নিবেদিতা অধিকারীর কবিতা ~ Nibedita Adhikary Poems

রথযাত্রা ২০২০

পুরাণ অনুযায়ী অন্যতম একটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র আনন্দের উৎসব রথযাত্রা (Ratha Yatra)। আষাঢ় মাসে শুক্লাপক্ষে দ্বিতীয়া তিথিতে ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও বোন সুভদ্রা দ্বারা রথযাত্রা (Ratha Yatra) বা রথদ্বিতীয়া।

কিভাবে শুরু হয় রথযাত্রা ? রথযাত্রার ইতিহাস

রথযাত্রার ইতিহাস থেকে আমি বৈদিক শাস্ত্রের কথাও জানতে পারি। দ্বাপর যুগে দুষ্টের দমন, শান্তি ও আনন্দময় এবং হিন্দু ধর্মীয় সংস্থা স্থাপনের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বভুবনে এসেছেন। জগন্নাথ আসলে শ্রীকৃষ্ণ অবতার একটি বিশেষ রূপ।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্ম লগ্ন থেকে বিভিন্ন লীলার মাধ্যমে তাঁর স্বরূপ উদঘাটন করেন। অবশেষে বৃন্দাবন লীলা শেষ করে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় চলে যান এবং শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় রাজা হন। শ্রীকৃষ্ণ রাজাকে বৃন্দাবন বারবার আকৃষ্ট করে তোলে।

একবার সূর্য গ্রহনের সময় দ্বারকায় সমস্ত বসবাসকারীদের নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ পুণ্য লাভের জন্য কুরুক্ষেত্রে যান। এদিকে সমস্ত বৃন্দাবন বাসী সূর্য গ্রহনের পুণ্য লাভের জন্য কুরুক্ষেত্রে আসে। অনেকটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বৃন্দাবনের বজ্রবাসীদের সাথে সাক্ষাৎ হয় স্বয়ং ভগবান জগন্নাথ শ্রীকৃষ্ণের সাথে। ভগবান জগন্নাথ জগদীশ্বর নামেও পরিচিত।

বজ্রবাসীরা শ্রীকৃষ্ণকে রাজা হিসাবে না দেখে, বৃন্দাবনের কৃষ্ণ লীলা হিসাবে দেখতে চাইলেন সকলেই, সকল বৃন্দাবনের বাসীদের সাথে বাল্য শ্রীকৃষ্ণ লীলা করছেন।

বজ্রবাসীরা সকলেই প্রার্থনা করলেন হাত জোড় করে শ্রীকৃষ্ণের কাছে…হে প্রভু আমরা প্রত্যেকেই এখানে রয়েছি, তুমিও এখানে রয়েছো। আমাদের একটি বিষয়ে আমাদের খুব অভাব রয়েছে, সেটি হল মধুময় বাল্য লীলা, চলো আমরা সকলেই মধুময় বাল্য লীলা বৃন্দাবনে ফিরে যাই। একথা বলেই সকল বৃন্দাবনবাসী, শ্রীকৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রা দেব দেবীরা সবাই মিলে রথের ঘোড়া টেনে টেনে বৃন্দাবনে নিয়ে যান।

সেই দিনকেই স্মরণ রেখেই ভক্তরা আপন মনে ও আন্তরিকতার সাথে রথযাত্রা আয়োজন করা হয়ে থাকে। ভক্তরা রথের দড়ি টেনে টেনে নিয়ে বৃন্দাবনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ভক্তরা রথের রশি ধরে ভগবান জগন্নাথ( শ্রীকৃষ্ণকে) অনুভব করে। আর পরম্পরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সকল ভক্ত বাসীকে পুণ্য লাভের আশীর্বাদ করেন।

জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা এই তিন দেবতাকে টেনে টেনে জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়, সাত দিন পরে মাসির বাড়ি থেকে রথ যেখানে থাকে, সেই স্থানে আবার রথের রশি টেনে টেনে নিয়ে আসা হয় একে উল্টো রথ বা ফেরত রথ বলা হয়।

উল্টোরথের পরে আসে পূর্ণিমা। পূর্ণিমার দিনে বিশেষ ভাবে রথ টানার প্রচলন রয়েছে, একে আমরা পূর্ণিমার রথ বলে থাকি।

