Sukanta Bhattacharya Kobita ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য কবিতা

সুকান্ত ভট্টাচার্য জীবনী, এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য বিখ্যাত কবিতা (Sukanta Bhattacharya Kobita) সমূহ গুলো নিচে দেওয়া হলো। All the selected poems of sukanta bhattacharya in bengali are listed below.

সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)
উৎস: উইকিপিডিয়া

সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৫ আগস্ট ১৯২৬ সালে কলিকাতার কালীঘাটের ৪৩, মহিম হালদার স্ট্রীটের মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি প্রথম ম্যালেরিয়া ও পরে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে, ১৯৪৭ সালে ১৩ই মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলকাতার ১১৯ লাউডট স্ট্রীটের রেড এড কিওর হোমে মৃত্যুবরণ করেন।

সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা সাহিত্যে প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি এবং মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী।

তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ-এর নাম – ছাড়পত্র(১৯৪৭), পূর্বাভাস(১৯৫০), ঘুম নেই(১৯৫০) ইত্যাদি।

কবিতা

Title

সুকান্ত ভট্টাচার্য -এর কবিতা সমূহ (Sukanta Bhattacharya Kobita)

Shiri (সিঁড়ি) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সিঁড়ি (Shiri)

আমরা সিঁড়ি,
তোমরা আমাদের মাড়িয়ে
প্রতিদিন অনেক উঁচুতে উঠে যাও,
তারপর ফিরেও তাকাও না পিছনের দিকে;
তোমাদের পদধূলিধন্য আমাদের বুক
পদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় প্রতিদিন।

তোমরাও তা জানো,
তাই কার্পেটে মুড়ে রাখতে চাও আমাদের বুকের ক্ষত
ঢেকে রাখতে চাও তোমাদের অত্যাচারের চিহ্নকে
আর চেপে রাখতে চাও পৃথিবীর কাছে
তোমাদের গর্বোদ্ধত, অত্যাচারী পদধ্বনি।

তবুও আমরা জানি,
চিরকাল আর পৃথিবীর কাছে
চাপা থাকবে না।
আমাদের দেহে তোমাদের এই পদাঘাত।
আর সম্রাট হুমায়ুনের মতো
একদিন তোমাদেরও হতে পারে পদস্খলন।।

সিঁড়ি (Shiri) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Purono Dhadha (পুরনো ধাঁধা) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পুরনো ধাঁধা (Purono Dhadha)

বলতে পার বড়মানুষ মোটর কেন চড়বে?
গরীব কেন সেই মোটরের তলায় চাপা পড়বে?
বড়মানুষ ভোজের পাতে ফেলে লুচি-মিষ্টি,
গরীবরা পায় খোলামকুচি, একি অনাসৃষ্টি?
বলতে পার ধনীর বাড়ি তৈরি যারা করছে,
কুঁড়েঘরেই তারা কেন মাছির মতো মরছে?
ধনীর মেয়ের দামী পুতুল হরেক রকম খেলনা,
গরীব মেয়ে পায় না আদর, সবার কাছে ফ্যালনা।
বলতে পার ধনীর মুখে যারা যোগায় খাদ্য,
ধনীর পায়ের তলায় তারা থাকতে কেন বাধ্য?
‘হিং-টিং-ছট্’ প্রশ্ন এসব, মাথার মধ্যে কামড়ায়,
বড়লোকের ঢাক তৈরি গরীব লোকের চামড়ায়।

   (মিঠে কড়া কাব্যগ্রন্থ)

পুরনো ধাঁধা (Purono Dhadha) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Chorompotro (চরমপত্র) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) চরমপত্র (Chorompotro)

