Premendra Mitra Poems ~ প্রেমেন্দ্র মিত্র কবিতা

প্রেমেন্দ্র মিত্রর জীবনী, এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রর বিখ্যাত জনপ্রিয় কবিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। A collection of best bengali poems of Premendra Mitra are listed below.

Premendra Mitra
উৎসঃ উইকিপিডিয়া

প্রেমেন্দ্র মিত্র ৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯০৪ সালে কাশীতে জন্মগ্রহণ করেন।

তার পাকস্থলীতে ক্যান্সার থাকায়, অসুস্থ হয়ে ৩ই মে, ১৯৮৮ সালে কলকাতায় মারা যান।

তিনি ছিলেন কল্লোল যুগের একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক।

তার লেখা ১৯২৪ সালে কল্লোল পত্রিকায় ‘সংক্রান্তি‘ নামে একটি গল্প প্রকাশিত হয়।

তার দুটি উপন্যাস মিছিল এবং পাঁক ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয়।

তিনি ১৯২৭ সালে বিজলী পত্রিকায় গদ্যছন্দে লেখেন “আজ এই রাস্তার গান গাইব” কবিতাটি।

কবির প্রথম কবিতার বই ‘প্রথমা’ প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে।

বৈপ্লবিক চেতনাসিক্ত মানবিকতা তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। মানুষের সম্পর্কে ভাঙ্গা গড়া, মনের জটিলতা, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ব্যথা বেদনার কথা প্রকাশে প্রেমেন্দ্র মিত্র ছিলেন স্বকীয়তায় অনন্য।

কবির সৃষ্ট জনপ্রিয় গল্প চরিত্র ঘনাদা, সর্বজ্ঞানী মেসবাড়ির ঘনশ্যাম দাস আজও সব বয়সের পাঠকদের কাছে খুব প্রিয়।

তার আর একটি উল্লেখযোগ্য ছোট গোয়েন্দা গল্পটির নাম পরাশর বর্মা, যার মুখ্য চরিত্র পরাশর বর্মা পেশায় গোয়েন্দা হলেও নেশায় কবি।

আকাশবাণীর উদ্যোগে লিখিত ‘সবুজ মানুষ‘ নামে একটি চার অধ্যায়ের বারোয়ারি কল্পবিজ্ঞান কাহিনীর প্রথম অধ্যায় রচনা করেন প্রেমেন্দ্র মিত্র।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থটির নাম সাগর থেকে ফেরা। এই কাব্যগ্রন্থটি রচনা করায়, বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্র পুরস্কার তিনি লাভ করেন।

বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে প্রেমেন্দ্র মিত্র -এর অবদানের জন্য আকাদেমি পুরস্কার(১৯৫৬ সালে), পদ্মশ্রী উপাধি এবং দেশিকোত্তম উপাধিতে তাকে সম্মানিত করা হয়।

কবিতা

Title

প্রেমেন্দ্র মিত্র -এর কবিতা সমূহ (Premendra Mitra Poems)

বেনামী বন্দর (Benami Bondor) – প্রেমেন্দ্র মিত্র (Premendra Mitra)

মহাসাগরের নামহীন কূলে
         হতভাগাদের বন্দরটিতে ভাই,
              জগতের যত ভাঙা জাহাজের ভিড়!
   মাল বয়ে -বয়ে ঘাল হল যারা 
               আর যাহাদের মাস্তুল চৌচির,
        আর যাহাদের পাল পুড়ে গেল  
                    বুকের আগুনে ভাই,    
               সব জাহাজের সেই আশ্রয়- নীড়।

কুলহীন যত কালাপানি মথি,
           লোনা জলে ডুবে নেয়,
           ডুবো পাহাড়ের গুঁতো গিলে আর
                  ঝড়ের ঝাঁকুনি খেয়ে,
যত হয়রান লবেজান তরী
          বরখাস্ত্ হল ভাই,
      পাঁজরায় খেয়ে চিড়;

মহাসাগরের অখ্যাত কূলে
             হতভাগাদের বন্দরটিতে ভাই,
সেই অথর্ব ভাঙা জাহাজের ভিড়।

        দুনিয়ার কড়া চৌকিদারি যে ভাই
            হুশিয়ার সদাগরি,
হালে যার পানি মিলে নাকো আর, তারে
           যেতে হবে চুপে সরি!
কোমরের জোর কমে গেলে যার ভাই,
          ঘুণ ধরে গেল কাঠে,আর যার
                কলজেটা গেল ফেটে,
        জনমের মতো জখম হল যে বুঝি;
সওদাগরের জেটিতে জেটিতে
                       খাজাঞ্জিথানা ঢুঁড়ে,
                       কোনো দপ্তরে ভাই,
খারিজ তাদের নাম পাবে নাকো খুঁজে!

মহাসাগরের নাম হীন কূলে
         হতভাগাদের বন্দরটিতে ভাই
          সেইসব যত ভাঙা জাহাজের ভিড়!—-
           শিরদাঁড়া যার বেঁকে গেল
                 আর দড়াদড়ি গেল ছিঁড়ে
       কব্জা ও কল বেগড়াল অবশেষে,
জৌলুস গেল ধুয়ে যার আর
             পতাকাও পড়ে নুয়ে;
          জোড় গেল খুলে,
              ফুটো খোলে আর রইতে যে নারে ভেসে,
                 —-তাদের নোঙর নামাবার ঠাঁই
                          দুনিয়ার কিনারায়,
 যত হতভাগা অসমর্থের নির্বাসিতের নীড়!

