Michael Madhusudan Dutt Poems~ মাইকেল মধুসূদন দত্তর কবিতা

Botobrikkho (বটবৃক্ষ) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বটবৃক্ষ (Botobrikkho)

দেব-অবতার ভাবি বন্দে যে তোমারে,
নাহি চাহে মনঃ মোর তাহে নিন্দা করি,
তরুরাজ ! প্রত্যক্ষতঃ ভারত-সংসারে,
বিধির করুণা তুমি তরু-রূপ ধরি !
জীবকুল-হিতৈষিণী, ছায়া সু-সুন্দরী,
তোমার দুহিতা, সাধু ! যবে বসুধারে
দগধে আগ্নেয় তাপে, দয়া পরিহরি,
মিহির, আকুল জীব বাঁচে পূজি তাঁরে।
শত-পত্রময় মঞ্চে, তোমার সদনে,
খেচর—অতিথি-ব্রজ, বিরাজে সতত,
পদ্মরাগ ফলপুঞ্জে ভুঞ্জি হৃষ্ট-মনে ;—
মৃদু-ভাষে মিষ্টালাপ কর তুমি কত,
মিষ্টালাপি, দেহ-দাহ শীতলি যতনে !
দেব নহ; কিন্তু গুণে দেবতার মত।

বটবৃক্ষ (Botobrikkho) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Prothom Sorgo Megnadbodh Kabya (প্রথম সর্গ (মেঘনাদবধ কাব্য)) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) প্রথম সর্গ (মেঘনাদবধ কাব্য) (Prothom Sorgo Megnadbodh Kabya)

সম্মুখ সমরে পড়ি, বীর-চূড়ামণি  
বীরবাহু, চলি যবে গেলা যমপুরে  
অকালে, কহ, হে দেবি অমৃতভাষিণি,  
কোন্ বীরবরে বরি সেনাপতি-পদে,  
পাঠাইলা রণে পুনঃ রক্ষঃকুলনিধি  
রাঘবারি? কি কৌশলে, রাক্ষসভরসা  
ইন্দ্রজিৎ মেঘনাদে — অজেয় জগতে —  
ঊর্মিলাবিলাসী নাশি, ইন্দ্রে নিঃশঙ্কিলা?  
বন্দি চরণারবিন্দ, অতি মন্দমতি  
আমি, ডাকি আবার তোমায়, শ্বেতভুজে  
ভারতি! যেমতি, মাতঃ, বসিলা আসিয়া,  
বাল্মীকির রসনায় (পদ্মাসনে যেন)  
যবে খরতর শরে, গহন কাননে,  
ক্রৌঞ্চবধূ সহ ক্রৌঞ্চে নিষাদ বিঁধিলা,  
তেমতি দাসেরে, আসি, দয়া কর, সতি।  
কে জানে মহিমা তব এ ভবমণ্ডলে?  
নরাধম আছিল যে নর নরকুলে  
চৌর্যে রত, হইল সে তোমার প্রসাদে,  
মৃ্ত্যুঞ্জয়, যথা মৃত্যুঞ্জয় উমাপতি!  
হে বরদে, তব বরে চোর রত্নাকর  
কাব্যরত্নাকর কবি! তোমার পরশে,  
সুচন্দন-বৃক্ষশোভা বিষবৃক্ষ ধরে!  
হায়, মা, এহেন পুণ্য আছে কি এ দাসে?  
কিন্তু যে গো গুণহীন সন্তানের মাঝে  
মূঢ়মতি, জননীর স্নেহ তার প্রতি  
সমধিক। ঊর তবে, ঊর দয়াময়ি  
বিশ্বরমে! গাইব, মা, বীররসে ভাসি,  
মহাগীত; ঊরি, দাসে দেহ পদছায়া।  
— তুমিও আইস, দেবি তুমি মধুকরী  
কল্পনা! কবির ঢিত্ত-ফুলবন-মধু  
লয়ে, রচ মধুচক্র, গৌড়জন যাহে  
আনন্দে করিবে পান সুধা নিরবধি।  
  
