Rabindranath Tagore Poems ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী, এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত জনপ্রিয় কবিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। Rabindranath Tagore short biography with Rabindranath Tagore poems are given below.

rabindranath-tagore
উৎস: উইকিপিডিয়া

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ই মে, ১৮৬১ সালে, (১২৬৮ বঙ্গাব্দে, ২৫শে বৈশাখ), কলকাতার এক জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতায় ৭ই আগস্ট, ১৯৪১ সালে, (১৩৪৮ বঙ্গাব্দে, ২২শে শ্রাবণ), পৈত্রিক বাসভবনেই তিনি পরলোক গমন করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর ছদ্মনাম ছিল ভানুসিংহ ঠাকুর (ভণিতা)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে জনপ্রিয় বাঙালি কবি,ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার,প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বলে মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে বাংলা সাহিত্যে কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।

বিস্তারিত ...
আট বছর বয়স থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা তাঁর ‘অভিলাষ‘ কবিতাটি প্রকাশিত হয়।

কবির-এর লেখা উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি১৯১০ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ-এর সং অফারিংস (Song Offerings) কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এতে গীতাঞ্জলি ও সমসাময়িক আরও কিছু কিছু কাব্যগ্রন্থের কবিতা রবীন্দ্রনাথ নিজে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন।

১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য, তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।

কবির যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২টি খন্ড রবীন্দ্ররচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি খন্ড “কবিতা ও গান”, “নাটক ও প্রহসন”, “গল্প ও উপন্যাস” এবং “প্রবন্ধ” বিভাগে বিন্যস্ত।

তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস-এর নাম “গোরা” এবং “ঘরে বাইরে” ইত্যাদি।

কবির অন্যতম শ্রেষ্ঠ-কীর্তি হল সংগীত। তার রচিত- জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে, এবং আমার সোনার বাংলা এই বাংলা গান দুটি ভারতবাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে পরিগণিত হয়।

আজও আমরা ২৫শে বৈশাখ দিনটিকে বিশ্বকবির জন্ম দিবস হিসাবে পালন করি।

কবিতা

Title

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর কবিতা সমূহ (Rabindranath Tagore Poems)

Kon Alote Praner Prodip (কোন্‌ আলোতে প্রাণের প্রদীপ) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কোন্‌ আলোতে প্রাণের প্রদীপ (Kon Alote Praner Prodip)

কোন্‌ আলোতে প্রাণের প্রদীপ
জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আস।
সাধক ওগো, প্রেমিক ওগো,
পাগল ওগো, ধরায় আস।

এই   অকুল সংসারে
দুঃখ-আঘাত তোমার প্রাণে বীণা ঝংকারে।
ঘোরবিপদ-মাঝে
কোন্‌ জননীর মুখের হাসি দেখিয়া হাস।

তুমি        কাহার সন্ধানে
সকল সুখে আগুন জ্বেলে বেড়াও কে জানে।
এমন        ব্যাকুল করে
কে তোমারে কাঁদায় যারে ভালোবাস।

তোমার     ভাবনা কিছু নাই–
কে যে তোমার সাথের সাথি ভাবি মনে তাই।
তুমি   মরণ ভুলে
কোন্‌ অনন্ত প্রাণসাগরে আনন্দে ভাস।

১৭ পৌষ, ১৩১৬
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

কোন্‌ আলোতে প্রাণের প্রদীপ (Kon Alote Praner Prodip) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bajre Tomar Baje Bashi (বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি (Bajre Tomar Baje Bashi)

বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি,
              সে কি সহজ গান।
       সেই সুরেতে জাগব আমি
              দাও মোরে সেই কান।
                                  ভুলব না আর সহজেতে,
                                  সেই প্রাণে মন উঠবে মেতে
                                  মৃত্যুমাঝে ঢাকা আছে
                                         যে অন্তহীন প্রাণ।

       সে ঝড় যেন সই আনন্দে
              চিত্তবীণার তারে
       সপ্ত সিন্ধু দশ দিগন্ত
              নাচাও যে ঝংকারে।
                                  আরাম হতে ছিন্ন ক'রে
                                  সেই গভীরে লও গো মোরে
                                  অশান্তির অন্তরে যেথায়
                                         শান্তি সুমহান।

