Sukanta Bhattacharya Kobita ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য কবিতা

সুকান্ত ভট্টাচার্য জীবনী, এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য বিখ্যাত কবিতা (Sukanta Bhattacharya Kobita) সমূহ গুলো নিচে দেওয়া হলো। All the selected poems of sukanta bhattacharya in bengali are listed below.

সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)
উৎস: উইকিপিডিয়া

সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৫ আগস্ট ১৯২৬ সালে কলিকাতার কালীঘাটের ৪৩, মহিম হালদার স্ট্রীটের মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি প্রথম ম্যালেরিয়া ও পরে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে, ১৯৪৭ সালে ১৩ই মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলকাতার ১১৯ লাউডট স্ট্রীটের রেড এড কিওর হোমে মৃত্যুবরণ করেন।

সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা সাহিত্যে প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি এবং মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী।

তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ-এর নাম – ছাড়পত্র(১৯৪৭), পূর্বাভাস(১৯৫০), ঘুম নেই(১৯৫০) ইত্যাদি।

কবিতা

Title

সুকান্ত ভট্টাচার্য -এর কবিতা সমূহ (Sukanta Bhattacharya Kobita)

Udyog (উদ্যোগ) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) উদ্যোগ (Udyog)

বন্ধু, তোমার ছাড়ো উদ্বেগ, সুতীক্ষ্ণ করো চিত্ত,
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত।
মূঢ় শত্রুকে হানো স্রোত রুখে, তন্দ্রাকে করো ছিন্ন,
একাগ্র দেশে শত্রুরা এসে হয়ে যাক নিশ্চিহ্ন।
ঘরে তোল ধান, বিপ্লবী প্রাণ প্রস্তুত রাখ কাস্তে,
গাও সারিগান, হাতিয়ারে শান দাও আজ উদয়াস্তে।
আজ দৃঢ় দাঁতে পুঞ্জিত হাতে প্রতিরোধ করো শক্ত,
প্রতি ঘাসে ঘাসে বিদ্যুৎ আসে জাগে সাড়া অব্যক্ত।
আজকে মজুর হতুড়ির সুর ক্রমশই করে দৃপ্ত,
আসে সংহতি; শত্রুর প্রতি ঘৃণা হয় নিক্ষিপ্ত।
ভীরু অন্যায় প্রাণ-বন্যায় জেনো আজ উচ্ছেদ্য,
বিপন্ন দেশে তাই নিঃশেষে ঢালো প্রাণ দুর্ভেদ্য!
সব প্রস্তুত যুদ্ধের দূত হানা দেয় পুব-দরজায়,
ফেনী ও আসামে, চট্টগ্রামে ক্ষিপ্ত জনতা গর্জায়।
বন্ধু, তোমারা ছাড়ো উদ্বেগ সুতীক্ষ্ণ করো চিত্ত,
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত।।

   (পূর্বাভাস কাব্যগ্রন্থ)

উদ্যোগ (Udyog) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Oitihashik (ঐতিহাসিক) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ঐতিহাসিক (Oitihashik)

আজ এসেছি তোমাদের ঘরে ঘরে
পৃথিবীর আদালতের পরোয়ানা নিয়ে
তোমরা কি দেবে আমার প্রশ্নের কৈফিয়ৎঃ
কেন মৃত্যুকীর্ণ শবে ভরলো পঞ্চাশ সাল?
আজ বাহান্ন সালের সূচনায় কি তার উত্তর দেবে?
জানি! স্তব্ধ হয়ে গেছে তোমাদের অগ্রগতির স্রোত,
তাই দীর্ঘশ্বাসের ধোঁয়ায় কালো করছ ভবিষ্যৎ
আর অনুশোচনার আগুনে ছাই হচ্ছে উৎসাহের কয়লা।
কিন্তু ভেবে দেখেছ কি?
দেরি হয়ে গেছে অনেক, অনেক দেরি!
লাইনে দাঁড়ানো অভ্যেস কর নি কোনোদিন,
একটি মাত্র লক্ষ্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
মারামারি করেছ পরস্পর,
তোমাদের ঐক্যহীন বিশৃঙ্খলা দেখে
বন্ধ হয়ে গেছে মুক্তির দোকানের ঝাঁপ।
কেবল বঞ্চিত বিহ্বল বিমূঢ় জিজ্ঞাসাভরা চোখে
প্রত্যেকে চেয়েছ প্রত্যেকের দিকেঃ
-কেন এমন হল?