কনক-আসনে বসে দশানন বলী —  
হেমকূট-হৈমশিরে শৃঙ্গবর যথা  
তেজঃপুঞ্জ। শত শত পাত্রমিত্র আদি  
সভাসদ, নতভাবে বসে চারি দিকে।  
ভূতলে অতুল সভা — স্ফটিকে গঠিত;  
তাহে শোভে রত্নরাজি, মানস-সরসে  
সরস কমলকুল বিকশিত যথা।  
শ্বেত, রক্ত, নীল, পীত, স্তম্ভ সারি সারি  
ধরে উচ্চ স্বর্ণছাদ, ফণীন্দ্র যেমতি,  
বিস্তারি অযুত ফণা, ধরেন আদরে  
ধরারে। ঝুলিছে ঝলি ঝালরে মুকুতা,  
পদ্মরাগ, মরকত, হীরা; যথা ঝোলে  
(খচিত মুকুলে ফুল) পল্লবের মালা  
ব্রতালয়ে। ক্ষণপ্রভা সম মুহুঃ হাসে  
রতনসম্ভবা বিভা — ঝলসি নয়নে!  
সুচারু চামর চারুলোচনা কিঙ্করী  
ঢুলায়; মৃণালভুজ আনন্দে আন্দোলি  
চন্দ্রাননা। ধরে ছত্র ছত্রধর; আহা  
হরকোপানলে কাম যেন রে না পুড়ি  
দাঁড়ান সে সভাতলে ছত্রধর-রূপে!—  
ফেরে দ্বারে দৌবারিক, ভীষণ মুরতি,  
পাণ্ডব-শিবির দ্বারে রুদ্রেশ্বর যথা  
শূলপাণি! মন্দে মন্দে বহে গন্ধে বহি,  
অনন্ত বসন্ত-বায়ু, রঙ্গে সঙ্গে আনি  
কাকলী লহরী, মরি! মনোহর, যথা  
বাঁশরীস্বরলহরী গোকুল বিপিনে!  
কি ছার ইহার কাছে, হে দানবপতি  
ময়, মণিময় সভা, ইন্দ্রপ্রস্থে যাহা  
স্বহস্তে গড়িলা তুমি তুষিতে পৌরবে?  
  
এহেন সভায় বসে রক্ষঃকুলপতি,  
বাক্যহীন পুত্রশোকে! ঝর ঝর ঝরে  
অবিরল অশ্রুধারা — তিতিয়া বসনে,  
যথা তরু, তীক্ষ্ণ শর সরস শরীরে  
বাজিলে, কাঁদে নীরবে। কর জোড় করি,  
দাঁড়ায় সম্মুখে ভগ্নদূত, ধূসরিত  
ধূলায়, শোণিতে আর্দ্র সর্ব কলেবর।  
বীরবাহু সহ যত যোধ শত শত  
ভাসিল রণসাগরে, তা সবার মাঝে  
একমাত্র বাঁচে বীর; যে কাল তরঙ্গ  
গ্রাসিল সকলে, রক্ষা করিল রাক্ষসে—  
নাম মকরাক্ষ, বলে যক্ষপতি সম।  
এ দূতের মুখে শুনি সুতের নিধন,  
হায়, শোকাকুল আজি রাজকুলমণি  
নৈকষেয়! সভাজন দুঃখী রাজ-দুঃখে।  
আঁধার জগৎ, মরি, ঘন আবরিলে  
দিননাথে! কত ক্ষণে চেতন পাইয়া,  
বিষাদে নিশ্বাস ছাড়ি, কহিলা রাবণ;—  
  
“নিশার স্বপনসম তোর এ বারতা,  
রে দূত! অমরবৃন্দ যার ভুজবলে  
কাতর, সে ধনুর্ধরে রাঘব ভিখারী  
বধিল সম্মুখ রণে? ফুলদল দিয়া  
কাটিলা কি বিধাতা শাল্মলী তরুবরে?  
হা পুত্র, হা বীরবাহু, বীর-চূড়ামণি!  
কি পাপে হারানু আমি তোমা হেন ধনে?  
কি পাপ দেখিয়া মোর, রে দারুণ বিধি,  
হরিলি এ ধন তুই? হায় রে, কেমনে  
সহি এ যাতনা আমি? কে আর রাখিবে  
এ বিপুল কুল-মান এ কাল সমরে!  
বনের মাঝারে যথা শাখাদলে আগে  
একে একে কাঠুরিয়া কাটি, অবশেষে  
নাশে বৃক্ষে, হে বিধাতঃ, এ দুরন্ত রিপু  
তেমতি দুর্বল, দেখ, করিছে আমারে  
নিরন্তর! হব আমি নির্মূল সমূলে  
এর শরে! তা না হলে মরিত কি কভু  
শূলী শম্ভুসম ভাই কুম্ভকর্ণ মম,  
অকালে আমার দোষে? আর যোধ যত—  
রাক্ষস-কুল-রক্ষণ? হায়, সূর্পণখা,  
কি কুক্ষণে দেখেছিলি, তুই অভাগী,  
কাল পঞ্চবটীবনে কালকূটে ভরা  
এ ভুজগে? কি কুক্ষণে (তোর দুঃখে দুঃখী)  
পাবক-শিখা-রূপিণী জানকীরে আমি  
আনিনু এ হৈম গেহে? হায় ইচ্ছা করে,  
ছাড়িয়া কনকলঙ্কা, নিবিড় কাননে  
পশি, এ মনের জ্বালা জুড়াই বিরলে!  
কুসুমদাম-সজ্জিত, দীপাবলী-তেজে  
উজ্জ্বলিত নাট্যশালা সম রে আছিল  
এ মোর সুন্দরী পুরী! কিন্তু একে একে  
শুখাইছে ফুল এবে, নিবিছে দেউটি;  
নীরব রবাব, বীণা, মুরজ, মুরলী;  
তবে কেন আর আমি থাকি রে এখানে?  
কার রে বাসনা বাস করিতে আঁধারে?”  
  
