Rabindranath Tagore Poems ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী, এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত জনপ্রিয় কবিতা গুলো নিচে দেওয়া হলো। Rabindranath Tagore short biography with Rabindranath Tagore poems are given below.

rabindranath-tagore
উৎস: উইকিপিডিয়া

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ই মে, ১৮৬১ সালে, (১২৬৮ বঙ্গাব্দে, ২৫শে বৈশাখ), কলকাতার এক জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতায় ৭ই আগস্ট, ১৯৪১ সালে, (১৩৪৮ বঙ্গাব্দে, ২২শে শ্রাবণ), পৈত্রিক বাসভবনেই তিনি পরলোক গমন করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর ছদ্মনাম ছিল ভানুসিংহ ঠাকুর (ভণিতা)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে জনপ্রিয় বাঙালি কবি,ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার,প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক বলে মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে বাংলা সাহিত্যে কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।

বিস্তারিত ...
আট বছর বয়স থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা তাঁর ‘অভিলাষ‘ কবিতাটি প্রকাশিত হয়।

কবির-এর লেখা উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি১৯১০ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ-এর সং অফারিংস (Song Offerings) কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এতে গীতাঞ্জলি ও সমসাময়িক আরও কিছু কিছু কাব্যগ্রন্থের কবিতা রবীন্দ্রনাথ নিজে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন।

১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য, তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।

কবির যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২টি খন্ড রবীন্দ্ররচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি খন্ড “কবিতা ও গান”, “নাটক ও প্রহসন”, “গল্প ও উপন্যাস” এবং “প্রবন্ধ” বিভাগে বিন্যস্ত।

তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস-এর নাম “গোরা” এবং “ঘরে বাইরে” ইত্যাদি।

কবির অন্যতম শ্রেষ্ঠ-কীর্তি হল সংগীত। তার রচিত- জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে, এবং আমার সোনার বাংলা এই বাংলা গান দুটি ভারতবাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে পরিগণিত হয়।

আজও আমরা ২৫শে বৈশাখ দিনটিকে বিশ্বকবির জন্ম দিবস হিসাবে পালন করি।

কবিতা

Title

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর কবিতা সমূহ (Rabindranath Tagore Poems)

Noibedyo (নৈবেদ্য) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) নৈবেদ্য (Noibedyo)

তোমারে দিই নি সুখ, মুক্তির নৈবেদ্য গেনু রাখি

রজনীর শুভ্র অবসানে ; কিছু আর নাহি বাকি,

নাইকো প্রার্থনা, নাই প্রতি মুহূর্তের দৈন্যরাশি,

নাই অভিমান, নাই দীনকান্না, নাই গর্বহাসি,

নাই পিছে ফিরে দেখা। শুধু সে মুক্তির ডালিখানি

ভরিয়া দিলাম আজি আমার মহৎ মৃত্যু আনি।

নৈবেদ্য (Noibedyo) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Tobo Singhasoner Ason Hote (তব সিংহাসনের আসন হতে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) তব সিংহাসনের আসন হতে (Tobo Singhasoner Ason Hote)

তব   সিংহাসনের আসন হতে
এলে তুমি নেমে,
মোরবিজন ঘরের দ্বারের কাছে
দাঁড়ালে নাথ থেমে।
একলা বসে আপন-মনে
গাইতেছিলেম গান,
তোমার কানে গেল সে সুর
এলে তুমি নেমে,
মোর   বিজন ঘরের দ্বারের কাছে
দাঁড়ালে নাথ থেমে।

তোমার সভায় কত-না গান
কতই আছেন গুণী;
গুণহীনের গানখানি আজ
বাজল তোমার প্রেমে।
লাগল বিশ্বতানের মাঝে
একটি করুণ সুর,
হাতে লয়ে বরণমালা
এলে তুমি নেমে,
মোর  বিজন ঘরের দ্বারের কাছে
দাঁড়ালে নাথ থেমে।

২৭ চৈত্র, ১৩১৬
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

তব সিংহাসনের আসন হতে (Tobo Singhasoner Ason Hote) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Amra Chash Kori Anande (আমরা চাষ করি আনন্দে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) আমরা চাষ করি আনন্দে (Amra Chash Kori Anande)