একদা দুর্ভিক্ষ এল
ক্ষুদার মাহীন তাড়নায়
পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁষি সবাই দাঁড়ালে একই লাইনে
ইতর-ভদ্র, হিন্দু আর মুসলমান
একই বাতাসে নিলে নিঃশ্বাস।
চাল, চিনি, কয়লা, কেরোসিন?
এ সব দুষ্প্রাপ্য জিনিসের জন্য চাই লাইন।
কিন্তু বুঝলে না মুক্তিও দুর্লভ আর দুর্মূল্য,
তারো জন্যে চাই চল্লিশ কোটির দীর্ঘ, অবিচ্ছিন্ন এক লাইন।

মূর্খ তোমরা
লাইন দিলেঃ কিন্তু মুক্তির বদলে কিনলে মৃত্যু,
রক্তয়ের বদলে পেলে প্রবঞ্চনা।
ইতিমধ্যে তোমাদের বিবদমান বিশৃঙ্খল ভিড়ে
মুক্তি উঁকি দিয়ে গেছে বহুবার।
লাইনে দাঁড়ানো আয়ত্ত করেছে যারা,
সোভিয়েট, পোল্যান্ড, ফ্রান্স
রক্তমূল্যে তারা কিনে নিয়ে গেল তাদের মুক্তি
সর্ব প্রথম এই পৃথিবীর দোকান থেকে।
এখনো এই লাইনে অনেকে প্রতীক্ষমান,
প্রার্থী অনেক; কিন্তু পরিমিত মুক্তি।
হয়তো এই বিশ্বব্যাপী লাইনের শেষে
এখনো তোমাদের স্থান হতে পারে-
এ কথা ঘোষণা ক'রে দাও তোমাদের দেশময়
প্রতিবেশীর কাছে।
তারপর নিঃশব্দে দাঁড়াও এ লাইনে প্রতিজ্ঞা
আর প্রতীক্ষা নিয়ে
হাতের মুঠোয় তৈরী রেখে প্রত্যেকের প্রাণ।
আমি ইতিহাস, আমার কথাটা একবার ভেবে দেখো,
মনে রেখো, দেরি হয়ে গেছে, অনেক অনেক দেরি।
আর মনে ক'রো আকাশে আছে এক ধ্রুব নক্ষত্র,
নদীর ধারায় আছে গতির নির্দেশ,
অরণ্যের মর্মরধ্বনিতে আছে আন্দোলনের ভাষা,
আর আছে পৃথিবীর চিরকালের আবর্তন।।

ঐতিহাসিক (Oitihashik) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bibriti (বিবৃতি) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বিবৃতি (Bibriti)

আমার সোনার দেশে অবশেষে মন্বন্তর নামে,
জমে ভিড় ভ্রষ্টনীড় নগরে ও গ্রামে,
দুর্ভিক্ষের জীবন্ত মিছিল,
প্রত্যেক নিরন্ন প্রাণে বয়ে আনে অনিবার্য মিল।

আহার্যের অন্বেষণে প্রতি মনে আদিম আগ্রহ
রাস্তায় রাস্তায় আনে প্রতিদিন নগ্ন সমারোহ;
বুভুক্ষা বেঁধেছে বাসা পথের দু’পাশে,
প্রত্যহ বিষাক্ত বায়ু ইতস্তত ব্যর্থ দীর্ঘশ্বাসে।