এইরূপে বিলাপিলা আক্ষেপে রাক্ষস–  
কুলপতি রাবণ; হায় রে মরি, যথা  
হস্তিনায় অন্ধরাজ, সঞ্জয়ের মুখে  
শুনি, ভীমবাহু ভীমসেনের প্রহারে  
হত যত প্রিয়পুত্র কুরুক্ষেত্র-রণে!  
  
তবে মন্ত্রী সারণ (সচিবশ্রেষ্ঠ বুধঃ)  
কৃতাঞ্জলিপুটে উঠি কহিতে লাগিলা  
নতভাবে; — “হে রাজন্, ভুবন বিখ্যাত,  
রাক্ষসকুলশেখর, ক্ষম এ দাসেরে!  
হেন সাধ্য কার আছে বুঝায় তোমারে  
এ জগতে? ভাবি, প্রভু দেখ কিন্তু মনে;—  
অভ্রভেদী চূড়া যদি যায় গুঁড়া হয়ে  
বজ্রাঘাতে, কভু নহে ভূধর অধীর  
সে পীড়নে। বিশেষতঃ এ ভবমণ্ডল  
মায়াময়, বৃথা এর দুঃখ সুখ যত।  
মোহের ছলনে ভুলে অজ্ঞান যে জন।”  
  
উত্তর করিলা তবে লঙ্কা-অধিপতি;—  
“যা কহিলে সত্য, ওহে অমাত্য-প্রধান  
সারণ! জানি হে আমি, এ ভব-মণ্ডল  
মায়াময়, বৃথা এর দুঃখ সুখ যত।  
কিন্তু জেনে শুনে তবু কাঁদে এ পরাণ  
অবোধ। হৃদয়-বৃন্তে ফুটে যে কুসুম,  
তাহারে ছিঁড়িলে কাল, বিকল হৃদয়  
ডোবে শোক-সাগরে, মৃণাল যথা জলে,  
যবে কুবলয়ধন লয় কেহ হরি।”  
  
এতেক কহিয়া রাজা, দূত পানে চাহি,  
আদেশিলা,— “কহ, দূত, কেমনে পড়িল  
সমরে অমর-ত্রাস বীরবাহু বলী?”  
  
প্রণমি রাজেন্দ্রপদে, করযুগ জুড়ি,  
আরম্ভিলা ভগ্নদূত;— “হায়, লঙ্কাপতি,  
কেমনে কহিব আমি অপূর্ব কাহিনী?  
কেমনে বর্ণিব বীরবাহুর বীরতা?—  
মদকল করী যথা পশে নলবনে,  
পশিলা বীরকুঞ্জর অরিদল মাঝে  
ধনুর্ধর। এখনও কাঁপে হিয়া মম  
থরথরি, স্মরিলে সে ভৈরব হুঙ্কারে!  
শুনেছি, রাক্ষসপতি, মেঘের গর্জনে;  
সিংহনাদে; জলধির কল্লোলে; দেখেছি  
দ্রুত ইরম্মদে, দেব, ছুটিতে পবন–  
পথে; কিন্তু কভু নাহি শুনি ত্রিভুবনে,  
এহেন ঘোর ঘর্ঘর কোদণ্ড-টঙ্কারে!  
কভু নাহি দেখি শর হেন ভয়ঙ্কর!—  
  
পশিলা বীরেন্দ্রবৃন্দ বীরবাহু সহ  
রণে, যূথনাথ সহ গজযূথ যথা।  
ঘন ঘনাকারে ধূলা উঠিল আকাশে,—  
মেঘদল আসি যেন আবরিলা রুষি  
গগনে; বিদ্যুৎঝলা-সম চকমকি  
উড়িল কলম্বকুল অম্বর প্রদেশে  
শনশনে!— ধন্য শিক্ষা বীর বীরবাহু!  
কত যে মরিল অরি, কে পারে গণিতে?  
  
