Michael Madhusudan Dutt Poems~ মাইকেল মধুসূদন দত্তর কবিতা

Singho O Moshok (সিংহ ও মশক) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সিংহ ও মশক (Singho O Moshok)

শঙ্খনাদ করি মশা সিংহে আক্রমিল;
           ভব-তলে যত নর,
           ত্রিদিবে যত অমর,
           আর যত চরাচর,
হেরিতে অদ্ভুত যুদ্ধ দৌড়িয়া আইল।
হুল-রূপ শূলে বীর, সিংহেরে বিঁধিল।
            অধীর ব্যথায় হরি,
            উচ্চ-পুচ্ছে ক্রোধ করি,
            কহিলা;—“কে তুই, কেন
            বৈরিভাব তোর হেন?
        গুপ্তভাবে কি জন্য লড়াই?—
সম্মুখ-সমর কর্‌; তাই অামি চাই।
          দেখিব বীরত্ব কত দূর,
          আঘাতে করিব দর্প-চূর;
          লক্ষ্মণের মুখে কালি
          ইন্দ্রজিতে জয়-ডালি,
          দিয়াছে এ দেশে কবি।”
কহে মশা;—“ভীরু, মহাপাপি,
যদি বল থাকে, বিষম-প্রতাপি,
          অন্যায়-ন্যায়-ভাবে,
ক্ষুধায় যা পায়, খাবে;
          ধিক্‌, দুষ্টমতি!
মারি তোরে বন-জীবে দিব, রে, কু-মতি।''
     হইল বিষম রণ, তুলনা না মিলে;
          ভীম দুর্য্যোধনে,
          ঘোর গদা-রণে,
          হ্রদ দ্বৈপায়নে,
তীরস্থ সে রণ-ছায়া পড়িল সলিলে;
ডরাইয়া জল-জীবী জল-জন্তুচয়ে,
    সভয়ে মনেতে ভাবিল,
প্রলয়ে বুঝি এ বীরেন্দ্র-দ্বয় এ সৃষ্টি নাশিল!
          মেঘনাদ মেঘের পিছনে,
          অদৃশ্য অাঘাতে যথা রণে;
          কেহ তারে মারিতে না পায়,
ভয়ঙ্কর স্বপ্নসম অাসে,—এসে যায়,
জর-জরি শ্রীরামের কটক লঙ্কায়।
          কভু নাকে, কভু কাণে,
          ত্রিশূল-সদৃশ হানে
          হুল, মশা বীর।
          না হেরি অরিরে হরি,
          মুহুর্মুহুঃ নাদ করি,
          হইলা অধীর।
হায়! ক্রোধে হৃদয় ফাটিল;—
গত-জীব মৃগরাজ ভূতলে পড়িল!
ক্ষুদ্র শত্রু ভাবি লোক অবহেলে যারে,
বহুবিধ সঙ্কটে সে ফেলাইতে পারে;—
এই উপদেশ কবি দিলা অলঙ্কারে।

সিংহ ও মশক (Singho O Moshok) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Shringar Ros (শৃঙ্গার-রস) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) শৃঙ্গার-রস (Shringar Ros)

শুনিনু নিদ্রায় আমি,নিকুঞ্জ-কাননে,
মনোহর বীণা-ধ্বনি;—দেখিনু সে স্থলে
রূপস পুরুষ এক কুসুম-আসনে,
ফুলের ঠৌপর শিরে,ফুল-মালা গলে।
হাত ধরাধরি করি নাচে কুতূহলে
চৌদিকে রমণী-চয়,কামাগ্নি-নয়নে,—
উজলি কানন-রাজি বরাঙ্গ-ভূষণে,
ব্রজে যথা ব্রজাঙ্গনা রাস-রঙ্গ-ছলে।
সে কামাগ্নি-কণা লয়ে সে যুবক,হাসি
জ্বালাইছে হিয়াবৃন্দে;ফুল-ধনুঃ ধরি
হানিতেছে চারি দিকে বাণ রাশি রাশি
কি দেব কি নর উভে জর জর করি!
''কামদেব অবতার রস-কুলে আসি,
শৃঙ্গার রসের নাম।''জাগিনু শিহরি।