মধ্যবিত্ত ধূর্ত সুখ ক্রমে ক্রমে আবরণহীন
নিঃশব্দে ঘোষণা করে দারুণ দুর্দিন,
পথে পথে দলে দলে কঙ্কালের শোভাযাত্রা চলে,
দুর্ভিক্ষ গুঞ্জন তোলে আতঙ্কিত অন্দরমহলে!
দুয়ারে দুয়ারে ব্যগ্র উপবাসী প্রত্যাশীর দল,
নিষ্ফল প্রার্থনা-ক্লান্ত, তীব্র ক্ষুধা অন্তিম সম্বল;
রাজপথে মৃতদেহ উগ্র দিবালোকে,
বিস্ময় নিক্ষেপ করে অনভ্যস্ত চোখে।
পরন্তু এদেশে আজ হিংস্র শত্রু আক্রমণ করে,
বিপুল মৃত্যুর স্রোত টান দেয় প্রাণের শিকড়ে,
নিয়ত অন্যায় হানে জরাগ্রস্ত বিদেশী শাসন,
ক্ষীণায়ু কোষ্ঠীতে নেই ধ্বংস-গর্ভ সংকটনাশন।
সহসা অনেক রাত্রে দেশদ্রোহী ঘাতকের হাতে
দেশপ্রেমে দৃপ্তপ্রাণ রক্ত ঢালে সূর্যের সাক্ষাতে।

তবুও প্রতিজ্ঞা ফেরে বাতাসে নিভৃত,
এখানে চল্লিশ কোটি এখনো জীবিত,
ভারতবর্ষের ‘পরে গলিত সূর্য ঝরে আজ-
দিগ্বিদিকে উঠেছে আওয়াজ,
রক্তে আনো লাল,
রাত্রির গভীর বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে আনো ফুটন্ত সকাল।
উদ্ধত প্রাণের বেগে উন্মুখর আমার এ দেশ,
আমার বিধ্বস্ত প্রাণে দৃঢ়তার এসেছে নির্দেশ।

আজকে মজুর ভাই দেশময় তুচ্ছ করে প্রাণ,
কারখানায় কারখানায় তোলে ঐক্যতান।
অভুক্ত কৃষক আজ সূচীমুখ লাঙলের মুখে
নির্ভয়ে রচনা করে জঙ্গী কাব্য এ মাটির বুকে।
আজকে আসন্ন মুক্তি দূর থেকে দৃষ্টি দেয় শ্যেন,
এদেশে ভাণ্ডার ভ’রে দেবে জানি নতুন য়ূক্রেন।

নিরন্ন আমার দেশে আজ তাই উদ্ধত জেহাদ,
টলোমলো এ দুর্দিন, থরোথরো জীর্ণ বনিয়াদ।
তাইতো রক্তের স্রোতে শুনি পদধ্বনি
বিক্ষুব্ধ টাইফুন-মত্ত চঞ্চল ধমনী:
বিপন্ন পৃথ্বীর আজ শুনি শেষ মুহুর্মুহু ডাক
আমাদের দৃপ্ত মুঠি আজ তার উত্তর পাঠাক।
ফিরুক দুয়ার থেকে সন্ধানী মৃত্যুর পরোয়ানা,
ব্যর্থ হোক কুচক্রান্ত, অবিরাম বিপক্ষের হানা।।

কাব্যগ্রন্থঃ- ছাড়পত্র

বিবৃতি (Bibriti) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Sohosa (সহসা) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সহসা (Sohosa)

আমার গোপন সূর্য হল অস্তগামী
এপারে মর্মরধ্বনি শুনি,
নিস্পন্দ শবের রাজ্য হতে
ক্লান্ত চোখে তাকাল শকুনি।

গোদূলি আকাশ ব’লে দিল
তোমার মরণ অতি কাছে,
তোমার বিশাল পৃথিবীতে
এখনো বসন্ত বেঁচে আছে।