এইরূপে শত্রুমাঝে যুঝিলা স্বদলে  
পুত্র তব, হে রাজন্! কত ক্ষণ পরে,  
প্রবেশিলা, যুদ্ধে আসি নরেন্দ্র রাঘব।  
কনক-মুকুট শিরে, করে ভীম ধনুঃ,  
বাসবের চাপ যথা বিবিধ রতনে  
খচিত,”— এতেক কহি, নীরবে কাঁদিল  
ভগ্নদূত, কাঁদে যথা বিলাপী, স্মরিয়া  
পূর্বদুঃখ! সভাজন কাঁদিলা নীরবে।  
  
অশ্রুময়-আঁখি পুনঃ কহিলা রাবণ,  
মন্দোদরীমনোহর;— “কহ, রে সন্দেশ–  
বহ, কহ, শুনি আমি, কেমনে নাশিলা  
দশাননাত্মজ শূরে দশরথাত্মজ?”  
“কেমনে, হে মহীপতি,” পুনঃ আরম্ভিল  
ভগ্নদূত, “কেমনে, হে রক্ষঃকুলনিধি,  
কহিব সে কথা আমি, শুনিবে বা তুমি?  
অগ্নিময় চক্ষুঃ যথা হর্যক্ষ, সরোষে  
কড়মড়ি ভীম দন্ত, পড়ে লম্ফ দিয়া  
বৃষস্কন্ধে, রামচন্দ্র আক্রমিলা রণে  
কুমারে! চৌদিকে এবে সমর-তরঙ্গ  
উথলিল, সিন্ধু যথা দ্বন্দ্বি বায়ু সহ  
নির্ঘোষে! ভাতিল অসি অগ্নিশিখাসম  
ধূমপুঞ্জসম চর্মাবলীর মাঝারে  
অযুত! নাদিল কম্বু অম্বুরাশি-রবে!—  
আর কি কহিব, দেব? পূর্বজন্মদোষে,  
একাকী বাঁচিনু আমি! হায় রে বিধাতঃ,  
কি পাপে এ তাপ আজি দিলি তুই মোরে?  
কেন না শুইনু আমি শরশয্যোপরি,  
হৈমলঙ্কা-অলঙ্কার বীরবাহু সহ  
রণভূমে? কিন্তু নহি নিজ দোষে দোষী।  
ক্ষত বক্ষঃস্থল মম, দেখ, নৃপমণি,  
রিপু-প্রহরণে; পৃষ্ঠে নাহি অস্ত্রলেখা।”  
এতেক কহিয়া স্তব্ধ হইল রাক্ষস  
মনস্তাপে। লঙ্কাপতি হরষে বিষাদে  
কহিলা; “সাবাসি, দূত! তোর কথা শুনি,  
কোন্ বীর-হিয়া নাহি চাহে রে পশিতে  
সংগ্রামে? ডমরুধ্বনি শুনি কাল ফণী  
কভু কি অলসভাবে নিবাসে বিবরে?  
ধন্য লঙ্কা, বীরপুত্রধারী! চল, সবে,—  
চল যাই, দেখি, ওহে সভাসদ-জন,  
কেমনে পড়েছে রণে বীর-চূড়ামণি  
বীরবাহু; চল, দেখি জুড়াই নয়নে।”  
  
উঠিলা রাক্ষসপতি প্রাসাদ-শিখরে,  
কনক-উদয়াচলে দিনমণি যেন  
অংশুমালী। চারিদিকে শোভিল কাঞ্চন-  
সৌধ-কিরীটিনী লঙ্কা— মনোহরা পুরী!  
হেমহর্ম্য সারি সারি পুষ্পবন মাঝে;  
কমল-আলয় সরঃ; উৎস রজঃ-ছটা;  
তরুরাজি; ফুলকুল— চক্ষু-বিনোদন,  
যুবতীযৌবন যথা; হীরাচূড়াশিরঃ  
দেবগৃহ; নানা রাগে রঞ্জিত বিপণি,  
বিবিধ রতনপূর্ণ; এ জগৎ যেন  
আনিয়া বিবিধ ধন, পূজার বিধানে,  
রেখেছে, রে চারুলঙ্কে, তোর পদতলে,  
জগত-বাসনা তুই, সুখের সদন।  
  
