Satyendranath Dutta Poems~ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর কবিতা

Chorkar Gaan (চরকার গান) ~ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta)

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) চরকার গান (Chorkar Gaan)

ভোমরায় গান গায় চরকায়, শোন ভাই!
খেই নাও, পাঁজা দাও, আমরাও গান গাই।
ঘর-বার করবার দরকার নেই আর,
মন দাও চরকায় আপনার আপনার!
চরকার ঘর্ঘর পড়শীর ঘর-ঘর।
ঘর-ঘর ক্ষীর-সর, -আপনায় নির্ভর!
পড়শীর কন্ঠে জাগল সাড়া,
দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া।

ঝর কায় ঝুর ঝুর ফুর ফুর বইছে!
চরকার বুলবুল কোন বোল কইছে?
কোন ধন দরকার চরকার আজ গো?
ঝিউড়ির খেই আর বউড়ির পাঁজ গো!
চরকার ঘর্ঘর পল্লীর ঘর-ঘর।
ঘর-ঘর ঘির দীপ, -আপনায় নির্ভর!
পল্লীর উল্লাস জাগল সাড়া,
দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

আর নয় আইটাই ঢিস-ঢিস দিন-ভর,
শোন বিশকর্মার বিস্ময়-মন্তর!
চরকার চর্যায় সন্তোষ মনটায়,
রোজগার রোজদিন ঘন্টায় ঘন্টায়!
চরকার ঘর্ঘর বস্তির ঘর-ঘর।
ঘর-ঘর মঙ্গল, -আপনায় নির্ভর!
বন্দর-পত্তন হঞ্জে সাড়া,
দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

চরকায় সম্পদ, চরকায় অন্ন,
বাংলার চরকায় ঝলকায় স্বর্ণ!
বাংলার মসলিন বোগদাদ রোম চীন
কাঞ্চন-তৌলেই কিনতেন একদিন।
চরকার ঘর্ঘর শ্রেষ্ঠীর ঘর-ঘর।
ঘর-ঘর সম্পদ, -আপনায় নির্ভর!
সুপ্তের রাজ্যে দৈবের সাড়া,
দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

চরকাই লজ্জার সজ্জার বস্ত্র।
চরকাই দৈনের সংসার-অস্ত্র।
চরকাই সন্তান চরকাই সম্মান।
চরকায় দুঃখীর দুঃখের শেষ ত্রাণ।
চরকার ঘর্ঘর বঙ্গের ঘর-ঘর।
ঘর-ঘর সমভ্রম, -আপনায় নির্ভর!
প্রত্যাশ ছাড়বার জাগল সাড়া,
দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

ফুরসুৎ সার্থক করবার ভেলকি!
উসখুস হাত! বিশকর্মার খেল কি!
তন্দ্রার হুদ্দোয় একলার দোকলা!
চরকাই একজাই পায়সার টোকলা।
চরকার ঘর্ঘর হিন্দের ঘর-ঘর।
ঘর-ঘর হিকমৎ, -আপনায় নির্ভর!
লাখ লাখ চিত্তে জাগল সাড়া,
দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

নিঃস্বের মূলধন রিক্তের সঞ্চয়,
বঙ্গের স্বস্তিক চরকার গাও জয়!
চরকায় দৌলত! চরকায় ইজ্জৎ!
চরকায় উজ্জ্বল লক্ষীর ইজ্জৎ!
চরকার ঘর্ঘর গৌড়ের ঘর-ঘর।
ঘর-ঘর গৌরব, -আপনায় নির্ভর!
গঙ্গায় মেঘনায় তিস্তায় সাড়া,
দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া!