শৃঙ্গার-রস (Shringar Ros) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ishwari Patoni (ঈশ্বরী পাটনী) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ঈশ্বরী পাটনী (Ishwari Patoni)

কে তোর তরিতে বসি,ঈশ্বরী পটনি?
ছলিতে তোর রে যদি কামিনী কমলে,—
কোথা করী,বাম করে ধরি যারে বলে,
উগরি,গ্রাসিল পুনঃ পূর্ব্বে সুবদনী?
রূপের খনিতে আর আছে কিরে মণি?
এর সম?চেয়ে দেখ,পদ-ছায়া-ছলে,—
কনক কমল ফুল্ল এ নদীর জলে—
কোন্ দেবতারে পূজি,পেলি এ রমণী?
কাঠের সেঁউতি তোর,পদ-পরশনে
হইতেছে স্বর্ণময়!এ এব যুবতী—
নহে রে সামান্যা নারী,এই লাগে মনে;
বলে বেয়ে নদী-পারে যা রে শীঘ্রগতি।
মেগে নিস্,পার করে,বর-রূপ ধনে
দেখায়ে ভকতি শোন্,এ মোর যুকতি!

ঈশ্বরী পাটনী (Ishwari Patoni) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Moloy Marut (মলয় মারুত) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) মলয় মারুত (Moloy Marut)

(১)

          শুনেছি মলয় গিরি তোমার আলয়—
                    মলয় পবন!
বিহঙ্গিনীগণ তথা                গায়ে বিদ্যাধরী যথা,
          সঙ্গীত সুধায় পূরে নন্দনকানন; কুসুমকুলকামিনী,            কোমলা কমলা জিনি,
          সেবে তোমা, রতি যথা সেবেন মদন!

(২)

          হায়, কেনে ব্রজে আজি ভ্ৰমিছ হে তুমি—
                     মন্দ সমীরণ?
যাও সরসীর কোলে,          দোলাও মৃদু হিল্লোলে
          সুপ্রফুল্ল নলিনীরে—প্রেমানন্দ মন!
ব্ৰজ-প্রভাকর যিনি        ব্ৰজ আজি ত্যজি তিনি,
          বিরাজেন অস্তাচলে—নন্দের নন্দন!

(৩)

          সৌরভ রতন দানে তুষিবে তোমারে
                    আদরে নলিনী;
তব তুল্য উপহার          কি আজি আছে রাধার?
          নয়ন আসারে, দেব, ভাসে সে দুঃখিনী!
যাও যথা পিকবধূ—            বরিষে সঙ্গীত-মধু,—
          এ নিকুঞ্জে কাঁদে আজি রাধা বিরহিণী।

(৪)

          তবে যদি, সুভগ, এ অভাগীর দুঃখে
                    দুঃখী তুমি মনে,
যাও আশু, আশুগতি,          যথা ব্ৰজকুলপতি—
          যাও যথা পাবে, দেব, ব্রজের রতনে!
রাখার রোদনধ্বনি                বহ যথা শ্যামমণি—
          কহ তাঁরে মরে রাধা শ্যামের বিহনে!

(৫)

          যাও চলি, মহাবলি, যথা বনমালী–
                    রাধিকা-বাসন;
তুঙ্গ শৃঙ্গ দুষ্টমতি,                রোধে যদি তব গতি,
          মোর অনুরোধে তারে ভেঙো, প্রভঞ্জন!
তরুরাজ যুদ্ধ আশে,        তোমারে যদি সম্ভাষে–
          ব্রজাঘাতে যেও তায় করিয়া দলন!

