Michael Madhusudan Dutt Poems~ মাইকেল মধুসূদন দত্তর কবিতা

Satyendranath Tagore (সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (Satyendranath Tagore)

সুরপুরে সশরীরে, শূর-কুল-পতি
অর্জ্জুন, স্বকাজ যথা সাধি পুণ্য-বলে
ফিরিলা কানন-বাসে ;—তুমি হে তেমতি,
যাও সুখে ফিরি এবে ভারত-মণ্ডলে,
মনোদ্যানে আশা-লতা তব ফলবতী !—
ধন্য ভাগ্য, হে সুভগ, তব ভব-তলে !
শুভ ক্ষণে গর্ভে তোমা ধরিলা সে সতী,
তিতিবেন যিনি, বৎস, নয়নের জলে
( স্নেহাসার!) যবে রঙ্গে বায়ু-রূপ ধরি
জনরব, দূর বঙ্গে বহিবে সত্বরে
এ তোমার কীৰ্ত্তি-বাৰ্ত্তা!—যাও দ্রুতে, তরি,
নীলমণি-ময় পথ অপথ সাগরে!
অদৃশ্যে রক্ষার্থে সঙ্গে যাবেন সুন্দরী
বঙ্গ-লক্ষ্মী! যাও, কবি আশীৰ্ব্বাদ করে!–

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (Satyendranath Tagore) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Mahabharat (মহাভারত) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) মহাভারত (Mahabharat)

কল্পনা-বাহনে সুখে করি আরোহণ,
উতরিনু, যথা বসি বদরীর তলে,
করে বীণা, গাইছেন গীত কুতূহলে
সত্যবতী-সুত কবি,—ঋষিকুল-ধন !
শুনিলু গম্ভীর ধ্বনি ; উম্মীলি নয়ন
দেখিনু কৌরবেশ্বরে, মত্ত বাহুবলে ;
দেখিনু পবন-পুত্রে, ঝড় যথা চলে
হুঙ্কারে !আইলা কর্ণ—সূর্যের নন্দন—
তেজস্বী। উজ্জ্বলি যথা ছোটে অনম্বরে
নক্ষত্র, আইলা ক্ষেত্রে পার্থ মহামতি,
আলো করি দশ দিশ, ধরি বাম করে
গাণ্ডীব—প্রচণ্ড-দণ্ড-দাতা রিপু প্রতি।
তরাসে আকুল হৈনু এ কাল সমরে
দ্বাপরে গোগৃহ-রণে উত্তর যেমতি।

মহাভারত (Mahabharat) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Chhaya Poth (ছায়া পথ) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ছায়া পথ (Chhaya Poth)

কহ মোরে, শশিপ্রিয়ে, কহ, কৃপা করি,
কার হেতু নিত্য তুমি সাজাও গগনে,
এ পথ,—উজ্জ্বল কোটি মণির কিরণে ?
এ সুপথ দিয়া কি গো ইন্দ্রাণী সুন্দরী
আনন্দে ভেটিতে যান নন্দন-সদনে
মহেন্দ্রে, সঙ্গেতে শত বরাঙ্গী অপ্সরী,
মলিনি ক্ষণেক কাল চারু তারা-গণে—
সৌন্দর্য্যে ?—এ কথা দাসে কহ, বিভাবরি !
রাণী তুমি ; নীচ আমি ; তেঁই ভয় করে,
অনুচিত বিবেচনা পার করিবারে
আলাপ আমার সাথে ; পবন-কিঙ্করে,—
ফুল-কুল সহ কথা কহ দিয়া যারে,
দেও কয়ে ; কহিবে সে কানে, মৃদুস্বরে,
যা কিছু ইচ্ছহ, দেবি, কহিতে আমারে !

