Rabindranath Tagore Poems ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী, এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত জনপ্রিয় কবিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। Rabindranath Tagore short biography with Rabindranath Tagore poems are given below.

rabindranath-tagore
উৎস: উইকিপিডিয়া

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ই মে, ১৮৬১ সালে, (১২৬৮ বঙ্গাব্দে, ২৫শে বৈশাখ), কলকাতার এক জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতায় ৭ই আগস্ট, ১৯৪১ সালে, (১৩৪৮ বঙ্গাব্দে, ২২শে শ্রাবণ), পৈত্রিক বাসভবনেই তিনি পরলোক গমন করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর ছদ্মনাম ছিল ভানুসিংহ ঠাকুর (ভণিতা)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে জনপ্রিয় বাঙালি কবি,ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার,প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বলে মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে বাংলা সাহিত্যে কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।

বিস্তারিত ...
আট বছর বয়স থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা তাঁর ‘অভিলাষ‘ কবিতাটি প্রকাশিত হয়।

কবির-এর লেখা উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি১৯১০ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ-এর সং অফারিংস (Song Offerings) কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এতে গীতাঞ্জলি ও সমসাময়িক আরও কিছু কিছু কাব্যগ্রন্থের কবিতা রবীন্দ্রনাথ নিজে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন।

১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য, তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।

কবির যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২টি খন্ড রবীন্দ্ররচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি খন্ড “কবিতা ও গান”, “নাটক ও প্রহসন”, “গল্প ও উপন্যাস” এবং “প্রবন্ধ” বিভাগে বিন্যস্ত।

তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস-এর নাম “গোরা” এবং “ঘরে বাইরে” ইত্যাদি।

কবির অন্যতম শ্রেষ্ঠ-কীর্তি হল সংগীত। তার রচিত- জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে, এবং আমার সোনার বাংলা এই বাংলা গান দুটি ভারতবাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে পরিগণিত হয়।

আজও আমরা ২৫শে বৈশাখ দিনটিকে বিশ্বকবির জন্ম দিবস হিসাবে পালন করি।

কবিতা

Title

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর কবিতা সমূহ (Rabindranath Tagore Poems)

Sesh Chithi (শেষ চিঠি) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) শেষ চিঠি (Sesh Chithi)

মনে হচ্ছে শূন্য বাড়িটা অপ্রসন্ন,
      অপরাধ হয়েছে আমার
         তাই আছে মুখ ফিরিয়ে।
  ঘরে ঘরে বেড়াই ঘুরে,
         আমার জায়গা নেই–
             হাঁপিয়ে বেরিয়ে চলে আসি।
এ বাড়ি ভাড়া দিয়ে চলে যাব দেরাদুনে।
  অমলির ঘরে ঢুকতে পারি নি বহুদিন
      মোচড় যেন দিত বুকে।
ভাড়াটে আসবে, ঘর দিতেই হবে সাফ ক'রে,
      তাই খুললেম ঘরের তালা।
একজোড়া আগ্রার জুতো,
      চুল বাঁধবার চিরুনি, তেল, এসেন্সের শিশি
         শেলফে তার পড়বার বই,
                 ছোটো হার্মোনিয়ম।
      একটা অ্যালবাম,
ছবি কেটে কেটে জুড়েছে তার পাতায়।
         আলনায় তোয়ালে, জামা, খদ্দরের শাড়ি।
  ছোটো কাঁচের আলমারিতে নানা রকমের পুতুল,
             শিশি, খালি পাউডারের কৌটো।
চুপ করে বসে রইলেম চৌকিতে।
         টেবিলের সামনে।
লাল চামড়ার বাক্স,
      ইস্কুলে নিয়ে যেত সঙ্গে।
তার থেকে খাতাটি নিলেম তুলে,
      আঁক কষবার খাতা।
ভিতর থেকে পড়ল একটি আখোলা চিঠি,
      আমারি ঠিকানা লেখা
অমলির কাঁচা হাতের অক্ষরে।
  শুনেছি ডুবে মরবার সময়
      অতীত কালের সব ছবি
         এক মুহূর্তে দেখা দেয় নিবিড় হয়ে–
চিঠিখানি হাতে নিয়ে তেমনি পড়ল মনে
      অনেক কথা এক নিমেষে।
অমলার মা যখন গেলেন মারা
  তখন ওর বয়স ছিল সাত বছর।
      কেমন একটা ভয় লাগল মনে,
             ও বুঝি বাঁচবে না বেশি দিন।
      কেননা বড়ো করুণ ছিল ওর মুখ,
             যেন অকালবিচ্ছেদের ছায়া
      ভাবীকাল থেকে উল্টে এসে পড়েছিল
             ওর বড়ো বড়ো কালো চোখের উপরে।
      সাহস হ'ত না ওকে সঙ্গছাড়া করি।
             কাজ করছি আপিসে বসে,
                 হঠাৎ হ'ত মনে
             যদি কোনো আপদ ঘটে থাকে।
বাঁকিপুর থেকে মাসি এল ছুটিতে–
     বললে, "মেয়েটার পড়াশুনো হল মাটি।
         মুর্খু মেয়ের বোঝা বইবে কে
             আজকালকার দিনে।'
      লজ্জা পেলেম কথা শুনে তার,
         বললেম "কালই দেব ভর্তি করে বেথুনে'।
ইস্কুলে তো গেল,
      কিন্তু ছুটির দিন বেড়ে যায় পড়ার দিনের চেয়ে।
কতদিন স্কুলের বাস্‌ অমনি যেত ফিরে।
         সে চক্রান্তে বাপেরও ছিল যোগ।
ফিরে বছর মাসি এল ছুটিতে;
  বললে, "এমন করে চলবে না।
      নিজে ওকে যাব নিয়ে,
  বোর্ডিঙে দেব বেনারসের স্কুলে,
      ওকে বাঁচানো চাই বাপের স্নেহ থেকে।'
মাসির সঙ্গে গেল চলে।
      অশ্রুহীন অভিমান
         নিয়ে গেল বুক ভরে
             যেতে দিলেম বলে।
বেরিয়ে পড়লেম বদ্রিনাথের তীর্থযাত্রায়
      নিজের কাছ থেকে পালাবার ঝোঁকে।
  চার মাস খবর নেই।
মনে হল গ্রন্থি হয়েছে আলগা
         গুরুর কৃপায়।
  মেয়েকে মনে মনে সঁপে দিলেম দেবতার হাতে,
      বুকের থেকে নেমে গেল বোঝা।
চার মাস পরে এলেম ফিরে।
  ছুটেছিলেম অমলিকে দেখতে কাশীতে–
      পথের মধ্যে পেলেম চিঠি–
         কী আর বলব,
             দেবতাই তাকে নিয়েছে।
যাক সে-সব কথা।
  অমলার ঘরে বসে সেই আখোলা চিঠি খুলে দেখি,
         তাতে লেখা–
  "তোমাকে দেখতে বড্‌ডো ইচ্ছে করছে'।
             আর কিছুই নেই।