নীলকন্ঠ (Neelkanth) ~ প্রেমেন্দ্র মিত্র (Premendra Mitra)

আজকের কবিতাটি কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র -এর লেখা একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা নীলকন্ঠ

হাওয়াই দ্বীপে যাইনি, দক্ষিণ সমুদ্রের কোন দ্বীপপুঞ্জে।
তবু চিনি ঘাসের ঘাগরাপরা ছায়া বরণ তার সুন্দরীদের;
বিদেশি টহলদারের ক্যামেরা- কলুষিত চোখে নয়।
দেখেছি তাদের ঘাসের ঘাগরায় নাচের ঢেউ-এর হিল্লোল,
নোনা হাওয়ায় দমকে দমকে যেমন নারকেল- বনের দোলা।
মোহিনী পলিনেসিয়া!
মহাসাগরে ছড়ান
ভেঙ্গে যাওয়া ভুলে যাওয়া কোন্ সুদূর সভ্যতার নাকি ভগ্নাংশ
আমি জানি,
সমুদ্রের ঔরসে
প্রবাল দ্বীপের গর্ভে তার জন্ম!

সূর্যের ওরসে মহারণ্যের গর্ভে যার জন্ম! আঁধার বরণ সেই আফ্রিকাকেও জানি,
শৌখিন শিকারী আর পন্ডিত পর্যটকের চোখে নয়।
অরণ্য -চোঁয়ানো ঝাপসা আলোয়,
কি, দিগন্ত- ছোঁয়া ফেল্টর চোখ -ঝলসানো উজ্জ্বলতায়
উদ্দাম আঁধার বরণ আফ্রিকা!
কণ্ঠে তার দুরন্ত অরণ্য উল্লাস
– হে ইডি, হাইডি, হা-ই!

হে- ইডি, হাইডি, হা-ই!
কালো চামড়ার ছোঁয়াচ বাঁচাতে
কালো মনের ছোঁয়াচে রোগের জর্জর
বিলাসী ক্লীবের প্রলাপ- প্রতিধ্বনি নয়।
রাত্রি- নিবিড়, অরণ্য গহন আফ্রিকার
রোমাঞ্চিত উত্তাল উচ্চারণ,
হে- ইডি, হাইডি, হা-ই।

হে- ইডি, হাইডি, হা-ই।
অরণও ডাকে ওই,-যাই!
সিংহের দাঁতের ধার, সিংহের নখে ধার,
চোখে তার মৃত্যুর রোশানাই!
-হে- ইডি, হাইডি, হা-ই!

বন-পথে বিভীষিকা, বিঘ্ন,
আমাদেরও বল্লম তীক্ষ্ণ!
কাপুরুষ সিংহ তো মারতেই জানে শুধু
আমরা যে মরতেও চাই!
হে- ইডি, হাইডি, হা-ই!

মেয়েদের চোখ আজি চক্ চকে ধারালো;
নেচে নেচে ঢেউ -তোলা, নাচের নেশায় দোলা
মিশ্ কালো অঙ্গে কি চেক্ নাই!
মৃত্যুর মৌতাতে বুঁদ হয়ে গেছি সব
রমণী ও মরণেতে ভেদ ভেদ নাই!
-হে- ইডি, হাইডি, হা-ই!

হে- ইডি, হাইডি, হা-ই!
আমাদের গলায় কই সেই উদ্দাম উল্লাস,ঘাসের ঘাগরায় দুরন্ত সমুদ্র -দোলা?
কেমন করে থাকবে?
আমাদের জীবনে নেই জ্বলন্ত মৃত্যু,
সমুদ্র নীল মৃত্যু পলিনেসিয়ার!
আফ্রিকার সিংহ- হিংস্র মৃত্যু!
আছে শুধু স্তিমিত হয়ে নিভে যাওয়া,
– ফ্যাকাশে রুগ্ন তাই সভ্যতা!

সভ্যতাকে সুস্থ করো, করো সার্থক।
আনো তীব্র, তপ্ত, ঝাঁঝালো, মৃত্যুর স্বাদ,
সূর্য আর সমুদ্রের ঔরসে
যাদের জন্ম,
মৃত্যু- মাতাল তাদের রক্তের বিনিময়।
ভরাট -করা সমুদ্র আর উচ্ছেদ করা অরণ্যের জগতে
কি লাভ গ’ড়ে কৃমি -কীটের সভ্যতা,
লালন ক’রে স্তিমিত দীর্ঘ পরমায়ু
কচ্ছপের মত?
অ্যামিবারও ত’ মৃত্যু নেই।
মৃত্যু জীবনের শেষ সার আবিষ্কার
আর
শিব নীলকন্ঠ!

প্রেমেন্দ্র মিত্র -এর অন্যান্য কবিতা পেতে হলে এখানে ক্লিক করুন