ছায়া পথ (Chhaya Poth) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Ashw O Kurango (অশ্ব ও কুরঙ্গ) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) অশ্ব ও কুরঙ্গ (Ashw O Kurango)

অশ্ব, নবদূর্ব্বাময় দেশে,
               বিহরে একেলা অধিপতি।
নিত্য নিশা অবশেষে
               শিশিরে সরস দূর্ব্বা অতি।
বড়ই সুন্দর স্থল,
               অদূরে নির্ঝরে জল,
তরু, লতা, ফল, ফুল,
               বন-বীণা অলিকুল;
মধ্যাহ্নে আসেন ছায়া,
               পরম শীতল কায়া,
পবন ব্যজন ধরে,
                পত্র যত নৃত্য করে,
মহানন্দে অশ্বের বসতি॥

কিছু দিনে উজ্জ্বলনয়ন,
কুরঙ্গ সহসা আসি দিল দরশন।
বিস্ময়ে চৌদিকে চায়,
                যা দেখে বাগানে তায়,
কতক্ষণে হেরি অশ্বে কহে মনে মনে;—
“হেন রাজ্যে এক প্রজা এ দুখ না সহে!
তোমার প্রসাদ চাই,
                শুন হে বন-গোঁসাই,
অাপদে, বিপদে দেব, পদে দিও ঠাঁই॥”

এক পার্শ্ব করি অধিকার,
             আরম্ভিল কুরঙ্গ বিহার;
খাইল অনেক ঘাস,
             কে গণিতে পারে গ্রাস?
অাহার করণান্তরে  
             করিল পান নির্ঝরে;
পরে মৃগ তরুতলে  
             নিদ্রা গেল কুতূহলে—
গৃহে গৃহস্বামী যথা বলী স্বত্ববলে॥

বাক্যহীন ক্রোধে অশ্ব, নিরখি এ লীলা,
ভোজবাজি কিম্বা স্বপ্ন! নয়ন মুদিলা;
উন্মীলি ক্ষণেক পরে কুরঙ্গে দেখিলা,
রঙ্গে শুয়ে তরুতলে;
                দ্বিগুণ অাগুন হৃদে জ্বলে;
তীক্ষ্ণ ক্ষুর আঘাতনে ধরণী ফাটিল,
ভীম হ্রেষা গগনে উঠিল।
প্রতিধ্বনি চৌদিকে জাগিল॥

নিদ্রাভঙ্গে মৃগবর
             কহিলা, “ওরে বর্ব্বর!
কে তুই, কত বা বল?
সৎ পড়সীর মত
            না থাকিবি, হবি হত।''
কুরঙ্গের উজ্জ্বল নয়ন
            ভাতিল সরোষে যেন দুইটি তপন।।

হয়ের হৃদয়ে হৈল ভয়,
            ভাবে এ সামান্য পশু নয়,
শিরে শৃঙ্গ শাখাময়!
প্রতি শৃঙ্গ শূলের আকার
বুঝি বা শূলের তুল্য ধার,
কে আমারে দিবে পরিচয়?

মাঠের নিকটে এক মৃগয়ী থাকিত,
অশ্ব তারে বিশেষ চিনিত।
ধরিতে এ অশ্ববরে,
           নানা ফাঁস নিরন্তরে।
মৃগয়ী পাতিত।
কিন্তু সৌভাগ্যের বলে, তুরঙ্গম মায়া-ছলে
কভু না পড়িত॥

কহিল তুরঙ্গ;—“পশু উচ্চশৃঙ্গধারী—
মোর রাজ্য এবে অধিকারী;
না চাহিল অনুমতি,
              কর্কশভাষী সে অতি;
হও হে সহায় মোর,
             মারি দুই জনে চোর॥''

মৃগয়ী করিয়া প্রতারণা,
           কহিলা,“হা! এ কি বিড়ম্বনা!
জানি সে পশুরে আমি,
          বনে পশুকুলে স্বামী,
শার্দ্দূলে, সিংহেরে নাশে,
         দগ্ধে বন বিষশ্বাসে;
একমাত্র কেবল উপায়;—
মুখস ও মুখে পর,
        পৃষ্ঠে চর্ম্মাসন ধর,
আমি সে আসনে বসি,
        করে ধনুর্ব্বাণ অসি,
তা হলে বিজয় লভা যায়॥”