( তিনধরিয়া, ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭)

বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি (Bajre Tomar Baje Bashi) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Jibon Jokhon Shukaye Jay (জীবন যখন শুকায়ে যায়) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) জীবন যখন শুকায়ে যায় (Jibon Jokhon Shukaye Jay)

জীবন যখন শুকায়ে যায়
করুণাধারায় এসো।
সকল মাধুরী লুকায়ে যায়,
গীতসুধারসে এসো।

কর্ম যখন প্রবল-আকার
গরজি উঠিয়া ঢাকে চারি ধার,
হৃদয়প্রান্তে হে নীরব নাথ,
শান্তচরণে এসো।

আপনারে যবে করিয়া কৃপণ
কোণে পড়ে থাকে দীনহীন মন,
দুয়ার খুলিয়া হে উদার নাথ,
রাজ-সমারোহে এসো।

বাসনা যখন বিপুল ধুলায়
অন্ধ করিয়া অবোধে ভুলায়
ওহে পবিত্র, ওহে অনিদ্র,
রুদ্র আলোকে এসো।

২৮ চৈত্র, ১৩১৬
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

জীবন যখন শুকায়ে যায় (Jibon Jokhon Shukaye Jay) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Onukabbo (অণুকাব্য) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অণুকাব্য (Onukabbo)

(১)
স্বপ্ন আমার জোনাকি ,
দীপ্ত প্রাণের মণিকা ,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা ॥
(২)
আমার লিখন ফুটে পথধারে
ক্ষণিক কালের ফুলে ,
চলিতে চলিতে দেখে যারা তারে
চলিতে চলিতে ভুলে ॥
(৩)
প্রজাপতি সেতো বরষ না গণে ,
নিমেষ গণিয়া বাঁচে ,
সময় তাহার যথেষ্ট তাই আছে ॥
(৪)
দুঃখের আগুন কোন্
জ্যোতির্ময় পথরেখা টানে
বেদনার পরপার পানে॥
(৫)
দেবমন্দির-আঙিনাতলে
         শিশুরা করেছে মেলা।
দেবতা ভোলেন পূজারি-দলে,
         দেখেন শিশুর খেলা॥
(৬)
আকাশ ধরারে বাহুতে বেড়িয়া রাখে,
তবুও আপনি অসীম সুদূরে থাকে॥
(৮)
দূর এসেছিল কাছে–
ফুরাইলে দিন, দূরে চলে গিয়ে আরো সে নিকটে আছে।
(৯)
দাঁড়ায়ে গিরি, শির
মেঘে তুলে,
দেখে না সরসীর
বিনতি।
অচল উদাসীর
পদমূলে
ব্যাকুল রূপসীর
মিনতি॥
(১০)
মেঘ সে বাষ্পগিরি,
গিরি সে বাষ্পমেঘ,
কালের স্বপ্নে যুগে যুগে ফিরি ফিরি
এ কিসের ভাবাবেগ॥
(১১)
দুই তীরে তার বিরহ ঘটায়ে
সমুদ্র করে দান
অতল প্রেমের অশ্রুজলের গান॥
(১২)
পর্বতমালা আকাশের পানে চাহিয়া না কহে কথা,
অগমের লাগি ওরা ধরণীর স্তম্ভিত ব্যাকুলতা॥
(১৩)
একদিন ফুল দিয়েছিলে , হায় ,
কাঁটা বিঁধে গেছে তার ।
তবু , সুন্দর , হাসিয়া তোমায়
করিনু নমস্কার ॥
(১৪)
হে বন্ধু , জেনো মোর ভালোবাসা ,
কোনো দায় নাহি তার —
আপনি সে পায় আপন পুরস্কার ॥
(১৫)
স্বল্প সেও স্বল্প নয়, বড়োকে ফেলে ছেয়ে।
দু-চারিজন অনেক বেশি বহুজনের চেয়ে॥
(১৬)
মেঘের দল বিলাপ করে
আঁধার হল দেখে ,
ভুলেছে বুঝি নিজেই তারা
সূর্য দিল ঢেকে ॥
(১৭)
অসীম আকাশ শূন্য প্রসারি রাখে,
হোথায় পৃথিবী মনে মনে তার
অমরার ছবি আঁকে॥
(১৮)
আকর্ষণগুণে প্রেম এক ক’রে তোলে।
শক্তি শুধু বেঁধে রাখে শিকলে শিকলে॥
(১৯)
মহাতরু বহে
বহু বরষের ভার।
যেন সে বিরাট
এক মুহূর্ত তার॥
(২০)
স্তব্ধ অতল শব্দবিহীন মহাসমুদ্রতলে
বিশ্ব ফেনার পুঞ্জ সদাই ভাঙিয়া জুড়িয়া চলে॥
(২১)
মোর কাগজের খেলার নৌকা
        ভেসে চলে যায় সোজা
বহিয়া আমার অকাজ দিনের
        অলস বেলার বোঝা॥
(২২)
শিশির রবিরে শুধু জানে
বিন্দুরূপে আপন বুকের মাঝখানে॥
(২৩)
আপন অসীম নিষ্ফলতার পাকে
মরু চিরদিন বন্দী হইয়া থাকে॥
(২৪)
সাগরের কানে জোয়ার-বেলায়
ধীরে কয় তটভূমি,
“তরঙ্গ তব যা বলিতে চায়
তাই লিখে দাও তুমি।’