বিশ্বব্যাপী রথযাত্রা

আন্তর্জাতিক ভাবাপন্ন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ 1965 সালে তাঁর গুরুদেবের নির্দেশ মত পাশ্চাত্য কৃষ্ণের ভাবানুবাদ প্রচারের জন্য আমেরিকায় গিয়ে ছিলেন। 1968 সালে ইসকন হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের সাফল্য হওয়ায়, সারা বিশ্ব জুড়ে, আজও বিভিন্ন শহরে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়।

জনপ্রিয় রথযাত্রা

ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় ওড়িশার পুরী শহরের জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের রথযাত্রা। শ্রীরামপুর শহরের মাহেশের রথযাত্রা বিশেষভাবেও জনপ্রিয়।

রথযাত্রা বিশেষত্ব

পুরীর রথযাত্রা

ওড়িশার রথযাত্রা প্রসঙ্গে বলা যায় যে, এই রথযাত্রা প্রচলন শুরু হয় প্রায় সত্যযুগে। পুরীর রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী যিনি রাজা হন তিনি জগন্নাথ, বলরাম ও দেবী সুভদ্রা রথের সামনে এসে পুষ্পাঞ্জলি দেন এবং সোনার ঝাড়ু দিয়ে ঝাঁট দেওয়ার পরই রথের রশি টানেন, রাজা হাত দিয়ে রথের রশি টানার পরই শুরু হয় পুরীর রথযাত্রা উৎসব।

মহিষাদলের রথযাত্রা

পূর্ব মেদিনীপুরে মহিষাদলের রাজপরিবারের রাজা হন 1738 সালে যুবরাজ আনন্দলাল উপধ্যায়। রাজার মৃত্যুর পরে রাজ কার্য দায়িত্ব নেন স্ত্রী রানী জানকী। প্রজাদের অনুরোধে রানী জানকী রথযাত্রা উৎসব শুরু করেন। মহিষাদলে 1976 সালে রথযাত্রা প্রথম শুরু হয়। সেই থেকে আয়োজিত হয়ে আসছে মহিষাদলে রথের যাত্রা উৎসব। রাজপরিবার পালকি করে রথের কাছে এসে, প্রথমে রথের রশি টানার পরে শুরু হয় রথযাত্রা।

প্রায় এক মাস ধরে চলে মহিষাদলের রথযাত্রা মেলা। এখানে দূর- দুরান্ত থেকে আসে বিভিন্ন ব্যবসায়ীগণ। হস্তশিল্পের তৈরি মাদুর, বেতের তৈরি ঝুড়ি, কুলো ইত্যাদি। আসে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফল গাছের দোকান। নানা রকমের রংয়ের পাখি। ভিড় জমায় হরেক রকমের স্টেশনারি দোকানে। বিভিন্ন ধরনের খাওয়ার দোকান বসে, নাগরদোলা, স্টিলের বাসন দ্রব্য এবং ড্রেস প্রভৃতির দোকান। হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও ভক্ত মানুষ এসে ভিড় করে এই ঐতিহ্যবাহী মহিষাদলের রথের মেলায়।

কোনও ভক্ত সমাগম ছাড়াই রথযাত্রা শুরু জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার

দুঃখের সাথে জানায় যে, করোনা ভাইরাস এর জন্য 243 বছরের মহিষাদলের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসব এবছর বন্ধ। রাজবংশের আরাধ্য দেবতা গোপাল জিউ এবং জগন্নাথ রথে চেপে মাসির বাড়ি এবছর যাওয়া হয়ে ওঠে নি। খুব কম সংখ্যক লোককে নিয়ে পালিত হয়েছে ধর্মীয় যাবতীয় আচার-অনুষ্ঠান। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও পালিত হয়েছে রথের আগের দিন 22 জুন ‘নেত উৎসব’। 23 জুন রথের দিনে রাজবংশের আরাধ্য শালগ্রাম শিলা ‘শ্রীধর জিউ’ কে রথে আনা হয়েছে, ‘কলস ও চক্র’ লাগানো হয়েছে রথের চূড়ায়। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও রথের দিনে পালকিতে করে গোপাল জিউ ও জগন্নাথদেবকে নিয়ে আসা হয়েছে রথে। সাজানো হয়েছে রথ শুধু টানা হয় নি রথের রশি।

সমাজ, সকল পুণ্যার্থী ভক্তদের কথা ভেবেই করোনা ভাইরাস এর জন্য 30 জুন ফেরত রথযাত্রা উৎসব এবছর বন্ধ রাখা হয়েছে।

এছাড়াও আমার অন্যান্য কবিতা, রচনা ও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

বৃষ্টি (Bristi) – নিবেদিতা অধিকারী (Nibedita Adhikary)

মেঘ করেছে, মেঘ করেছে,

মেঘের কোল থেকে!

বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে।।

বৃষ্টি পড়া দেখে —

খোকা-খুকি ভিজতে শুরু করেছে।।

বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আনন্দের সাথে,

খোকা-খুকির নাচন শুরু হয়েছে।।

বৃষ্টি পড়া বন্ধ দেখে!

খোকা-খুকির কান্না আরম্ভ।।

আয় বৃষ্টি, আয় বৃষ্টি খেলবি আয়;

আমাদের সাথে।

মেঘের কোল থেকে বৃষ্টি নেমে আয়;

খোকা-খুকি বৃষ্টিকে ডাকতে শুরু করেছে।।

২০ই মে, ২০২০

এছাড়াও আমার অন্যান্য কবিতা ও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

আমি কবি(Ami Kobi) – প্রেমেন্দ্র মিত্র (Premendra Mitra)

আমি কবি যত কামারের আর কাঁসারির আর

ছুতোরের মুটে মজুরের,

—-আমি কবি যত ইতরের!

আমি কবি ভাই কর্মের আর ঘর্মের;

বিলাস- বিবশ মর্মের যত স্বপ্নের তরে,ভাই,

সময় যে হয় নাই!

মাটি মাগে ভাই হলের আঘাত

সাগর মাগিছে হাল,

পাতালপুরীর বন্দিনী ধাতু,

মানুষের লাগি কাঁদিয়া কাটায় কাল।

দুরন্ত নদী সেতু বন্ধনে বাঁধা যে পড়িতে চায়,

নেহারি আলসে নিখিল মাধুরী—-

সময় নাহি যে হায়!

মাটির বাসনা পুরাতে ঘুরাই

কুম্ভকারের চাকা,

আকাশের ডাকে গড়ি আর মেলি

দুঃসাহসের পাখা,

অভ্রংলিহ মিনার -দম্ভ তুলি,

ধরনীর গূঢ় আশায় দেখাই উদ্ধৃত আঙ্গলি!

আমি কবি ভাই কামারের আর কাঁসারির

আর ছুতোরের, মুটে মজুরের,

—-আমি কবি যত ইতরের।

এছাড়াও জনপ্রিয় কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র – এর অন্যান্য কবিতা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বটবৃক্ষ (Bot Brikhaw) ~ নিবেদিতা অধিকারী (Nibedita Adhikary)

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ৫ই জুন, ২০২০, উপলক্ষে আমার নিজেরই রচিত/লেখা গাছের প্রতি একটি ভালোলাগার কবিতা বটবৃক্ষ।

বটগাছ, বটগাছ
বহু শাখা-প্রশাখা, পাতা ও ফুল-ফল ভর্তি তোমার ;
এক পায়ের থাকো দাঁড়িয়ে !
তুমি সারাক্ষণ এক নির্দিষ্ট জায়গায় ।
আমি কেন পারি না তোমার মতো—
এক নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে ?

বটগাছ যাবে তুমি আমার সাথে বেড়াতে
তোমার তো হাত-পা নেই,
তুমি তো কথাও বলতে পারো না,
তুমি থাকো এই স্থানে ।।

ভাল লাগে না আমার মন-মেজাজ ;
সব গাছ, বাড়ি, রাস্তা ও ঘাট পেরিয়ে
বেড়াতে যাবো আমি দূর-দূরান্তে ।
বেড়িয়ে এসে তোমায় যেন আমি—
দেখতে পায় এই স্থানে একই ভাবে ।।

কবি নিবেদিতা অধিকারী (Nibedita Adhikary) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে হলে এখানে ক্লিক করুন।

জামরুল (Jamrul) ~নিবেদিতা অধিকারী (Nibedita Adhikary)

দেখতে খুবসুন্দর
খেতে ভারি মিষ্টি!
আমাদের বাড়ির
বাগানের জামরুল।।
যে খায় একবার
সে চায় বারবার।।
আহা! কি দারুণ
মিষ্টি মিষ্টি।
ভারি মিষ্টি।।

প্রথম কবিতাঃ ২৮ই এপ্রিল, ২০২০,(১৫ই বৈশাখ, ১৪২৭)।

কবি নিবেদিতা অধিকারী (Nibedita Adhikary) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।