১০

হায়! ক্রোধে অন্ধ অশ্ব, কুছলে ভুলিল;
লাফে পৃষ্ঠে দুষ্ট সাদী অমনি চড়িল।
লোহার কণ্টকে গড়া অস্ত্র, বাঁধা পাদুকায়,
তাহার আঘাতে প্রাণ যায়।
মুখস নাশিল গতি, ভয়ে হয় ক্ষিপ্তমতি,
চলে সাদী যে দিকে চালায়॥

১১

কোথা অরি, কোথা বন,
             সে সুখের নিকেতন?
দিনান্তে হইলা বন্দী আঁধার-শালায়।
পরের অনিষ্ট হেতু ব্যগ্র যে দুর্ম্মতি,
এই পুরস্কার তার কহেন ভারতী;
ছায়া সম জয় যায় ধর্ম্মের সংহতি॥

অশ্ব ও কুরঙ্গ (Ashw O Kurango) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Modhukor (মধুকর) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) মধুকর (Modhukor)

শুনি গুন গুন ধ্বনি তোর এ কাননে,
মধুকর,এ পরাণ কাঁদে রে বিষাদে!
ফুল-কুল-বধূ-দলে সাধিস্ যতনে
অনুক্ষণ,মাগি ভিক্ষা অতি মৃদু নাদে,
তুমকী বাজায়ে যথা রাজার তোরণে
ভিখারী,কি হেতু তুই?ক মোরে,কি সাদে
মোমের ভাণ্ডারে মধু রাখিস্ গোপনে,
ইন্দ্র যথা চন্দ্রলোকে,দানব-বিবাদে
সুধামৃত?এ আয়াসে কি সুফল ফলে?
কৃপণের ভাগ্য তোর!কৃপণ যেমতি
অনাহারে,অনিদ্রায়,সঞ্চয়ে বিকলে
বৃথা অর্থ;বিধি-বশে তোর সে দুর্গতি!
গৃহ-চ্যুত করি তোরে,লুটি লয় বলে
পর জন পরে তোর শ্রমের সঙ্গতি!

মধুকর (Modhukor) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Bharat Bhumi (ভারত-ভূমি) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ভারত-ভূমি (Bharat Bhumi)

কে না লোভে, ফণিনীর কুন্তলে যে মণি
ভূপতিত তারারূপে, নিশাকালে ঝলে ?
কিন্তু কৃতান্তের দূত বিষদন্তে গণি,
কে করে সাহস তারে কেড়ে নিতে বলে ?
হায় লো ভারত-ভূমি! বৃথা স্বর্ণ-জলে
ধুইলা বরাঙ্গ তোর, কুরঙ্গ-নয়নি,
বিধাতা ? রতন সিঁথি গড়ায়ে কৌশলে,
সাজাইলা পোড়া ভাল তোর লো, যতনি!
নহিস্ লো বিষময়ী যেমতি সাপিনী;
রক্ষিতে অক্ষম মান প্রকৃত যে পতি ;
পুড়ি কামানলে, তোরে করে লো অধীনী
(হা ধিক্!) যবে যে ইচ্ছে, যে কামী দুৰ্ম্মতি!
কার শাপে তোর তরে, ওলো অভাগিনি,
চন্দন হইল বিষ;সুধা তিত অতি ?

ভারত-ভূমি (Bharat Bhumi) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Devdrishti (দেবদৃষ্টি) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) দেবদৃষ্টি (Devdrishti)

