Sukumar Ray Poems ~ সুকুমার রায় কবিতা

সুকুমার রায় সংক্ষিপ্ত জীবনী, শিশু ও বয়স্কদের সুকুমার রায় কবিতা নীচে দেওয়া হয়েছে। Sukumar Roy short biography with Sukumar Ray poems for children and adults are given below.

সুকুমার রায় (Sukumar Ray)
উৎস: উইকিপিডিয়া

সুকুমার রায় (Sukumar Ray) ৩০শে অক্টোবর, ১৮৮৭ সালে, কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯২৩ সালে, ১০ই সেপ্টেম্বর কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে সুকুমার রায় ১০০ নং গড়পার রোড, কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সুকুমার রায়ের ছদ্মনাম উহ্যনাম পন্ডিত

তিনি সাহিত্যে একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক।

বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম ননসেন্স ছড়ার প্রবর্তন করেন সুকুমার রায়।

তাঁর লেখা প্রথম ও একমাত্র বিখ্যাত “ননসেন্স ছড়া” সংকলন আবোল তাবোল, ১৯২৩ সালে, ইউ রায় এন্ড সন্স, থেকে প্রকাশিত হয়।

আবোল তাবোল ছড়ার বইটি শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার দাবিদার করে নেয়।

সুকুমার রায়ের রচিত একটি রম্য রচনা- হ য ব র ল। এটি বাংলা সাহিত্যের ননসেন্স ধারার একটি শ্রেষ্ঠ রচনা।

সুকুমার রায়ের শ্রেষ্ঠ একটি কাল্পনিক গল্প সংকলনের নাম- পাগলা দাশু

সুকুমার রায়ইকে বিশ্বসাহিত্যে সর্ব যুগের সেরা “ননসেন্স” ধরনের ব্যঙ্গাত্মক জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিকদের অন্যতম একজন বলে মনে করা হয়।

কবিতা

Title

সুকুমার রায় -এর কবিতা সমূহ (Sukumar Ray Poems)

Baburam Shapure (বাবুরাম সাপুড়ে) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বাবুরাম সাপুড়ে (Baburam Shapure)

বাবুরাম সাপুড়ে,
             কোথা যাস্‌ বাপুরে?
আয় বাবা দেখে যা,
             দুটো সাপ রেখে যা!
যে সাপের চোখ্‌ নেই,
             শিং নেই নোখ্‌ নেই,
ছোটে নাকি হাঁটে না,
             কাউকে যে কাটে না,
করে নাকো ফোঁস ফাঁস,
             মারে নাকো ঢুঁশ্‌ ঢাঁশ্‌,
নেই কোন উৎপাত,
             খায় শুধু দুধভাত–
সেই সাপ জ্যাম্ত
             গোটা দুই আনত?
তেড়ে মেরে ডাণ্ডা
             ক'রে দেই ঠাণ্ডা।

বাবুরাম সাপুড়ে (Baburam Shapure) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bishom Voj (বিষম ভোজ) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বিষম ভোজ (Bishom Voj)

“অবাক কান্ড!” বল্‌লে পিসী, “এক চাঙাড়ি মেঠাই এল-
এই ছিল সব খাটের তলায়, এক নিমিষে কোথায় গেল?”
সত্যি বটে বললে খুড়ী, “আনলো দু’সের মিঠাই কিনে-
হঠাৎ কোথায় উপসে গেল? ভেল্কিবাজি দুপুর দিনে?”
“দাঁড়াও দেখি” বল্‌লে দাদা, “কর্‌ছি আমি এর কিনারা-
কোথায় গেল পটলা ট্যাঁপা – পাচ্ছিনে যে তাদের সাড়া?”
পর্দাঘেরা আড়াল দেওয়া বারান্দাটার ঐ কোণেতে
চল্‌ছে কি সব ফিস্ ফ্সি্ ফিস্ শুনলে দাদা কানটি পেতে।
পটলা ট্যাঁপা ব্যস্ত দুজন ট্প্‌টপাটপ্ মিঠাই ভোজে,
হঠাৎ দেখে কার দুটো হাত এগিয়ে তাদের কানটি খোঁজে।
কানের উপর প্যাঁচ্ ঘুরাতেই দু চোখ বেয়ে অশ্রু ছোটে,
গিলবে কি ছাই মুখের মিঠাই ,কান বুঝি যায় টানের চোটে।
পটল বাবুর হোম্‌রা গলা মিল্‌ল ট্যাঁপার চিকন সুরে
জাগ্‌ল করুন রাগরাগিণী বিকট তানে আকাশ জুড়ে।