অদূরে নিবিড় ঝাউবনে
যে কালো ঘিরেছে নীরবতা,
চোখ তারই দীর্ঘায়িত পথে
অস্পষ্ট ভাষায় কয় কথা।

আমার দিনান্ত নামে ধীরে
আমি তো সুদূর পরাহত,
অশত্থশাখায় কালো পাখি
দুশ্চিন্তা ছড়ায় অবিরত।

সন্ধ্যাবেলা, আজ সন্ধ্যাবেলা
নিষ্ঠুর তমিস্রা ঘনাল কী!
মরণ পশ্চাতে বুঝি ছিল
সহসা উদার চোখাচোখি।।

   (পূর্বাভাস কাব্যগ্রন্থ)

সহসা (Sohosa) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Deshlai Kathi (দেশলাই কাঠি) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) দেশলাই কাঠি (Deshlai Kathi)

আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি
এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি নাঃ
তবু জেনো
মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ-
বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস;
আমি একটা দেশলাইয়ের কাঠি।

মনে আছে সেদিন হুলস্থূল বেধেছিল?
ঘরের কোণে জ্বলে উঠেছিল আগুন-
আমাকে অবজ্ঞাভরে না-নিভিয়ে ছুঁড়ে ফেলায়!
কত ঘরকে দিয়েছি পুড়িয়ে,
কত প্রাসাদকে করেছি ধূলিসাৎ
আমি একাই- ছোট্ট একটা দেশলাই কাঠি।

এমনি বহু নগর, বহু রাজ্যকে দিতে পারি ছারখার করে
তবুও অবজ্ঞা করবে আমাদের?
মনে নেই? এই সেদিন-
আমরা সবাই জ্বলে উঠেছিলাম একই বাক্সে;
চমকে উঠেছিলে-
আমরা শুনেছিলাম তোমাদের বিবর্ণ মুখের আর্তনাদ।

আমাদের কী অসীম শক্তি
তা তো অনুভব করেছ বারংবার;
তবু কেন বোঝো না,
আমরা বন্দী থাকবো না তোমাদের পকেটে পকেটে,
আমরা বেরিয়ে পড়ব, আমরা ছড়িয়ে পড়ব
শহরে, গঞ্জে , গ্রামে- দিগন্ত থেকে দিগন্তে।
আমরা বার বার জ্বলি, নিতান্ত অবহেলায়
তা তো তোমরা জানোই!
কিন্তু তোমরা তো জানো না:
কবে আমরা জ্বলে উঠব-
সবাই শেষবারের মতো!

কাব্যগ্রন্থঃ- ছাড়পত্র

দেশলাই কাঠি (Deshlai Kathi) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Budbud Matro (বুদ্বুদ মাত্র) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বুদ্বুদ মাত্র (Budbud Matro)

মৃত্যুকে ভুলেছ তুমি তাই,
তোমার অশান্ত মনে বিপ্লব বিরাজে সর্বদাই।
প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা মৃত্যুকে স্মরণ ক’রো মনে,
মুহূর্তে মুহূর্তে মিথ্যা জীবন ক্ষরণে, –
তারি তরে পাতা সিংহাসন,
রাত্রি দিন অসাধ্য সাধন।
তবুও প্রচণ্ড-গতি জীবনের ধরা,
নিয়ত কালের কীর্তি দিতেছে পাহারা,
জন্মের প্রথম কাল হতে,
আমরা বুদ্বুদ মাত্র জীবনের স্রোতে।
এ পৃথিবী অত্যন্ত কুশলী,
যেখানে কীর্তির নামাবলী,
আমাদের স্থান নেই সেথা –
আমরা শক্তের ভক্ত, নহি তো বিজেতা।।

   (পূর্বাভাস কাব্যগ্রন্থ)