চন্দ্রের চরকায় জ্যোৎস্নার সৃষ্টি!
সূর্যের কাটনায় কাঞ্চন বৃষ্টি!
ইন্দ্রের চরকায় মেঘ জল থান থান।
হিন্দের চরকায় ইজ্জৎ সম্মান!
চরকার দৌলত! ইজ্জৎ ঘর-ঘর।
ঘর-ঘর হিম্মৎ, -আপনায় নির্ভর!
গুজরাট-পাঞ্জাব-বাংলায় সাড়া,
দাঁড়া আপনার পায়ে দাঁড়া

চরকার গান (Chorkar Gaan) কবিতাটি ছাড়াও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Manush Jati (মানুষ জাতি) ~ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta)

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) মানুষ জাতি (Manush Jati)

জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে
সে জাতির নাম মানুষ জাতি;
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
একই রবি শশী মোদের সাথী।
শীতাতপ ক্ষুধা তৃষ্ণার জ্বালা
সবাই আমরা সমান বুঝি,
কচি কাঁচাগুলি ডাঁটো করে তুলি
বাঁচিবার তরে সমান যুঝি।
দোসর খুঁজি ও বাসর বাঁধি গো,
জলে ডুবি, বাঁচি পাইলে ডাঙ্গা,
কালো আর ধলো বাহিরে কেবল
ভিতরে সবারই সমান রাঙা।
বাহিরের ছোপ আঁচড়ে সে লোপ
ভিতরের রং পলকে ফোটে,
বামুন, শূদ্র, বৃহৎ, ক্ষুদ্র
কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে।…

বংশে বংশে নাহিক তফাত
বনেদি কে আর গর্-বনেদি,
দুনিয়ার সাথে গাঁথা বুনিয়াদ্
দুনিয়া সবারি জনম-বেদী।

মানুষ জাতি (Manush Jati) কবিতাটি ছাড়াও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Chompa (চম্পা) ~ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta)

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) চম্পা (Chompa)

আমারে ফুটিতে হ’লো বসন্তের অন্তিম নিশ্বাসে,
বিষণ্ণ যখন বিশ্ব নির্মম গ্রীষ্মের পদানত;
রুদ্র তপস্যার বনে আধ ত্রাসে আধেক উল্লাসে,
একাকী আসিতে হ’লো — সাহসিকা অপ্সরার মতো।
বনানী শোষণ-ক্লিষ্ট মর্মরি’ উঠিল এক বার,
বারেক বিমর্ষ কুঞ্জে শোনা গেল ক্লান্ত কুহু স্বর;
জন্ম-যবনিকা-প্রান্তে মেলি’ নব নেত্র সুকুমার
দেখিলাম জলস্থল, — শুন্য, শুষ্ক, বিহ্বল, জর্জর।

তবু এনু বাহিরিয়া, — বিশ্বাসের বৃন্তে বেপমান, –
চম্পা আমি, — খর তাপে আমি কভু ঝরিবো না মরি,
উগ্র মদ্য-সম রৌদ্র — যার তেজে বিশ্ব মুহ্যমান, –
বিধাতার আশির্বাদে আমি তা সহজে পান করি।

ধীরে এনু বাহিরিয়া, ঊষার আতপ্ত কর ধরি';
মূর্ছে দেহ, মোহে মন, — মুহুর্মুহু করি অনুভব!
সূর্যের বিভূতি তবু লাবণ্যে দিতেছ তনু ভরি';
দিনদেবে নমস্কার! আমি চম্পা! সূর্যের সৌরভ।

চম্পা (Chompa) কবিতাটি ছাড়াও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bhorai (ভোরাই) ~ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta)

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ভোরাই (Bhorai)