আমরা   চাষ করি আনন্দে।
          মাঠে মাঠে বেলা কাটে সকাল হতে সন্ধে॥
রৌদ্র ওঠে, বৃষ্টি পড়ে,   বাঁশের বনে পাতা নড়ে,
          বাতাস ওঠে ভরে ভরে চষা মাটির গন্ধে॥
সবুজ প্রাণের গানের লেখা   রেখায় রেখায় দেয় রে দেখা,
          মাতে রে কোন্‌ তরুণ কবি নৃত্যদোদুল ছন্দে।
ধানের শিষে পুলক ছোটে– সকল ধরা হেসে ওঠে
          অঘ্রানেরই সোনার রোদে, পূর্ণিমারই চন্দ্রে॥

(রচনাকাল: 1911)

আমরা চাষ করি আনন্দে (Amra Chash Kori Anande) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Jonmo O Moron (জন্ম ও মরণ) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) জন্ম ও মরণ (Jonmo O Moron)

সে তো সেদিনের কথা বাক্যহীন যবে
এসেছিনু প্রবাসীর মতো এই ভবে
বিনা কোন পরিচয়, রিক্ত শূন্য হাতে,
একমাত্র ক্রন্দন সম্বল লয়ে সাথে।
আজ সেথা কী করিয়া মানুষের প্রীতি
কণ্ঠ হতে টানি লয় যত মোর গীতি।
এ ভুবনে মোর চিত্তে অতি অল্প স্থান
নিয়েছ ভুবননাথ! সমস্ত এ প্রাণ
সংসারে করেছ পূর্ণ। পাদপ্রান্তে তব
প্রত্যহ যে ছন্দে-বাঁধা গীত নব নব
দিতেছি অঞ্জলী তাও তব পূজাশেষে
লবে সবে তোমা-সাথে মোরে ভালোবেসে,
এই আশাখানি মনে আছে অবিচ্ছেদে।
যে প্রবাসে রাখো সেথা প্রেমে রাখো বেঁধে।

নব নব প্রবাসেতে নব নব লোকে
বাধিবে এমনি প্রেমে। প্রেমের আলোকে
বিকিশিত হব আমি ভুবনে ভুবনে
নব নব পুস্পদলে। প্রেম-আকর্ষণে
যত গূঢ় মধু মোর অন্তরে বিলসে
উঠিবে অক্ষয় হয়ে নব নব রসে,
বাহিরে আসিবে ছুটি – অন্তহীন প্রাণে
নিখিল জগতে তব প্রেমের আহবানে
নব নব জীবনে গন্ধ যাব রেখে,
নব নব বিকাশের গন্ধ যাব এঁকে।
কে চাহে সংকীর্ণ অন্ধ অমরতাকূপে
এক ধরাতল-মাঝে শুধু এক রূপে
বাঁচিয়া থাকিতে! নব নব মৃত্যুপথে
তোমারে পূজিতে যাব জগতে জগতে।।

জন্ম ও মরণ (Jonmo O Moron) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Tara Tomar Name Bater Majhe (তারা তোমার নামে বাটের মাঝে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) তারা তোমার নামে বাটের মাঝে (Tara Tomar Name Bater Majhe)

তারা    তোমার নামে বাটের মাঝে
মাসুল লয় যে ধরি।
দেখি শেষে ঘাটে এসে
নাইকো পারের কড়ি।
তারা তোমার কাজের তানে
নাশ করে গো ধনে প্রাণে,
সামান্য যা আছে আমার
লয় তা অপহরি।

আজকে আমি চিনেছি সেই
ছদ্মবেশী-দলে।
তারাও আমায় চিনেছে হায়
শক্তিবিহীন ব’লে।
গোপন মূর্তি ছেড়েছে তাই,
লজ্জা শরম আর কিছু নাই,
দাঁড়িয়েছে আজ মাথা তুলে
পথ অবরোধ করি।

বোলপুর, ২৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

তারা তোমার নামে বাটের মাঝে (Tara Tomar Name Bater Majhe) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Swarga Hoite Biday (স্বর্গ হইতে বিদায়) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) স্বর্গ হইতে বিদায় (Swarga Hoite Biday)