তোমাকে দিচ্ছি চরমপত্র রক্তে লেখা;
অনেক দুঃখে মথিত এ শেষ বিদ্যে শেখা৷
অগণ্য চাষী-মজুর জেগেছে শহরে গ্রামে
সবাই দিচ্ছি চরমপত্র একটি খামে :
পবিত্র এই মাটিতে তোমার মুছে গেছে ঠাঁই,
ক্ষুব্ধ আকাশে বাতাসে ধ্বনিত ‘স্বাধীনতা চাই’৷
বহু উপহার দিয়েছ,—শাস্তি, ফাঁসি ও গুলি,
অরাজক, মারী, মন্বন্তরে মাথার খুলি৷
তোমার যোগ্য প্রতিনিধি দেশে গড়েছে শ্মশান,
নেড়েছে পর্ণকুটির, কেড়েছে ইজ্জত, মান!
এতদিন বহু আঘাত হেনেছ, পেয়ে গেছ পার,
ভুলি নি আমরা, শুরু হোক শেষ হিসাবটা তার,
ধর্মতলাকে ভুলি নি আমরা, চট্টগ্রাম
সর্বদা মনে অঙ্কুশ হানে নেই বিশ্রাম৷
বোম্বাই থেকে শহীদ জীবন আনে সংহতি,
ছড়ায় রক্ত প্লাবন, এদেশে বিদ্যুৎগতি৷
আমাদের এই দলাদলি দেখে ভেবেছ তোমার
আয়ু সুদীর্ঘ, যুগ বেপরোয়া গুলি ও বোমার,
সে স্বপ্ন ভোলো চরমপত্র সমুখে গড়ায়,
তোমাদের চোখ-রাঙানিকে আজ বলো কে ডরায়?
বহু তো অগ্নি বর্ষণ করো সদলবলে,
আমরা জ্বালছি আগুন নেভাও অশ্রুজলে৷
স্পর্ধা, তাইতো ভেঙে দিলে শেষ-রক্তের বাঁধ
রোখো বন্যাকে, চরমপত্রে ঘোষণা : জেহাদ॥

চরমপত্র (Chorompotro) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Choitrodiner Gan (চৈত্রদিনের গান) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) চৈত্রদিনের গান (Choitrodiner Gan)

চৈতীরাতের হঠাৎ হাওয়া
আমায় ডেকে বলে,
“বনানী আজ সজীব হ’ল
নতুন ফুলে ফলে৷
এখনও কি ঘুম-বিভোর?
পাতায় পাতায় জানায় দোল
বসন্তেরই হাওয়া৷
তোমার নবীন প্রাণে প্রাণে,
কে সে আলোর জোয়ার আনে?
নিরুদ্দেশের পানে আজি তোমার তরী বাওয়া;
তোমার প্রাণে দোল দিয়েছে বসন্তেরই হাওয়া৷
ওঠ্ রে আজি জাগরে জাগ
সন্ধ্যাকাশে উড়ায় ফাগ
ঘুমের দেশের সুপ্তহীনা মেয়ে৷
তোমার সোনার রথে চ’ড়ে
মুক্তি-পথের লাগাম ধ’রে
ভবিষ্যতের পানে চল আলোর গান গেয়ে৷
রক্তস্রোতে তোমার দিন,
চলেছে ভেসে সীমানাহীন৷
তারে তুমি মহান্ ক’রে তোল,
তোমার পিছে মৃত্যুমাখা দিনগুলি ভোল॥”

‘চৈত্রদিনের গান’ কবিতাটি বিজনকুমার গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ছোটদের ‘শিখা’ পত্রিকার জন্য রচিত৷ রচনাকাল আনুমানিক ১৯৪০৷

চৈত্রদিনের গান (Choitrodiner Gan) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Prothom Barshiki (প্রথম বার্ষিকী) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) প্রথম বার্ষিকী (Prothom Barshiki)

আবার ফিরে এল বাইশে শ্রাবণ।
আজ বর্ষশেষে হে অতীত,
                      কোন সম্ভাষণ
           জানাব অলক্ষ্য পানে?
           ব্যথাক্ষুব্ধ গানে
                      ঝরাব শ্রাবণ বরিষণ!

দিনে দিনে, তিলে তিলে যে বেদনা
                      উদাস মধুর
           হয়েছে নিঃশব্দ প্রাণে
           ভরেছে বিপুল টানে,
                      তারে আজ দেব কোন সুর?