ভোর হল রে, ফর্সা হ’ল, দুল্ ল ঊষার ফুল-দোলা !
আন্ কো আলোয় যায় দেখা ওই পদ্মকলির হাই-তোলা !
জাগলো সাড়া নিদ্ মহলে, অ-থই নিথর পাথার-জলে–
আলপনা দ্যায় আল্ তো বাতাস,ভোরাই সুরে মন ভোলা !
ধানের ক্ষেতের সব্ জে কে আজ সোহাগ দিয়ে ছুপিয়েছে !
সেই সোহাগের একটু পরাগ টোপর-পানায় টুপিয়েছে !
আলোর মাঠের কোল ভরেছে, অপরাজিতার রং ধরেছে–
নীল-কাজলের কাজল-লতা আস্ মানে চোখ ডুবিয়ে যে |
কল্পনা আজ চলছে উড়ে হাল্ কা হাওয়ায় খেল্ খেলে !
পাপ্ ড়ি-ওজন পান্ সি কাদের সেই হাওয়াতেই পালপেলে !
মোতিয়া মেঘের চামর পিঁজে পায়রা ফেরে আলোয় ভিজে
পদ্মফুলের অঞ্জলি যে আকাশ-গাঙে যায় ঢেলে !
পূব্ গগনে থির নীলিমা ভুলিয়েছে মন ভুলিয়েছে !
পশ্চিমে মেঘ মেলছে জটা–সিংহ কেশর ফুলিয়েছে !
হাঁস চলেছে আকাশ-পথে, হাস্ ছে কারা পুষ্প-রথে,–
রামধনু-রং আঁচলা তাদের আলো-পাথার দুলিয়েছে !
শিশির-কণায় মানিক ঘনায়, দূর্বাদলে দীপ জ্বলে !
শীতল শিথিল শিউলী-বোটায় সুপ্ত শিশুর ঘুম টলে |
আলোর জোয়ার উঠছে বেড়ে গন্ধ-ফুলের স্বপন কেড়ে,
বন্ধ চোখের আগল ঠেলে রঙের ঝিলিক্ ঝল্ মলে !
নীলের বিথার নীলার পাথার দরাজ এ যে দিল্ খোলা !
আজ কি উচিত ডঙ্কা দিয়ে ঝাণ্ডা নিয়ে ঝড় তোলা ?
ফির্ ছে ফিঙে দুলিয়ে ফিতে; বোল ধরেছে বুল্ বুলিতে !
গুঞ্জনে আর কূজন-গীতে হর্ষে ভূবন হর্ বোলা !

ভোরাই (Bhorai) কবিতাটি ছাড়াও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Prothom Gali (প্রথম গালি) ~ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta)

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) প্রথম গালি (Prothom Gali)

বয়েস- আড়াই কি দুই
মনটি নির্মল জুই,
হালকা যেন হাওয়া
মেয়ে সে মুখ-চাওয়া
মায়ের কাছে কাছে
ছায়ার মত আছে
জানে না মা বিনা কিছুই৷
আর সে দিদি চেনে তার
দিদি সে সাথী খেলিবার,
দুটিতে পিঠোপিঠি
তবুও খিটিমিটি
হয় না বেশী বেশী
নাইক রেষারেষি
কলহ নাইক নিতুই৷
জগৎ মানে যেন,−তার−
মা, দিদি আপনি সে আর,
এ ছাড়া কিছুই নেই
চেনেনা কারুকেই,
অকথা কুকথার
ধারে না কোনো ধার
শেখেনি আজও ‘তুই’ ‘মুই’৷
একদা হ’ল দুটি বোনে
পুতুল নিয়ে কি কারণে
ঝগড়া কাড়াকাড়ি,
তখন দিয়ে আড়ি
হারিয়া কাদোঁ-কাদোঁ
হ’য়ে সে আধো আধো
কহিল ‘ডিডি!টুমি-টুই!’

প্রথম গালি (Prothom Gali) কবিতাটি ছাড়াও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Durer Palla (দূরের পাল্লা) ~ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta)

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) দূরের পাল্লা (Durer Palla)

