Rabindranath Tagore Poems ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী, এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত জনপ্রিয় কবিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। Rabindranath Tagore short biography with Rabindranath Tagore poems are given below.

rabindranath-tagore
উৎস: উইকিপিডিয়া

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ই মে, ১৮৬১ সালে, (১২৬৮ বঙ্গাব্দে, ২৫শে বৈশাখ), কলকাতার এক জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতায় ৭ই আগস্ট, ১৯৪১ সালে, (১৩৪৮ বঙ্গাব্দে, ২২শে শ্রাবণ), পৈত্রিক বাসভবনেই তিনি পরলোক গমন করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর ছদ্মনাম ছিল ভানুসিংহ ঠাকুর (ভণিতা)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে জনপ্রিয় বাঙালি কবি,ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার,প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বলে মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে বাংলা সাহিত্যে কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।

বিস্তারিত ...
আট বছর বয়স থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা তাঁর ‘অভিলাষ‘ কবিতাটি প্রকাশিত হয়।

কবির-এর লেখা উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি১৯১০ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ-এর সং অফারিংস (Song Offerings) কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এতে গীতাঞ্জলি ও সমসাময়িক আরও কিছু কিছু কাব্যগ্রন্থের কবিতা রবীন্দ্রনাথ নিজে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন।

১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য, তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।

কবির যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২টি খন্ড রবীন্দ্ররচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি খন্ড “কবিতা ও গান”, “নাটক ও প্রহসন”, “গল্প ও উপন্যাস” এবং “প্রবন্ধ” বিভাগে বিন্যস্ত।

তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস-এর নাম “গোরা” এবং “ঘরে বাইরে” ইত্যাদি।

কবির অন্যতম শ্রেষ্ঠ-কীর্তি হল সংগীত। তার রচিত- জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে, এবং আমার সোনার বাংলা এই বাংলা গান দুটি ভারতবাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে পরিগণিত হয়।

আজও আমরা ২৫শে বৈশাখ দিনটিকে বিশ্বকবির জন্ম দিবস হিসাবে পালন করি।

কবিতা

Title

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর কবিতা সমূহ (Rabindranath Tagore Poems)

Prithibi (পৃথিবী) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পৃথিবী (Prithibi)