ম্লান হয়ে এলো কণ্ঠে মন্দারমালিকা, হে মহেন্দ্র, নির্বাপিত জ্যোতির্ময় টিকা মলিন ললাটে।
পুণ্যবল হল ক্ষীণ, আজি মোর স্বর্গ হতে বিদায়ের দিন,
হে দেব, হে দেবীগণ। বর্ষ লক্ষশত যাপন করেছি হর্ষে দেবতার মতো দেবলোকে।
আজি শেষ বিচ্ছেদের ক্ষণে লেশমাত্র অশ্রুরেখা স্বর্গের নয়নে দেখে যাব এই আশা ছিল।
শোকহীন হৃদিহীন সুখস্বর্গভূমি, উদাসীন চেয়ে আছে। লক্ষ-লক্ষ বর্ষ তার
চক্ষের পলক নহে; অশ্বত্থশাখার প্রান্ত হতে খসি গেলে
জীর্ণতম পাতা যতটুকু বাজে তার, ততটুকু ব্যথা স্বর্গে নাহি লাগে,
যবে মোরা শত শত গৃহচ্যুত হতজ্যোতি নক্ষত্রের মতো মুহূর্তে
খসিয়া পড়ি দেবলোক হতে ধরিত্রীর অন্তহীন জন্মমৃত্যুস্রোতে।
সে বেদনা বাজিত যদ্যপি, বিরহের ছায়ারেখা দিত দেখা, তবে স্বরগের
চিরজ্যোতি ম্লান হত মর্তের মতন কোমল শিশিরবাষ্পে– নন্দনকানন
মর্মরিয়া উঠিত নিশ্বসি, মন্দাকিনী কূলে-কূলে গেয়ে যেত করুণ কাহিনী
কলকণ্ঠে, সন্ধ্যা আসি দিবা-অবসানে নির্জন প্রান্তর-পারে দিগন্তের পানে
চলে যেত উদাসিনী, নিস্তব্ধ নিশীথ ঝিল্লিমন্ত্রে শুনাইত বৈরাগ্যসংগীত
নক্ষত্রসভায়। মাঝে মাঝে সুরপুরে নৃত্যপরা মেনকার কনকনূপুরে
তালভঙ্গ হত। হেলি উর্বশীর স্তনে স্বর্ণবীণা থেকে থেকে যেন অন্যমনে
অকস্মাৎ ঝংকারিত কঠিন পীড়নে নিদারুণ করুণ মূর্ছনা। দিত দেখা
দেবতার অশ্রুহীন চোখে জলরেখা নিষ্কারণে। পতিপাশে বসি একাসনে
সহসা চাহিত শচী ইন্দ্রের নয়নে যেন খুঁজি পিপাসার বারি। ধরা হতে
মাঝে মাঝে উচ্ছ্বসি আসিত বায়ুস্রোতে ধরণীর সুদীর্ঘ নিশ্বাস– খসি ঝরি
পড়িত নন্দনবনে কুসুমমঞ্জরী।
থাকো স্বর্গ হাস্যমুখে, করো সুধাপান দেবগণ। স্বর্গ তোমাদেরি সুখস্থান–
মোরা পরবাসী। মর্তভূমি স্বর্গ নহে, সে যে মাতৃভূমি– তাই তার চক্ষে বহে
অশ্রুজলধারা, যদি দু দিনের পরে কেহ তারে ছেড়ে যায় দু দণ্ডের তরে।
যত ক্ষুদ্র, যত ক্ষীণ, যত অভাজন, যত পাপীতাপী, মেলি ব্যগ্র আলিঙ্গন
সবারে কোমল বক্ষে বাঁধিবারে চায়– ধূলিমাখা তনুস্পর্শে হৃদয় জুড়ায়
জননীর। স্বর্গে তব বহুক অমৃত, মর্তে থাক্‌ সুখে দুঃখে অনন্তমিশ্রিত
প্রেমধারা– অশ্রুজলে চিরশ্যাম করি ভূতলের স্বর্গখণ্ডগুলি।