   (অন্যান্য ছড়াসমূহ)

বিষম ভোজ (Bishom Voj) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Koto Boro (কত বড়) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) কত বড় (Koto Boro)

ছোট্ট সে একরতি ইঁদুরের ছানা,
ফোটে নাই চোখ তার, একেবারে কানা।
ভাঙা এক দেরাজের ঝুলমাখা কোণে
মার বুকে শুয়ে শুয়ে মার কথা শোনে।

যেই তার চোখ ফোটে সেই দেখে চেয়ে-
দেরাজের ভারি কাঠ চারিদিক ছেয়ে।
চেয়ে বলে মেলি তার গোল গোল আঁখি-
"ওরে বাবা! পৃথিবীটা এত বড় নাকি?"

কত বড় (Koto Boro) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Tik Tik Tong (টিক্‌ টিক্‌ টং) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) টিক্‌ টিক্‌ টং (Tik Tik Tong)

টিক্‌ টিক্‌ চলে ঘড়ি, টিক্‌ টিক্‌ টিক্‌,
একটা ইঁদুর এল সে সময়ে ঠিক।
ঘড়ি দেখে একলাফে তাহাতে চড়িল,
টং করে অমনি ঘড়ি বাজিয়া উঠিল।
অমনি ইঁদুরভায়া ল্যাজ গুটাইয়া,
ঘড়ির উপর থেকে পড়ে লাফাইয়া।
ছুটিয়া পালায়ে গেল আর না আসিল,
টিক্‌ টিক্‌ টিক্‌ ঘড়ি চলিতে লাগিল।।

টিক্‌ টিক্‌ টং (Tik Tik Tong) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Hite Biporit (হিতে-বিপরীত) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) হিতে-বিপরীত (Hite Biporit)

ওরে ছাগল, বল্‌ত আগে
সুড় সুড়িটা কেমন লাগে?
কই গেল তোর জারিজুরি
লম্ফঝম্ফ বাহাদুরি।
নিত্যি যে তুই আসতি তেড়ে
শিং নেড়ে আর দাড়ি নেড়ে,
ওরে ছাগল করবি রে কি?
গুঁতোবি তো আয়না দেখি।

হাঁ হাঁ হাঁ, এ কেমন কথা ?
এমন ধারা অভদ্রতা!
শান্ত যারা ইতরপ্রাণী,
তাদের পরে চোখরাঙানি!
ঠান্ডা মেজাজ কয় না কিছু,
লাগতে গেছে তারই পিছু?
শিক্ষা তোদের এম্নিতর
ছি-ছি-ছি! লজ্জা বড়।

ছাগল ভাবে সামনে একি!
একটুখানি গুতিয়ে দেখি।
গুতোর চোটে ধড়াধ্বড়
হুড়মুড়িয়ে ধুলোয় পড়।
তবে রে পাজি লক্ষ্মীছাড়া,
আমার পরেই বিদ্যেঝড়া,
পাত্রাপাত্র নাই কিরে হুঁশ্
দে দমাদম্ ধুপুস্ ধাপুস্।

হিতে-বিপরীত (Hite Biporit) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Shri Gobindo Kotha (শ্রীগোবিন্দ-কথা) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) শ্রীগোবিন্দ-কথা (Shri Gobindo Kotha)

