Kazi Nazrul Islam Poems ~ কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা
বিখ্যাত দুখের কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী। কাজী নজরুল ইসলাম কবিতার বিশাল তালিকা নীচে দেওয়া হল। A short biography of the famous dukher poet kazi nazrul islam. A huge list of kazi nazrul islam poems are given below.
কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) ২৫ই মে, ১৮৯৯ সালে, বর্ধমান জেলার, আসানসোল মহাকুমার, চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
২৯ই আগস্ট, ১৯৭৬ সালে, ঢাকা, বাংলাদেশে তাঁর মৃত্যু হয় ।
কাজী নজরুল ইসলাম-এর ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত সুরারোপিত সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় গান “চল্ চল্ চল্“।
তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
কবির সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে বিদ্রোহী নামক কবিতাটি। এই কবিতাটি ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। বিদ্রোহী কবিতাটি রচনায় তিনি সারা ভারতের সাহিত্য সমাজের খ্যাতি লাভ করেন।
সাহিত্য জগতে তাঁর রচিত বিখ্যাত প্রথম কাব্যগ্রন্থটির নাম-অগ্নিবীণা। এটি ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা রয়েছে। কবিতা গুলির নাম ‘প্রলয়োল্লাস(কবিতা)’, ‘বিদ্রোহী’, ‘আগমনী’, ‘ধূমকেতু’, ‘রক্তাম্বর- ধরণী মা’, ‘কামাল পাশা’ ইত্যাদি।
কবির লেখা একটি উল্লেখযোগ্য প্রথম পত্রোপন্যাসের নাম বাঁধন হারা।
তিনি ধূমকেতু নামক একটি পত্রিকা লেখেন।এটি ১৯২২ সালে, ১২ই আগস্ট প্রকাশিত হয়।
তাঁর বিন্যস্ত আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ রয়েছে বিষের বাঁশি। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কবির-এর অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার ১৯৭৭ সালে, একুশে পদক ১৯৭৬ সালে এবং পদ্মভূষণ উপাধিতে তাঁকে সম্মানিত করা হয়।
তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক এবং দার্শনিক।
কবিতা
Title
কাজী নজরুল ইসলাম -এর কবিতা সমূহ (Kazi Nazrul Islam Poems)
জাগরণের লাগল ছোঁয়াচ মাঠে মাঠে তেপান্তরে, এমন বাদল ব্যর্থ হবে তন্দ্রাকাতর কাহার ঘরে? তড়িৎ ত্বরা দেয় ইশারা, বজ্র হেঁকে যায় দরজায়, জাগে আকাশ, জাগে ধরা−ধরার মানুষ কে সে ঘুমায়? মাটির নীচে পায়ের তলায় সেদিন যারা ছিল মরি, শ্যামল তৃণাঙ্কুরে তারা উঠল বেঁচে নতুন করি; সবুজ ধরা দেখছে স্বপন আসবে কখন ফাগুন-হোলি, বজ্রাঘাতে ফুটল না যে, ফুটবে আনন্দে সে কলি!