শচী সহ শচীপতি স্বর্ণ-মেঘাসনে,
          বাহিরিলা বিশ্ব দরশনে।
          আরোহি বিচিত্র রথ,
          চলে সঙ্গে চিত্ররথ,
নিজদলে বিমণ্ডিত অস্ত্র আভরণে,
রাজাজ্ঞায় আশুগতি বহিলা বাহনে।
         হেরি নানা দেশ সুখে,
         হেরি বহু দেশ দুঃখে—
         ধর্ম্মের উন্নতি কোন স্থলে;
         দেব অগ্রগতি বঙ্গে উতরিল।
কহিলা মাহেন্দ্র সতী শচী সুলোচনা,
         কোন্‌ দেশে এবে গতি,
         কহ হে প্রাণের পতি,
এ দেশের সহ কোন্ দেশের তুলনা?
         উত্তরিলা মধুর বচনে
         বাসব, লো চন্দ্রাননে,
বঙ্গ এ দেশের নাম বিখ্যাত জগতে।
         ভারতের প্রিয় মেয়ে
         মা নাই তাহার চেয়ে
নিত্য অলঙ্কৃত হীরা, মুক্ত, মরকতে।
         সস্নেহে জাহ্নবী তারে
         মেখলেন চারি ধারে
বরুণ ধোয়েন পা দু’খানি।
         নিত্য রক্ষকের বেশে
         হিমাদ্রি উত্তর দেশে
         পরেশনাথ আপনি
         শিরে তার শিরোমণি
সেই এই বঙ্গভূমি শুন লো ইন্দ্রাণি!
        দেবাদেশে আশুগতি
        চলিলেন মৃদুগতি
        উঠিল সহসা ধ্বনি
সভয়ে শচী আমনি ইন্দ্রেরে সুধিলা,—
        নীচে কি হতেছে রণ
        কহ সখে বিবরণ
হেন দেশে হেন শব্দ কি হেতু জন্মিলা?
        চিত্ররথ হাত জোড় করি,
        কহে, শুন, ত্রিদিব-ঈশ্বরি!
‘বিবাহ করিয়া এক বালক যাইছে,
        পত্নী আসে দেখ তার পিছে।’
সুধাংশুর অংশুরূপে নয়ন-কিরণ
        নীচদেশে পড়িল তখন।

দেবদৃষ্টি (Devdrishti) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Sita Bonobase (সীতা—বনবাসে) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) সীতা—বনবাসে (Sita Bonobase)

ফিরাইলা বনপথে অতি ক্ষুণ্ণ মনে
সুরথী লক্ষ্মণ রথ, তিতি চক্ষুঃ-জলে ;—-
উজলিল বন-রাজী কনক কিরণে
স্যন্দন, দিনেন্দ্র যেন অস্তের অচলে।
নদী-পারে একাকিনী সে বিজন বনে
দাঁড়ায়ে, কহিলা সতী শোকের বিহ্বলে ;—
“ত্যজিলা কি, রঘু-রাজ, আজি এই ছলে
চির জন্যে জানকীরে?হে নাথ!কেমনে—
কেমনে বাঁচিবে দাসী ও পদ-বিরহে?
কে, কহ, বারিদ-রূপে, স্নেহ-বারি দানে,
( দাবানল-রূপে যবে দুখানল দহে )
জুড়াবে,হে রঘুচূড়া,এ পোড়া পরাণে?
নীরবিলা ধীর সাধ্বী;ধীরে যথা রহে
বাহ্য-জ্ঞান-শূন্য মূর্ত্তি,নির্ম্মিত পাষাণে!

সীতা—বনবাসে (Sita Bonobase) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Meghnadbodh Kabya Fourth Section (মেঘনাদবধ কাব্য (চতুর্থ সর্গ)) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) মেঘনাদবধ কাব্য (চতুর্থ সর্গ) (Meghnadbodh Kabya Fourth Section)