আজ আমার প্রণতি গ্রহন করো, পৃথিবী,
শেষ নমস্কারে অবনত দিনাবসানের বেদিতলে।।
মহাবীর্যবতী তুমি বীরভোগ্যা,
বিপরীত তুমি ললিতে কঠোরে,
মিশ্রিত তোমার প্রকৃতি পুরুষে নারীতে,
মানুষের জীবন দোলায়িত কর তুমি দু:সহ দ্বন্দ্বে।
ডান হাতে পূর্ণ কর সুধা,
বাম হাতে চুর্ণ কর পাত্র,
তোমার লীলাক্ষেত্র মুখরিত কর অট্টবিদ্রূপে;
দু:সাধ্য কর বীরের জীবনকে মহত্ জীবনে যার অধিকার।
শ্রেয়কে কর দুরমূল্য, কৃপা কর না কৃপাপাত্রকে।
তোমার গাছে গাছে প্রচ্ছন্ন রেখেছো প্রতি মুহূর্তের সংগ্রাম,
ফলে শস্যে তার জয়মাল্য হয় সার্থক।
জলে স্থলে তোমার ক্ষমাহীন রণরঙ্গভূমি-
সেখানে মৃত্যুর মুখে ঘোষিত হয় বিজয়ী প্রাণের জয়বার্তা।
তোমার নির্দয়তার ভিত্তিতে উঠেছে সভ্যতার জয়তোরণ
ত্রুটি ঘটলে তার পূর্ণ মূল্য শোধ হয় বিনাশে।।
তোমার ইতিহাসের আদিপর্বে দানবের ছিল দুর্জয়-
সে পুরুষ, সে বর্বর, সে মূঢ়।
তার অঙ্গুলি ছিল স্থুল, কলাকৌশলবর্জিত;
গদা-হাতে মুষল-হাতে লন্ডভন্ড করেছে সে সমুদ্র পর্বত;
অগ্নিতে বাষ্পেতে দু:স্বপ্ন ঘুলিয়ে তুলেছে আকাশে।
জড়রাজত্বে সে ছিল একাধিপতি,
প্রাণের ‘পরে ছিল তার অন্ধ ঈর্ষা।।
দেবতা এলেন পরযুগে, মন্ত্র পড়লেন দানবদমনের-
জড়ের ঔদ্ধত্য হল অভিভূত;
জীবধাত্রী বসলেন শ্যামল আস্তরণ পেতে।
উষা দাঁড়ালেন পূর্বাচলের শিখরচূড়ায়,
পশ্চিমসাগরতীরে সন্ধ্যা নামলেন মাথায় নিয়ে শান্তিঘট।।
নম্র হল শিকলে-বাঁধা দানব,
তবু সেই আদিম বর্বর আঁকড়ে রইল তোমার ইতিহাস।
ব্যবস্থার মধ্যে সে হঠাৎ আনে বিশৃঙ্খলতা-
তোমার স্বভাবের কালো গর্ত থেকে
হঠাৎ বেরিয়ে আসে এঁকেবেঁকে!
তোমার নাড়ীতে লেগে আছে তার পাগলামি।
দেবতার মন্ত্র উঠেছে আকাশে বাতাসে অরণ্যে
দিনে রাত্রে উদাত্ত অনুদাত্ত মন্দ্রস্বরে।
তবু তোমার বক্ষের পাতাল থেকে আধপোষা নাগদানব
ক্ষণে ক্ষণে উঠেছে ফণা তুলে-
তার তাড়নায় তোমার আপন জীবকে করেছ আঘাত,
ছারখার করছ আপন সৃষ্টিকে।।
শুভে-অশুভে স্থাপিত তোমার পাদপীঠে
তোমার প্রচন্ড সুন্দর মহিমার উদ্দেশে
আজ রেখে যাব আমার ক্ষতচিহ্নলাঞ্জিত জীবনের প্রণতি।
বিরাট প্রাণের, বিরাট মৃত্যুর, গুপ্তসঞ্চার তোমার যে মাটির তলায়
তাকে আজ স্পর্শ করি- উপলব্ধি করি সর্বদেহে মনে।
অগণিত যুগযুগান্তের অসংখ্য মানুষের লুপ্তদেহ পুঞ্জিত তার ধুলায়।
আমিও রেখে যাব কয়-মুষ্টি ধূলি, আমার সমস্ত সুখদু:খের শেষ পরিণাম-
রেখে যাব এই নামগ্রাসী আকারগ্রাসী সকল-পরিচয়-গ্রাসী