দেখিলা রাক্ষসেশ্বর উন্নত প্রাচীর—  
অটল অচল যথা; তাহার উপরে,  
বীরমদে মত্ত, ফেরে অস্ত্রীদল, যথা  
শৃঙ্গধরোপরি সিংহ। চারি সিংহদ্বার  
(রুদ্ধ এবে) হেরিলা বৈদেহীহর; তথা  
জাগে রথ, রথী, গজ, অশ্ব, পদাতিক  
অগণ্য। দেখিলা রাজা নগর বাহিরে,  
রিপুবৃন্দ, বালিবৃন্দ সিন্ধুতীরে যথা,  
নক্ষত্র-মণ্ডল কিম্বা আকাশ-মণ্ডলে।  
থানা দিয়া পূর্ব দ্বারে, দুর্বার সংগ্রামে,  
বসিয়াছে বীর নীল; দক্ষিণ দুয়ারে  
অঙ্গদ, করভসম নব বলে বলী;  
কিংবা বিষধর, যবে বিচিত্র কঞ্চুক-  
ভূষিত, হিমান্তে অহি ভ্রমে, ঊর্ধ্ব ফণা—  
ত্রিশূলসদৃশ জিহ্বা লুলি অবলেপে!  
উত্তর দুয়ারে রাজা সুগ্রীব আপনি  
বীরসিংহ। দাশরথি পশ্চিম দুয়ারে—  
হায় রে বিষণ্ণ এবে জানকী-বিহনে,  
কৌমুদী-বিহনে যথা কুমুদরঞ্জন  
শশাঙ্ক! লক্ষ্মণ সঙ্ঘে, বায়ুপুত্র হনু,  
মিত্রবর বিভীষণ। এত প্রসরণে,  
বেড়িয়াছে বৈরিদল স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী,  
গহন কাননে যথা ব্যাধ-দল মিলি,  
বেড়ে জালে সাবধানে কেশরিকামিনী,—  
নয়ন–রমণী রূপে, পরাক্রমে ভীমা  
ভীমাসমা! অদূরে হেরিলা রক্ষঃপতি  
রণক্ষেত্র। শিবাকুল, গৃধিনী, শকুনি,  
কুক্কুর, পিশাচদল ফেরে কোলাহলে।  
  
======

প্রথম সর্গ (মেঘনাদবধ কাব্য) (Prothom Sorgo Megnadbodh Kabya) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Nikunjabone (নিকুঞ্জবনে) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) নিকুঞ্জবনে (Nikunjabone)

(১)

          যমুনা পুলিনে আমি ভ্রমি একাকিনী,
                    হে নিকুঞ্জবন,
না পাইয়া ব্রজেশ্বরে,              আইনু হেথা সত্বরে,
          হে সখে, দেখাও মোরে ব্রজের রঞ্জন!
সুধাংশু সুধার হেতু,            বাঁধিয়ে আশার সেতু,
          কুমুদীর মনঃ যতা উঠে গো গগনে,
হেরিতে মুরলীধর—             রূপে যিনি শশধর—
          আসিয়াছি আমি দাসী তোমার সদনে—
তুমি হে অম্বর, কুঞ্জবর, তব চাঁদ নন্দের নন্দন!

(২)

          তুমি জান কত ভাল বাসি শ্যামধনে
                    আমি অভাগিনী;
তুমি জান, সুভাজন,             হে কুঞ্জকুল রাজন,
          এ দাসীরে কত ভাল বাসিতেন তিনি!
তোমার কুসুমালয়ে           যবে গো অতিথি হয়ে,
          বাজায়ে বাঁশরী ব্রজ মোহিত মোহন,
তুমি জান কোন ধনী            শুনি সে মধুর ধ্বনি,
          অমনি আসি সেবিত ও রাঙা চরণ,
যথা শুনি জলদ-নিনাদ ধায় রড়ে প্রমদা শিখিনী।

(৩)

          সে কালে—জ্বলে রে মনঃ স্মরিলে সে কথা,
                    মঞ্জু কুঞ্জবন,—
ছায়া তব সহচরী                সোহাগে বসাতো ধরি
          মাধবে অধীনী সহ পাতি ফুলাসন;
মুঞ্জরিত তরুবলী,                গুঞ্জরিত যত অলি,
          কুসুম-কামিনী তুলি ঘোমটা অমনি,
মলয়ে সৌরভধন                    বিতরিত অনুক্ষণ,
দাতা যথা রাজেন্দ্রনন্দিনী—গন্ধামোদে মোদিয়া কানন!