তোমার ধূসর স্মৃতি, তোমার কাব্যের সুরভিতে
লেগেছে সন্ধ্যার ছোঁওয়া, প্রাণ ভরে দিতে
           হেমন্তের শিশিরের কণা
           আমি পারিব না।

প্রশান্ত সূর্যাস্ত পরে দিগন্তের যে রাগ-রক্তিমা,
           লেগেছে প্রাণের ‘পরে,
           সহসা স্মৃতির ঝড়ে
                      মুছিয়া যাবে কী তার সীমা!
তোমার সন্ধ্যার ছায়াখানি
           কোন পথ হতে মোরে
কোন পথে নিয়ে যাবে টানি’
           অমর্ত্যরে আলোক সন্ধানী
                      আমি নাহি জানি।
একদা শ্রাবণ দিনে গভীর চরণে,
নীরবে নিষ্ঠুর সরণিতে
           পাদস্পর্শ দিতে
                      ভিক্ষুক মরণে।
পেয়েছে পথের মধ্যে দিয়েছ অক্ষয়
                      তব দান,
           হে বিরাট প্রাণ!
তোমার চরণ স্পর্শে রোমাঞ্চিত পৃথিবীর ধূলি
           উঠিছে আকুলি’,
আজিও স্মৃতির গন্ধে ব্যথিত জনতা
কহিছে নিঃশব্দ স্বরে একমাত্র কথা,
           ‘তুমি হেথা নাই’।
বিস্ময়ের অন্ধকারে মুহ্যমান জলস্থল তাই
আদো তন্দ্রা, আধো জাগরণে
দক্ষিণ হাওয়ায় ক্ষণে ক্ষণে
           ফেলিছে নিঃশ্বাস।
ক্লে­দক্লি­ষ্ট পৃথিবীতে একী পরিহাস।
তুমি চলে গেছ তবু আজিও বহিছে বারোমাস
           উদ্দাম বাতাস,
এখনো বসন্ত আসে
           সকরুণ বিষণ্ণ নিঃশ্বাসে,
এখনো শ্রাবণ ঝরোঝর
           অবিশ্রান্ত মাতায় অন্তর।
এখনো কদম্ব বনে বনে
           লাগে দোলা মত্ত সমীরণে,
           এখনো উদাসি’
শরতে কাশের ফোটে হাসি।
জীবনে উচ্ছ্বাস, হাসি গান
           এখনো হয় নি অবসান।
এখনো ফুটিছে চাঁপা হেনা,
           কিছুই তো তুমি দেখিলে না।
           তোমার কবির দৃষ্টি দিয়ে
           কোন কিছু দিলে না চিনিয়ে
এখন আতঙ্ক দেখি পৃথিবীর অস্থিতে মজ্জায়,
           সভ্যতা কাঁপিছে লজ্জায়;
স্বার্থের প্রাচীরতলে মানুষের সমাধি রচনা,
           অযথা বিভেদ সৃষ্টি, হীন প্ররোচনা
           পরস্পর বিদ্বেষ সংঘাতে,
                      মিথ্যা ছলনাতে –
           আজিকার মানুষের জয়;
প্রসন্ন জীবন মাঝে বিসর্পিল, বিভীষিকাময়।।

   (পূর্বাভাস কাব্যগ্রন্থ)

প্রথম বার্ষিকী (Prothom Barshiki) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Purbavas (পূর্বাভাস) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পূর্বাভাস (Purbavas)