                      —————————– ৩১ শ্রাবণ, ১৩৩৯

শেষ চিঠি (Sesh Chithi) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Eso He Eso Sojol Ghono Badolborisone (এসো হে এসো সজল ঘন বাদলবরিষনে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) এসো হে এসো সজল ঘন বাদলবরিষনে (Eso He Eso Sojol Ghono Badolborisone)

এসো হে এসো, সজল ঘন,
বাদলবরিষনে–
বিপুল তব শ্যামল স্নেহে
এসো হে এ জীবনে।
এসো হে গিরিশিখর চুমি,
ছায়ায় ঘিরি কাননভূমি–
গগন ছেয়ে এসো হে তুমি
গভীর গরজনে।

ব্যথিয়ে উঠে নীপের বন
পুলকভরা ফুলে।
উছলি উঠে কলরোদন
নদীর কূলে কূলে।
এসো হে এসো হৃদয়ভরা,
এসো হে এসো পিপাসা-হরা,
এসো হে আঁখি-শীতল-করা
ঘনায়ে এসো মনে।

১৭ ভাদ্র, ১৩১৬
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

এসো হে এসো সজল ঘন বাদলবরিষনে (Eso He Eso Sojol Ghono Badolborisone) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Gorbo Kore Nei Ne O Nam (গর্ব করে নিই নে ও নাম) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) গর্ব করে নিই নে ও নাম (Gorbo Kore Nei Ne O Nam)

গর্ব করে নিই নে ও নাম, জান অন্তর্যামী,
আমার মুখে তোমার নাম কি সাজে।
যখন সবাই উপহাসে তখন ভাবি আমি
আমার কণ্ঠে তোমার নাম কি বাজে।
তোমা হতে অনেক দূরে থাকি
সে যেন মোর জানতে না রয় বাকি,
নামগানের এই ছদ্মবেশে দিই পরিচয় পাছে
মনে মনে মরি যে সেই লাজে।

অহংকারের মিথ্যা হতে বাঁচাও দয়া করে
রাখো আমায় যেথা আমার স্থান।
আর-সকলের দৃষ্টি হতে সরিয়ে দিয়ে মোরে
করো তোমার নত নয়ন দান।
আমার পূজা দয়া পাবার তরে,
মান যেন সে না পায় করো ঘরে,
নিত্য তোমায় ডাকি আমি ধুলার ‘পরে বসে
নিত্যনূতন অপরাধের মাঝে।