নি:শব্দ ধূলিরাশির মধ্যে।।
অচল অবরোধে আবদ্ধ পৃথিবী, মেঘলোকে উধাও পৃথিবী,
গিরিশৃঙ্গমালার মহৎ মৌনে ধ্যাননিমগ্না পৃথিবী,
নীলাম্বুরাশির অতন্দ্র তরঙ্গে কলমন্দ্রমুখরা পৃথিবী,
অন্নপূর্ণা তুমি সুন্দরী, অন্নরিক্তাতুমি ভীষণা।
একদিকে আপক্বধান্যভারনম্র তোমার শস্যত্রে-
সেখানে প্রসন্ন প্রভাতসূর্য প্রতিদিন মুছে নেয় শিশিরবিন্দু
কিরণ-উত্তরীয় বুলিয়ে দিয়ে;
অস্তগামী সূর্য শ্যামশস্যহিল্লোলে রেখে যায় অকথিত এই বাণী
”আমি আনন্দিত”।
অন্যদিকে তোমার জলহীন ফলহীন আতঙ্কপান্ডুর মরুক্ষেত্র
পরিকীর্ণ পশুকঙ্কালের মধ্যে মরীচিকার প্রেতনৃত্য।
বৈশাখে দেখেছি বিদ্যুত্চঞ্চুবিদ্ধ দিগন্তকে ছিনিয়ে নিতে এল
কালো শ্যেনপাখির মতো তোমার ঝড়-
সমস্ত আকাশটা ডেকে উঠল যেন কেশর-ফোলা সিংহ;
তার লেজের ঝাপটে ডালপালা আলুথালু করে
হতাশ বনস্পতি ধুলায় পড়ল উবুড় হয়ে;
হাওয়ার মুখে ছুটল ভাঙা কুঁড়ের চাল
শিকল-ছেঁড়া কয়েদি-ডাকাতের মতো।
আবার ফাল্গুনে দেখেছি তোমার আতপ্ত দক্ষিণে হাওয়া
ছড়িয়ে দিয়েছে বিরহমিলনের স্বগতপ্রলাপ আম্রমুকুলের গন্ধে;
চাঁদের পেয়ালা ছাপিয়ে দিয়ে উপচিয়ে পড়েছে স্বর্গীয় মদের ফেনা;
বনের মর্মরধ্বনি বাতাসের স্পর্ধায় ধৈর্য হারিয়েছে
অকস্মাৎ কল্লোলোচ্ছ্বাসে।।
স্নিগ্ধ তুমি, হিংস্র তুমি, পুরাতনী তুমি নিত্যনবীনা,
অনাদি সৃষ্টির যজ্ঞহুতাগ্নি থেকে বেরিয়ে এসেছিলে
সংখ্যাগণনার-অতীত প্রত্যুষে;
তোমার চক্রতীর্থের পথে পথে ছড়িয়ে এসেছে
শত শত ভাঙা ইতিহাসের অর্থলুপ্ত অবশেষ;
বিনা বেদনায় বিছিয়ে এসেছে তোমার বর্জিত সৃষ্টি
অগণ্য বিস্মৃতির স্তরে স্তরে।।
জীবপালিনী, আমাদের পুষেছ
তোমার খন্ডকালের ছোট ছোট পিঞ্জরে,
তারই মধ্যে সব খেলার সীমা, সব কীর্তির অবসান।।
আজ আমি কোন মোহ নিয়ে আসি নি তোমার সম্মুখে;
এতদিন যে দিনরাত্রির মালা গেঁথেছি বসে বসে
তার জন্য অমরতার দাবি করব না তোমার দ্বারে।
তোমার অযুত নিযুত বৎসর সূর্যপ্রদক্ষিণের পথে
যে বিপুল নিমেষগুলি উম্মীলিত নিমীলিতহতে থাকে
তারই এক ক্ষুদ্র অংশে কোন-একটি আসনের
সত্যমুল্য যদি দিয়ে থাকি,
জীবনের কোন-একটি ফলবান্ খন্ডকে
যদি জয় করে থাকি পরম দু:খে
তবে দিয়ো তোমার মাটির ফোঁটার একটি তিলক আমার কপালে;
সে চিহ্ন যাবে মিলিয়ে
যে রাত্রে সকল চিহ্ন পরম অচিনের মধ্যে যায় মিশে।।
হে উদাসীন পৃথিবী,
আমাকে সম্পূর্ণ ভোলবার আগে
তোমার নির্মম পদপ্রান্তে
আজ রেখে যাই আমার প্রণতি।।