নমি আমি,কবি-গুরু তব পদাম্বুজে,
বাল্মীকি;হে ভারতের শিরঃচূড়ামণি,
তব অনুগামী দাস,রাজেন্দ্র-সঙ্গমে
দিন যথা যায় দূর তীর্থ দরশনে;
তব পদ-চিহ্ন ধ্যান করি দিবানিশি,
পশিয়াছে কত যাত্রী যশের মন্দিরে,
দমনিয়া ভব-দম দুরন্ত শমনে—
অমর; শ্রীভর্ত্তৃহরি; সূরী ভবভূতি
শ্রীকন্ঠ;ভারতে খ্যাত বরপুত্র যিনি
ভারতীর, কালিদাস–সুমধুর-ভাষী;
মুরারী-মূরলীধ্বনি-সদৃশ মুরারি
মনোহর;কীর্ত্তিবাস,কীর্ত্তিবাস কবি,
এ বঙ্গের অলঙকার;–হে পিতঃ, কেমনে,
কবিতা-রসের সরে রাজহংস-কুলে
মিলি করি কেলি আমি, না শিখালে তুমি?
গাঁথিব নূতন মালা ,তুলি সযতনে
তব কাব্যদানে ফুল; ইচ্ছা সাজাইতে
বিবিধ ভূষনে ভাষা; কিন্তু কোথা পাব
(দীন আমি;) রত্নরাজী,তুমি নাহি দিলে,
রত্নাকর? কৃপা,প্রভু কর আকিন্চনে।
একাকিনি শোকাকুলা, অশোক-কাননে
কাঁদেন রাঘব-বান্ছা আঁধার কুটিরে
নীরবে;দুরন্ত চেড়ী,সতীরে ছাড়িয়া,
ফেরে দূরে মত্ত সবে উৎসব-কৌতুকে–
হীন-প্রাণা হরিণীরে রাখিয়া বাঘিনী
নির্ভয় হৃদয়ে যথা ফেরে দূর বনে
মলিন-বদনা দেবী,হায় রে যেমতি
খনির তিমির গর্ভে (না পারে পশিতে
সৌর-কর-রাশি যথা) সূর্য্যকান্ত-মণি;
কিম্বা বিম্বাধরা রমা অম্বুরাশি-তলে;
স্বনিছে পবন, দূরে রহিয়া রহিয়া
উছ্বাসে বিলাপী যথা; লড়িছে বিষাদে
মর্মরিয়া পাতাকুল; বসেছে অরবে
শাখে পাখী; রাশি রাশি কুসুম পড়েছে
তরুমূলে; যেন তরু, তাপি মনস্তাপে,
ফেলিয়াছে খুলি সাজ; দূরে প্রবাহিণী,
উচ্চ বিচী-রবে কাঁদি, চলিছে সাগরে,
কহিতে বারীশে যেন এ দুঃখ-কাহিনী;
না পশে সুধাংশু-অংশু সে ঘোর বিপিনে
ফোটে কি কমল কভু সমল সলিলে?
তবুও উজ্বল বন ও অপূর্ব্ব রূপে;
একাকিনী বসি দেবী, প্রভা আভাময়ী,
তমোময় ধামে যেন; হেন কালে তথা
সরমা সুন্দরী আসি বসিলা কাঁদিয়া
সতীর চরণ-তলে,সরমা সুন্দরী–
রক্ষঃকুল-রাজলক্ষী রক্ষোবধূ-বেশে;
কতক্ষনে চক্ষু-জল মুছি সুলোচনা
কহিলা মধুর স্বরে; ”দুরন্ত চেড়ীরা,
তোমারে ছাড়িয়া, দেবি ফিরিছে নগরে,
মহোৎসবে রত সবে আজি নিশা-কালে;
এই কথা শুনি আমি আইনু পূজিতে
পা-দুখানি। আনিয়াছি কৌটায় ভরিয়া
সিন্দুর; করিলে আজ্ঞা,সুন্দর ললাটে
দিব ফোঁটা। এয়ো তুমি, তোমার কি সাজে
এ বেশ? নিষ্ঠুর,হায়, দুষ্ট লঙ্কাপতি;
কে ছেঁড়ে পদ্মের পর্ণ? কেমনে হরিল
ও বরাঙ্গ-অলঙ্কার, বুঝিতে না পারি?
কৌটা খুলি,রক্ষো বধূ যত্নে দিলা ফোঁটা।
সীমন্তে ; সিন্দুর বিন্দু শোভিল ললাটে,
গোধূলি-ললাটে, আহা; তারা-রত্ন-যথা;
দিয়া ফোঁটা, পদ-ধূলি লইলা সরমা ।
”ক্ষম লক্ষি, ছুইনু ও দেব-আকাঙ্খিত