আমি অর্থাৎ শ্রীগোবিন্দ মানুষটি নই বাঁকা!
যা বলি তা ভেবেই বলি, কথায় নেইক ফাঁকা।
এখনকার সব সাহেবসুবো, সবাই আমায় চেনে
দেখ্তে চাও ত দিতে পারি সাটিফিকেট এনে।
ভাগ্য আমায় দেয়নি বটে করতে বি-এ পাশ,
তাই বলে কি সময় কাটাই কেটে ঘোড়ার ঘাস?
লোকে যে কয় বিদ্যে আমার 'কথামালা'ই শেষ-
এর মধ্যে সত্যি কথা নেইক বিন্দুলেশ।
ওদের পাড়ার লাইব্রেরিতে কেতাব আছে যত
কেউ পড়েছে তন্নতন্ন করে আমায় মতো?
আমি অর্থাৎ শ্রীগোবিন্দ এমনি পড়ার যম
পড়াশুনো নয়ক আমার কারুর চেয়ে কম।
কতকটা এই দেখেশিখে কতক পড়েশুনে,
কতক হয়ত স্বাভাবিকী প্রতিভারই গুণে
উন্নতিটা করছি যেমন আশ্চর্য তা ভারি,
নিজের মুখে সব কথা তার বলতে কি আর পারি?
বলে গেছেন চন্ডীপতি কিংবা অন্য কেউ
"আকাশ জুড়ে মেঘের বাসা, সাগরভরা ঢেউ,
জীবনটাও তেমনি ঠাসা কেবল বিনা কাজে-
যেদিক দিয়ে খরচ করি সেই খরচই বাজে!"
আমি অর্থাৎ শ্রীগোবিন্দ চলতে ফিরতে শুতে
জীবনটাকে হাঁকাই নেকো মনের রথে জুতে।

হাইড্রোজেনের দুই বাবাজি অক্সিজেনের এক
নৃত্য কবেন গলাগলি কান্ডখানা দেখ্,
আহাদেতে এক্‌সা হলে গলে হলেন জল
এই সুযোগে সুবোধ শিশু "শ্রীগোবিন্দ" বল্।

শ্রীগোবিন্দ-কথা (Shri Gobindo Kotha) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Foshke Gelo (ফসকে গেল) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ফসকে গেল (Foshke Gelo)

দেখ বাবাজি দেখবি নাকি দেখরে খেলা দেখ চালাকি,
ভোজের বাজি ভেল্কি ফাঁকি পড়্ পড়্ পড়্ পড়বি পাখি – ধপ্!
লাফ দিয়ে তাই তালটি ঠুকে তাক করে যাই তীর ধনুকে,
ছাড়ব সটান উর্ধ্বমুখে হুশ করে তোর লাগবে বুকে – খপ্!
গুড়্ গুড়্ গুড়্ গুড়িয়ে হামা খাপ্ পেতেছেন গোষ্ঠ মামা
এগিয়ে আছেন বাগিয়ে ধামা এইবার বাণ চিড়িয়া নামা – চট্!
ঐ যা! গেল ফস্কে ফেঁসে – হেই মামা তুই ক্ষেপলি শেষে?
ঘ্যাচঁ করে তোর পাঁজর ঘেঁষে লাগ্‌ল কি বাণ ছটকে এসে- ফট্?

ফসকে গেল (Foshke Gelo) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Grishmo (গ্রীষ্ম) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) গ্রীষ্ম (Grishmo)

রৌদ্র ঝলে আকাশতলে অগ্নি জ্বলে জলেস্থলে।
ফেল্‌ছে আকাশ তপ্ত নিশাস ছুট্‌ছে বাতাস ঝলসিয়ে ঘাস,
ফুলের বিতান শুক্‌নো শ্মশান যায় বুঝি প্রাণ হায় ভগবান।
দারুণ তৃষায় ফির্‌ছে সবায় জল নাহি পায় হায় কি উপায়,
তাপের চোটে কথা না ফোটে হাঁপিয়ে ওঠে ঘর্ম ছোটে।
বৈশাখী ঝড় বাধায় রগড় করে ধড়্‌ফড়্‌ ধরার পাঁজর,
দশ দিক হয় ঘোর ধূলিময় জাগে মহাভয় হেরি সে প্রলয়,
করি তোলপাড় বাগান বাদাড় ওঠে বারবার ঘন হুঙ্কার,
শুনি নিয়তই থাকি থাকি ওই হাঁকে হৈ হৈ মাভৈ মাভৈঃ।

গ্রীষ্ম (Grishmo) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bujhbar Vul (বুঝবার ভুল) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বুঝবার ভুল (Bujhbar Vul)