পৃথিবী (Prithibi) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Chinno Kore Lou He More (ছিন্ন করে লও হে মোরে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ছিন্ন করে লও হে মোরে (Chinno Kore Lou He More)

ছিন্ন করে লও হে মোরে
আর বিলম্ব নয়
ধুলায় পাছে ঝরে পড়ি
এই জাগে মোর ভয়।
এ ফুল তোমার মালার মাঝে
ঠাঁই পাবে কি, জানি না যে,
তবু তোমার আঘাতটি তার
ভাগ্যে যেন রয়।
ছিন্ন করো ছিন্ন করো
আর বিলম্ব নয়।

কখন যে দিন ফুরিয়ে যাবে,
আসবে আঁধার করে,
কখন তোমার পূজার বেলা
কাটবে অগোচরে।
যেটুকু এর রঙ ধরেছে,
গন্ধে সুধায় বুক ভরেছে,
তোমার সেবায় লও সেটুকু
থাকতে সুসময়।
ছিন্ন করো ছিন্ন করো
আর বিলম্ব নয়।

৩ আষাঢ়, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

ছিন্ন করে লও হে মোরে (Chinno Kore Lou He More) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Suprabhat (সুপ্রভাত) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সুপ্রভাত (Suprabhat)

রুদ্র , তোমার দারুণ দীপ্তি
এসেছে দুয়ার ভেদিয়া ;
বক্ষে বেজেছে বিদ্যুৎবাণ
স্বপ্নের জাল ছেদিয়া ।
ভাবিতেছিলাম উঠি কি না উঠি ,
অন্ধ তামস গেছে কিনা ছুটি ,
রুদ্ধ নয়ন মেলি কি না মেলি
তন্দ্রা-জড়িমা মাজিয়া ।
এমন সময়ে , ঈশান , তোমার
বিষাণ উঠেছে বাজিয়া ।
বাজে রে গরজি বাজে রে
দগ্ধ মেঘের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে
দীপ্ত গগন-মাঝে রে ।
চমকি জাগিয়া পূর্বভুবন
রক্তবদন লাজে রে ।

ভৈরব , তুমি কী বেশে এসেছ ,
ললাটে ফুঁসিছে নাগিনী ,
রুদ্র-বীণায় এই কি বাজিল
সুপ্রভাতের রাগিণী ?
মুগ্ধ কোকিল কই ডাকে ডালে ,
কই ফোটে ফুল বনের আড়ালে ?
বহুকাল পরে হঠাৎ যেন রে
অমানিশা গেল ফাটিয়া ;
তোমার খড়্‌গ আঁধার-মহিষে
দুখানা করিল কাটিয়া ।
ব্যথায় ভুবন ভরিছে ,
ঝর ঝর করি রক্ত-আলোক
গগনে-গগনে ঝরিছে ,
কেহ-বা জাগিয়া উঠিছে কাঁপিয়া
কেহ-বা স্বপনে ডরিছে ।

তোমার শ্মশানকিঙ্করদল ,
দীর্ঘ নিশায় ভুখারি ।
শুষ্ক অধর লেহিয়া লেহিয়া
উঠিছে ফুকারি ফুকারি ।
অতিথি তারা যে আমাদের ঘরে
করিছে নৃত্য প্রাঙ্গণ- ‘ পরে ,
খোলো খোলো দ্বার ওগো গৃহস্থ ,
থেকো না থেকো না লুকায়ে —
যার যাহা আছে আনো বহি আনো ,
সব দিতে হবে চুকায়ে ।
ঘুমায়ো না আর কেহ রে ।
হৃদয়পিণ্ড ছিন্ন করিয়া
ভাণ্ড ভরিয়া দেহো রে ।
ওরে দীনপ্রাণ , কী মোহের লাগি
রেখেছিস মিছে স্নেহ রে ।

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ,
‘ ভয় নাই , ওরে ভয় নাই —
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই । ‘
হে রুদ্র , তব সংগীত আমি
কেমনে গাহিব কহি দাও স্বামী —
মরণনৃত্যে ছন্দ মিলায়ে
হৃদয়ডমরু বাজাব ,
ভীষণ দুঃখে ডালি ভরে লয়ে
তোমার অর্ঘ্য সাজাব ।
এসেছে প্রভাত এসেছে ।
তিমিরান্তক শিবশঙ্কর
কী অট্টহাস হেসেছে!
যে জাগিল তার চিত্ত আজিকে
ভীম আনন্দে ভেসেছে ।

জীবন সঁপিয়া , জীবনেশ্বর ,
পেতে হবে তব পরিচয় ;
তোমার ডঙ্কা হবে যে বাজাতে
সকল শঙ্কা করি জয় ।
ভালোই হয়েছে ঝঞ্ঝার বায়ে
প্রলয়ের জটা পড়েছে ছড়ায়ে ,
ভালোই হয়েছে প্রভাত এসেছে
মেঘের সিংহবাহনে —
মিলনযঞ্ জে অগ্নি জ্বালাবে
বজ্রশিখার দাহনে ।
তিমির রাত্রি পোহায়ে
মহাসম্পদ তোমারে লভিব
সব সম্পদ খোয়ায়ে —
মৃত্যুর লব অমৃত করিয়া
তোমার চরণে ছোঁয়ায়ে ।

('পূরবী' কাব্যগ্রন্থ)

সুপ্রভাত (Suprabhat) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Jatri Aami Ore (যাত্রী আমি ওরে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) যাত্রী আমি ওরে (Jatri Aami Ore)