(৬)

          দেখি তোমা পীরিতের ফাঁদ পাতে যদি
                    নদী রূপবতী;
মজো না বিভ্রমে তার,           তুমি হে দূত রাধার,
          হেরো না, হেরো না দেব কুসুম যুবতী!
কিনিতে তোমার মন,            দিবে সে সৌরভধন,
          অবহেলি সে ছলনা, যেয়ো আশুগতি!

(৭)

          শিশিরের নীরে ভাবি অশ্রুবারিধারা,
                    ভুলো না, পবন!
কোকিলা শাখা উপরে,        ডাকে যদি পঞ্চস্বরে,
          মোর কিরে—শীঘ্র করে ছেড়ো সে কানন!
স্মরি রাধিকার দুঃখ,             হইও সুখে বিমুখ—
          মহৎ যে পরদুঃখে দুঃখী সে সুজন!

(৮)

          উতরিবে যবে যথা রাধিকারমণ,
                    মোর দূত হয়ে,
কহিও গোকুল কাঁদে         হারাইয়া শ্যামচাঁদে—
          রাধার রোদনধ্বনি দিও তাঁরে লয়ে;
আর কথা আমি নারী       শরমে কহিতে নারি,—
          মধু কহে, ব্রজাঙ্গনে, আমি দিব কয়ে।

(ব্রজাঙ্গনা কাব্য)

মলয় মারুত (Moloy Marut) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Roudro Ros (রৌদ্র-রস) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) রৌদ্র-রস (Roudro Ros)

শুনিনু গম্ভীর ধ্বনি গিরির গহ্বরে,
ক্ষুধাৰ্ত্ত কেশরী যেন নাদিছে ভীষণে;
প্রলয়ের মেঘ যেন গর্জ্জিছে গগনে ;
সচূড়ে পাহাড় কাঁপে থর থর থরে,
কাঁপে চারি দিকে বন যেন ভূকম্পনে ;
উথলে অদূরে সিন্ধু যেন ক্রোধ-ভরে,
যবে প্রভঞ্জন আসে নির্ঘোষ ঘোষণে।
জিজ্ঞাসিনু ভারতীরে জ্ঞানার্থে সত্বরে!
কহিলা মা;—''রৌদ্র নামে রস,রৌদ্র অতি,
রাখি আমি,ওরে বাছা,বাঁধি এই স্থলে,
(কৃপা করি বিধি মোরে দিলা এ শকতি)
বাড়বাগ্নি মগ্ন যথা সাগরের জল।
বড়ই কর্কশ-ভাষী,নিষ্ঠুর,দুর্ম্মতি,
সতত বিবাদে মত্ত,পুড়ি রোষানলে।''

রৌদ্র-রস (Roudro Ros) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Shishupal (শিশুপাল) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) শিশুপাল (Shishupal)

নর-পাল-কুলে তব জনম সুক্ষণে
শিশুপাল ! কহি শুন, রিপুরূপ ধরি,
ওই যে গরুড়-ধ্বজে গরজেন ঘনে
বীরেশ, এ ভব-দহে মুকতির তরি!
টঙ্কারি কার্ম্মুক, পশ হুহুঙ্কারে রণে ;
এ ছার সংসার-মায়া অম্তিমে পাসরি ;
নিন্দাছলে বন্দ, ভক্ত, রাজীব-চরণে ।
জানি, ইষ্টদেব তব, নহেন হে অরি
বাসুদেব ; জানি আমি বাগ্দেবীর বরে ।
লৌহদন্ত হল, শুন, বৈষ্ণব সুমতি,
ছিঁড়ি ক্ষেত্রে-দেহ যথা ফলবান করে
সে ক্ষেত্রে ; তোমায় ক্ষণ যাতিনি তেমতি
আজি, তীক্ষ্ণ শর-জালে বধি এ সমরে,
পাঠাবেন সুবৈকুণ্ঠে সে বৈকুণ্ঠ-পতি ।

শিশুপাল (Shishupal) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Gogriho Rone (গোগৃহ-রণে) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) গোগৃহ-রণে (Gogriho Rone)