এমনি পড়ায় মন বসেছে, পড়ার নেশায় টিফিন ভোলে।
সাম্‌নে গিয়ে উৎসাহ দেই মিষ্টি দুটো বাক্য বলে।

পড়্‌ছ বুঝি? বেশ বেশ বেশ! এক মনেতে পড়্‌লে পরে
"লক্ষ্মীছেলে– সোনার ছেলে" বলে সবাই আদর করে।

এ আবার কি? চিত্র নাকি? বাঁদর পাজি লক্ষ্মীছাড়া–
আমায় নিয়ে রংতামাসা! পিটিয়ে তোমায় কর্‌ছি খাড়া।

বুঝবার ভুল (Bujhbar Vul) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Shri Shri Bornomala Totto (শ্রীশ্রীবর্ণমালাতত্ত্ব) ~ সুকুমার রায় (Sukumar Ray)

কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) শ্রীশ্রীবর্ণমালাতত্ত্ব (Shri Shri Bornomala Totto)

পড় বিজ্ঞান হবে দিকজ্ঞান ঘুচিবে পথের ধাঁধা
দেখিবে গুণিয়া এ দিন দুনিয়া নিয়ম নিগড়ে বাঁধা।
কহে পন্ডিতে জড়সন্ধিতে বস্তুপিন্ড ফাঁকে
অনু অবকাশে রন্ধ্রে- রন্ধ্রে আকাশ লুকায়ে থাকে।
হেথা হেথা সেথা জড়ের পিন্ড আকাশ প্রলেপে ঢাকা
নয়কো কেবল নিরেট গাঁথন, নয়কো কেবলি ফাঁকা।
জড়ের বাঁধন বদ্ধ আকাশে, আকাশে বাঁধন জড়ে-
পৃথিবী জুড়িয়া সাগর যেমন, প্রাণটি যেমন ধড়ে।;
'ইথার' পাথারে তড়িত বিকারে জড়ের জীবন দোলে,
বিশ্ব – মোহের সুপ্তি ভাঙিছে সৃষ্টির কলরোলে।।

শুন শুন বার্তা নুতন, কে যেন স্বপন দিলা
ভাষা প্রাঙ্গণে স্বরে ব্যাঞ্জনে ছন্দ করেন লীলা ।
সৃষ্টি যেথায় জাগে নিরুপায় প্রলয় পয়োধি তীরে
তারি আশেপাশে অন্ধ হুতাশে আকাশ কাঁদিয়া ফিরে।
তাই ক্ষণে ক্ষণে জড়ো ব্যঞ্জনে স্বরের পরশ লাগে
তাই বারেবার মৃদু হাহাকার কলসংগীতে জাগে
স্বরব্যঞ্জন যেন দেহমনে জড়েতে চেতন বাণী
একে বিনা আর থাকিতে না পারে, প্রাণ লয়ে টানাটানি।
দোঁহি ছাড়ি দোঁহে, মূক রহে মোহে, ব্যঞ্জনে নাহি বুলি
স্বরের নিশাসে 'আহা' 'উহু' ভাষে ভাষার বারতা ভুলি।
ছিল অচেতন জগৎ যখন মগন আদিম ধুমে,
অরূপ তিমির স্তব্ধ বধির স্বপ্ন মদির ঘুমে:
আকুল গন্ধে আকাশ কুসুম উদাসে সকল দিশি,
অন্ধ জড়ের বিজন আড়ালে কে যেন রয়েছে মিশি!
স্তিমিত-স্বপ্ন স্বরের বর্ণ জড়ের বাধন ছিড়ি
ফিরে দিশাহারা কোথা ধ্রুবতারা কোথা র্স্বগের সিঁড়ি!
অ আ ই ঈ উ ঊ, হা হি হি হু হু হাল্কা শীতের হাওয়া
অলখচরণ প্রেতের চলন, নিঃশ্বাসে আসা যাওয়া ।
লেখে কি না খেলে ছায়ার আঙুলে বাতাসে বাজায় বীণা
আবেশ বিভোর আফিঙের ঘোর বস্তুত মন্ত্রহীনা।
ভাবে কুল নাই একা আসি যাই যুগে যুগে চিরদিন,
কাল হতে কালে আপনার তালে অনাহত বাধাহীন।।