বুদ্বুদ মাত্র (Budbud Matro) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Europe Er Uddeshe (ইউরোপের উদ্দেশে) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ইউরোপের উদ্দেশে (Europe Er Uddeshe)

ওখানে এখন মে-মাস তুষার-গলানো দিন,
এখানে অগ্নি-ঝরা বৈশাখ নিদ্রাহীন;
হয়তো ওখানে শুরু মন্থর দক্ষিণ হাওয়া;
এখানে বোশেখী ঝড়ের ঝাপ্টা পশ্চাৎ দাওয়া;
এখানে সেখানে ফুল ফোটে আজ তোমাদের দেশে
কত রঙ, কত বিচিত্র নিশি দেখা দেয় এসে।
ঘর ছেড়ে পথে বেরিয়ে পড়েছে কত ছেলেমেয়ে
এই বসন্তে কত উৎসব কত গান গেয়ে।
এখানে তো ফুল শুকনো, ধূসর রঙের ধুলোয়
খাঁ-খাঁ করে সারা দেশটা, শান্তি গিয়েছে চুলোয়।
কঠিন রোদের ভয়ে ছেলেমেয়ে বন্ধ ঘরে,
সব চুপচাপ; জাগবে হয়তো বোশেখী ঝড়ে।
অনেক খাটুনি, অনেক লড়াই করার শেষে
চারিদিকে ক্রমে ফুলের বাগান তোমাদের দেশে;
এদেশে যুদ্ধ মহামারী, ভুখা জ্বলে হাড়ে হাড়ে-
অগ্নিবর্ষী গ্রীষ্মের মাঠে তাই ঘুম কাড়ে
বেপরোয়া প্রাণ; জমে দিকে দিকে আজ লাখে লাখে-
তোমাদের দেশে মে-মাস; এখানে ঝোড়ো বৈশাখ।।

ইউরোপের উদ্দেশে (Europe Er Uddeshe) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Potro (পত্র) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পত্র (Potro)

কাশী গিয়ে হু হু ক’রে কাটলো কয়েক মাস তো,
কেমন আছে মেজাজ ও মন, কেমন আছে স্বাস্থ্য?
বেজায় রকম ঠাণ্ডা সবাই করছে তো বরদাস্ত?
খাচ্ছে সবাই সস্তা জিনিস, খাচ্ছে পাঁঠা আস্ত?

সেলাই কলের কথাটুকু মেজদার দু’কান
স্পর্শ ক’রে গেছে বলেই আমার অনুমান৷
ব্যবস্থাটা হবেই, করি অভয় বর দান;
আশা করি, শুনে হবে উল্লসিত প্রাণ৷
এতটা কাল ঠাকুর ও ঝি লোভ সামলে আসতো,
এবার বুঝি লোভের দায়ে হয় তারা বরখাস্ত৷

চারুটাও হয়ে গেছে বেজায় বেয়াড়া,
মাথার ওপরে ঝোলে যা খুশির খাঁড়া৷
নতেদা’র বেড়ে গেছে অঙ্গুলি হাড়া,
ঘেলুর পরীক্ষাও হয়ে গেছে সারা;
এবার খরচ ক’রে কিছু রেল-ভাড়া
মাতিয়ে তুলতে বলি রামধন পাড়া৷

এবার বোধহয় ছাড়তে হল কাশী,
ছাড়তে হল শৈলর মা, ইন্দু ও ন’মাসি৷
দুঃখ কিসের, কেউ কি সেথায় থাকে বারোমাসই?
কাশী থাকতে চাইবে তারা যারা স্বর্গবাসী,
আমি কিন্তু কলকাতাতেই থাকতে ভালবাসি৷
আমার যুক্তি শুনতে গিয়ে পাচ্ছে কি খুব হাসি?
লেখা বন্ধ হোক তা হলে, এবার আমি আসি॥