(৪)

          পঞ্চস্বরে কত যে গাইত পিকবর
                    মদন-কীর্ত্তন,—
হেরি মম শ্যাম-ধন                 ভাবি তারে নবঘন,
          কত যে নাচিত সুখে শিখিনী, কানন,—
ভুলিতে কি পারি তাহা,     দেখেছি শুনেছি যাহা?
          রয়েছে সে সব লেখা রাধিকার মনে।
নলিনী ভুলিবে যবে             রবি-দেবে, রাধা তবে
          ভুলিবে, হে মঞ্জু কুঞ্জ, ব্রজের রঞ্জনে।
হায় রে, কে জানে যদি ভুলি যবে আসি গ্রাসিবে শমন।

(৫)

          কহ, সখে, জান যদি কোথা গুণমণি—
                    রাধিকারমণ?
কাম-বঁধু যথা মধু                 তুমি হে শ্যামের বঁধু
          একাকী আজি গো তুমি কিসের কারণ,—
          হে বসন্ত, কোথা আজি তোমার মদন?
তব পদে বিলাপিনী          কাঁদি আমি অভাগিনী,
          কোথা মম শ্যামমণি—কহ কুঞ্জবর!
তোমার হৃদয় দয়া,              পদ্মে যথা পদ্মালয়া,
          বধো না রাধার প্রাণ না দিয়া উত্তর!
মধু কহে, শুন ব্রজাঙ্গনে, মধুপুরে শ্রীমধুসূদন!

(ব্রজাঙ্গনা কাব্য)

নিকুঞ্জবনে (Nikunjabone) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Yoshh (যশঃ) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) যশঃ (Yoshh)

লিখিনু কি নাম মোর বিফল যতনে
বালিতে,রে কাল,তোর সাগরের তীরে ?
ফেন-চূড় জল-রাশি আসি কি রে ফিরে,
মুছিতে তুচ্ছেতে ত্বরা এ মোর লিখনে ?
অথবা খোদিনু তারে যশোগিরি-শিরে,
গুণ-রূপ যন্ত্রে কাটি অক্ষর সুক্ষণে
নারিবে উঠাতে যাহে,ধুয়ে নিজ নীরে,
বিস্মৃতি,বা মলিনিতে মলের মিলনে?—
শূন্য-জল জল-পথে জলে লোক স্মরে;
দেব-শূন্য দেবালয়ে অদৃশ্যে নিবাসে
দেবতা;ভস্মের রাশি ঢাকে বৈশ্বানরে।
সেই রূপে,ধড় যবে পড়ে কাল-গ্রাসে,
যশোরূপাশ্রমে প্রাণ মর্ত্ত্যে বাস করে;—
কুযশে নরকে যেন সুযশে—আকাশে।

যশঃ (Yoshh) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bijoya Doshomi (বিজয়া-দশমী) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বিজয়া-দশমী (Bijoya Doshomi)

''যেয়ো না,রজনি,আজি লয়ে তারাদলে!
গেলে তুমি,দয়াময়ি,এ পরাণ যাবে!—
উদিলে নির্দ্দয় রবি উদয়-অচলে,
নয়নের মণি মোর নয়ন হারাবে!
বার মাস তিতি,সত্যি,নিত্য অশ্রুজলে,
পেয়েছি উমায় আমি!কি সান্ত্বনা-ভাবে—
তিনটি দিনেতে,কহ,লো তারা-কুন্তলে,
এ দীর্ঘ বিরহ-জ্বালা এ মন জুড়াবে?
তিন দিন স্বর্ণদীপ জ্বলিতেছে ঘরে
দূর করি অন্ধকার;শুনিতেছি বাণী—
মিষ্টতম এ সৃষ্টিতে এ কর্ণ-কুহরে!
দ্বিগুণ আঁধার ঘর হবে,আমি জানি,
নিবাও এ দীপ যদি!''—কহিলা কাতরে
নবমীর নিশা-শেষে গিরীশের রাণী।

বিজয়া-দশমী (Bijoya Doshomi) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Urbboshi (উৰ্ব্বশী) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) উৰ্ব্বশী (Urbboshi)