সাগর ব্যাকুল ফেন-অক্ষরে
যতবার লেখে লেখা
চির-চঞ্চল অতৃপ্তিভরে
ততবার মোছে রেখা ॥
(২৫)
স্তব্ধ হয়ে কেন্দ্র আছে, না দেখা যায় তারে
চক্র যত নৃত্য করি ফিরিছে চারি ধারে ।।
(২৬)
জীবন-খাতার অনেক পাতাই
এমনিতরো শূন্য থাকে;
আপন মনের ধেয়ান দিয়ে
পূর্ণ করে লও না তাকে।
সেথায় তোমার গোপন কবি
রচুক আপন স্বর্গছবি,
পরশ করুক দৈববাণী
সেথায় তোমার কল্পনাকে॥
(২৭)
ভেবেছিনু গনি গনি লব সব তারা —
গনিতে গনিতে রাত হয়ে যায় সারা ,
বাছিতে বাছিতে কিছু না পাইনু বেছে ।
আজ বুঝিলাম , যদি না চাহিয়া চাই
তবেই তো একসাথে সব-কিছু পাই —
সিন্ধুরে তাকায়ে দেখো , মরিয়ো না সেঁচে ॥
(২৮)
আকাশ কভু পাতে না ফাঁদ
কাড়িয়ে নিতে চাঁদে,
বিনা বাঁধনে তাই তো চাঁদ,
নিজেরে নিজে বাঁধে।

{“এই লেখনগুলি সুরু হয়েছিল চীনে জাপানে। পাখায় কাগজে রুমালে কিছু লিখে দেবার জন্যে লোকের অনুরোধে এর উৎপত্তি। তারপরে স্বদেশে ও অন্য দেশেও তাগিদ পেয়েছি। এমনি করে এই টুকরো লেখাগুলি জমে উঠ্‌ল। এর প্রধান মূল্য হাতের অক্ষরে ব্যক্তিগত পরিচয়ের। সে পরিচয় কেবল অক্ষরে কেন, দ্রুতলিখিত ভাবের মধ্যেও ধরা পড়ে… অন্যমনস্কতায় কাটাকুটি ভুলচুক ঘটেছে। সে সব ত্রুটিতেও ব্যক্তিগত পরিচয়েরই আভাস রয়ে গেল॥ ”
—–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (হাঙ্গেরী, ১৯২৬)}

অণুকাব্য (Onukabbo) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Namta Yedin Ghucabe Nath (নামটা যেদিন ঘুচাবে, নাথ) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) নামটা যেদিন ঘুচাবে, নাথ (Namta Yedin Ghucabe Nath)