হুহুঙ্কারি টঙ্কারিলা ধনুঃ ধনুর্দ্ধারী
ধনঞ্জয়,মৃত্যুঞ্জয় প্রলয়ে যেমতি!
চৌদিকে ঘেরিল বীরে রথ সারি সারি,
স্থির বিজলীর তেজঃ,বিজলীর গতি!—
শর-জালে শূর-ব্রজে সহজে সংহারি
শূরেন্দ্র,শোভিলা পূনঃ যথা দিনপতি
প্রখর কিরণে মেঘে খ-মুখে নিবারি,
শোভেন অম্লানে নভে।উত্তরের প্রতি
কহিলা আনন্দে বলী;—''চালাও স্যন্দনে
বিরাট-নন্দন,দ্রুতে,যথা সৈন-দলে
লুকাইছে দুর্য্যোধন হেরি মোরে রণে,
তেজস্বী মৈনাক যথা সাগরের জলে
বজ্রাগ্নির কাল তেজে ভয় পেয়ে মনে।—
দণ্ডিব প্রচণ্ডে দুষ্টে গাণ্ডীবের বলে।''

গোগৃহ-রণে (Gogriho Rone) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Sitadebi (সীতাদেবী) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সীতাদেবী (Sitadebi)

অনুক্ষণ মনে মোর পড়ে তব কথা,
বৈদেহি! কখন দেখি, মুদিত নয়নে,
একাকিনী তুমি, সতি, অশোক-কাননে,
চারি দিকে চেড়ীবৃন্দ, চন্দ্রকলা যথা
আচ্ছন্ন মেঘের মাঝে ! হায়, বহে বৃথা
পদ্মাক্ষি, ও চক্ষুঃ হতে অশ্রু-ধারা ঘনে !
কোথা দাশরথি শূর কোথা মহারথী
দেবর লক্ষ্মণ, দেবি, চিরজয়ী রণে ?
কি সাহসে, সুকেশিনি, হরিল তোমারে
রাক্ষস ? জানে না মূঢ়, কি ঘটিবে পরে !
রাহু-গ্রহ-রূপ ধরি বিপত্তি আঁধারে
জ্ঞান-রবি, যবে বিধি বিড়ম্বণ করে !
মজিবে এ রক্ষোবংশ, খ্যাত ত্রিসংসারে,
ভূকম্পণে, দ্বীপ যথা অতল সাগরে !

সীতাদেবী (Sitadebi) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Himritu (হিমঋতু) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) হিমঋতু (Himritu)

হিমন্তের আগমনে সকলে কম্পিত,
রামাগণ ভাবে মনে হইয়া দুঃখিত।
মনাগুনে ভাবে মনে হইয়া বিকার,
নিবিল প্রেমের অগ্নি নাহি জ্বলে অার।
ফুরায়েছে সব অাশা মদন রাজার
অাসিবে বসন্ত অাশা—এই অাশা সার।
অাশায় অাশ্রিত জনে নিরাশ করিলে,
অাশাতে আশার বশ অাশায় মারিলে।
সৃজিয়াছি অাশাতরু অাশিত হইয়া,
নষ্ট কর হেন তরু নিরাশ করিয়া।
যে জন করয়ে আশা, অাশার অাশ্বাসে,
নিরাশ করয়ে তারে কেমন মানসে॥

হিমঋতু (Himritu) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Meghnadbodh Kabya Fifth Section (মেঘনাদবথ কাব্য (৫ম সর্গ)) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) মেঘনাদবথ কাব্য (৫ম সর্গ) (Meghnadbodh Kabya Fifth Section)