যাত্রী আমি ওরে।
পারবে না কেউ রাখতে আমায় ধরে।
              দুঃখসুখের বাঁধন সবই মিছে,
              বাঁধা এ-ঘর রইবে কোথায় পিছে,
বিষয়বোঝা টানে আমায় নীচে,
                    ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে যাবে পড়ে।

                    যাত্রী আমি ওরে।
চলতে পথে গান গাহি প্রাণ ভরে।
              দেহ-দুর্গে খুলবে সকল দ্বার,
              ছিন্ন হবে শিকল বাসনার,
              ভালোমন্দ কাটিয়ে হব পার
                     চলতে রব লোকে লোকান্তরে।

                    
               যাত্রী আমি ওরে।
যা-কিছু ভার যাবে সকাল সরে।
              আকাশ আমায় ডাকে দূরের পানে
              ভাষাবিহীন অজানিতের গানে,
              সকাল-সাঁঝে পরান মম টানে
                    কাহার বাঁশি এমন গভীর স্বরে।

                    যাত্রী আমি ওরে–
              বাহির হলেম না জানি কোন্‌ ভোরে।
                    তখন কোথাও গায় নি কোনো পাখি,                  
             কী জানি রাত কতই ছিল বাকি
             নিমেষহারা শুধুই একটি আঁখি
                           জেগেছিল অন্ধকারের 'পরে।

              যাত্রী আমি ওরে।
       কোন্‌ দিনান্তে পৌঁছব কোন্‌ ঘরে।
              কোন্‌ তারকা দীপ জ্বালে সেইখানে,
              বাতাস কাঁদে কোন্‌ কুসুমের ঘ্রাণে,
              কে গো সেথায় স্নিগ্ধ দু-নয়ানে
                    অনাদিকাল চাহে আমার তরে।

(গোরাই নদী, ২৬ আষাঢ়, ১৩১৭)

যাত্রী আমি ওরে (Jatri Aami Ore) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Gaye Amar Pulok Lage (গায়ে আমার পুলক লাগে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) গায়ে আমার পুলক লাগে (Gaye Amar Pulok Lage)

গায়ে আমার পুলক লাগে,
চোখে ঘনায় ঘোর,
হৃদয়ে মোর কে বেঁধেছে
রাঙা রাখীর ডোর।
আজিকে এই আকাশতলে
জলে স্থলে ফুলে ফলে
কেমন করে মনোহরণ
ছড়ালে মন মোর।

কেমন খেলা হল আমার
আজি তোমার সনে।
পেয়েছি কি খুঁজে বেড়াই
ভেবে না পাই মনে।
আনন্দ আজ কিসের ছলে
কাঁদিতে চায় নয়নজলে,
বিরহ আজ মধুর হয়ে
করেছে প্রাণ ভোর।

শিলাইদহ, ২৫ আশ্বিন, ১৩১৬
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

গায়ে আমার পুলক লাগে (Gaye Amar Pulok Lage) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Vogno Mandir (ভগ্ন মন্দির) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ভগ্ন মন্দির (Vogno Mandir)

ভাঙা দেউলের দেবতা,
তব বন্দনা রচিতে ছিন্ন বীণার তন্ত্রী বিরতা –
সন্ধ্যাগগনে ঘোষে না শঙ্খ তোমার আরতিবারতা
তব মন্দির স্থিরগম্ভীর ভাঙা দেউলের দেবতা।

        তব জনহীন ভবনে
থেকে থেকে আসে ব্যাকুল গন্ধ নববসন্তপবনে
যে ফুল রচে নি পূজার অর্ঘ, রাখে নি ও রাঙা চরনে
সে ফুল ফোটার আসে সমাচার জনহীন ভাঙা ভবনে।

        পূজাহীন তব পূজারী
কোথা সারাদিন ফিরে উদাসীন কার প্রসাদের ভিখারি
গোধূলিবেলায় বনের ছায়ায় চির-উপবাস-ভূখারি!
ভাঙা মন্দিরে আসে ফিরে ফিরে পূজাহীন তব পূজারি।

        ভাঙা দেউলের দেবতা,
কত উৎসব হইল নীরব, কত পূজানিশা বিগতা
কত বিজয়ায় নবীন প্রতিমা কত যায় কত কব তা,
শুধু চিরদিন থাকে সেবাহীন ভাঙা দেউলের দেবতা।