নামটা যেদিন ঘুচাবে, নাথ,
             বাঁচব সেদিন মুক্ত হয়ে-
আপনগড়া স্বপন হতে
              তোমার মধ্যে জনম লয়ে।
                    ঢেকে তোমার হাতের লেখা
                    কাটি নিজের নামের রেখা,
                    কতদিন আর কাটবে জীবন
                                  এমন ভীষণ আপদ বয়ে।

  সবার সজ্জা হরণ করে
                  আপনাকে সে সাজাতে চায়।
সকল সুরকে ছাপিয়ে দিয়ে
                    আপনাকে সে বাজাতে চায়।
                          আমার এ নাম যাক না চুকে,
                           তোমারি নাম নেব মুখে,
                           সবার সঙ্গে মিলব সেদিন
                                      বিনা-নামের পরিচয়ে।

( ২১ শ্রাবণ, ১৩১৭)

নামটা যেদিন ঘুচাবে, নাথ (Namta Yedin Ghucabe Nath) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Jibone Joto Puja Holo Na Sara (জীবনে যত পূজা হল না সারা) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) জীবনে যত পূজা হল না সারা (Jibone Joto Puja Holo Na Sara)

জীবনে যত পূজা
হল না সারা,
জানি হে জানি তাও
হয় নি হারা।
যে ফুল না ফুটিতে
ঝরেছে ধরণীতে,
যে নদী মরুপথে
হারালো ধারা,
জানি হে জানি তাও
হয় নি হারা।

জীবনে আজো যাহা
রয়েছে পিছে,
জানি হে জানি তাও
হয় নি মিছে।
আমার অনাগত
আমার অনাহত
তোমার বীণা-তারে
বাজিছে তারা–
জানি হে জানি তাও
হয় নি হারা।

২৩ শ্রাবণ, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

জীবনে যত পূজা হল না সারা (Jibone Joto Puja Holo Na Sara) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ekla Ami Bahir Holem (একলা আমি বাহির হলেম) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) একলা আমি বাহির হলেম (Ekla Ami Bahir Holem)

একলা আমি বাহির হলেম
তোমার অভিসারে,
সাথে সাথে কে চলে মোর
নীরব অন্ধকারে।
ছাড়াতে চাই অনেক করে
ঘুরে চলি, যাই যে সরে,
মনে করি আপদ গেছে,
আবার দেখি তারে।

ধরণী সে কাঁপিয়ে চলে–
বিষম চঞ্চলতা।
সকল কথার মধ্যে সে চায়
কইতে আপন কথা।
সে যে আমার আমি, প্রভু,
লজ্জা তাহার নাই যে কভু,
তারে নিয়ে কোন্‌ লাজে বা
যাব তোমার দ্বারে।

১৪ আষাঢ়, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

একলা আমি বাহির হলেম (Ekla Ami Bahir Holem) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Tumi Kemon Kore Gan Koro Je Guni (তুমি কেমন করে গান কর যে গুণী) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) তুমি কেমন করে গান কর যে গুণী (Tumi Kemon Kore Gan Koro Je Guni)

তুমি কেমন করে গান কর যে গুণী,
অবাক হয়ে শুনি, কেবল শুনি।
সুরের আলো ভুবন ফেলে ছেয়ে,
সুরের হাওয়া চলে গগন বেয়ে,
পাষাণ টুটে ব্যাকুল বেগে ধেয়ে,
বহিয়া যায় সুরের সুরধুনী।

মনে করি অমনি সুরে গাই,
কণ্ঠে আমার সুর খুঁজে না পাই।
কইতে কী চাই, কইতে কথা বাধে;
হার মেনে যে পরান আমার কাঁদে;
আমায় তুমি ফেলেছ কোন্‌ ফাঁদে
চৌদিকে মোর সুরের জাল বুনি!