চুন করে মুখ প্রাচীর পরে বসে শ্রীযুত খোকা, কেননা তার মা বলেছেন সে এক নিরেট বোকা। ডানপিটে সে খোকা এখন মস্ত একটা বীর, হুংকারে তাঁর হাঁস মুরগির ছানার চক্ষুস্থির! সাত লাঠিতে ফড়িং মারেন এমনই পালোয়ান! দাঁত দিয়ে সে ছিঁড়লে সেদিন আস্ত আলোয়ান! ন্যাংটা-পুঁটো দিগম্বরের দলে তিনিই রাজা, তাঁরে কিনা বোকা বলা? কী এর উচিত সাজা? ভাবতে ভাবতে খোকার হঠাৎ চিন্তা গেল থেমে, দে দৌড় চোঁ-চাঁ আঁধমহলে পাঁচিল হতে নেমে! বুকের ভেতর ছপাই নপাই ধুকপুকুনির চোটে, বাইরে কিন্তু চতুর খোকা ঘাবড়ালেন না মোটে। হাঁপিয়ে এসে মায়ের কাছে বললে, “ওগো মা! আমি নাকি বোক-চন্দর? বুদ্ধি দেখে যা! ওই না একটা মটকু বানর দিব্যি মাচায় বসে লাউ খাচ্ছে? কেউ দেখেনি, দেখি আমিই তো সে। দিদিদেরও চোখ ছিল তো, কেউ কি দেখেছেন? তবে আমায় বোকা কও যে! এ্যাঁ-এ্যাঁ, হাস ক্যান্? কী কও? ‘একী বুদ্ধি হল?’ দেখবে তবে? হাঁ, বুদ্ধি আমার … ভোলা! তু-উ-উ! লৌ-হা হা-হা-হা!”
আমার ঘরের পাশ দিয়ে সে চলত নিতুই সকাল-সাঁঝে। আর এ পথে চলবে না সে সেই ব্যথা হায় বক্ষে বাজে।
আমার দ্বারের কাছটিতে তার ফুটত লালী গালের টোলে, টলত চরণ, চাউনি বিবশ কাঁপত নয়ন-পাতার কোলে – কুঁড়ি যেমন প্রথম খোলো গো! কেউ কখনও কইনি কথা, কেবল নিবিড় নীরবতা সুর বাজাত অনাহতা গোপন মরম-বীণার মাঝে। মূক পথের আজ বুক ফেটে যায় স্মরি তারই পায়ের পরশ বুক-খসা তার আঁচর-চুমু, রঙিন ধুলো পাংশু হল, ঘাস শুকাল যেচে বাচাল জোড়-পায়েলার রুমঝুমু!
আজও আমার কাটবে গো দিন রোজই যেমন কাটত বেলা, একলা বসে শূন্য ঘরে – তেমনি ঘাটে ভাসবে ভেলা – অবহেলা হেলাফেলায় গো! শুধু সে আর তেমন কর মন রবে না নেশায় ভরে আসার আশায় সে কার তরে সজাগ হয়ে সকল কাজে।
ডুকরে কাঁদে মন-কপোতী – ‘কোথায় সাথির কূজন বাজে? সে পা-র ভাষা কোথায় রাজে?’
মহান তুমি প্রিয় এই কথাটির গৌরবে মোর চিত্ত ভরে দিয়ো। অনেক আশায় বসে আছি যাত্রা-শেষের পর তোমায় নিয়েই পথের পারে বাঁধব আমার ঘর – হে চির-সুন্দর! পথ শেষ সেই তোমায় যেন করতে পারি ক্ষমা, হে মোর কলঙ্কিনী প্রিয়তমা! সেদিন যেন বলতে পারি, ‘এসো এসো প্রিয়, বক্ষে এসো এসো আমার পূত কমনীয়!’ হায় হারানো লক্ষ্মী আমার! পথ ভুলেছ বলে চির-সাথি যাবে তোমার মুখ ফিরিয়ে চলে? জান ওঠে হায় মোচড় খেয়ে চলতে পড়ি টলে – অনেক জ্বালায় জ্বলে প্রিয় অনেক ব্যথায় গলে! বারে বারে নানান রূপে ছলতে আমায় শেষে, কলঙ্কিনী! হাতছানি দাও সকল পথে এসে কুটিল হাসি হেসে? ব্যথায় আরো ব্যথা হানাই যে সে! তুমি কি চাও তোমার মতোই কলঙ্কী হই আমি? তখন তুমি সুদূর হতে আসবে ঘরে নামি – হে মোর প্রিয়, হে মোর বিপথগামী! পথের আজও অনেক বাকি, তাই যদি হয় প্রিয় – পথের শেষে তোমায় পাওয়ার যোগ্য করেই নিয়ো॥