ছিপখান তিন-দাঁড় –
তিনজন মাল্লা
চৌপর দিন-ভোর
দ্যায় দূর-পাল্লা!
         পাড়ময় ঝোপঝাড়
         জঙ্গল-জঞ্জাল,
         জলময় শৈবাল
         পান্নার টাঁকশাল |
কঞ্চির তীর-ঘর
ঐ-চর জাগছে,
বন-হাঁস ডিম তার
শ্যাওলায় ঢাকছে|
         চুপ চুপ – ওই ডুব
         দ্যায় পান্ কৌটি
         দ্যায় ডুব টুপ টুপ
         ঘোমটার বৌটি!
ঝকঝক কলসীর
বক্ বক্ শোন্ গো
ঘোমটার ফাঁক বয়
মন উন্মন গো|
         তিন-দাঁড় ছিপখান
         মন্থর যাচ্ছে,
         তিনজন মাল্লায়
         কোন গান গাচ্ছে?
রূপশালি ধান বুঝি
এইদেশে সৃষ্টি,
ধুপছায়া যার শাড়ী
তার হাসি মিষ্টি|
         মুখখানি মিষ্টিরে
         চোখদুটি ভোমরা
         ভাব-কদমের – ভরা
         রূপ দেখ তোমরা !
ময়নামতীর জুটি
ওর নামই টগরী,
ওর পায়ে ঢেউ ভেঙে
জল হোলো গোখরী!
         ডাক পাখী ওর লাগি'
         ডাক ডেকে হদ্দ,
         ওর তরে সোঁত-জলে
         ফুল ফোটে পদ্ম|
ওর তরে মন্থরে
নদ হেথা চলছে,
জলপিপি ওর মৃদু
বোল বুঝি বোলছে|
         দুইতীরে গ্রামগুলি
         ওর জয়ই গাইছে,
         গঞ্জে যে নৌকা সে
         ওর মুখই চাইছে|
আটকেছে যেই ডিঙা
চাইছে সে পর্শ,
সঙ্কটে শক্তি ও
সংসারে হর্ষ|
         পান বিনে ঠোঁট রাঙা
         চোখ কালো ভোমরা,
         রূপশালী-ধান-ভানা
         রূপ দেখ তোমরা

*        *        *        *
  
পান সুপারি! পান সুপারি!
এইখানেতে শঙ্কা ভারি,
পাঁচ পীরেরই শীর্ণি মেনে
চলরে টেনে বৈঠা হেনে;
বাঁক সমুখে, সামনে ঝুঁকে
বাঁয় বাঁচিয়ে ডাইনে রুখে
বুক দে টানো, বইটা হানো –
সাত সতেরো কোপ কোপানো|
হাড়-বেরুনো খেজুরগুলো
ডাইনী যেন ঝামর-চুলো
নাচতে ছিল সন্ধ্যাগমে
লোক দেখে কি থমকে গেল|
জমজমাটে জাঁকিয়ে ক্রমে
রাত্রি এল রাত্রি এল|
ঝাপসা আলোয় চরের ভিতে
ফিরছে কারা মাছের পাছে,
পীর বদরের কুদরতিতে
নৌকা বাঁধা হিজল-গাছে|

*        *        *        *
    
আর জোর দেড় ক্রোশ –
জোর দের ঘন্টা,
টান ভাই টান সব –
নেই উত্কণ্ঠা|
         চাপ চাপ শ্যাওলার
         দ্বীপ সব সার সার,
         বৈঠৈর ঘায়ে সেই
         দ্বীপ সব নড়ছে,
         ভিল্ ভিলে হাঁস তায়
         জল-গায় চড়ছে|
ওই মেঘ জমছে,
চল্ ভাই সমঝে,
গান গাও দাও শিশ,
বকশিশ! বকশিশ!
         খুব জোর ডুব-জল
         বয় স্রোত ঝিরঝির,
         নেই ঢেউ কল্লোল,
         নয় দুর নয় তীর|
নেই নেই শঙ্কা,
চল্ সব ফুর্তি,
বকশিশ টঙ্কা,
বকশিশ ফুর্তি|
         ঘোর-ঘোর সন্ধ্যায়,
         ঝাউ-গাছ দুলছে,
         ঢোল-কলমীর ফুল
         তন্দ্রায় ঢুলছে|
লকলক শর-বন
বক তায় মগ্ন,
চুপচাপ চারদিক –
সন্ধ্যার লগ্ন|
         চারদিক নিঃসাড়,
         ঘোর-ঘোর রাত্রি,
         ছিপ-খান তিন-দাঁড়,
         চারজন যাত্রি|

*        *        *        *
  
জড়ায় ঝাঁঝি দাঁড়ের মুখে
ঝউয়ের বীথি হাওয়ায় ঝুঁকে
ঝিমায় বুঝি ঝিঁঝিঁর গানে –
স্বপন পানে পরাণ টানে|
        তারায় ভরা আকাশ ওকি
        ভুলোয় পেয়ে ধূলোর পরে
        লুটিয়ে পল আচম্বিতে
        কুহক-মোহ-মন্ত্র-ভরে!