তনু;কিন্তু চির-দাসী দাসী ও চরণে;”
এতেক কহিয়া পুনঃ বসিলা যুবতী
পদতলে;আহা মরি সুবর্ণ-দেউটি
তুলসীর মূলে যেন জ্বলিল, উজলি
দশ দিশ; মৃদু-স্বরে কহিলা মৈথিলী;—
”বৃথা গন্জ দশাননে তুমি, বিধুমুখী;
আপনি খুলিয়া আমি ফেলাইনু দূরে
আভরণ,যবে পাপী আমারে ধরিল
বনাশ্রমে। ছড়াইনু পথে সে সকলে,
চিহ্ন হেতু। সেই হেতু আনিয়াছে হেথা–
এ কনক-লঙ্কাপুরে—-ধীর রঘুনাথে;
মণি,মুক্তা, রতন, কি আছে লো জগতে,
যাহে নাহি অবহেলি লভিতে সে ধনে?
যথা গোমুখীর মুখ হইতে সুস্বনে
ঝরে পূত বারি-ধারা, কহিলা জানকী,
মধুর ভাষিণী সতী, আদরে সম্ভাষি
সরমারে,—“হিতৈষিণী সীতার পরমা
তুমি,সখি; পূর্ব্ব-কথা শুনিবারে যদি
ইচ্ছা তব,কহি আমি, শুন মনঃ দিয়া।—
ছিনু মোরা, সুলোচনে, গোদাবরী-তীরে,
কপোত কপোতী যথা উচ্চ বৃক্ষ-চূড়ে
বাঁধি নীড়,থাকে সুখে;ছিনু ঘোর বনে,
নাম পঞ্চবটী,মর্ত্ত্যে সুর-বন-সম।
সদা করিতেন সেবা লক্ষণ সুমতি।
দন্ডক ভান্ডার যার, ভাবি দেখ মনে,
কিসের অভাব তার? যোগাতেন আনি
নিত্য ফল-মূল বীর সৌমিত্রি; মৃগয়া
করিতেন কভু প্রভু; কিন্তু জীব নাশে
সতত বিরত,সখি রাঘবেন্দ্র বলী,—
দয়ার সাগর নাথ ,বিদিত জগতে;
“ভুলিনু পূর্ব্বের সুখ। রাজার নন্দিনী
রঘু-কুল-বধু আমি; কিন্তু এ কাননে,
পাইনু, সরমা সই,পরম পিরীতি ;
কুটীরের চারিদিকে কত যে ফুটিত
ফুলকুল নিত্য নিত্য,কহিব কেমনে?
পঞ্চবটী-বন-চর মধু নিরবধি;
জাগাত প্রভাতে মোরে কহরি সুস্বরে
পিকরাজ;কোন রাণী,কহ; শশিুমুখি,
হেন চিত্ত-বিনোদন বৈতালিক-গীতে
খোলে আঁখি? শিখী সহ । শিখীনি সুখিনী
নাচিত দুয়ারে মোর; নর্ত্তক,নর্ত্তকী,
এ দোঁহার সম, রামা,আছে কি জগতে?
অতিথি আসিত নিত্য করভ,করভী,
মৃগ- শিশু, বিহঙ্গম,স্বর্ণ-অঙ্গ কেহ,
কেহ, শুভ্র,কেহ কাল,কেহ বা চিত্রিত,
যথা বাসবের ধনুঃ ঘন-বন-শিরে;
অহিংসক জীব যত। সেবিতাম সবে,
মহাদরে; পালিতাম পরম যতনে,
মরুভূমে স্রতোস্বতী তৃষাতুরে যথা,
আপনি সুজলবতী বারিদ-প্রসাদে।
সরসী আরসি মোর; তুলি কুবলয়ে,
(অতুল রতন-সম) পরিতাম কেশে;
সাজিতাম ফুল-সাজে; হাসিতেন প্রভু,
বনদেবী বলি মোরে সম্ভাষি কৌতুকে;
হায়, সখি, আর কি লো পাব প্রাণনাথে?
আর কি এ পোড়া আঁখি এ ছার জনমে
দেখিবে সে পা-দুখানি—আশার সরসে
রাজীব; নয়ন মণি? হে দারুণ বিধি,
কি পাপে পাপী এ দাসী তোমার সমীপে?
এতেক কহিয়া দেবী কাঁদিলা নীরবে।
কাঁদিলা সরমা সতী তিতি অশ্রু-নীরে।
কতক্ষনে চক্ষু-জল মুছি রক্ষোবধূ
সরমা, কহিলা সতী সীতার চরণে;—
”স্মরিলে পূর্ব্বের কথা ব্যাথা মনে যদি
পাও, দেবী, থাক তবে ; কি কাজ স্মরিয়া?—