যথা তুষারের হিয়া, ধবল-শিখরে,
কভু নাহি গলে রবি-বিভার চুম্বনে,
কামানলে ; অবহেলি মন্মথের শরে
রথীন্দ্র, হেরিল, জাগি, শয়ন-সদনে
( কনক-পুতলী যেন নিশার স্বপনে )
উৰ্ব্বশীরে । “কহ, দেবি, কহ এ কিঙ্করে,”—
সুধিলা সম্ভাষি শূর সুমধুর স্বরে,
“কি হেতু অকালে হেথা, মিনতি চরণে ?”
উন্মদা মদন-মদে, কহিলা উৰ্ব্বশী ;
“কামাতুরা আমি, নাথ, তোমার কিঙ্করী ;
সরের সুকান্তি দেখি যথা পড়ে খসি
কৌমুদিনী তার কোলে, লও কোলে ধরি
দাসীরে ; অধর দিয়া অধর পরশি,
যথা কৌমুদিনী কাঁপে, কাঁপি থর থরি।”

উৰ্ব্বশী (Urbboshi) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bir Ros (বীর-রস) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) বীর-রস (Bir Ros)

ভৈরব-আকৃতি শূরে দেখিনু নয়নে
গিরি-শিরে ; বায়ু-রথে, পূর্ণ ইরম্মদে,
প্রলয়ের মেঘ যেন! ভীম শরাসনে
ধরি বাম করে বীর, মত্ত বীর-মদে,
টঙ্কারিছে মুহুর্মুহুঃ,হুঙ্কারি ভীষণে,
ব্যোমকেশ-সম কায়;ধরাতল পদে,
রতন-মণ্ডিত শিরঃ ঠেকিছে গগনে,
বিজলী-ঝলসা-রূপে উজলি জলদে।
চাঁদের পরিধি,যেন রাহুর গরাসে
ঢালখান;ঊরু-দেশে অসি তীক্ষ্ণ অতি,
চৌদিকে,বিবিধ অস্ত্র।সুধিনু তরাসে,—
''কে এ মহাজন,কহ গিরি মহামতি?''
আইল শব্দ বহি স্তব্ধ আকাশে—
''বীর-রস এ বীবেন্দ্র,রস-কুল-পতি!''

বীর-রস (Bir Ros) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Amra (আমরা) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) আমরা (Amra)

আকাশ-পরশী গিরি দমি গুণ-বলে,
নিৰ্ম্মিল মন্দির যারা সুন্দর ভারতে ;
তাদের সন্তান কি হে আমরা সকলে ?—
আমরা,—দুর্ব্বল, ক্ষীণ, কুখ্যাত জগতে,
পরাধীন, হা বিধাতঃ, আবদ্ধ শৃঙ্খলে?—
কি হেতু নিবিল জ্যোতিঃ মণি, মরকতে,
ফুটিল ধুতুরা ফুল মানসের জলে
নির্গন্ধে ? কে কবে মোরে ? জানিব কি মতে
বামন দানব-কুলে, সিংহের ঔরসে
শৃগাল কি পাপে মোরা কে কবে আমারে?
রে কাল, পূরিবি কি রে পুনঃ নব রসে
রস-শূন্য দেহ তুই ? অমৃত-আসারে
চেতাইবি মৃত-কল্পে ? পুনঃ কি হরষে,
শুক্লকে ভারত-শশী ভাতিবে সংসারে ?

আমরা (Amra) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Yomunatote (যমুনাতটে) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) যমুনাতটে (Yomunatote)

মৃদু কলরবে তুমি,ওহে শৈবলিনি,
কি কহিছ ভাল করে কহ না আমারে।
সাগর-বিরহে যদি, প্রাণ তব কাঁদে, নদি,
তোমার মনের কথা কহ রাধিকারে—
তুমি কি জান না, ধনি, সেও বিরহিণী?

তপনতনয়া তুমি;তেঁই কাদম্বিনী
পালে তোমা শৈলনাথ-কাঞ্চন-ভবনে;
জন্ম তব রাজকুলে,(সৌরভ জনমে ফুলে)
রাধিকারে লজ্জা তুমি কর কি কারণে?
তুমি কি জান না সেও রাজার নন্দিনী?

এস, সখি, তুমি আমি বসি এ বিরলে!
দু'জনের মনোজ্জ্বালা জুড়াই দু'জনে;
তব কূলে,কল্লোলিনি,ভ্ৰমি আমি একাকিনী,
অনাথা অতিথি আমি তোমার সদনে—
তিতিছে বসন মোর নয়নের জলে!