*        *        *        *
  
কেবল তারা! কেবল তারা!
শেষের শিরে মানিক পারা,
হিসাব নাহি সংখ্যা নাহি
কেবল তারা যেথায় চাহি|
        কোথায় এল নৌকাখানা
        তারার ঝড়ে হই রে কাণা,
        পথ ভুলে কি এই তিমিরে
        নৌকা চলে আকাশ চিরে!
জ্বলছে তারা! নিভছে তারা!
মন্দাকিনীর মন্দ সোঁতায়,
যাচ্ছে ভেসে যাচ্ছে কোথায়
জোনাক যেন পন্থা-হারা|
        তারায় আজি ঝামর হাওয়া-
        ঝামর আজি আঁধার রাতি,
        অগুনতি অফুরান তারা
        জ্বালায় যেন জোনাক-বাতি|
কালো নদীর দুই কিনারে
কল্পতরু কুঞ্জ কি রে?
ফুল ফুটেছে ভারে ভারে –
ফুল ফুটেছে মাণিক হীরে|
        বিনা হাওয়ায় ঝিলমিলিয়ে
        পাপড়ি মেলে মাণিক-মালা;
        বিনি নাড়ায় ফুল ঝরিছে
        ফুল পড়িছে জোনাক জ্বালা|
চোখে কেমন লগছে ধাঁধা –
লাগছে যেন কেমন পারা,
তারাগুলোই জোনাক হল
কিম্বা জোনাক হল তারা|
        নিথর জলে নিজের ছায়া
        দেখছে আকাশ ভরা তারায়,
        ছায়া-জোনাক আলিঙ্গিতে
        জলে জোনাক দিশে হারায়|
দিশে হারায় যায় ভেসে যায়
স্রোতের টানে কোন্ দেশে রে?
মরা গাঙ আর সুর-সরিত্
এক হয়ে যেথায় মেশে রে!
        কোথায় তারা ফুরিয়েছে, আর
        জোনাক কোথা হয় সুরু যে
        নেই কিছুরই ঠিক ঠিকানা
        চোখ যে আলা রতন উঁছে|
আলেয়াগুলো দপদপিয়ে
জ্বলছে নিবে, নিবছে জ্বলে',
উল্কোমুখী জিব মেলিয়ে
চাটছে বাতাশ আকাশ-কোলে!
        আলেয়া-হেন ডাক-পেয়াদা
        আলেয়া হতে ধায় জেয়াদা
        একলা ছোটে বন বাদাড়ে
        ল্যাম্পো-হাতে লকড়ি ঘাড়ে;
সাপ মানে না, ভাঘ জানে না,
ভূতগুলো তার সবাই চেনা,
ছুটছে চিঠি পত্র নিয়ে
রণরণিয়ে হনহনিয়ে|
        বাঁশের ঝোপে জাগছে সাড়া,
        কোল্-কুঁজো বাঁশ হচ্ছে খাড়া,
        জাগছে হাওয়া জলের ধারে,
        চাঁদ ওঠেনি আজ আঁধারে!
শুকতারাটি আজ নিশীথে
দিচ্ছে আলো পিচকিরিতে,
রাস্তা এঁকে সেই আলোতে
ছিপ চলেছে নিঝুম স্রোতে|
        ফিরছে হাওয়া গায় ফুঁ-দেওয়া,
        মাল্লা মাঝি পড়ছে থকে;
        রাঙা আলোর লোভ দেখিয়ে
        ধরছে কারা মাছগুলোকে!
চলছে তরী চলছে তরী –
আর কত পথ? আর ক'ঘড়ি?
এই যে ভিড়াই, ওই যে বাড়ী,
ওই যে অন্ধকারের কাঁড়ি –
        ওই বাঁধা-বট ওর পিছন্
        দেখছ আলো? ঐতো কুঠি
        ঐখানেতে পৌঁছে দিলেই
        রাতের মতন আজকে ছুটি|
ঝপ ঝপ তিনখান
দাঁড় জোর চলছে,
তিনজন মাল্লার
হাত সব জ্বলছে;
        গুরগুর মেঘ সব
        গায় মেঘ মল্লার,
        দূর-পাল্লার শেষ
        হাল্লাক্ মাল্লার!