                   হে অপ্সরী,
তোমার নয়নজ্যোতি প্রেমবেদনায় কভু না হউক ম্লান– লইনু বিদায়।
তুমি কারে কর না প্রার্থনা, কারো তরে নাহি শোক। ধরাতলে দীনতম ঘরে
যদি জন্মে প্রেয়সী আমার, নদীতীরে কোনো-এক গ্রামপ্রান্তে প্রচ্ছন্ন কুটিরে
অশ্বত্থছায়ায়, সে বালিকা বক্ষে তার রাখিবে সঞ্চয় করি সুধার ভাণ্ডার
আমারি লাগিয়া সযতনে। শিশুকালে নদীকূলে শিবমূর্তি গড়িয়া সকালে
আমারে মাগিয়া লবে বর। সন্ধ্যা হলে জ্বলন্ত প্রদীপখানি ভাসাইয়া জলে
শঙ্কিত কম্পিত বক্ষে চাহি একমনা করিবে সে আপনার সৌভাগ্যগণনা
একাকী দাঁড়ায়ে ঘাটে। একদা সুক্ষণে আসিবে আমার ঘরে সন্নত নয়নে
চন্দনচর্চিত ভালে রক্তপট্টাম্বরে, উৎসবের বাঁশরীসংগীতে। তার পরে
সুদিনে দুর্দিনে, কল্যাণকঙ্কণ করে, সীমন্তসীমায় মঙ্গলসিন্দূরবিন্দু,
গৃহলক্ষ্মী দুঃখে সুখে, পূর্ণিমার ইন্দু সংসারের সমুদ্রশিয়রে। দেবগণ,
মাঝে মাঝে এই স্বর্গ হইবে স্মরণ দূরস্বপ্নসম, যবে কোনো অর্ধরাতে
সহসা হেরিব জাগি নির্মল শয্যাতে পড়েছে চন্দ্রের আলো, নিদ্রিতা প্রেয়সী
লুণ্ঠিত শিথিল বাহু, পড়িয়াছে খসি গ্রন্থি শরমের– মৃদু সোহাগচুম্বনে
সচকিতে জাগি উঠি গাঢ় আলিঙ্গনে লতাইবে বক্ষে মোর– দক্ষিণ অনিল
আনিবে ফুলের গন্ধ, জাগ্রত কোকিল গাহিবে সুদূর শাখে।

                 অয়ি দীনহীনা,
অশ্রু-আঁখি দুঃখাতুর জননী মলিনা,
অয়ি মর্ত্যভূমি। আজি বহুদিন পরে কাঁদিয়া উঠেছে মোর চিত্ত তোর তরে।
যেমনি বিদায়দুঃখে শুষ্ক দুই চোখ অশ্রুতে পুরিল, অমনি এ স্বর্গলোক
অলস কল্পনাপ্রায় কোথায় মিলালো ছায়াচ্ছবি। তব নীলাকাশ, তব আলো,
তব জনপূর্ণ লোকালয়, সিন্ধুতীরে সুদীর্ঘ বালুকাতট, নীল গিরিশিরে
শুভ্র হিমরেখা, তরুশ্রেণীর মাঝারে নিঃশব্দ অরুণোদয়, শূন্য নদীপারে
অবনতমুখী সন্ধ্যা– বিন্দু-অশ্রুজলে যত প্রতিবিম্ব যেন দর্পণের তলে
পড়েছে অসিয়া।

               হে জননী পুত্রহারা,
শেষ বিচ্ছেদের দিনে যে শোকাশ্রুধারা চক্ষু হতে ঝরি পড়ি তব মাতৃস্তন
করেছিল অভিষিক্ত, আজি এতক্ষণ,
সে অশ্রু শুকায়ে গেছে। তবু জানি মনে যখনি ফিরিব পুন তব নিকেতনে
তখনি দুখানি বাহু ধরিবে আমায়, বাজিবে মঙ্গলশঙ্খ, স্নেহের ছায়ায়
দুঃখে-সুখে-ভয়ে-ভরা প্রেমের সংসারে তব গেহে, তব পুত্রকন্যার মাঝারে
আমারে লইবে চিরপরিচিতসম–তার পরদিন হতে শিয়রেতে মম
সারাক্ষণ জাগি রবে কম্পমান প্রাণে, শঙ্কিত অন্তরে, ঊর্ধ্বে দেবতার পানে
মেলিয়া করুণ দৃষ্টি, চিন্তিত সদাই যাহারে পেয়েছি তারে কখন হারাই।