সন্ধ্যার আকাশতলে পীড়িত নিঃশ্বাসে
বিশীর্ণ পাণ্ডুর চাঁদ ম্লান হয়ে আসে।
বুভুক্ষু প্রেতেরা হাসে শাণিত বিদ্রূপে,
প্রাণ চায় শতাব্দীর বিলুপ্ত রক্তের–
সুষুপ্ত যরো নিত্য কাঁদিছে ক্ষুদায়
দূর্ত দাবাগ্নি আজ জ্বলে চুপে চুপে
প্রমত্ত কস্তুরীমৃগ ক্ষুব্ধ চেতনায়
বিপন্ন করুণ ডাকে তোলে আর্তনাদ।
ব্যর্থ আজ শব্দভেদী বাণ–
সহস্র তির্যকশৃঙ্গ করিছে বিবাদ –
জীবন-মৃত্যুর সীমানায়।
                     লাঞ্ছিত সম্মান।
ফিরে চায় ভীরু-দৃষ্টি দিয়ে।
দুর্বল তিতিক্ষা আজ দুর্বাশার তেজে
স্বপ্ন মাঝে উঠেছে বিষিয়ে।
দূর পূর্বাকাশে,
বিহ্বল বিষাণ উঠে বেজে
মরণের শিরায় শিরায়।
মুমূর্ষ বিবর্ণ যত রক্তহীন প্রাণ–
বিস্ফারিত হিংস্র-বেদনায়।
অসংখ্য স্পন্দনে চলে মৃত্যু অভিযান
লৌহের দুয়ারে পড়ে কুটিল আঘাত,
উত্তপ্ত মাটিতে ঝরে বর্ণহীন শোণিত প্রপাত।
সুপ্তোত্থিত পিরামিড দুঃসহ জ্বালায়
পৈশাচিক ক্রূর হাসি হেসে
বিস্তীর্ণ অরণ্য মাঝে কুঠার চালায়।
কালো মৃত্যু ফিরে যায় এসে।।

   (পূর্বাভাস কাব্যগ্রন্থ)

পূর্বাভাস (Purbavas) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ghumvangar Gan (ঘুমভাঙার গান) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ঘুমভাঙার গান (Ghumvangar Gan)

মাথা তোল তুমি বিন্ধ্যাচল
          মোছ উদ্‌গত অশ্রুজল
যে গেল সে গেল, ভেবে কি ফল?
          ভোল ক্ষত!
তুমি প্রতারিত বিন্ধ্যাচল,
          বোঝ নি ধূর্ত চতুর ছল,
হাসে যে আকাশচারীর দল,
          অনাহত।
শোন অবনত বিন্ধ্যাচল,
          তুমি নও ভীরু বিগত বল
কাঁপে অবাধ্য হৃদয়দল
          অবিরত।
কঠিন, কঠোর বিন্ধ্যাচল,
          অনেক ধৈর্যে আজো অটল
ভাঙো বিঘ্নকেঃ করো শিকল
          পদাহত।
বিশাল, ব্যাপ্ত বিন্ধ্যাচল,
          দেখ সূর্যের দর্পানল;
ভুলেছে তোমার দৃঢ় কবল
          বাধা যত।
সময় যে হল বিন্ধ্যাচল,
          ছেঁড় আকাশের উঁচু ত্রিপল
দ্রুত বিদ্রোহে হানো উপল
          শত শত।।

  (পূর্বাভাস কাব্যগ্রন্থ)

ঘুমভাঙার গান (Ghumvangar Gan) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Agneyogiri (আগ্নেয়গিরি) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) আগ্নেয়গিরি (Agneyogiri)

কখনো হঠাৎ মনে হয়ঃ
আমি এক আগ্নেয় পাহাড়।
শান্তির ছায়া-নিবিড় গুহায় নিদ্রিত সিংহের মতো
চোখে আমার বহু দিনের তন্দ্রা।
এক বিস্ফোরণ থেকে আর এক বিস্ফোরণের মাঝখানে
আমাকে তোমরা বিদ্রূপে বিদ্ধ করেছ বারংবার
আমি পাথরঃ আমি তা সহ্য করেছি।

মুখে আমার মৃদু হাসি,
বুকে আমার পুঞ্জীভূত ফুটন্ত লাভা।
সিংহের মতো আধ-বোজা চোখে আমি কেবলি দেখছিঃ
মিথ্যার ভিতে কল্পনার মশলায় গড়া তোমাদের শহর,
আমাকে ঘিরে রচিত উৎসবের নির্বোধ অমরাবতী,
বিদ্রূপের হাসি আর বিদ্বেষের আতস-বাজি–
তোমাদের নগরে মদমত্ত পূর্ণিমা।