ফেলিয়া দিয়াছি আমি যত অলঙ্কার—
রতন, মুকুতা, হীরা, সব আভরণ!
ছিঁড়িয়াছি ফুল-মালা জুড়াতে মনের জ্বালা,
চন্দন চর্চ্চিত দেহে ভস্মের লেপন!
আর কি এ সবে সাদ আছে গো রাধার?

তবে যে সিন্দূরবিন্দু দেখিছ ললাটে,
সধবা বলিয়া আমি রেখেছি ইহারে!
কিন্তু অগ্নিশিখা সম, হে সখি, সীমস্তে মম
জ্বলিছে এ রেখা আজি—কহিমু তোমারে—
গোপিলে এ সব কথা প্রাণ যেন ফাটে!

বসো আসি,শশিমুখি,আমার আঁচলে,
কমল আসনে যথা কমলবাসিনী!
ধরিয়া তোমার গলা, কাঁদি লো আমি অবলা,
ক্ষণেক ভুলি এ জ্বালা, ওহে প্রবাহিণি!
এস গো বসি দুজনে এ বিজন স্থলে!

কি আশ্চৰ্য্য!এত করে করিনু মিনতি,
তবু কি আমার কথা শুনিলে না, ধনি?
এ সকল দেখে শুনে, রাধার কপাল-গুণে,
তুমিও কি ঘৃণিলা গো রাধায়, স্বজনি?
এই কি উচিত তব, ওহে স্রোতস্বতি?

হায় রে তোমারে কেন দোষি, ভাগ্যবতি?
ভিখারিণী রাধা এবে—তুমি রাজরাণী।
হরপ্রিয়া মন্দাকিনী,সুভগে,তব সঙ্গিনী,
অর্পেণ সাগর-করে তিনি তব পাণি!
সাগর-বাসরে তব তাঁর সহ গতি!

মৃদু হাসি নিশি আসি দেখা দেয় যবে,
মনোহর সাজে তুমি সাজ লো কামিনী।
তারাময় হার পরি,শশধরে শিরে ধরি,
কুসুমদাম কবরী,তুমি বিনোদিনী,
দ্রুতগতি পতিপাশে যাও কলরবে ।

১০

হায় রে এ ব্রজে আজি কে আছে রাখার?
কে জানে এ ব্ৰজজনে রাধার যাতন?
দিবা অবসান হলে,রবি গেলে অস্তাচলে,
যদিও ঘোর তিমিরে ডোবে ত্রিভুবন,
নলিনী যেমনি জ্বলে–এত জ্বালা কার?

১১

উচ্চ তুমি নীচ এবে আমি হে যুবতি,
কিন্তু পর-দুঃখে দুঃখী না হয় যে জন,
বিফল জনম তার,অবশ্য সে দুরাচার।
মধু কহে, মিছে ধনি করিছ রোদন,
কাহার হৃদয়ে দয়া করেন বসতি?

(ব্রজাঙ্গনা কাব্য)

যমুনাতটে (Yomunatote) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Puruliya (পুরুলিয়া) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) পুরুলিয়া (Puruliya)

পাষাণময় যে দেশ, সে দেশে পড়িলে
বীজকুল, শস্য তথা কখন কি ফলে?
কিন্তু কত মনানন্দ তুমি মোরে দিলে,
হে পুরুল্যে!দেখাইয়া ভকত-মণ্ডলে!
শ্ৰীভ্রষ্ট সরস সম, হায়, তুমি ছিলে,
অজ্ঞান-তিমিরাচ্ছন্ন এ দূর জঙ্গলে;
অজ্ঞান-তিমিরাচ্ছন্ন এ দূর জঙ্গলে;
এবে রাশি রাশি পদ্ম ফোটে তব জলে,
পরিমল-ধনে ধনী করিয়া অনিলে!
প্রভুর কি অনুগ্রহ! দেখ ভাবি মনে,
(কত ভাগ্যবান্‌ তুমি কব তা কাহারে?)
রাজাসন দিলা তিনি ভূপতিত জনে!
উজলিলা মুখ তব বঙ্গের সংসারে;
বাড়ুক সৌভাগ্য তব এ প্রার্থনা করি,
ভাসুক সত্যতা-স্রোতে নিত্য তব তরি।

পুরুলিয়া (Puruliya) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।