ভগ্ন মন্দির (Vogno Mandir) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Chirojonomer Bedona (চিরজনমের বেদনা) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) চিরজনমের বেদনা (Chirojonomer Bedona)

চিরজনমের বেদনা,
ওহে চিরজীবনের সাধনা।
                    তোমার আগুন উঠুক হে জ্বলে,
                    কৃপা করিয়ো না দুর্বল ব’লে,
                    যত তাপ পাই সহিবারে চাই,
                           পুড়ে হোক ছাই বাসনা।
অমোঘ যে ডাক সেই ডাক দাও
              আর দেরি কেন মিছে।
যা আছে বাঁধন বক্ষ জড়ায়ে
              ছিঁড়ে প’ড়ে যাক পিছে।
গরজি গরজি শঙ্খ তোমার
বাজিয়া বাজিয়া উঠুক এবার,
গর্ব টুটিয়া নিদ্রা ছুটিয়া
              জাগুক তীব্র চেতনা।

  কলিকাতা, ২৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

চিরজনমের বেদনা (Chirojonomer Bedona) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Doya Diye Hobe Go Mor Jibon Dhute (দয়া দিয়ে হবে গো মোর জীবন ধুতে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) দয়া দিয়ে হবে গো মোর জীবন ধুতে (Doya Diye Hobe Go Mor Jibon Dhute)

দয়া দিয়ে হবে গো মোর
জীবন ধুতে–
নইলে কি আর পারব তোমার
চরণ ছুঁতে।
তোমায় দিতে পূজার ডালি
বেড়িয়ে পড়ে সকল কালি,
পরান আমার পারি নে তাই
পায়ে থুতে।

এতদিন তো ছিল না মোর
কোনো ব্যথা,
সর্ব অঙ্গে মাখা ছিল
মলিনতা।
আজ ওই শুভ্র কোলের তরে
ব্যাকুল হৃদয় কেঁদে মরে
দিয়ো না গো, দিয়ো না আর
ধুলায় শুতে।

কলিকাতা, ২৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

দয়া দিয়ে হবে গো মোর জীবন ধুতে (Doya Diye Hobe Go Mor Jibon Dhute) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Dako Dako Dako Amare (ডাকো ডাকো ডাকো আমারে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ডাকো ডাকো ডাকো আমারে (Dako Dako Dako Amare)

ডাকো ডাকো ডাকো আমারে,
তোমার স্নিগ্ধ শীতল গভীর
পবিত্র আঁধারে।
তুচ্ছ দিনের ক্লান্তি গ্লানি
দিতেছে জীবন ধুলাতে টানি,
সারাক্ষণের বাক্যমনের
সহস্র বিকারে।

মুক্ত করো হে মুক্ত করো আমারে,
তোমার নিবিড় নীরব উদার
অনন্ত আঁধারে।
নীরব রাত্রে হারাইয়া বাক্‌
বাহির আমার বাহিরে মিশাক,
দেখা দিক মম অন্তরতম
অখণ্ড আকারে।

৭ আষাঢ়, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

ডাকো ডাকো ডাকো আমারে (Dako Dako Dako Amare) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Jogot Jure Udar Sure (জগৎ জুড়ে উদার সুরে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) জগৎ জুড়ে উদার সুরে (Jogot Jure Udar Sure)

জগৎ জুড়ে উদার সুরে
আনন্দগান বাজে,
সে গান কবে গভীর রবে
বাজিবে হিয়া-মাঝে।
বাতাস জল আকাশ আলো
সবারে কবে বাসিব ভালো,
হৃদয়সভা জুড়িয়া তারা
বসিবে নানা সাজে।

নয়নদুটি মেলিলে কবে
পরান হবে খুশি,
যে পথ দিয়া চলিয়া যাব
সবারে যাব তুষি।
রয়েছ তুমি, এ কথা কবে
জীবন-মাঝে সহজ হবে,
আপনি কবে তোমারি নাম
ধ্বনিবে সব কাজে।

বোলপুর, আষাঢ়, ১৩১৬
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

জগৎ জুড়ে উদার সুরে (Jogot Jure Udar Sure) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।