দেখ, দেখঃ
ছায়াঘন, অরণ্য-নিবিড় আমাকে দেখ;
দেখ আমার নিরুদ্বিগ্ন বন্যতা।
তোমাদের শহর আমাকে বিদ্রূপ করুক,
কুঠারে কুঠারে আমার ধৈর্যকে করুক আহত,
কিছুতেই বিশ্বাস ক’রো না–
আমি ভিসুভিয়স-ফুজিয়ামার সহোদর।
তোমাদের কাছে অজ্ঞাত থাক
ভেতরে ভেতরে মোচড় দিয়ে ওঠা আমার অগ্ন্যুদ্‌গার,
অরণ্যে ঢাকা অন্তর্নিহিত উত্তাপের জ্বালা।

তোমার আকাশে ফ্যাকাশে প্রেত আলো,
বুনো পাহাড়ে মৃদু-ধোঁয়ার অবগুণ্ঠন:
ও কিছু নয়, হয়তো নতুন এক মেঘদূত।
উৎসব কর, উৎসব কর–
ভুলে যাও পেছনে আছে এক আগ্নেয় পাহাড়,
ভিসুভিয়স-ফুজিয়ামার জাগ্রত বংশধর।
আর,
আমার দিন-পি কায় আসন্ন হোক
বিস্ফোরণের চরম, পবিত্র তিথি।।

আগ্নেয়গিরি (Agneyogiri) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Gyani (জ্ঞানী) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) জ্ঞানী (Gyani)

বরেনবাবু মস্ত জ্ঞানী, মস্ত বড় পাঠক,
পড়েন তিনি দিনরাত্তির গল্প এবং নাটক,
কবিতা আর উপন্যাসের বেজায় তিনি ভক্ত,
ডিটেক্‌টিভের কাহিনীতে গরম করেন রক্ত;
জানেন তিনি দর্শন আর নানা রকম বিজ্ঞান
জ্যোতিষশাস্ত্র জানেন তিনি, তাইতো আছে দিক্-জ্ঞান;
ইতিহাস আর ভূগোলেতে বেজায় তিনি দক্ষ,-
এসব কথা ভাবলেই তাঁর ফুলতে থাকে বক্ষ।
সব সময়েই পড়েন তিনি, সকাল থেকে সন্ধ্যা,
ছুটির দিনে পড়েন তিনি, পড়েন পূজোর বন্ধে।
মাঝে মাঝে প্রকাশ করেন গূঢ় জ্ঞানের তত্ত্ব
বিদ্যাখানা জাহির করেন বরেন্দ্রনাথ দত্তঃ
হঠাৎ ঢুকে রান্না ঘরে বলেন, ওসব কী রে?
ভাইঝি গীতা হেসে বলে, এসব কালো জিরে।
বরেনবাবু রেগে বলেন, জিরে তো হয় সাদা,
তিলও কালো, জিরেও কালো? পেয়েছিস কি গাধা?
রান্না করার সময় কেবল পুড়িয়ে হাজার লঙ্কা,
হনুমতী হয়েছিস তুই, হচ্ছে আমার শঙ্কা।
হঠাৎ ছোট্ট খোকাটাকে কাঁদতে দেখে, দত্ত
খোলেন বিরাট বইয়ের পাতা নামটি “মনস্তত্ত্ব”।
খুঁজতে খুঁজতে বরেনবাবু হয়ে গেলেন সারা-
বুঝলেন না, কেন খোকা মাথায় করছে পাড়া।
হঠাৎ এসে ভাইঝি গীতা দুধের বাটি নিয়ে,
খাইয়ে দিয়ে পাঁচ মিনিটে দিল ঘুম পাড়িয়ে।
বরেনবাবু ভাবেন, ‘খোকার কেমনতর ধারা
আধ ঘণ্টার চেঁচামেচি পাঁচ মিনিটেই সারা?’
বরেনবাবুর কাছে আরো বিরাট একটি ধাঁধা,
হলদে চালের রঙ কেন হয় ভাত হলে পর সাদা?
পাথর বাটির গরম জিনিস ঠাণ্ডা হয় তা জানি,
পাহাড় দেশে গরম কেন এমন ছটফটানি?
পথ চলতে ভেবে এসব ভিজে ওঠেন ঘামে,
মানিকতলা যেতে চাপেন ধর্মতলার ট্রামে।
বরেনবাবু জানেন কিন্তু নানা রকম বিজ্ঞান,
জ্যোতিষশাস্ত্র জানেন তিনি তাইতো এমন দিক্-জ্ঞান।।