দূরের পাল্লা (Durer Palla) কবিতাটি ছাড়াও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Fuler Foshol (ফুলের ফসল) ~ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta)

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ফুলের ফসল (Fuler Foshol)

জোটে যদি মোটে একটি পয়সা
খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি’
দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার
ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!

বাজারে বিকায় ফল তণ্ডুল
সে শুধু মিটায় দেহের ক্ষুধা,
হৃদয়-প্রাণের ক্ষুধা নাশে ফুল
দুনিয়ার মাঝে সেই তো সুধা!

ফুলের ফসল (Fuler Foshol) কবিতাটি ছাড়াও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Palkir Gaan (পাল্কীর গান) ~ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta)

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পাল্কীর গান (Palkir Gaan)

পাল্কী চলে!
পাল্কী চলে!
গগন-তলে
আগুন জ্বলে!

স্তব্ধ গাঁয়ে
আদুল গায়ে
যাচ্ছে কারা
রৌদ্রে সারা

ময়রামুদি
চক্ষু মুদি’
পাটায় ব’সে
ঢুলছে ক’ষে।

দুধের চাঁছি
শুষছে মাছি,
উড়ছে কতক
ভনভনিয়ে।
আসছে কা’রা
হন্ হনিয়ে?
হাটের শেষে
রুক্ষ বেশে
ঠিক দু’পুরে
ধায় হাটুরে!

কুকুর গুলো
শুঁকছে ধূলো,
ধুঁকছে কেহ
ক্লান্ত দেহ।

গঙ্গা ফড়িং
লাফিয়ে চলে;
বাঁধের দিকে
সূর্য্য ঢলে।

পাল্কী চলে রে,
অঙ্গ টলেরে!
আর দেরি কত?
আর কত দূর?

পাল্কীর গান (Palkir Gaan) কবিতাটি ছাড়াও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Kono Dhormodhojjer Proti (কোনো ধর্মধ্বজের প্রতি) ~ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta)

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কোনো ধর্মধ্বজের প্রতি (Kono Dhormodhojjer Proti)

প্রেমের ধর্ম করছ প্রচার কে গো তুমি সবুট লাথি নিয়ে,
ডায়ার-মার্কা শিষ্টাচারের লাল-পেয়ালার শেষ তলানি পিয়ে!
কুষলে তো চলছে তোমার অর্ধঘন্টা ধর্মোপদেশ দেওয়া,
টিফিন এবং টি-এর ফাঁকে? জমছে ভাল ঋষ্ট কথার খেয়া?
মুখোস খোলা, মুখস্থ বোল বোলো না আর টিয়াপাখির মত,
মোটা মাসহারার মোহে,- দোরেখা ঢং চালাবে আর কত?
বয়স গত, ক্ষ্যাপার মত কামড় দিতে এলে নকল দাঁতে?
বাঁধানো দাঁত উল্টে গিয়ে, আহা, শেষে লাগবে যে টাক রাতে!
নিরীহ যে সত্যাগ্রহী -কি লাভ হল তারে লাথি মেরে?
সে করেছে তোমায় ক্ষমা, তার চোখে আজ নাও দেখে খৃষ্টেরে।