হেরি তব অশ্রু-বারি ইচ্ছি মরিবারে;”
উত্তরিলা প্রিয়ম্বদা ( কাদম্বা যেমতি
মধু-স্বরা);–“এ অভাগী,হায়, লো সুভগে,
যদি না কাঁদিবে, তবে কে আর কাঁদিবে
এ জগতে? কহি, শুন পূর্ব্বের কাহিনী।
বরিষার কালে,সখি,প্লাবন-পীড়নে
কাতর,প্রবাহ,ঢালে,তীর অতিক্রমি,
বারি-রাশি দুই পাশে; তেমতি যে মনঃ
দুঃখিত,দুঃখের কথা কহে সে অপরে।
তেঁই আমি কহি,তুমি শুন,লো সরমে;
কে আছে সীতার আর এ অবরু-পুরে?
”পঞ্চবটী-বনে মোরা গোদাবরী-তটে
ছিনু সুখে। হায়, সখি,কেমনে বর্ণিব
সে কান্তার-কান্তি আমি? সতত স্বপনে
শুনিতাম মন-বীণা বন-দেবী-করে;
সরসীর তীরে বসি, দেখিতাম কভু
সৌর-কর-রাশি-বেশে সুরবালা-কেলি
পদ্মবনে; কভু সাধ্ধী ঋষিবংশ-বধূ
সুহাসিনী আসিতেন দাসীর কুটীরে,
সুধাংশুর অংশু যেন অন্ধকার ধামে;
অজিন (রন্জিত, আহা, কত শত রঙে;)
পাতি বসিতাম কভু দীর্ঘ তরুমূলে,
সখী-ভাবে সম্ভাষিয়া ছায়ায়,কভু বা
কুরঙ্গিনী-সঙ্গে রঙ্গে নাচিতাম বনে,
গাইতাম গীত শুনি কোকিলের ধ্বনি;
নব-লতিকার,সতি দিতাম বিবাহ
তরু-সহ; চুম্বিতাম মন্জরিত যবে
দম্পতী, মন্জরীবৃন্দে আনন্দে সম্ভাষি
নাতিনী বলিয়া সবে; গুন্জরিলে অলি,
নাতিনী-জামাই বলি বরিতাম তারে;
কভু বা প্রভুরর সহ ভ্রমিতাম সুখে
নদী-তটে; দেখিতাম তরল সলিলে
নূতন গগন যেন,নব তারাবলী,
নব নিশাকান্ত-কান্তি ; কভু বা উঠিয়া
পর্ব্বত-উপরে ,সখি বসিতাম আমি
নাথের চরণ-তলে, ব্রততী যেমতি
বিশাল রসাল-মূলে; কত যে আদরে
তুষিতেন প্রভু মোরে, বরষি বচন-
সুধা, হায়, কব কারে ? কব বা কেমনে?
শুনেছি কৈলাস-পুরে কৈলাস-নিবাসী
ব্যোমকেশ,স্বর্ণাসনে বসি গৌরী-সনে,
আগম,পুরাণ, বেদ, পঞ্চতন্ত্র-কথা
পঞ্চমুখে পঞ্চমুখ কহেন উমারে;
শুনিতাম সেইরূপে আমিও,রূপি,
নানাকথা ; এখনও, এ বিজন বনে,
ভাবি আমি শুনি যেন সে মধুর বাণী;—
সাঙ্গ কি দাসীর পক্ষে, হে নিষ্ঠুর বিধি,
সে সঙ্গীত ?”—নীরবিলা আয়ত-লোচনা
বিষাদে। কহিলা তবে সরমা সুন্দরী;—
“শুনিলে তোমার কথা, রাঘব-রমণি,
ঘৃণা জন্মে রাজ-ভোগে ; ইচ্ছা করে,ত্যজি
রাজ্য-সুখ, যাই চলি হেন বনবাসে;
কিন্তু ভেবে দেখি যদি,ভয় হয় মনে।
রবিকর যবে, দেবি, পশে বনস্থলে
তমোময়,নিজগুনে আলো করে বনে
সে কিরণ; নিশি যবে যায় কোন দেশে,
মলিন-বদন সবে তার সমাগমে;
যথা পদার্পণ তুমি কর, মধুমতি,
কেন না হইবে সুখী সর্ব্ব জন তথা,
জগৎ-আনন্দ তুমি, ভুবন-মোহিনী;
কহ, দেবি, কি কৌশলে হরিল তোমারে
রক্ষঃপতি? শুনিয়াছে বীণা-ধ্বনি দাসী,
পিকবর-রব নব পল্লব-মাঝারে
সরষ মধুর মাসে ; কিন্তু নাহি শুনি
হেন মধুমাখা কথা কভু এ জগতে;”