   (মিঠে কড়া কাব্যগ্রন্থ)

জ্ঞানী (Gyani) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Byarthota (ব্যর্থতা) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ব্যর্থতা (Byarthota)

আজকে হঠাৎ সাত সমুদ্র তেরো নদী
পার হ’তে সাধ জাগে, মনে হয় তবু যদি
পক্ষপাতের বালাই না নিয়ে পক্ষীরাজ,
চাষার ছেলের হাতে এসে যেত হঠাৎ আজ৷
তা হলে না হয় আকাশবিহার হ’ত সফল,
টুকরো মেঘেরা যেতে-যেতে ছুঁয়ে যেত কপোল;
জনারণ্যে কি রাজকন্যার নেইকো ঠাঁই?
কাস্তেখানাকে বাগিয়ে আজকে ভাবছি তাই৷

অসি নাই থাক, হাতে তো আমার কাস্তে আছে,
চাষার ছেলের অসিকে কি ভালবাসাতে আছে?
তাই আমি যেতে চাই সেখানেই যেখানে পীড়ন,
যেখানে ঝলসে উঠবে কাস্তে দৃপ্ত-কিরণ৷
হে রাজকন্যা, দৈত্যপুরীতে বন্দী থেকে
নিজেকে মুক্ত করতে আমায় নিয়েছ ডেকে৷
হেমন্তে পাকা ফসল সামনে, তবু দিলে ডাক;
তোমাকে মুক্ত করব, আজকে ধান কাটা থাক৷

রাজপুত্রের মতন যদিও নেই কৃপাণ,
তবু মনে আশা, তাই কাস্তেতে দিচ্ছি শান,
হে রাজকুমারী, আমাদের ঘরে আসতে তোমার
মন চাইবে তো? হবে কষ্টের সমুদ্র পার?
দৈত্যশালায় পাথরের ঘর, পালঙ্ক-খাট,
আমাদের শুধু পর্ণ-কুটির, ফাঁকা ক্ষেত-মাঠ;
সোনার শিকল নেই, আমাদের মুক্ত আকাশ,
রাজার ঝিয়ারী! এখানে নিদ্রাহীন বারো মাস৷

এখানে দিন ও রাত্রি পরিশ্রমেই কাটে
সূর্য এখানে দ্রুত ওঠে, নামে দেরিতে পাটে৷
হে রাজকন্যা, চলো যাই, আজ এলাম পাশে,
পক্ষীরাজের অভাবে পা দেব কোমল ঘাসে৷
হে রাজকন্যা সাড়া দাও, কেন মৌন পাষাণ?
আমার সঙ্গে ক্ষেতে গিয়ে তুমি তুলবে না ধান?
হে রাজকন্যা, ঘুম ভাঙলো না? সোনার কাঠি
কোথা থেকে পাব, আমরা নিঃস্ব, ক্ষেতেই খাটি৷
সোনার কাঠির সোনা নেই, আছে ধানের সোনা,
তাতে কি হবে না? তবে তো বৃথাই অনুশোচনা॥

ব্যর্থতা’ কবিতাটি আষাঢ় ১৩৫৩-র কবিতা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়৷ কবিতাটি ‘মীমাংসা’ কবিতার প্রথম খসড়া বলে মনে হয়৷

ব্যর্থতা (Byarthota) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।