রেলপথ। ই। বি। এস। আর, ২২ আষাঢ়, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

গর্ব করে নিই নে ও নাম (Gorbo Kore Nei Ne O Nam) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Kothin Loha Kothin Ghume (কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে (Kothin Loha Kothin Ghume)

কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে ছিল অচেতন,   ও তার   ঘুম ভাঙাইনু রে।
লক্ষ যুগের অন্ধকারে ছিল সঙ্গোপন,   ওগো,   তায় জাগাইনু রে॥
     পোষ মেনেছে হাতের তলে   যা বলাই সে তেমনি বলে–
              দীর্ঘ দিনের মৌন তাহার আজ ভাগাইনু রে॥
     অচল ছিল, সচল হয়ে    ছুটেছে ওই জগৎ-জয়ে–
              নির্ভয়ে আজ দুই হাতে তার রাশ বাগাইনু রে॥

(রচনাকাল: 1911)

কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে (Kothin Loha Kothin Ghume) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Gabar Moto Hoy Ni Kono Gan (গাবার মতো হয় নি কোনো গান) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) গাবার মতো হয় নি কোনো গান (Gabar Moto Hoy Ni Kono Gan)

গাবার মতো হয় নি কোনো গান,
দেবার মতো হয় নি কিছু দান।
মনে যে হয় সবি রইল বাকি
তোমায় শুধু দিয়ে এলেম ফাঁকি,
কবে হবে জীবন পূর্ণ করে
এই জীবনের পূজা অবসান।

আর-সকলের সেবা করি যত
প্রাণপণে দিই অর্ঘ্য ভরি ভরি।
সত্য মিথ্যা সাজিয়ে দিই যে কত
দীন বলিয়া পাছে ধরা পড়ি।
তোমার কাছে গোপন কিছু নাই,
তোমার পূজায় সাহস এত তাই,
যা আছে তাই পায়ের কাছে আনি
অনাবৃত দরিদ্র এই প্রাণ।

৭ শ্রাবণ, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

গাবার মতো হয় নি কোনো গান (Gabar Moto Hoy Ni Kono Gan) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Make Amar Porena Mone (মাকে আমার পড়ে না মনে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) মাকে আমার পড়ে না মনে (Make Amar Porena Mone)

মাকে আমার পড়ে না মনে।

          শুধু কখন খেলতে গিয়ে

                   হঠাৎ অকারণে

একটা কী সুর গুনগুনিয়ে

          কানে আমার বাজে,

মায়ের কথা মিলায় যেন

          আমার খেলার মাঝে।

মা বুঝি গান গাইত, আমার

          দোলনা ঠেলে ঠেলে;

মা গিয়েছে, যেতে যেতে

          গানটি গেছে ফেলে।

মাকে আমার পড়ে না মনে।

          শুধু যখন আশ্বিনেতে

                   ভোরে শিউলিবনে

শিশির-ভেজা হাওয়া বেয়ে

          ফুলের গন্ধ আসে,

তখন কেন মায়ের কথা

          আমার মনে ভাসে?

কবে বুঝি আনত মা সেই

          ফুলের সাজি বয়ে,

পুজোর গন্ধ আসে যে তাই

          মায়ের গন্ধ হয়ে।

মাকে আমার পড়ে না মনে।

          শুধু যখন বসি গিয়ে

                   শোবার ঘরের কোণে;

জানলা থেকে তাকাই দূরে

          নীল আকাশের দিকে

মনে হয়, মা আমার পানে

          চাইছে অনিমিখে।

কোলের 'পরে ধরে কবে

          দেখত আমায় চেয়ে,

সেই চাউনি রেখে গেছে

          সারা আকাশ ছেয়ে।

  ৯ আশ্বিন, ১৩২৮

মাকে আমার পড়ে না মনে (Make Amar Porena Mone) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ogo Amar Ei Jiboner Shesh Poripurnota (ওগো আমার এই জীবনের শেষ পরিপূর্ণতা) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ওগো আমার এই জীবনের শেষ পরিপূর্ণতা (Ogo Amar Ei Jiboner Shesh Poripurnota)

ওগো আমার এই জীবনের শেষ পরিপূর্ণতা,
মরণ, আমার মরণ, তুমি কও আমারে কথা।
সারা জনম তোমার লাগি
প্রতিদিন যে আছি জাগি,
তোমার তরে বহে বেড়াই
দুঃখসুখের ব্যথা।
মরণ, আমার মরণ, তুমি
কও আমারে কথা।