===========

মেঘনাদবধ কাব্য (চতুর্থ সর্গ) (Meghnadbodh Kabya Fourth Section) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

Moyur O Gouri (ময়ূর ও গৌরী) ~ মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt)

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) ময়ূর ও গৌরী (Moyur O Gouri)

ময়ুর কহিল কাঁদি গেীরীর চরণে,
         কৈলাস-ভবনে;—
        “অবধান কর দেবি,
         আমি ভৃত্য নিত্য সেবি
প্রিয়োত্তম সুতে তব এ পৃষ্ঠ-আসনে।
         রথী যথা দ্রুত রথে,
         চলেন পবন-পথে
দাসের এ পিঠে চড়ি সেনানী সুমতি;
তবু, মা গো, আমি দুখী অতি!
        করি যদি কেকাধ্বনি,
        ঘৃণায় হাসে অমনি
খেচর, ভূচর জন্তু;—মরি, মা, শরমে!
        ডালে মূঢ় পিক যবে
        গায় গীত, তার রবে
মাতিয়া জগৎ-জন বাখানে অধমে!
        বিবিধ কুসুম কেশে,
        সাজি মনোহর বেশে,
বরেন বসুধা দেবী যবে ঋতুবরে
কোকিল মঙ্গল-ধ্বনি করে।
অহরহ কুহুধ্বনি বাজে বনস্থলে;
নীরবে থাকি, মা, আমি; রাগে হিয়া জ্বলে!
       ঘুচাও কলঙ্ক শুভঙ্করি,
পুত্রের কিঙ্কর আমি এ মিনতি করি,
       পা দুখানি ধরি।”
উত্তর করিলা গৌরী সুমধুর স্বরে;—
“পুত্রের বাহন তুমি খ্যাত চরাচরে,
       এ আক্ষেপ কর কি কারণে?
হে বিহঙ্গ, অঙ্গ-কান্তি ভাবি দেখ মনে!
   চন্দ্রককলাপে দেখ নিজ পুচ্ছ-দেশে;
   রাখাল রাজার সম চূড়াখানি কেশে!
   আখণ্ডল-ধনুর বরণে
মণ্ডিলা সু-পুচ্ছ ধাতা তোমার সৃজনে!
      সদা জ্বলে তব গলে
      স্বর্ণহার ঝল ঝলে,
যাও, বাছা, নাচ গিয়া ঘনের গর্জ্জনে,
      হরষে সু-পুচ্ছ খুলি
      শিরে স্বর্ণ-চূড়া তুলি;
      করগে কেলি ব্রজ-কুঞ্জ-বনে।
      করতালি ব্রজাঙ্গনা
      দেবে রঙ্গে বরাঙ্গনা—
তোষ গিয়া ময়ূরীরে,প্রেম-আলিঙ্গনে!
      শুন বাছা, মোর কথা শুন,
      দিয়াছেন কোন কোন গুণ,
দেব সনাতন প্রতি-জনে;
     সু-কলে কোকিল গায়,
     বাজ বজ্র-গতি ধায়,
অপরূপ রূপ তব, খেদ কি কারণে?”—
    নিজ অবস্থায় সদা স্থির যার মন,
    তার হতে সুখীতর অন্য কোন্ জন?

ময়ূর ও গৌরী (Moyur O Gouri) কবিতাটি ছাড়াও কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) -এর অন্যান্য কবিতা, গল্প পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।