(  ২৪ অগ্রহায়ণ, ১৩০২)

স্বর্গ হইতে বিদায় (Swarga Hoite Biday) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Biday Shesr Kabita (বিদায় শেষের কবিতা থেকে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বিদায় শেষের কবিতা থেকে (Biday Shesr Kabita)

কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও।
তারি রথ নিত্যই উধাও
জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন,
চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষফাটা তারার ক্রন্দন।
                 ওগো বন্ধু,
সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেরি তার জাল
তুলে নিল দ্রুতরথে
      দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে
         তোমা হতে বহু দূরে।
মনে হয়, অজস্র মৃত্যুরে
পার হয়ে আসিলাম
আজি নবপ্রভাতের শিখরচূড়ায়–
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
             আমার পুরানো নাম।
ফিরিবার পথ নাহি;
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়।
                         হে বন্ধু, বিদায়।

কোনোদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে বসন্তবাতাসে
অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,
ঝরা বকুলের কান্না ব্যথিবে আকাশ,
সেই ক্ষণে খুঁজে দেখো–কিছু মোর পিছে রহিল সে
তোমার প্রাণের প্রান্তে; বিস্মৃতিপ্রদোষে হয়তো দিবে সে জ্যোতি,
হয়তো ধরিবে কভু নাম-হারা স্বপ্নের মুরতি।
তবু সে তো স্বপ্ন নয়,
সব-চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয়,
                 সে আমার প্রেম।

তারে আমি রাখিয়া এলেম
অপরিবর্তন অর্ঘ্য তোমার উদ্দেশে।
পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে
কালের যাত্রায়।  হে বন্ধু, বিদায়।

তোমার হয় নি কোনো ক্ষতি
মর্তের মৃত্তিকা মোর, তাই দিয়ে অমৃতমুরতি
যদি সৃষ্টি করে থাক, তাহারি আরতি
             হোক তব সন্ধ্যাবেলা,
                 পূজার সে খেলা
ব্যাঘাত পাবে না মোর প্রত্যহের ম্লান স্পর্শ লেগে;
             তৃষার্ত আবেগ-বেগে
ভ্রষ্ট নাহি হবে তার কোনো ফুল নৈবেদ্যের থালে।
             তোমার মানস-ভোজে সযত্নে সাজালে
      যে ভাবরসের পাত্র বাণীর তৃষায়,
             তার সাথে দিব না মিশায়ে
যা মোর ধূলির ধন, যা মোর চক্ষের জলে ভিজে।

আজো তুমি নিজে হয়তো-বা করিবে রচন
মোর স্মৃতিটুকু দিয়ে স্বপ্নাবিষ্ট তোমার বচন।
ভার তার না রহিবে, না রহিবে দায়।
                         হে বন্ধু, বিদায়।

মোর লাগি করিয়ো না শোক,
আমার রয়েছে কর্ম, আমার রয়েছে বিশ্বলোক।
             মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই–
শূন্যেরে করিব পূর্ণ, এই ব্রত বহিব সদাই।
উৎকণ্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে
             সেই ধন্য করিবে আমাকে।
শুক্লপক্ষ হতে আনি
রজনীগন্ধার বৃন্তখানি
   যে পারে সাজাতে
অর্ঘ্যথালা  কৃষ্ণপক্ষ রাতে,
যে আমারে দেখিবারে পায়
                 অসীম ক্ষমায়
ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি,
এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।

তোমারে যা দিয়েছিনু তার
পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার।
হেথা মোর তিলে তিলে দান,
করুণ মুহূর্তগুলি গণ্ডূষ ভরিয়া করে পান
হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম।
                 ওগো তুমি নিরুপম,
                       হে ঐশ্বর্যবান,
তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান–
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
                       হে বন্ধু, বিদায়।