১০ ভাদ্র- রাত্রি, ১৩১৬
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

তুমি কেমন করে গান কর যে গুণী (Tumi Kemon Kore Gan Koro Je Guni) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Barsayapon (বর্ষাযাপন) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বর্ষাযাপন (Barsayapon)

রাজধানী কলিকাতা; তেতালার ছাতে
       কাঠের কুঠরি এক ধারে;
আলো আসে পূর্ব দিকে প্রথম প্রভাতে,
       বায়ু আসে দক্ষিণের দ্বারে।

মেঝেতে বিছানা পাতা,      দুয়ারে রাখিয়া মাথা
           বাহিরে আঁখিরে দিই ছুটি,
সৌধ-ছাদ শত শত          ঢাকিয়া রহস্য কত
           আকাশেরে করিছে ভ্রূকুটি।
নিকটে জানালা-গায়        এক কোণে আলিসায়
           একটুকু সবুজের খেলা,
শিশু অশথের গাছ           আপন ছায়ার নাচ
           সারা দিন দেখিছে একেলা।
দিগন্তের চারি পাশে        আষাঢ় নামিয়া আসে,
           বর্ষা আসে হইয়া ঘোরালো,
সমস্ত আকাশজোড়া        গরজে ইন্দ্রের ঘোড়া
           চিকমিকে বিদ্যুতের আলো।
চারি দিকে অবিরল         ঝরঝর বৃষ্টিজল
          এই ছোটো প্রান্ত-ঘরটিরে
দেয় নির্বাসিত করি         দশ দিক অপহরি
          সমুদয় বিশ্বের বাহিরে।
বসে বসে সঙ্গীহীন         ভালো লাগে কিছুদিন
          পড়িবারে মেঘদূতকথা—
বাহিরে দিবস রাতি        বায়ু করে মাতামাতি
          বহিয়া বিফল ব্যাকুলতা;
বহুপূর্ব আষাঢ়ের           মেঘাচ্ছন্ন ভারতের
          নগ-নদী-নগরী বাহিয়া
কত শ্রুতিমধু নাম         কত দেশ কত গ্রাম
          দেখে যাই চাহিয়া চাহিয়া।
ভালো করে দোঁহে চিনি,  বিরহী ও বিরহিণী
          জগতের দু পারে দুজন—
প্রাণে প্রাণে পড়ে টান,    মাঝে মহা ব্যবধান,
          মনে মনে কল্পনা সৃজন।
যক্ষবধূ গৃহকোণে         ফুল নিয়ে দিন গণে
          দেখে শুনে ফিরে আসি চলি।
বর্ষা আসে ঘন রোলে,   যত্নে টেনে লই কোলে
          গোবিন্দদাসের পদাবলী।
সুর করে বার বার       পড়ি বর্ষা-অভিসার—
          অন্ধকার যমুনার তীর,
নিশীথে নবীনা রাধা     নাহি মানে কোনো বাধা,
          খুঁজিতেছে নিকুঞ্জ-কুটির।
অনুক্ষণ দর দর         বারি ঝরে ঝর ঝর,
          তাহে অতি দূরতর বন;
ঘরে ঘরে রুদ্ধ দ্বার,    সঙ্গে কেহ নাহি আর
          শুধু এক কিশোর মদন।

আষাঢ় হতেছে শেষ,   মিশায়ে মল্লার দেশ
         রচি 'ভরা বাদরের' সুর।
খুলিয়া প্রথম পাতা,    গীতগোবিন্দের গাথা
         গাহি 'মেঘে অম্বর মেদুর'।
স্তব্ধ রাত্রি দ্বিপ্রহরে     ঝুপ্‌ ঝুপ্‌ বৃষ্টি পড়ে—
         শুয়ে শুয়ে সুখ-অনিদ্রায়
‘রজনী শাঙন ঘন ঘন  দেয়া গরজন’
         সেই গান মনে পড়ে যায়।
‘পালঙ্কে শয়ান রঙ্গে   বিগলিত চীর অঙ্গে’
         মনসুখে নিদ্রায় মগন—
সেই ছবি জাগে মনে  পুরাতন বৃন্দাবনে
         রাধিকার নির্জন স্বপন।
মৃদু মৃদু বহে শ্বাস,    অধরে লাগিছে হাস,
         কেঁপে উঠে মুদিত পলক;
বাহুতে মাথাটি থুয়ে  একাকিনী আছে শুয়ে,
         গৃহকোণে ম্লান দীপালোক।
গিরিশিরে মেঘ ডাকে,   বৃষ্টি ঝরে তরুশাখে
         দাদুরী ডাকিছে সারারাতি—
হেনকালে কী না ঘটে,   এ সময়ে আসে বটে
         একা ঘরে স্বপনের সাথি।
মরি মরি স্বপ্নশেষে     পুলকিত রসাবেশে
         যখন সে জাগিল একাকী,
দেখিল বিজন ঘরে      দীপ নিবু নিবু করে
         প্রহরী প্রহর গেল হাঁকি।
বাড়িছে বৃষ্টির বেগ,     থেকে থেকে ডাকে মেঘ,
         ঝিল্লিরব পৃথিবী ব্যাপিয়া,
সেই ঘনঘোরা নিশি     স্বপ্নে জাগরণে মিশি
         না জানি কেমন করে হিয়া।