১৯৪৫ সালে সুকান্ত মেজবৌদি রেণু দেবীর সঙ্গে কাশী বেড়াতে যান৷ সুকান্ত ফিরে এসে শ্যামবাজারের বাড়ি থেকে এই চিঠিটি তাঁকে লিখেছিলেন৷ চিঠিটি রাখাল ভট্টাচার্য স্মৃতি থেকে উদ্ধার করে দিয়েছেন৷

পত্র (Potro) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Poravob (পরাভব) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পরাভব (Poravob)

হঠাৎ ফাল্গুনী হাওয়া ব্যাধিগ্রস্ত কলির সন্ধ্যায়ঃ
নগরে নগররক্ষী পদাতিক পদধ্বনি শুনি; –
দুরাগত স্বপ্নের কী দুর্দিন, – মহামারী,অন্তরে বিক্ষোভ –
অবসন্ন বিলাসের সংকুচিত প্রাণ।
ব্যক্তিত্বের গাত্রদাহ; রন্ধ্রহীন স্বধর্ম বিকাশ
অতীতের ভগ্ননীড় এইবার সুপুষ্ট সন্ধ্যায়।
বণিকের চোখে আজ কী দুরন্ত লোভ ঝ’রে পরে, –
বৈশাখের ঝড়ে তারই অস্পষ্ট চেতনা।
ক্ষয়িষ্ণু দিনেরা কাঁদে অনর্থক প্রসব ব্যথায়….
নশ্বর পৌষের দিন চারিদিকে ধূর্তের সমতাঃ
জটিল আবর্তে শুধু নৈমিত্তিক প্রাণের স্পন্দন।
গলিত উদ্যম তাই বৈরাগ্যের ভান, –
প্রকাশ্য ভিক্ষার ঝুলি কালক্রমে অত্যন্ত উদার;
সংক্রামিত রক্ত-রোগ পৃথিবীর প্রতি ধমনীতে।
শোকাচ্ছন্ন আমাদের সনাতন মন,
পৃথিবীর সম্ভাবিত অকাল মৃত্যুতে,
দুর্দিনের সমন্বয়, সম্মুখেতে অনন্ত প্রহর।
বিজিগীষা? – সন্দিহান আগামী দিনেরাঃ
দৃষ্টিপথ অন্ধকার, (লাল-সূর্য মুক্তির প্রতীক?
-আজ তবে প্রতীক্ষায় আমাদের অরণ্যবাসর।)

   (পূর্বাভাস কাব্যগ্রন্থ)

পরাভব (Poravob) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Deyalika (দেয়ালিকা) ~ সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) দেয়ালিকা (Deyalika)

এক
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে
লিখি কথা।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার
স্বাধীনতা।

দুই
সকালে বিকালে মনের খেয়ালে
ইঁদারায়
দাঁড়িয়ে থাকলে অর্থটা তার
কি দাঁড়ায়?

তিন
কখন বাজল ছ’টা
প্রাসাদে প্রাসাদে ঝলসায় দেখি
শেষ সূর্যের ছটা –
স্তিমিত দিনের উদ্ধত ঘনঘটা।

চার
বেজে চলে রেডিও
সর্বদা গোলমাল করতেই
‘রেডি’ ও।

পাঁচ
জাপানী গো জাপানী
ভারতবর্ষে আসতে কি শেষ
ধরে গেল হাঁপানী?

ছয়
জার্মানী গো জার্মানী
তুমি ছিলে অজেয় বীর
এ কথা আজ আর মানি!

সাত
হে রাজকন্যে
তোমার জন্যে
এ জনারণ্যে
নেইকো ঠাঁই-
জানাই তাই।

আট
আঁধিয়ারে কেঁদে কয় সল্‌তেঃ
‘চাইনে চাইনে আমি জ্বলতে।’

   (পূর্বাভাস কাব্যগ্রন্থ)

দেয়ালিকা (Deyalika) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)-এর অন্যান্য কবিতা,গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।