অকুল অতলে অন্ধ অচলে অস্ফুট অমানিশি,
অরূপ আধারে আখি অগোচরে অনুতে অনুতে মিশি।

আসে যায় আসে অবশ আয়াশে আবেশ আকুল প্রাণে,
অতি আনমানা করে আনাগোনা অচেনা অজানা টানে,
আধো আধো ভাষা আলেয়ার আসা , আপনি আপনহারা
আদিম আলোতে আবছায়া পথে আকাশগঙ্গা- ধারা।

ইচ্ছা বিকল ইন্দ্রিয়দল, জড়িত ইন্দ্রজালে,
ঈশারা আভাসে ঈঙ্গিতে ভাষে রহ-রহ ইহকালে।

উড়ে ইতিউতি উতালা আকুতি উসখুস উকিঝুঁকি
উড়ে উচাটন, উড়ু উড়ু মন , উদাসে উধ্বমুখি।

এমন একেলা একা একা খেলা একুলে ওকুলে ফের
এপার ওপার এ যে একাকার একেরি একেলা হের।
হেরে একবার সবি একাকার একেরি এলাকা মাঝে
ঐ ওঠে শুনি, ওঙ্কার-ধ্বনি, একুলে ওকুলে বাজে।

ওরে মিথ্যা এ আকাশ-চারণ মিথ্যা তোদের খোঁজা,
স্বর্গ তোদের বস্তু সাধনে বহিতে জড়ের বোঝা।
আকাশ বিহানে বস্তু অচল, চলে না জড়ের চাকা,
আদুল আকাশে ফোকলা বাতাস কেবলি আওয়াজ ফাঁকা।

সৃষ্টিতত্ত্ব বিচার করনি শাস্ত্র পড়নি দাদা-
জড়ের পিন্ড আকাশে গুলিয়া ঠাসিবে ভাষার কাদা।
শাস্ত্রবিধান কর প্রণিধান ওরে উদাসীন অন্ধ,
ব্যঞ্জনস্বরে যেন হরিহরে কোথাও রবে না দ্বন্দ্ব।
মরমে মরমে সরম পরশে বাতাস লাগিয়ে হাড়ে,
ভাষার প্রবাহে পুলক- কম্পে জড়ের জতো ছাড়ে।
(তবে)আয় নেমে আয়, জড়ের সভায় , জীবন মরণ দোলে,
আয় নেমে আয়, ধরণীধুলায় কীর্তন কলরোলে।
আয় নেমে আয় রূপের মায়ায় অরূপ ইন্দ্রজালে
উল্কা ঝলকে থনল পুলকে আয় রে অশনিতালে।
আয় নেমে আয় কণ্ঠ্য বর্ণে কাকুতি করিছে সবে
আয় নেমে আয় র্ককশ ডাকে প্রভাতে কাকের রবে।

নামো নামো নমঃ সৃষ্টি প্রথম কারণ জলধি জলে
স্তব্দ তিমিরে প্রথম কাকলী প্রথম কৌতুহলে।
আদিম তমসে প্রথম বর্ণ কনক কিরণ মালা
প্রথম ক্ষুধিত বিশ্ব জঠরে প্রথম প্রশ্ন জ্বালা।