লয়ে পুঁথি দু-চারিটি     নেড়ে চেড়ে ইটি সিটি
         এইমতো কাটে দিনরাত।
তার পরে টানি লই      বিদেশী কাব্যের বই,
         উলটি পালটি দেখি পাত—
কোথা রে বর্ষার ছায়া    অন্ধকার মেঘমায়া
         ঝরঝর ধ্বনি অহরহ,
কোথায় সে কর্মহীন      একান্তে আপনে-লীন
         জীবনের নিগূঢ় বিরহ!
বর্ষার সমান সুরে         অন্তর বাহির পুরে
         সংগীতের মুষলধারায়,
পরানের বহুদূর           কূলে কূলে ভরপুর,
         বিদেশী কাব্যে সে কোথা হায়!
তখন সে পুঁথি ফেলি,    দুয়ারে আসন মেলি
         বসি গিয়ে আপনার মনে,
কিছু করিবার নাই        চেয়ে চেয়ে ভাবি তাই
         দীর্ঘ দিন কাটিবে কেমনে।
মাথাটি করিয়া নিচু       বসে বসে রচি কিছু
         বহু যত্নে সারাদিন ধরে—
ইচ্ছা করে অবিরত        আপনার মনোমত
         গল্প লিখি একেকটি করে।
ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা
         নিতান্তই সহজ সরল,
সহস্র বিস্মৃতিরাশি         প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
         তারি দু-চারিটি অশ্রুজল।
নাহি বর্ণনার ছটা          ঘটনার ঘনঘটা,
         নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে       সাঙ্গ করি’ মনে হবে
         শেষ হয়ে হইল না শেষ।
জগতের শত শত         অসমাপ্ত কথা যত,
         অকালের বিচ্ছিন্ন মুকুল,
অজ্ঞাত জীবনগুলা,       অখ্যাত কীর্তির ধুলা,
         কত ভাব, কত ভয় ভুল—
সংসারের দশদিশি        ঝরিতেছে অহর্নিশি
         ঝরঝর বরষার মতো—
ক্ষণ-অশ্রু ক্ষণ-হাসি      পড়িতেছে রাশি রাশি
         শব্দ তার শুনি অবিরত।
সেই-সব হেলাফেলা,     নিমেষের লীলাখেলা
         চারি দিকে করি স্তূপাকার,
তাই দিয়ে করি সৃষ্টি      একটি বিস্মৃতিবৃষ্টি
         জীবনের শ্রাবণনিশার।

বর্ষাযাপন (Barsayapon) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ekti Ekti Kore Tomar (একটি একটি করে তোমার) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) একটি একটি করে তোমার (Ekti Ekti Kore Tomar)

একটি একটি করে তোমার
পুরানো তার খোলো,
সেতারখানি নূতন বেঁধে তোলো।
ভেঙে গেছে দিনের মেলা,
বসবে সভা সন্ধ্যাবেলা,
শেষের সুর যে বাজাবে তার
আসার সময় হল–
সেতারখানি নূতন বেঁধে তোলো।

দুয়ার তোমার খুলে দাও গো
আঁধার আকাশ-‘পরে,
সপ্তলোকের নীরবতা
আসুক তোমার ঘরে।
এতদিন যে গেয়েছ গান
আজকে তারি হোক অবসান,
এ যন্ত্র যে তোমার যন্ত্র
সেই কথাটাই ভোলো।
সেতারখানি নূতন বেঁধে তোলো।

তিনধরিয়া, ৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

একটি একটি করে তোমার (Ekti Ekti Kore Tomar) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।