কুসুম-শয়নে যথা সুবর্ণ-মন্দিরে
বিরাজে বীরেন্দ্র বলী ইন্দ্রজিত,তথা
পশিল কূজন-ধ্বনি সে সুখ-সদনে।
জাগিলা বীর-কুন্জর কুন্জবন-গীতে।
প্রমীলার করপদ্ম করপদ্মে ধরি
রথীন্দ্র, মধুর স্বরে, হায় রে, যেমতি
নলিনীর কানে অলি কহে গুন্জরিয়া
প্রেমের রহস্য কথা, কহিলা (আদরে
চুম্বি নিমীলিত আঁখি )—“ডাকিছে কূজনে,
হৈমবতী ঊষা তুমি,রূপসি, তোমারে
পাখী-কুল; মিল, প্রিয়ে, কমল লোচন
উঠ, চিরানন্দ মোর; সূর্য্যকান্তমণি-
সম এ পরাণ,কান্তে, তুমি রবিচ্ছবি;—-
তেজোহীন আমি তুমি মুদিলে নয়ন;
ভাগ্য-বৃক্ষে ফলোত্তম তুমি হে জগতে
আমার; নয়ন-তারা; মহার্হ রতন;
উঠি দেখ,শশিমুখি,কেমনে ফুটিছে,
চুরি করি কান্তি তব মন্জু কুন্জবনে
কুসুম ;” চমকি রামা উঠিলা সত্বরে;—
গোপিনী কামিনী যথা বেনুর সুরবে;
আবরিলা অবয়ব সুচারু-হাসিনী
শরমে। কহিলা পুনঃ কুমার আদরে;—
“পোহাইল এতক্ষনে তিমির-শর্বরী;
তা না হলে ফুটিতে কি তুমি, কমলিনি,
জুড়াতে এ চক্ষুর্দ্বয়? চল, প্রিয়ে, এবে
বিদায় হইব নমি জননীর পদে;
পরে যথাবিধি পূজি দেব বৈশ্বানরে,
ভীষণ-অশনি-সম শর-বরিষণে
রামের সংগ্রাম-সাধ মিটাব সংগ্রামে।”
সাজিলা রাবণ-বধূ, রাবণ-নন্দন,
অতুল জগতে দোঁহে; বামাকুলোত্তমা
প্রমীলা, পুরুষোত্তম মেঘনাদ বলী;
শয়ন-মন্দির হতে বাহিরিলা দোঁহে—
প্রভাতের তারা যথা অরুনের সাথে;
বাজিল রাক্ষস-বাদ্য; নমিল রক্ষক;
জয় মেঘনাদ উঠিল গগনে;
রতন-শিবিকাসনে বসিলা হরষে
দম্পতী। বহিলা যান যানবাহ- দলে
মন্দোদরী মহিষীর সুবর্ন-মন্দিরে।
প্রবেশিলা অরিন্দম, ইন্দু-নিভাননা
প্রমীলা সুন্দরী সহ,সে স্বর্ণ-মন্দিরে।
ত্রিজটা নামে রাক্ষসী আইল ধাইয়া।
কহিল বীর-কেশরী; ”শুন লো ত্রিজটে,
নিকুম্ভিলা-যজ্ঞ সাঙ্গ করি আমি আজি
যুঝিব রামের সঙ্গে পিতার আদেশে,
নাশিব রাক্ষস-রিপু; তেঁই ইচ্ছা করি
পূজিতে জননী পদ। যাও বার্তা লয়ে;
কহ,পুত্র, পুত্রবধু দাঁড়ায়ে দুয়ারে
তোমার,হে লঙ্কেশ্বরী;” সাষ্টাঙ্গে প্রণমি,
কহিলা শূরে ত্রিজটা, (বিকটা রাক্ষসী)—
”শিবের মন্দিরে এবে রাণী মন্দোদরী,
যুবরাজ; তোমার মঙ্গল-হেতু তিনি
অনিদ্রায়, অনাহারে পূজেন উমেশে;
তব সম পুত্র, শূর,কার এ জগতে?
কার বা এ হেন মাতা?”—এতেক কহিয়া
সৌদামিনী-গতি দূতী ধাইল সত্বরে।
বাহিরিলা লঙ্কেশ্বরী শিবালয় হতে