অকূল আঁধারে কুহকপাথারে কে আমি একেলা কবি
হেরি একাকার সকল আকার সকলি আপন ছবি ।
কহে,কই কে গো, কোথায় কবে গো ,কেন বা কাহারে ডাকি?
কহে কহ-কহ , কেন অহরহ ,কালের কবলে থাকি?
কহে কানে কানে করুণ কুজনে কলকল কত ভাষে,
কহে কোলাহলে কলহ কুহরে কাষ্ঠ কঠোর হাসে।
কহে কটঁমট কথা কাটা কাটা -কেওকেটাঁ কহ কারে ?
কাহার কদর কোকিল কণ্ঠে,কুন্দু কুসুম হারে?
কবি কল্পনে কাব্যে কলায় কাহারে করিছ সেবা
কুবের কতন কুঞ্জকাননে, কাঙালি কুটিরে কেবা ।
কায়দা কানুনে ,কার্য কারণে কীর্তিকলাপ মুলে ,
কেতাবে কোরানে কাগজে কলমে কাঁদায়ে কেরানীকুলে ।
কথা কাড়ি -কাড়ি কত কানাকড়ি কাজে কচু কাচকলা
কভু কাছাকোছা কোর্তা কলার কভু কৌপীন ঝোলা ।
কুৎসা -কথনে কুটিলে কৃপণে কুলীন কন্যাদায়ে
কর্মকান্ত কুলিম কান্ত,ক্লিষ্ট কাতর কায়ে ।
কলে কৌশলে ,কপট কোদলে ,কঠিনে কোমলে মিঠে
কেদ কুৎসিত ,কুষ্ঠ কলুষ কিলবিল কৃমি কীটে।
কহ সে কাহার কুহক পাথারু "কে আমি একেলা কবি ?
কেন একাকার সকল আকার সকলি আপন ছবি !"
'ক'-এর কাঁদনে ,কাংস্য-ক্বণনে বর্ণ লভিল কায়া
গহন শুন্যে জড়ের ধাক্কা কালের করাল ছায়া।
সুপ্ত গগনেকরুণ বেদনে বস্তুচেতন জাগে
অকাল ক্ষুধিত খাই খাই রবে বিশ্বে তরাস লাগে
আকাশ অবধি ঠেকিল জলধি,খেয়াল জেগেছে খ্যাপা
কারে খেতে চায় খুজে নাহি পায় দেখ কি বিষম হ্যাপা!
(খালি)কর্তালে কভু কীর্তন খোলে? খোলে দাও চাটিপেটা !
নামাও আসরে 'ক'এর দোসরে, খেঁদেলো খেদেলো খেঁটা।"
কহ মহামুনি কহ খুর শুনি 'খ'য়ের খবর খাঁটি
খামারে খোয়ারে খানায় খন্দে খুজিনু খয়ের ঘাঁটি।
কহেন বচন খুড়ে খন্‌খন্ পাখালি আঁখির দিঠি
খালি খ্যাঁচাখ্যাঁচি খামচাখামচি খুঁৎখূঁতি খিটিমিটি ।
এখনো খুলেনি মুখের খোলস? এখনো খোলেনি আখি?
নিক খেয়ালে পেখম ধরিয়া, কি খেলা খেলিল পাখি!
এখনও রাখনা ক্ষুধার খবর এখনও শেখনি ভাষা
পঞ্চকোষের মুখের খোসাতে অন্ন দেখনি ঠাসা?
খোল খরতালে খোলসা খেয়ালে 'খোল খোল খোল 'বলে ,
শখের খাঁচার খিড়কী খুলিয়া খঞ্জ খেয়াল চলে।
সে ক্ষুধায় পাখি পেখম খুলিয়া খাঁছায় খেমটা নাচে
আখেরী ক্ষুধায় সখের ভিখারী খাস্তা খাবার যাচে-
প্রখর-ক্ষুধিত তোখড় -খেয়াল -খেপিয়া রুখিল ত্বরা,
চাখিয়া দেখিল, খাসা এ অখিল খেয়ালে-রচিত ধারা ।
খুঁজে সুখে দুখে খেয়ালের ভুলে খেয়ালে নিরখি সবি ,
খেলার খেয়ালে নিখিল -খেয়াল লিখিল খেয়াল ছবি ।
খেলার লীলা খদ্যোৎ-শিখা খেয়াল খধুপ -ধুপে'
শিখী পাখা পরে নিখুত আখরে খচিত খেয়াল রূপে ।
খোদার উপরে খোদকারী করে ওরে ও ক্ষিপ্ত মতি
কীলিয়ে অকালে কাঁঠাল পাকালে আখেরে কি হবে গতি ?
খেয়ে খুরো চাঁটি খোল কহে খাঁটি, 'খাবি খাব ক্ষতি নাই,'
খেয়ালের বাণী করে কানাকানি – 'গতি নাই, গতি নাই।'
নিখিল খেয়াল খসড়া খাতায় লিখিল খেয়াল ছবি
ক্ষণিকের সাথে খেয়ালের মুখে খতিয়া রাখিল সবি।