অক্রোধে ক্রোধ জিনতে হবে, -সে শিক্ষা কি রইল শিকেয় তোলা,
ডিগ্রি নিয়ে ফুরিয়ে গেছে ডাগর-বুলির যা কিছু বোলাবোলা?
উদর তন্ত্র উদরতা? ধর্ম কেবল কথারই কাপ্তেনী?
ডঙ্কা-নাদের পিছন পিছন সত্য নিয়ে খেলছ ছেনিমেনি?
চেয়ে দেখ ক্রুসের পরে ক্ষুদ্ধ কে ওই তোমার ব্যবহারে।
জীবন্তবৎ পাষাণ-মুরৎ! -হেঁটমাথা তার লজ্জাতে ধিক্কারে।
কুড়ি শ বতসরের ক্ষত লাল হয়ে তাঁর উঠছত্র নতুন করে।
দেখছে জগৎ  -পাথর ফেটে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ছে শোণিত ঝরে।
দাও ক্ষমা দাও, চোখ মেলে চাও,–
কি কান্ড হায় করছ গজাল ঠুকে?
নিরীহদের নির্যাতনের সব ব্যথা কার বাজছে দ্যাখো বুকে!
কিম্বা দ্যাখার নাই প্রয়োজন, তোমরা এখন সবাই বিজিগীষু,
জিঙ্গো আসল ইষ্ট সবার, তার আবরণ-দেবতা মাত্র যীশু!
ডায়ার-ডৌল জবরদস্তি, -তাতেই দেখি আজ তোমাদের রুচি।
গোবর-দস্ত আইন গড়ে নিষ্ঠুরতায় নিচ্ছ করে শুচি।

বীরত্বেরই বিজয়-মালা বর্বরতার দিচ্ছ গলায় তুলে।
অমানুষের করছ পূজা, সেরা-মানুষ কৃষ্টদেবে ভুল।
মরদ-মেয়ে ভুগছ সমান হূণ-বিজয়ের বড়াই-লালচ-রোগে,
মানুষকে আর মানুষ বলেই চিনতে যেন চাইছ না, হায়, চোখে।
ঢাকের পিছে ট্যামট্যামি-প্রায় টমির ধাঁচায় ট্যাঁশটোশও আজ ঘোরে।
শয়তানই যে হাওয়ায় হাঁটায় শূন্যে ওঠায় সে হুঁশ গেছে সরে।
নেইক খেয়াল, আত্মা বেচে জগত-জোড়া কিনছে জমিদারী।
কে জানে ক'দিনের ঠিকা, ঠিকাদারের ঠ্যাকার কিন্তু ভারি!
ধিঙ্গি চলে জঙ্গী চালে, কুচ, করে লাল কাগজ-ওলা চলে,
নাক তুলে যায় দালাল-ফোড়ে, আজ দেখি হায় পাদরীও সেই দলে!

যাও দলে যাও, ডঙ্কা বাজাও, অহঙ্কারের ছায়া ক্ষণস্থায়ী।
মিছাই ব্রতের বিঘ্ন ঘটাও অহঙ্কারের হুমকি-ব্যবসায়ী!
আমরা তোমার চাই না শিক্ষা, চাই না বিদ্যা, হে বিদ্যা-বিক্রয়ী!
ধর্ম-কথাও পণ্য যাদের তাদের পণ্য কিনতে ব্যাগ্র নাহি।
মানুষ খুঁজে ফিরছি মোরা, -মানুষ হবার রাস্তা যে বাতলাবে,
তিক্ত হয়ে গেছে জীবন ঘরের পরের অমানুষের তাঁবে।
ফলিয়ে দেবে মর্ত্যে যে জন বুদ্ধ-যীশুর স্বর্গ-সূচন বাণী,
শহীদ-কুলের হৃদ্য-শৌর্য হৃদয়ে যার পেতেছে রাজধানী,

জাতিভেদের টিটকারী যে পরকে শুধুই দেয় না নানান ছলে,
জমিয়ে বুকে জিঙ্গোয়ানীর জবর জাতিভেদের হলাহলে,
ষোল-আনা মানুষ হবার নিমন্ত্রণ দেবে যে সব জনে,
সেই মানুষে খুঁজছি মোরা, অহনিশি খুঁজছি ব্যাকুল মনে,
নিক্তি ধরে করলে তৌল ওহন সে যার ভজবে পুরাপুরি,
লোভের মোহের মন্ত্রণাতে ভাবের ঘরে করবে না যে চুরি,
পথ চেয়ে তার সই অনাচার দুঃখ অপার অন্তত লাঞ্চনা,
বেশ জানি, আজ সয় যারা ক্লেশ তাদের তরেই স্বর্গীয় সান্তনা,
নিরীহ যেই ধন্য যে সেই ধৃত-ব্রত দৈব-মাশাল-ধারী,
নিঃস্ব যারা তারাই হবে বিপুল ভবে রাজ্যে-অধিকারী।