প্রণমে দম্পতী পদে। হরষে দুজনে
কোলে করি, শিরঃ চুম্বি, কাঁদিলা মহিষী।
কহিলা বীরেন্দ্র; ”দেবি আশীষ দাসেরে।
নিকুম্ভিলা-যজ্ঞ সাঙ্গ করি যথাবিধি,
পশিব সমরে আজি, নাশিব রাঘবে;
শিশু ভাই বীরবাহু; বধিয়াছে তারে
পামর। দেখিব মোরে নিবারে কি বলে?
দেহ পদ-ধূলি, মাতঃ ;তোমার প্রসাদে
নির্ব্বিঘ্ন করিব আজি তীক্ষ্ন শর-জালে
লঙ্কা; বাঁধি দিব আনি তাত বিভীষণে
রাজদ্রোহী; খেদাইব সুগ্রীব অঙ্গদে
সাগর অতল জলে;” উত্তরিলা রাণী,
মুছিয়া নয়ন-জল রতন-আঁচলে;—
“কেমনে বিদায় তোরে করি রে বাছনি;
আঁধারি হৃদয়াকাশ,তুই পূর্ণ শশী
আমার। দুরন্ত রণে সীতাকান্ত বলী;
দুরন্ত লক্ষণ শূর; কাল-সর্প-সম
দয়া-শূন্য বিভীষণ; মত্ত লোভ-মদে,
স্ববন্ধু-বান্ধবে মূঢ় নাশে অনায়াসে,
ক্ষুধায় কাতর ব্যাঘ্র গ্রাসয়ে যেমতি
স্বশিশু; কুক্ষনে,বাছা, নিকষা শাশুড়ী
ধরেছিলা গর্ভে দুষ্টে, কহিনু রে তোরে;
এ কনক-লঙ্কা মোর মজালে দুর্ম্মতি;”
হাসিয়া মায়ের পদে উত্তরিলা রথী;—
কেন, মা ডরাও তুমি রাঘবে লক্ষণে,
রক্ষোবৈরী? দুইবার পিতার আদেশে
তুমুল সংগ্রামে আমি বিমুখিনু দোঁহে
অগ্নিময় শর-জালে; ও পদ-প্রসাদে
চির-জয়ী দেব-দৈত্য-নরের সমরে
এ দাস; জানেন তাত বিভীষণ, দেবি,
তব পুত্র-পরাক্রম; দম্ভোলি-নিক্ষেপী
সহস্রাক্ষ সহ যত দেব-কুল-রথী;
পাতালে নাগেন্দ্র, মর্ত্তে নগেন্দ্র; কি হেতু
সভয় হইলা আজি,কহ, মা, আমারে?
কি ছার সে রাম, তারে ডরাও আপনি?
মুছিয়া নয়ন-জল রতন-আঁচলে,
উত্তরিলা লঙ্কেশ্বরী; ”যাইবি রে যদি;—
রাক্ষস-কুল-রক্ষণ বিরূপাক্ষ তোরে
রক্ষুন এ কাল-রণে; এই ভিক্ষা করি
তার পদ যুগে আমি। কি আর কহিব?
নয়নের তারা হারা করি রে থুইলি
আমায় এ ঘরে তুই;” কাঁদিয়া মহিষী
কহিলা,চাহিয়া তবে প্রমীলার পানে;—
“থাক,মা,আমার সঙ্গে তুমি; জুড়াইব,
ও বিধুবদন হেরি এ পোড়া পরাণ;
বহুলে তারার করে উজ্জ্বল ধরণী।”
বন্দি জননীর পদ বিদায় হইলা
ভীমবাহু কাঁদি রাণী, পুত্র-বধূ সহ,
প্রবেশিলা পুনঃ গৃহে। শিবিকা ত্যজিয়া,
পদ-ব্রজে যুবরাজ চলিলা কাননে—
ধীরে ধীরে রথীবর চলিলা একাকী,
কুসুম-বিব্রিত পথে যজ্ঞশালা মুখে।

===========

মেঘনাদবথ কাব্য (৫ম সর্গ) (Meghnadbodh Kabya Fifth Section) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।