যা পেয়েছি, যা হয়েছি
যা-কিছু মোর আশা।
না জেনে ধায় তোমার পানে
সকল ভালোবাসা।
মিলন হবে তোমার সাথে,
একটি শুভ দৃষ্টিপাতে,
জীবনবধূ হবে তোমার
নিত্য অনুগতা;
মরণ, আমার মরণ, তুমি
কও আমারে কথা।

বরণমালা গাঁথা আছে,
আমার চিত্তমাঝে,
কবে নীরব হাস্যমুখে
আসবে বরের সাজে।
সেদিন আমার রবে না ঘর,
কেই-বা আপন, কেই-বা অপর,
বিজন রাতে পতির সাথে
মিলবে পতিব্রতা।
মরণ, আমার মরণ, তুমি
কও আমারে কথা।

শিলাইদহ, ২৬ আষাঢ়, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

ওগো আমার এই জীবনের শেষ পরিপূর্ণতা (Ogo Amar Ei Jiboner Shesh Poripurnota) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ke Bole Sob Fele Zabi (কে বলে সব ফেলে যাবি) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কে বলে সব ফেলে যাবি (Ke Bole Sob Fele Zabi)

কে বলে সব ফেলে যাবি
মরণ হাতে ধরবে যবে।
জীবনে তুই যা নিয়েছিস
মরণে সব নিতে হবে।
এই ভরা ভাণ্ডারে এসে
শূন্য কি তুই যাবি শেষে।
নেবার মতো যা আছে তোর
ভালো করে নেই তুই তবে।

আবর্জনার অনেক বোঝা
জমিয়েছিস যে নিরবধি,
বেঁচে যাবি, যাবার বেলা
ক্ষয় করে সব যাস রে যদি।
এসেছি এই পৃথিবীতে,
হেথায় হবে সেজে নিতে,
রাজার বেশে চল্‌ রে হেসে
মৃত্যুপারের সে উৎসবে।

শিলাইদহ, ২৫ আষাঢ়, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

কে বলে সব ফেলে যাবি (Ke Bole Sob Fele Zabi) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ogo Mouno Na Jodi Kou (ওগো মৌন, না যদি কও) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ওগো মৌন, না যদি কও (Ogo Mouno Na Jodi Kou)

ওগো মৌন, না যদি কও
না-ই কহিলে কথা।
বক্ষ ভরি বইব আমি
তোমার নীরবতা।
স্তব্ধ হয়ে রইব পড়ে,
রজনী রয় যেমন করে
জ্বালিয়ে তারা নিমেষহারা
ধৈর্যে অবনতা।

হবে হবে প্রভাত হবে
আঁধার যাবে কেটে।
তোমার বাণী সোনার ধারা
পড়বে আকাশ ফেটে।
তখন আমার পাখির বাসায়
জাগবে কি গান তোমার ভাষায়।
তোমার তানে ফোটাবে ফুল
আমার বনলতা?

তিনধরিয়া, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

ওগো মৌন, না যদি কও (Ogo Mouno Na Jodi Kou) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Insulted (অপমানিত) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অপমানিত (Insulted)

হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান!
মানুষের অধিকারে   বঞ্চিত করেছ যারে,
সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান ।।

মানুষের পরশেরে প্রতিদিন ঠেকাইয়া দূরে
ঘৃণা করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে ।
বিধাতার রুদ্ররোষে   দুর্ভিক্ষের দ্বারে বসে
ভাগ করে খেতে হবে সকলের সাথে অন্নপান ।
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান ।।

তোমার আসন হতে যেথায় তাদের দিলে ঠেলে
সেথায় শক্তিরে তব নির্বাসন দিলে অবহেলে ।
চরণে দলিত হয়ে   ধুলায় সে যায় বয়ে
সে নিম্নে নেমে এসো, নহিলে নাহি রে পরিত্রাণ ।
অপমানে হতে হবে আজি তোরে সবার সমান ।

যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে,
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে ।
অজ্ঞানের অন্ধকারে   আড়ালে ঢাকিছ যারে
তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান ।
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান ।।

শতেক শতাব্দী ধরে নামে শিরে অসম্মানভার,
মানুষের নারায়ণে তবুও কর না নমস্কার।
তবু নত করি আঁখি   দেখিবারে পাও না কি
নেমেছে ধুলার তলে হীন পতিতের ভগবান,
অপমানে হতে হবে সেথা তোরে সবার সমান ।।

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে –
অভিশাপ আঁকি দিল তোমার জাতির অহংকারে।
সবারে না যদি ডাকো,   এখনো সরিয়া থাকো,
আপনারে বেঁধে রাখো  চৌদিকে জড়ায়ে অভিমান —
মৃত্যু-মাঝে হবে তবে চিতাভস্মে সবার সমান ।।

অপমানিত (Insulted) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।