বিদায় শেষের কবিতা থেকে (Biday Shesr Kabita) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Tomar Prem Je Boite Pari Emon Sadhyo Nai (তোমার প্রেম যে বইতে পারি এমন সাধ্য নাই) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) তোমার প্রেম যে বইতে পারি এমন সাধ্য নাই (Tomar Prem Je Boite Pari Emon Sadhyo Nai)

তোমার প্রেম যে বইতে পারি
এমন সাধ্য নাই।
এ সংসারে তোমার আমার
মাঝখানেতে তাই
কৃপা করে রেখেছ  নাথ
অনেক ব্যবধান–
দুঃখসুখের অনেক বেড়া
ধনজনমান।

আড়াল থেকে ক্ষণে ক্ষণে
আভাসে দাও দেখা–
কালো মেঘের ফাঁকে ফাঁকে
রবির মৃদু রেখা।
শক্তি যারে দাও বহিতে
অসীম প্রেমের ভার
একেবারে সকল পর্দা
ঘুচায়ে দাও তার।

না রাখ তার ঘরের আড়াল
না রাখ তার ধন,
পথে এনে নিঃশেষে তায়
কর অকিঞ্চন।
না থাকে তার মান অপমান,
লজ্জা শরম ভয়,
একলা তুমি সমস্ত তার
বিশ্বভুবনময়।

এমন করে মুখোমুখি
সামনে তোমার থাকা,
কেবলমাত্র তোমাতে প্রাণ
পূর্ণ করে রাখা,
এ দয়া যে পেয়েছে তার
লোভের সীমা নাই–
সকল লোভে সে সরিয়ে ফেলে
তোমায় দিতে ঠাঁই।

তিনধরিয়া, ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

তোমার প্রেম যে বইতে পারি এমন সাধ্য নাই (Tomar Prem Je Boite Pari Emon Sadhyo Nai) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Eka Ami Firbo Na Ar (একা আমি ফিরব না আর) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) একা আমি ফিরব না আর (Eka Ami Firbo Na Ar)

একা আমি ফিরব না আর
এমন করে–
নিজের মনে কোণে কোণে
মোহের ঘোরে।

তোমায় একলা বাহুর বাঁধন দিয়ে
ছোটো করে ঘিরতে গিয়ে
আপনাকে যে বাঁধি কেবল
আপন ডোরে।

যখন আমি পাব তোমায়
নিখিলমাঝে
সেইখনে হৃদয় পাব
হৃদয়রাজে।
এই   চিত্ত আমার বৃন্ত কেবল
তারি ‘পরে বিশ্বকমল;
তারি ‘পরে পূর্ণ প্রকাশ
দেখাও মোরে।

২ আষাঢ়, ১৩১৭
(গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)

একা আমি ফিরব না আর (Eka Ami Firbo Na Ar) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Sokhi Bhabona Kahare Bole (সখী,ভাবনা কাহারে বলে) ~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সখী,ভাবনা কাহারে বলে (Sokhi Bhabona Kahare Bole)

সখী,    ভাবনা কাহারে বলে।
সখী,    যাতনা কাহারে বলে ।

        তোমরা যে বলো দিবস-রজনী    ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—
        সখী,    ভালোবাসা কারে কয়!  সে কি   কেবলই যাতনাময় ।
        সে কি   কেবলই চোখের জল?   সে কি   কেবলই দুখের শ্বাস ?
        লোকে তবে করে   কী সুখেরই তরে   এমন দুখের আশ ।

        আমার চোখে তো সকলই শোভন,
        সকলই নবীন, সকলই বিমল,    সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন,
       বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— সকলই আমার মতো ।
        তারা  কেবলই হাসে, কেবলই গায়,   হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়—
        না জানে বেদন, না জানে রোদন,   না জানে সাধের যাতনা যত ।
        ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে,   জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়,
        হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে   আকাশের তারা তেয়াগে কায় ।
        আমার মতন সুখী কে আছে।   আয় সখী, আয় আমার কাছে—
        সুখী হৃদয়ের সুখের গান   শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ ।
        প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল    একদিন নয় হাসিবি তোরা—
        একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া    সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা।।

("ভগ্নহৃদয়" গ্রন্থ থেকে)

সখী,ভাবনা কাহারে বলে (Sokhi Bhabona Kahare Bole) কবিতাটি ছাড়াও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।