গতি কিসে হবে, চিন্তিয়া তবে বচন শুনিনু খাসা,
পঞ্চ কোষের প্রথম খোসাতে অন্ন রয়েছে ঠাসা!
আত্মার মুখে আদিম -অন্ন তাহে ব্যঞ্জনগুলি
অনুরাগে লাগি,করে ভাগাভাগি মুখে-মুখে দাও তুলি।
এত বলি ঠেলি আত্মারে তুলি তত্ত্বের লগি ধরি,
খেয়ালের প্রাণী রহে চুপ মানি বিস্ময়ে পেট ভারি ।
কবে কেবা জানে গতির গড়ানে গোপন গোমুখী হতে
কোন ভগীরথে গলাল জগতে গতির গঙ্গা স্রোতে।
দেখ আগাগোড়া গণিতের গড়া নিগূঢ় গুণ সবি
গতির আবেগে আগুয়ান বেগে অগণিত গ্রহরবি।
গগনে গগনে গোধুলি লগনে মগন গভীর গানে,
করে গমগম আগম নিগম গুরু গম্ভীর ধ্যানে।
গিরি গহ্বরে অসাধ সাগরে গঞ্জে নগরে-গ্রামে,
গাঁজার গাজনে গোষ্ঠে গহনে গোকুলে গোলকধামে।

শুনি সাবধানে কহি কানে কানে শাস্ত্রবচন ধরি
কৌশলে ঋষি কহে কখগঘ কাহারে স্মরণ করে
কয়ে দেখ জল খয়ে শুন্যতল গ'য়ে গতি অহরহ
কভূ জলে ভাসে কভূ সে আকাশে হংস যাহারে কহ ।
আঘাতে যে মারে 'ঘ'কহি তারে হন ধাতু 'ড' করি
তেঁই কখগঘ কৃষ্ণে জানহ হংস-অসুর -অরি।
ব্যঙ্গে রঙ্গে ভ্রুকুটি -ভঙ্গে সঙ্গীত কলরবে
রণহুংকারে ধনুঠংকারে শংকিত কর সবে ।
বিকল অঙ্গে ভগ্নজঙঘ এ কোন পঙ্গু মুনি ?
কেন ভাঙ্গা ঠ্যাংঙে ডাঙায় নামিল বাঙালা মুলুকে শুনি।
রাঙা আঁখি জলে চাঙ্গা হয়ে বলে ডিঙাব সাগর গিরি ,
কেন ঢঙ ধরি ব্যাঙাচির মতো লাঙুল জুড়িয়া ফিরি ?

টলিল দুয়ার চিত্তগুহার চকিতে চিচিংফাক
শুনি কলকল ছুটে কোলাহল শুনি চল চল ডাক ।
চলে চঁটপট চকিত চরণ ,চোঁচা চম্পট নৃত্যে
চল চিত্রিত চিরচিন্তন চলে চঞ্চল চিত্তে।
চলে চঞ্চলা চপল চমকে,চারু চৌচির বক্রে।
চলে চন্দ্রমা চলে চরাচর চড়ি চড়কের বক্রে
চলে চকমকি চোখের চাহনে চঞ্চরী চল ছন্দ ,
চলে চিৎকার চাবুক চালনে চপট চাপড়ে চন্ড
চলে চুপি চুপি চতুর চৌর চৌদিকে চাহে ত্রস্ত
চলে চুড়ামণি চর্বে চোষ্যে চটি চৈতনে চোস্ত
চিকন চাদর চিকুর চাঁচর চোখা চালিয়াৎ চ্যাংড়া ,
চলে চ্যাংব্যাং চিতল কাতল চলে চুনোপুটি ট্যাংরা।।

ছোটে ছঁটফটি ছায়ার ছমক ছমলীলার ছলে
ছায়ারঙে মিশি ছোটে ছয় দিশি ছায়ার ছাঊনী তলে
ছোটে ছায়াবাহু পিছে পিছে পিছে ছন্দে ছুটেছে রবি
ছয় ঋতু ছোটে ছায়ার ছন্দে ছবির পিছনে ছবি
ছায়াপথ – ছায়ে জ্যোছনা বিছায়ে…

শ্রীশ্রীবর্ণমালাতত্ত্ব (Shri Shri Bornomala Totto) কবিতাটি ছাড়াও কবি সুকুমার রায় (Sukumar Ray) অন্যান্য কবিতা পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।