu)

আজ   নলিন-নয়ান মলিন কেন বলো সখী বলো বলো!
      পড়ল মনে কোন্ পথিকের বিদায়-চাওয়া ছলছল?
                              বলো সখী বলো বলো!!

      মেঘের পানে চেয়ে চেয়ে বুক ভিজালে চোখের জলে,
      ওই সুদূরের পথ বেয়ে কি চেনা-পথিক গেছে চলে
                  ফিরে আবার আসব বলে গো?
                  স্বর শুনে কার চমকে ওঠ (আহা),
      ওগো ওযে বিহগ-বেহাগ, নির্ঝরিণীর কলকল।
                  ও নয় গো তার পায়ের ভাষা (আহা)
      শীতের শেষের শুকনো পাতার ঝরে পড়ার বিদায়-ধ্বনি ও;
                  কোন্ কালোরে কোন্ ভালোরে
                              বাসলে ভালো (আহা)
      পরদেশি কোন্ শ্যামল বঁধুর শুনচ বাঁশি সারাক্ষণই গো?
      চুমচো কারে? ও নয় তোমার পথিক-বধুঁর চপল হাসি হা-হা,  
      তরুণ ঝাউয়ের কচি পাতায় করুণ অরুণ কিরণ ও যে (আ-হা)!
                  দূরের পথিক ফিরে নাকো আর (আহা আ-হা)
                  ও সে সবুজ দেশের অবুঝ পাখি  
      কখন এসে যাচবে বাঁধন, চলো সখী ঘরকে চলো!
      ও কী? চোখে নামল কেন মেঘের ছায়া ঢল ঢল॥

(পুবের হাওয়া কাব্যগ্রন্থ)

পথিক বঁধু (Pothik Bodhu) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Shishu Jadukor (শিশু যাদুকর) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) শিশু যাদুকর (Shishu Jadukor)

শিশু যাদুকর

কাজী নজরুল ইসলাম

পার হয়ে কত নদী কত সে সাগর 
এই পারে এলি তুই শিশু যাদুকর! 
কোন রূপ-লোকে ছিলি রূপকথা তুই, 
রূপ ধরে এলি এই মমতার ভুঁই।
নবনীতে সুকোমল লাবণি লয়ে 
এলি কে রে অবনীতে দিগ্বিজয়ে। 
কত সে তিমির-নদী পারায়ে এলি- 
নির্মল নভে তুই চাঁদ পহেলি।
আমরার প্রজাপতি অন্যমনে 
উড়ে এলি দূর কান্তার-কাননে। 
পাখা ভরা মাখা তোর ফুল-ধরা ফাঁদ, 
ঠোঁটে আলো চোখে কালো-কলঙ্কী চাঁদ! 
কালো দিয়ে করি তোর আলো উজ্জ্বল- 
কপালেতে টিপ দিয়ে নয়নে কাজল।
তারা-যুঁই এই ভুঁই আসিলি যবে, 
একটি তারা কি কম পড়িল নভে? 
বনে কি পড়িল কম একটি কুসুম? 
ধরণীর কোলে এলি একরাশ চুম।
স্বরগের সব-কিছু চুরি করে, চোর, 
পলাইয়া এলি এই পৃথিবীর ক্রোড়! 
তোর নামে রহিল রে মোর স্মৃতিটুক, 
তোর মাঝে রহিলাম আমি জাগরুক।

শিশু যাদুকর (Shishu Jadukor) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Priyar Rup (প্রিয়ার রূপ) ~ কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) প্রিয়ার রূপ (Priyar Rup)

অধর নিসপিস
নধর কিসমিস
  রাতুল তুলতুল কপোল;
ঝরল ফুল-কুল,
করল গুল ভুল
  বাতুল বুলবুল চপল।
  
নাসায় তিলফুল
হাসায় বিলকুল,
  নয়ান ছলছল উদাস,
দৃষ্টি চোর-চোর
মিষ্টি ঘোর-ঘোর,
  বয়ান ঢলঢল হুতাশ।
অলক দুলদুল
পলক ঢুল ঢুল,
  নোলক চুম খায় মুখেই,
সিঁদুর মুখটুক
হিঙুল টুকটুক,
  দোলক ঘুম যায় বুকেই।
  
ললাট ঝলমল
মলাট মলমল
  টিপটি টলটল সিঁথির,
ভুরুর কায় ক্ষীণ
শুরুর নাই চিন,
  দীপটি জ্বলজ্বল দিঠির।
  
চিবুক টোল খায়,
কী সুখ-দোল তায়
  হাসির ফাঁস দেয় – সাবাস।
মুখটি গোলগাল,
চুপটি বোলচাল
  বাঁশির শ্বাস দেয় আভাস।
  
আনার লাল লাল
দানার তার গাল,
  তিলের দাগ তায় ভোমর;
কপোল-কোল ছায়
চপল টোল, তায়
  নীলের রাগ ভায় চুমোর॥

(ছায়ানট কাব্যগ্রন্থ)

প্রিয়ার রূপ (Priyar Rup) কবিতাটি ছাড়াও কবি কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) -এর অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।