কোনো ধর্মধ্বজের প্রতি (Kono Dhormodhojjer Proti) কবিতাটি ছাড়াও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Kalor Alo (কালোর আলো) ~ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta)

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কালোর আলো (Kalor Alo)

কালোর বিভায় পূর্ণ ভুবন, কালোরে কি করিস ঘৃণা?
আকাশ-ভরা আলো বিফল কালো আঁখির আলো বিনা।
কালো ফণীর মাথায় মণি,
সোনার আধার আঁধার খনি,
বাসন্তী রং নয় সে পাখীর বসন্তে যে বাজায় বীণা,
কালোর গানে পুলক আনে, অসাড় বনে বয় দখিনা!

কালো মেঘের বৃষ্টিধারা তৃপ্তি সে দেয় তৃষ্ণা হরে,
কোমল হীরার কমল ফোটে কালো নিশির শ্যমসায়রে!
কালো অলির পরশ পেলে
তবে মুকুল পাপড়ি মেলে,
তবে সে ফুল হয় গো সফল রোমাঞ্চিত বৃন্ত পরে!
কালো মেঘের বাহুর তটে ইন্দ্রধনু বিরাজ করে।

সন্ন্যাসী শিব শ্মশানবাসী,–সংসারী সে কালোর প্রেমে,
কালো মেঘের কটাক্ষেরি ভয়ে অসুর আছে থেমে।
দৃপ্ত বলীর শীর্ষ পরে
কালোর চরণ বিরাজ করে,
পূণ্য-ধারা গঙ্গা হল- সেও তো কালো চরণ ঘেমে,
দুর্বাদলশ্যামের রূপে– রূপের বাজার গেছে নেমে।

প্রেমের মধুর ঢেউ উঠেছে কালিন্দীরি কালো জলে,
মোহন বাঁশীর মালিক যে জন তারেও লোকে কালোই বলে,
বৃন্দাবনের সেই যে কালো–
রূপে তাহার ভুবন আলো,
রাসের মধুর রসের লীলা, -তাও সে কালো তমাল তলে,
নিবিড় কালো কালাপানির কালো জলেই মুক্তা ফলে।

কালো ব্যাসের কৃপায় আজো বেঁচে আছে বেদের বাণী,
দ্বৈপায়ন – সেই কৃষ্ণ কবি- শ্রেষ্ঠ কবি তাঁরেই মানি,
কালো বামুন চাণক্যেরে
আঁটবে কে কূট-নীতির ফেরে?
কালো অশোক জগৎ-প্রিয়, রাজার সেরা তাঁরে জানি,
হাবসী কালো লোকমানের মানে আরব আর ইরাণী।

কালো জামের মতন মিঠে- কালোর দেশ এই জম্বুদ্বীপে-
কালোর আলো জ্বলছে আজো, আজো প্রদীপ যায় নি নিবে,
কালো চোখের গভীর দৃষ্টি
কল্যানেরি করছে সৃষ্টি,
বিশ্ব-ললাট দীপ– কালো রিষ্টিনাশা হোমের টিপে,
রক্ত চোখের ঠান্ডা কাজল– তৈরী সে এই ম্লান প্রদীপে!

কালোর আলোর নেই তুলনা- কালোরে কী করিস ঘৃণা!
গগন-ভরা তারার মীনা বিফল- চোখের তারা বীনা,
কালো মেঘে জাগায় কেকা,
চাঁদের বুকেও কৃষন-লেখা,
বাসন্তী রং নয় সে পাখীর বসন্তের যে বাজায় বীণা,
কালোর গানে জীবন আনে নিথর বনে বয় দখিনা!

কালোর আলো (Kalor Alo) কবিতাটি ছাড়াও কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (Satyendranath Dutta) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।